জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, প্রায় ৯০টি মসজিদের উপর নজর রাখা হচ্ছে৷ তবে মুসলমান ও ধর্মীয় জঙ্গিদের একই চোখে দেখা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার দেশটির সরকারি এক টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ সব কথা বলেন বিএফভি-র প্রধান হানস-গেওর্গ মাসেন৷ ৯০টির মধ্যে ‘বেশিরভাগই আরবি ভাষাভাষী'-দের মসজিদ বলেও জানান তিনি৷ মাসেন বলেন, নজরে থাকা মসজিদগুলোর অনেকগুলো ‘ব্যাকইয়ার্ড মসজিদ', অর্থাৎ যেগুলো খোলা চোখে দেখে মসজিদ বলে বোঝা যায় না এবং যেখানে স্বশিক্ষিত ইমামরা অনুসারীদের মধ্যে ‘ঘৃণা মিশ্রিত' বক্তব্য প্রচার করে ‘জিহাদ উসকে' দেয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন৷
তবে মুসলমান ও ধর্মীয় জঙ্গিদের একই চোখে দেখা উচিত নয় বলে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন গোয়েন্দা প্রধান মাসেন৷ ‘‘জার্মানিতে আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে জঙ্গিবাদ দমনের বিরুদ্ধে একটি জোট গড়ে তোলা৷ সেজন্য আমাদের মুসলমানদের (মধ্যপন্থি) প্রয়োজন'', বলেন তিনি৷
সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেন যে, ‘‘আমার সংস্থা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উগ্রবাদীদের নজরে রাখছে৷ আর আমরা যাদের উপর নজর রাখছি না তারা হলো জার্মানির মুসলমান সমাজ৷''
জার্মানির জন্য হুমকি আইএস?
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস জার্মানির জন্য কোনো হুমকি বয়ে আনতে পারে কি না তা খুঁজে বের করতে সোমবার দেশটির পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা একত্র হয়েছিলেন৷ মাসেন বলেন, ‘‘আল-কায়েদা ও আইএস ছাড়া জার্মানিতে ইসলামি জঙ্গিবাদের প্রসার সম্ভব নয়৷''
উল্লেখ্য, গত মাসে মাসেন স্বীকারে করে বলেছিলেন যে, জার্মানিতে আইএস-এর প্রবেশের সম্ভাবনার বিষয়টি অতীতে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, কেএনএ)
জার্মানিতে জঙ্গিবাদ
তারা তরুণ, ধর্মান্ধ এবং জান্নাতে যেতে চায়৷ জার্মানিতে এমন প্রায় ৫০০ ইসলামি জঙ্গি আছে যারা যে-কোনো ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তুলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Boris Roessler
ব়্যাপার থেকে জিহাদি
ডেনিশ কুসপার্ট এর বাবা জার্মান এবং মা ঘানার৷ তাঁর জন্ম ১৯৭৫ সালে বার্লিনে৷ ইসলামিক স্টেটের অন্যতম জিহাদিস্ট এই ব়্যাপার ডেসো নামেও পরিচিত৷ ২০১২ সালের শেষ থেকে সিরিয়ায় আছেন কুসপার্ট৷ তার লক্ষ্য হলো জার্মানির সালাফিস্টদের জিহাদি হওয়ার পথে নিয়ে যাওয়া৷ চলতি মাসের প্রথম দিকে শিরশ্ছেদের নতুন ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে৷ জার্মান সরকার জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: twitter.com
শরিয়া পুলিশ
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভুপার্টাল শহরের রাস্তায় রাস্তায় এদের দেখা যায়৷ মুসলিম তরুণরা যাতে জুয়া না খেলে, মদ না খায় এবং গান না শোনে তার নির্দেশ দেয় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
অভিবাসী জঙ্গি
জার্মানিতে অন্তত কয়েক হাজার ইসলামপন্থি রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকশ জনকে জঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ অনেকেই অভিবাসীদের সন্তান, যারা জার্মানিতে এসে একই সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে একতাবদ্ধ হতে গিয়ে এমন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ আর কিছু আছে যারা ধর্মান্তরিত হয়ে এ পথে এগিয়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইন ইলেভেন হামলা
