তিনজনই জার্মান নাগরিক। জার্মানির যুদ্ধজাহাজের ইঞ্জিন সংক্রান্ত গোপন তথ্য তারা চীনের গোয়েন্দা বিভাগকে দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফেডারেল প্রসিকিউটর অফিস সোমবার জানিয়েছে, তাদের দৃঢ় ধারণা ওই তিন জার্মান নাগরিক সরাসরি চীনের গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে কাজ করছিলেন। এই তিন ব্যক্তির নাম হারউইগ এফ, ইনা এফ এবং টমাস আর। ডুসেলডর্ফ এবং বাড হমবুর্গ থেকে তাদেরগ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের আগে তাদের বাড়ি এবং কাজের জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে বেশ কিছু নথি মিলেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
টমাস আর চীনের গুপ্তচর সংস্থার এক কর্মীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন বলে জানানো হয়েছে। সামরিক কাজে লাগে এমন বহু কারিগরি তথ্য তিনি পাচার করতেন বলে অভিযোগ। হারউইগ এবং ইনাকে এই ব্যক্তি কাজে লাগিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। হারউইগ এবং ইনা ডুসেলডর্ফে একটি সংস্থা তৈরি করেছিলেন। জার্মান বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের সঙ্গে কাজ করতো এই সংস্থাটি। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সামরিক বিষয়ে তথ্য নিতো সংস্থাটি। ইনাদের সংস্থা একটি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চীনের একটি সংস্থার যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, যুদ্ধ জাহাজের ইঞ্জিনের উন্নতির জন্য় জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করবে। বিদেশে কাজ করার জন্য় জার্মানির আইন তারা লঙ্ঘন করেছিল বলে অভিযোগ।
গুপ্তচরদের শহর বার্লিন
স্নায়ুযুদ্ধের সময়, পূর্ব এবং পশ্চিম ব্লকের সীমান্ত শহর ছিল বার্লিন৷ ফলে বিশ্বের নানা দেশের অসংখ্য গুপ্তচর ঘুরঘুর করতেন বার্লিনে। এই গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস জানতে ঘুরে আসতে পারেন ছবিঘরে দেখানো স্থানগুলো৷
ছবি: picture alliance/Prisma Archivo
চেকপয়েন্ট চার্লি
অনেকে মনে করেন, পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রসিং পয়েন্ট ছিল চেকপয়েন্ট চার্লি। এই চেকপয়েন্টে ১৯৬১ সালের অক্টোবরে মার্কিন এবং সোভিয়েত সেনারা মুখোমুখি অবস্থান নেয়৷ অনেক বছর পর জানা গিয়েছিল, কার্ল-হাইনৎস কুরাস নামে এক পশ্চিম জার্মান পুলিশ অফিসার পূর্ব জার্মানির গুপ্তচর ছিলেন এবং সোভিয়েতদের কাছে মার্কিন সেনাদের সম্পর্কে তথ্য পাচার করতেন।
ছবি: Marc Vormerk/picture alliance / SULUPRESS.DE
গ্লিনিকে সেতু
পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির মধ্যে আরেকটি কিংবদন্তী সীমান্ত ক্রসিং গ্লিনিকে সেতু। এখানে বেশ কয়েকবার দু পক্ষের মধ্য়ে বন্দিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে৷ এই সেতুটিকে ‘ব্রিজ অফ স্পাইজ‘ বা ‘গুপ্তচরদের সেতু‘ নামেও ডাকা হতো। ২০১৫ সালে এই চমকপ্রদ ইতিহাস নিয়েই ‘ব্রিজ অফ স্পাইজ‘ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন স্টিভেন স্পিলবার্গ।
ছবি: Georg Moritz/picture alliance/dpa
বার্লিনের স্টাসি জাদুঘর
পূর্ব জার্মানির কুখ্যাত গুপ্তচর ও নজরদারি সংস্থার নাম ছিল স্টেট সিকিউরিটি মিনিস্ট্রি না স্টাসি৷ পূর্ব জার্মানিতে সেই সংস্থার সদরদপ্তরের ভবনটিকে এখন রূপ দেয়া হয়েছে জাদুঘরে৷ কক্ষগুলোকে তাদের আগের অবস্থায় সংরক্ষণ বা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে৷ পূর্ব জার্মান গুপ্তচর প্রধান এরিক মিলকের ব্যবহার করা ফোনও সংরক্ষিত রয়েছে জাদুঘরটিতে৷ স্টাসির কর্মকাণ্ডের কিছুটা ধারণা এই জাদুঘর থেকে পেতে পারেন দর্শণার্থীরা৷
ছবি: Paul Zinken/picture alliance/dpa
