‘মেরামতির' কাজের কথা বলে নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপ লাইন দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ আবারও কমানোর পরিকল্পনা করছে রাশিয়া৷ রাশিয়ার গাসপ্রম জানিয়েছে, আগামীতে সামর্থ্যের মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করবে তারা৷
রাশিয়ার গ্যাস জায়ান্ট গাসপ্রম সোমবার জানিয়েছে, বুধবার থেকে নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপ লাইন দিয়ে দৈনিক ৩কোটি ৩০ লাখ ঘনমিটার গ্যাস কম দেবে তারা৷ বর্তমানে ওই পাইপ লাইন দিয়ে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ গ্যাস জার্মানিতে সরবরাহ করছে রাশিয়া৷ বুধবার থেকে সেটা ২০ শতাংশে পৌঁছাবে৷
কোম্পানিটি জানিয়েছে, ইঞ্জিনে যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামতের কারণে একটি টার্বাইনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলেই তারা গ্যাস সরবরাহ কমাতে বাধ্য হচ্ছে৷
জার্মান অর্থনীতিমন্ত্রী রবার্ট হাবেক বলেছেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক সংস্থা এবং গ্যাস সংকট নিয়ে কর্মরত দলের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷ আমাদের কাছে যেসব তথ্য এসেছে তাতে কোথাও যান্ত্রিক ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি৷''
তিনি ডিপিএ সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘‘রাশিয়া নিজে চুক্তি ভঙ্গ করছে আর অন্যদের দায়ী করছে৷'' রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন কূটনৈতিক খেলা শুরু করেছেন বলে মনে করেন তিনি৷
২০ বছরে সর্বনিম্ন ইউরোর দর, পৌঁছালো ডলারের সমমানে
02:06
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধের মুখে মস্কো ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমাতে শুরু করে৷ জার্মানি মনে করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবরোধের প্রতিশোধ নিতেই রাশিয়ার এই পদক্ষেপ৷
এর আগে ১০ দিন বন্ধ থাকার পর ২২ জুলাই নর্ড স্ট্রিম ১ দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছিল রাশিয়া, তবে সেটাও আগের থেকে অনেক কম, ক্ষমতার মাত্র ৩০ শতাংশ৷ নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তরে শুরু হয়ে জার্মানির উত্তর বাল্টিক সাগরের কাছেগ্রাইফসভাল্ডে গিয়ে শেষ হয়েছে৷
জার্মানির অর্থনীতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাশিয়া তাদের গ্যাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷ তারা একটা অনিশ্চয়তার অবস্থা তৈরি করছে, পাশাপাশি দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে৷ শীতে যাতে আমাদের কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে আমরা সবাই একজোট হয়ে প্রতিকারের উপায় খুঁজছি৷''
আজ (মঙ্গলবার) ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীরা গ্যাসের ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে আলোচনা করতে বৈঠকে বসবেন৷
এদিকে, টার্বাইন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিমেন্স রাশিয়ার যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, টার্বাইনগুলো প্রায়ই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছুসময় বন্ধ রাখার কথা৷ কিন্তু গত ১০ বছরে একবারও রাশিয়া টার্বাইন নিয়ে অভিযোগ করেনি৷ গাসপ্রম এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো নথিপত্র জমা দেয়নি বলেও জানিয়েছে সিমেন্স৷
এপিবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা যেভাবে কমাবে ইউরোপ
২০২৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর থেকে তাদের জ্বালানির নির্ভরতা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে৷ গত বুধবার এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় এই জোট৷
ছবি: Jean-Francois Badias/AP/picture alliance
রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা
এখন পর্যন্ত রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ ভাগ গ্যাস ও ২৭ ভাগ তেলের চাহিদা মেটাচ্ছে৷ ইউরোপজুড়ে এই জ্বালানি ঘর গরম রাখতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং শিল্পে ব্যবহৃত হয়৷ এতটা নির্ভরশীলতা হুট করে কমানো সম্ভব নয়৷ তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইউরোপকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে৷ অবশ্য এই নির্ভরশীলতা কাটাতে অন্তত আরো পাঁচ বছর প্রয়োজন৷
ছবি: Kremlin Pool/ZUMAPRESS/picture alliance
নবায়নযোগ্যে ভরসা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল৷ কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন সেই পরিকল্পনাকে আরো ত্বরান্বিত করতে চাইছে এখন৷ আগের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্যের পরিকল্পনাকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করতে চাইছে তারা৷ ২০২০ সালের হিসেবে, তাদের ২২ শতাংশ জ্বালানি আসে বায়ু, সৌর ও জৈবশক্তি থেকে৷
ছবি: picture alliance / Zoonar
আইনে পরিবর্তন
লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইউরোপীয় কমিশন আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণাও দিয়েছে৷ কড়া বিধিনিষেধের কারণে অনেক প্রকল্প পাস হতে সময় লাগে৷ সেগুলো কিছুটা শিথিলের উদ্যোগ নেয়া হবে৷ এছাড়া বড় বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোর ওপর সৌর প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করার নিয়মও করা হবে৷
ছবি: Philip Reynaers/BELGA/dpa/picture alliance
জ্বালানি সাশ্রয়
কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি সাশ্রয়ও ১৩ ভাগ কমাতে চায়৷ আগের প্রস্তাবে তা ছিল ৯ শতাংশ৷ এর জন্য অনেক ভবনকে সংস্কার করা হবে, যেন সেগুলোতে কম জ্বালানি খরচ হয়৷ তাদের হিসেব বলছে, মানুষ চাইলে নিজ উদ্যোগে তাদের জ্বালানি খরচ কমাতে পারে৷ এতে করে অন্তত পাঁচ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা কমানো সম্ভব৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্যাসের নতুন অবকাঠামো
ইউরোপ রাশিয়া থেকে বছরে ১৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করে থাকে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও জ্বালানি সাশ্রয় করে এর বিকল্প তৈরি সম্ভব৷ কিন্তু স্বল্পমেয়াদে ইউরোপ এখন সেই গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজছে৷ সেক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস এর বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু এর অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে৷ কারণ যে-কোনো সময় রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিপদ তৈরি হবে, যেমনটি তারা পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ার ক্ষেত্রে করেছে৷
ছবি: Joerg Boethling/imago images
অর্থায়ন
সবমিলিয়ে জ্বালানি খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে ২১০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করতে চায় ইইউ৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩০০ বিলিয়ন হবে৷ এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৮৬ বিলিয়ন, হাইড্রোজেন অবকাঠামোর জন্য ২৭ বিলিয়ন ইউরো, ২৯ বিলিয়ন ইউরো বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়নে ও ৫৬ বিলিয়ন ইউরো জ্বালানি সাশ্রয় অবকাঠামো ও হিট পাম্প তৈরিতে খরচ হবে৷
ছবি: Christoph Hardt/Geisler-Fotopress/picture alliance