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল, তার একটা অংশের পরিকল্পনা হয়েছিল জার্মানির হামবুর্গে৷ নাইন ইলেভেন হামলার সঙ্গে জড়িত চার পাইলটের তিনজন সহ আরও ছয় ব্যক্তি হামবুর্গের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন৷ ছবিতে উপরে মাঝখানে যিনি আছেন তিনি আত্মঘাতী বিমান চালক মো. আত্তা৷ নীচে বামদিকে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি মুনীর এল-মোতাস্সাদেক, যাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/lno
সুটকেস বোমা
২০০৬ সালে লেবাননের শিক্ষার্থী জিহাদ হামাদ এবং ইউসুফ আল হাজদিব কোলন শহর থেকে হাম ও কোবলেনৎস শহরে যাওয়ার দুটি ট্রেনে সুটকেস বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ তবে সেটা ব্যর্থ হয়েছিল৷ হামাদকে এখন বৈরুতে ১২ বছর জেল খাটতে হচ্ছে৷ আর আল হাজদিব জার্মানিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে৷
ছবি: AP
সারল্যান্ড সেল
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নর্থ রাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্য থেকে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়৷ তারা আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে জার্মান ও মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ এদের ১২ বছর ধরে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
২০১১ সালের মার্চে আরিদ উকা নামে এক জঙ্গি ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে গুলি চালিয়ে দুই মার্কিন সেনাকে হত্যা করে এবং হামলায় আরো দুই জন গুরুতর আহত হয়৷ উকার জন্ম কসোভোতে, সে বেড়ে উঠেছে জার্মানিতে৷ ফেসবুকে সে নিজেকে একজন ‘জিহাদিস্ট’ বলে উল্লেখ করেছে৷
ছবি: picture alliance / dpa
ড্যুসেলডর্ফের আল কায়েদা সেল
হালিল এ (মাঝে) কে আদালতে হাজির করা হয়েছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে৷ অভিযোগ ড্যুসেলডর্ফের সন্ত্রাসী সেলের সঙ্গে যুক্ত তিনি৷ এই সেলের এক সদস্যের দাবি তিনি কোনো এক সময় আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের দেহরক্ষী ছিলেন৷ এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কটি জার্মানির বেশ কয়েক জায়গায় বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ তবে ঐ সেলের চার সদস্যই এখন কারাগারে বন্দি৷
ছবি: dapd
সালাফিস্ট
জার্মানিতে সালাফিস্টদের সংখ্যা বাড়ছে৷ বর্তমানে এদের সংখ্যা অন্তত ৭,০০০ বলে ধারণা করা হয়৷ ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে তারা ইসলাম প্রচারের অংশ হিসেবে জার্মান ভাষায় অনুদিত কোরআন শরীফ বিনামূল্যে বিতরণ করে আসছে৷ তাদের লক্ষ্য আড়াই কোটি কোরআন বিতরণ৷ তবে সালাফিস্টদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব কম৷ প্রায় ৫০০ সালাফিস্ট সিরিয়া এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ঘুরে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Britta Pedersen
বন শহরে হামলা
২০১২ সালের ডিসেম্বরে বন এর কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনে একটি নীল রং এর ব্যাগে বোমা পাওয়া গিয়েছিল৷ এই হামলার পেছনে মার্কো জি এর হাত ছিল বলে জানা গেছে৷ ওলডেনব্যুর্গ এ বেড়ে ওঠা মার্কো ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইএস
২০১৩ সালের জুলাইতে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়া গিয়েছিলেন ক্রেসনিক বি৷ জার্মানিতে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দোষ প্রমাণিত হলে তার অন্তত চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