অভিবাসন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে জার্মানিতে৷ উত্তরাঞ্চলীয় শহর ব্রেমেনের অভিবাসন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুস নিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন মঞ্জুরের অভিযোগ তুলেছে গণমাধ্যমগুলো৷
বিজ্ঞাপন
ব্রেমেনে ঘুসের বিনিময়ে আবেদন মঞ্জুরের অভিযোগ আগেই দ্য ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি (বিএএমএফ)-তে জমা পড়েছে বলে জানিয়েছে জার্মানির সংবাদ মাধ্যম৷
জার্মান পত্রিকা ডেয়ার স্পিগেল দাবি করেছে, ২০১৭ সালে জার্মান কেন্দ্রীয় অভিবাসন দপ্তর বিএএমএফ-এর প্রধান উটা কর্ড্ট -এর কাছে পাঠানো অভিযোগের ই-মেল বার্তায় ‘প্রচুর অনিয়ম’ এর তথ্যটি তারা দেখেছে৷ ই-মেলগুলো অভিবাসন দপ্তরের ভেতরই চালাচালি হয়েছিল৷
এনডিআর এবং স্যুদডয়চে সাইটুং এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও বিএএমএফ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে নির্বিকার ছিল৷
দুটি সংবাদমাধ্যমই একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান কর্মকর্তার ই-মেল-এর সূত্র ধরে বলেছে, জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটি ‘কোনও যাচাইবাছাই ছাড়া’ এবং বিস্তারিত খোঁজ-খবর না নিয়েই হয়েছে৷
ইউরোপে বাংলাদেশিদের আশ্রয় পাওয়ার হার বাড়ছে
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর গত ১০ বছরের হিসেব বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সফল হওয়ার হার বাড়তির দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
তিন ধরনের সুরক্ষা
শরণার্থী, হিউম্যানিটারিয়ান ও সাবসিডিয়ারি – এই তিন ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে৷ যাঁরা শরণার্থী স্ট্যাটাসের যোগ্য নন, কিন্তু দেশে ফিরে গেলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের সাবসিডিয়ারি সুরক্ষা দেয়া হয়৷ আর অসুস্থতা ও অভিভাবকহীন শিশুদের মানবিক (হিউম্যানিটারিয়ান) বিবেচনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Schlesinger
২০১৭
বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গতবছর ১৬,০৯৫টি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ আর একই সময়ে বাংলাদেশিদের করা ২,৮৩৫টি আবেদন সফল হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে সেটি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ৷ জার্মানিতে আবেদন পড়েছে ২,৭২৫টি৷ সফল হয়েছে ৩১৫টি৷ এমনিভাবে অন্য কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান এরকম – যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৬৩০; সফল ৬৫), ইটালি (আবেদন ৫,৭৭৫; সফল ১,৮৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১৫; সফল ৪৪০)৷
ছবি: imago/Cronos
২০১৬
বাংলাদেশিরা ১৪,০৮৫টি আবেদন করেছেন৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে ২,৩৬৫টি৷ অর্থাৎ সফলতার হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৬৬৫; সফল ১১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৪০৫; সফল ৮০), ইটালি (আবেদন ৬,২২৫; সফল ১,৬১০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১০; সফল ৪৪০)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
২০১৫
সেবছর সফলতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷ আবেদন পড়েছিল ১১,২৫০টি৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ১,৭৮৫টি৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৬৫; সফল ৩৫), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,০১৫; সফল ১২০), ইটালি (আবেদন ৫,০১০; সফল ১,২২৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৫৬০; সফল ৩১৫)৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
২০১৪
আবেদন ৭,৫৮০টি৷ সফল ৭৮৫৷ শতকরা হার ১০ দশমিক ৩৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪৬৫; সফল ৫০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৭০০; সফল ৭৫), ইটালি (আবেদন ৭৩৫; সফল ৩১৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৮৭০; সফল ২৬৫)৷
ছবি: Megan Williams
২০১৩
সফলতার হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ৷ আবেদন ৮,৩৩৫৷ সফল ৫৯৫৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৫০; সফল ২০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮৩০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ৫৯০; সফল ৩০০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৬১৫; সফল ১৪৫)৷
ছবি: picture alliance/robertharding/A. Robinson
২০১২
সফলতার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১৯০; সফল ১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮০০; সফল ৫০), ইটালি (আবেদন ১,৪১০; সফল ১,০৪৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৫৫; সফল ৮৫)৷
ছবি: Imago/Rainer Weisflog
২০১১
সফলতার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১১০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৮০; সফল ৪০), ইটালি (আবেদন ৮৬৫; সফল ৬৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৭০; সফল ৪৫)৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/M. Cohen
২০১০
সফলতার হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১০৫; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৬০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ২১৫; সফল ৪০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ২,৪১০; সফল ২৫)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Uhlemann
২০০৯
সফলতার হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৭৫; সফল ৪৫), ইটালি (আবেদন ৮৮৫; সফল ৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৭৮০; সফল ৩৫)৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
২০০৮