মারিয়েনফেল্ডে শরণার্থী কেন্দ্র জাদুঘর
পূর্ব জার্মানি থেকে পালিয়ে আসা বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন পশ্চিম বার্লিনের মেরিয়েনফেল্ডে শরণার্থী কেন্দ্রে। কয়েক দশকে এই কেন্দ্রে প্রায় ১৩ লাখ শরণার্থী অবস্থান করেছেন। এই কেন্দ্রে যারা থাকতে চাইতেন, তাদের পশ্চিমা গোয়েন্দারা আগে পরীক্ষা নীরিক্ষা করতেন এবং পূর্ব জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে গোপন তথ্য জানার জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পাহাড়ের উপর অবস্থিত টিউফেলসবার্গ লিসেনিং পোস্টটিও দর্শনীয় একটি স্থান। বার্লিনের গ্রুনেভাল্ড জেলায় অবস্থিত এই স্থাপনাটি ১৯৬০ এর দশকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ পূর্ব ব্লকে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য তৈরি করেছিল। এখন স্থাপনাটির ধ্বংসাবশেষ দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত৷
ছবি: Ina Hensel/picture alliance/Zoonar
মিত্রশক্তি জাদুঘর
মিত্রশক্তি জাদুঘরটি বার্লিনের সেহলেনডর্ফ জেলায় অবস্থিত এই এলাকাটি একসময় অ্যামেরিকান সেক্টর নামে পরিচিত ছিল৷ এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তেজনাপূর্ণ স্নায়ুযুদ্ধ যুগের বর্ণনা পাওয়া যাবে এই জাদুঘরে। দর্শণার্থীরা বিনামূল্যেই প্রবেশ করতে পারেন৷ সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে একটি সুরঙ্গ৷ এটি সোভিয়েত বাহিনীর ওপর গোয়েন্দাগিরির জন্য তৈরি করেছিল ব্রিটিশ এবং মার্কিনিরা৷
ছবি: picture alliance/Prisma Archivo
জার্মান গুপ্তচর জাদুঘর
এই জাদুঘরের অবস্থান পটসডামার প্লাৎসের কাছে৷ বার্লিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা প্রাচীরটি এখান দিয়েও গিয়েছিল৷ কয়েক যুগ আগ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক অতীত পর্যন্ত গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহৃত নানা আকর্ষণীয় বস্তু প্রদর্শন করা হয় এই জাদুঘরে৷ এছাড়াও অনেক ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনী থাকায় জাদুঘরটি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সমানভাবে আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
ছবি: Christian Behring/picture alliance / POP-EYE
জার্মানির বিদেশি গুপ্তচর কেন্দ্র
বহির্বিশ্বে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি এর নবনির্মিত সদর দপ্তর বার্লিনে উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালে। প্রায় তিন হাজার কর্মী এই ভবনটি থেকেই বিশ্বের নানা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করেন৷ তবে মজার বিষয়, গোপনীয়তার বেড়াজালে ঢাকা এই ভবনটিতেও রয়েছে একটি দর্শনার্থী কেন্দ্র, যা ঘুরে আসতে পারেন আপনিও।
ছবি: picture alliance / Global Travel Images
8 ছবি1 | 8
চীনের সরকারি সংস্থা ওই প্রকল্পে টাকা ঢেলেছিল বলে অভিযোগ। এরপর চীনের নৌবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করছিলেন ওই দুই ব্যক্তি।
এর আগে গত সপ্তাহে বাভারিয়া থেকে রাশিয়ার চর সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল জার্মানির পুলিশ।
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যানসি ফায়েসার জানিয়েছেন, তাদের আশঙ্কা, জার্মানির একাধিক সংস্থায় চীন গুপ্তরচর মোতায়েন করেছে। তিনি জানিয়েছেন, জার্মানি খুব গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে এবিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
অভিযোগ, চীন বিশেষ করে টার্গেট করেছে জার্মান কারিগরি শিল্পসংস্থাগুলিকে। সেখান থেকে উন্নত কারিগরি কৌশল জেনে নিয়ে তা সামরিক কাজে ব্য়বহারের চেষ্টা করছে তারা।