মূলত তিন কারণে নিজস্ব ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন ক্লাউস মায়ার৷ কারণগুলো হচ্ছে খরচ বাঁচানো, জ্বালানি সাশ্রয় এবং জলবায়ু সুরক্ষা৷ অনেক জার্মানই এসব কারণে এখন ‘ঘরে বিদ্যুৎ’ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন৷
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছর ‘৬০০ টেরাওয়াট আওয়ার্স' বিদ্যুৎ খরচ করে থাকেন জার্মানরা৷ এর মধ্যে ৫০ ‘টেরাওয়াট আওয়ার্স' বিদ্যুৎ ‘ঘরে তৈরি'৷ অর্থাৎ মোট খরচ হওয়া বিদ্যুতের আট শতাংশই আসছে ফ্যাক্টরির গ্যাস প্লান্ট কিংবা বাড়ির ছাদে বসানো সৌর প্যানেলের মতো উৎস থেকে৷
ঘরে এবং ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিজেরা ব্যবহারের পাশাপাশি বাড়তি অংশ মূল গ্রিডেও সরবরাহ করতে পারছেন জার্মানরা৷ আর এভাবে উপার্জিত অর্থের উপর বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো করও দিতে হচ্ছে না৷
বাংলাদেশে সৌরশক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে
বাংলাদেশে গ্রামীণ শক্তি কার্যত নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিপ্লব এনেছে৷ ইতোমধ্যে দশ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের রেকর্ড গড়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷ ৬৪ জেলাতেই চলছে তাদের কার্যক্রম৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সৌরবিপ্লব
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কার্যত বিপ্লব এনেছে গ্রামীণ শক্তি৷ গত বছরের শুরুতে দশ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের রেকর্ড গড়ে তারা৷ ২০১৫ সাল নাগাদ আরো দশ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের রেকর্ড গড়তে চায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বাংলাদেশে গ্রামীণ শক্তির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি৷ শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
৬৪ জেলায় কার্যক্রম
বাংলাদেশে ৬৪ জেলাতেই কাজ করছে গ্রামীণ শক্তি৷ ২০১৩ সালে প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ৫০ হাজার গ্রামে সেবা পৌঁছে দিয়েছে সংস্থাটি৷ গ্রামীণ শক্তির মাধ্যমে পাওয়া সৌর প্যানেল ব্যবহার করে লাভবানের সংখ্যা আট মিলিয়নের বেশি৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
শুধু গ্রামীণ শক্তি নয়
গ্রামীণ শক্তি ছাড়াও আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সৌরশক্তি সেবা প্রদান করছে৷ রয়েছে সরকারি উদ্যোগও৷ সরকারি বিভিন্ন ভবনে সৌরশক্তি ব্যবহারের উদ্যোগও শুরু হয়েছে৷ ঢাকায় পরিসংখ্যান ব্যুরো ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে গত বছর৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
জাতীয় গ্রিডের জন্য সৌরশক্তি
সৌরশক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘রহিমআফরোজ রিনিউবেল এনার্জি’৷ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঢাকার সচিবালয়ের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়েছে৷ তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মেগাওয়াট প্রতি নির্দিষ্ট দামে কিনে নেবে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: ROBYN BECK/AFP/Getty Images
সহায়তায় জার্মানি
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করছে জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জিআইজেড৷ সোলার প্যানেলে মূল্য বেশি হওয়ায় শুরুতে ভর্তুকিও দিয়েছে জিআইজেড৷ তবে কিস্তিতে সোলার প্যানেল কেনার সুবিধা থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সহজেই সেগুলো ব্যবহার করতে পারছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Centro de Energía Chile
লক্ষ্য অর্ধেক জনশক্তি
২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কাছে সৌরশক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে চান এই খাতের সংশ্লিষ্টরা৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা জানান বাংলাদেশে সৌরশক্তি জনপ্রিয় করার অন্যতম কারিগর দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
দশ বছর আগে মায়ার তাঁর ৪৫ রুম বিশিষ্ট চার তারকা হোটেলের জন্য গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ এবং তাপ উৎপাদক ইউনিট বসিয়েছিলেন৷ এ জন্য তিনি খরচ করেন প্রায় ৫০ হাজার ইউরো৷ তবে মায়ারের মতে, বিনিয়োগের ফলাফল প্রত্যাশিত সময়ের আগেই পাওয়া গেছে৷
জার্মান চেম্বার অফ কমার্স গত বছর এক জরিপ পরিচালনা করে৷ এতে অংশ নেয়া ২,৪০০-র মতো কোম্পানির মধ্যে অর্ধেকই ইতোমধ্যে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করেছে, উদ্যোগ নিয়েছে অথবা এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে৷ এই ব্যবস্থায় অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বিদ্যুতের সার্বক্ষণিক সরবরাহের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে পারছে প্রতিষ্ঠানগুলো৷
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে জাপানের ফুকিশিমায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর সতর্ক হয় জার্মানি৷ ফলে পারামাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দিতে থাকে সরকার৷ তাই বিকল্প জ্বালানির উৎসের সন্ধান শুরু হয় দেশটিতে৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ছোট ছোট বাড়ির ছাদে তাই এখন দেখা যাচ্ছে সৌর প্যানেল৷ বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে সৌর তাপ বেশি পাওয়া যায়, সেসব অঞ্চলে এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে৷
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে জার্মানিতে উৎপাদিত মোট জ্বালানির মাত্র ৬.৭ শতাংশ এসেছিল নবায়নযোগ্য উৎস থেকে৷ লক্ষ্য ছিল, ২০১০ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানো হবে ১২ শতাংশ৷ কিন্তু জার্মানি সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ২০০৭ সালেই৷ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই ধারা ক্রমেই বাড়ছে৷