সফলতার হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৯৫; সফল ৯৫), ইটালি (আবেদন ৯৫০; সফল ৫০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৬৬০; সফল ৩৫)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
৩২ দেশের হিসাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্যরাষ্ট্র এবং ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা ইএফটিএ-এর অন্তর্ভুক্ত আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোস্ট্যাট৷ আরও পরিসংখ্যান জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Megan Williams
12 ছবি1 | 12
পত্রিকার প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিএএমএফের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরনের ই-মেইল পাওয়ার কথা অস্বীকার করা হয়েছে৷
ন্যুরেমব্যার্গে বিএএমএফ-এর কেন্দ্রীয় দপ্তরে রোববার সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অফিসে যে ই-মেল এসেছে, তাতে ‘সবকিছু নিরীক্ষা করা হচ্ছে না’ বা ‘কোনও যাচাই-বাছাই হচ্ছে না’ ধরনের কথা ছিল না৷’’
‘‘কর্ড্টর কাছে মেলটিতে এক বিভাগীয় প্রধান কেবল জানিয়েছেন, ব্রেমেনের অফিসে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন নিয়ে সম্ভবত দুর্নীতি হচ্ছে৷’’
এই তথ্য পাওয়ার সাথে সাথেই কেন্দ্রীয় অফিস কাজ শুরু করেছে বলে দাবি করেন তিনি৷
শুক্রবার বিএএমএফ প্রধান জার্মান সংসদীয় কমিটির কাছে ব্রেমেন অভিবাসন অফিসের বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ই-মেল বার্তাগুলো চালাচালির কথা সেখানে উল্লেখ ছিল না বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দাবি করা হয়েছে৷
এ বছরের এপ্রিলে ব্রেমেন অভিবাসন অফিসের একজন নারী কর্মকর্তার দুর্নীতি বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দেয়া হয়৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, অন্য চার কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ১২০০ শরণার্থীকে জার্মানির অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বৈধ করার ব্যাপারে ঘুষ নেয়া৷ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৈধ হওয়া ওইসব শরণার্থীর জার্মানিতে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতার ঘাটতি ছিল৷
বিএএমএফ প্রধান উটা কর্ড্ট জানান, ২০০০ সাল থেকে ব্রেমেনের অফিস মোট ১৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে৷
আগামী তিন মাসে ওইসব সিদ্ধান্তই আবার খতিয়ে দেখা হবে বলে শুক্রবার জানান তিনি৷
ন্যুনতম যোগ্যতা পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও ১০ শতাংশের বেশি শরণার্থীকে বৈধতা দেওয়া দপ্তরগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই তদন্ত চলবে বলে জানানো হয়৷
অভিযোগ ওঠার পর নাগরিকদের মধ্যে পরিচালিত ডি ভেল্ট পত্রিকার এক জরিপে অভিবাসন দপ্তর নিয়ে নাগরিকদের অনাস্থার চিত্রই ফুটে উঠেছে৷
সোমবার ওই জরিপের ফলে দেখা যায়, উত্তরদাতাদের মাত্র ৯ শতাংশ অভিবাসন অফিসের দেওয়া শরণার্থী বৈধকরণ সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি সঠিক মনে করেন৷ এর বিপরীতে ৮০ শতাংশ একেবারেই বিএএমএফ-এর সিদ্ধান্ত সঠিক ও বৈধ নয় বলেই মনে করেন৷
এইচআই/এসিবি (ডিপিএ, কেএনএ,এএফপি)
গত জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
সন্দেহভাজন বিদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাবে জার্মানি
সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে কোনো বিদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাতে কোনো আইনি বাঁধা নেই বলে রায় দিয়েছে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত৷ তবে সমালোচকরা একে সংবিধানবিরোধী বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আদালতের রায়
বৃহস্পতিবার কার্লসরুয়াতে সাংবিধানিক আদালত বলেছেন যে, যদি কোনো সন্ত্রাসের ঝুঁকি থাকে, তাহলে কোনো বিদেশিকে ফেরত পাঠাতে আইনি কোনো বাঁধা দেখছেন না৷ বিচারকদের রায় অনুযায়ী, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অভিবাসী আইনেই আছে
দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্দেহভাজনদের ফেরত পাঠানোর জন্য জার্মান অভিবাসী আইনের একটি অনুচ্ছেদের রেফারেন্স দিয়ে বিচারকরা বলেছেন যে, ‘জার্মানির নিরাপত্তায় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হলেই’ তা ঠেকাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ওয়ান ইলেভেনের প্রভাব
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর জার্মানির সংবিধানে এই ধারাটি ঢোকানো হয়েছিল৷ এতদিন এটি নিয়ে কোনো কথা হয়নি৷ গত ডিসেম্বর মাসে বার্লিনে ক্রিস্টমাস মার্কেটে হামলার পর বিষয়টি আবারো সামনে আসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
জার্মানিতে জন্ম, কিন্তু বিদেশি
গেল ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যে এক আলজেরিয়ান ও এক নাইজেরিয়ানকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করে৷ তাদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলে আইনের আশ্রয় নেন তারা৷ তারা লাইপসিগে ফেডারেল প্রশাসনিক কোর্টে আবেদন করলে সাময়িক আইনি সুরক্ষা পান৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Dedert
প্রশাসনের হুঁশিয়ারি
গেল মার্চে লোয়ার স্যাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন যে, যারা সন্ত্রাসী হামলার মতো উন্মাদ আচরণ করতে চায়, তাদের এক সেন্টিমিটারও ছাড় দেয়া হবে না৷ তিনি আরো বলেন যে, তারা যে দেশেরই হোন না কেন, আইনের কড়া প্রয়োগ করা হবে তাদের বিরুদ্ধে৷
ছবি: Getty Images/P.Stollarz
ফেরত পাঠানোর পরিসংখ্যান
গত নভেম্বরে প্রকাশ হওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের প্রথম নয় মাসে ১৯,৯১৪ জনকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি৷ পুরো ২০১৫ সালে ২০,৮৮৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