করোনার কারণে বন্ধ থাকার পর জার্মানিতে অল্প অল্প করে চলচ্চিত্রের চিত্রায়ন আবার শুরু হয়েছে৷ তবে এজন্য কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
দৃশ্যের প্রয়োজনে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের যদি এক মিনিটের বেশি সময় ধরে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হয় তাহলে তাদের কোয়ারান্টিনে পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন প্রযোজক নিকো হফমান৷
এছাড়া চলচ্চিত্রের সেটে কাজ করা সবার নিয়মিত বিরতিতে করোনা পরীক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি৷
এসব কারণে চিত্রায়নের খরচ বেড়ে যাচ্ছে৷ তারপরও অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান পরিচালকরা৷
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্ক্রিপ্ট নতুন করে লেখারও বিপক্ষে হফমান৷ তিনি মনে করেন, কোনো আপোস না করেই চিত্রায়ন চালিয়ে যাওয়া উচিত৷
স্ক্রিপ্ট লেখক সেবাস্টিয়ান আনড্রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে যদি সিনেমায় যৌন আবেদন উদ্রেককারী দৃশ্যের সংখ্যা কমে যায় তাহলে বিষয়টা লজ্জার হবে৷ আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষের মধ্য যোগাযোগ তুলে ধরা৷ নৈকট্য ছাড়া সেটা সম্ভব নয়,’’ বলেন তিনি৷ সেবাস্টিয়ান আনড্রায় জার্মান স্ক্রিনরাইটার্স সংগঠনের একজন বোর্ড সদস্য৷
স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার পরও যদি চিত্রায়ন করতে গিয়ে কাউকে কোয়ারান্টিনে যেতে হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ কী হবে, সেই বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিনেতা হান্স-ভ্যার্নার মায়ার৷ তিনি জার্মানির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগঠন বিএফএফএস-এর বোর্ডের একজন সদস্য৷ মায়ার বলেন, ‘‘চিত্রায়নের কারণে কোয়ারান্টিনে যাওয়াদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কথা বলতে হবে, কারণ এই সময়ে তারা অন্য কোনো কাজও করতে পারবেন না৷ তাছাড়া পরিবার থেকেও আলাদা থাকতে হবে,’’ বলেন তিনি৷
বর্তমানে করোনার কারণে সিনেমা নির্মাতারা ক্ষতির মুখে পড়লে বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার উপায় নেই৷ তাই একটি বিশেষ তহবিল গঠন করতে সরকারের প্রতি আহ্ৱান জানিয়েছেন ১০০-র বেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা৷
টর্স্টেন লান্ডসব্যার্গ/জেডএইচ
জার্মানির বিখ্যাত সিনেমা হলগুলো
সিনেমা দেখার জন্য শীতকালটা দারুণ সময়৷ তাই ডয়চে ভেলে জার্মানির বিখ্যাত মুভি থিয়েটারগুলো তুলে ধরছে আপনাদের সামনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৯৫০-এর আকর্ষণ
চিড়িয়াখানা বা জু-কে জার্মান ভাষায় বলে ‘সো’৷ একসময় বার্লিনের চিড়িয়াখানার নামানুসারে ‘সো পালাস্ট’ ছিল জার্মানির সবচেয়ে আকর্ষণীয় সিনেমা হল৷ সবাক চলচ্চিত্রের প্রথমদিকে, রোমি শ্নাইডার এবং সোফিয়া লরেনের মতো তারকাদের ছায়াছবিগুলো এই হলেই প্রথম ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল৷ দু’বছরের সংস্কারের পর সম্প্রতি আবার এটি খুলে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্থাপত্য শিল্প
চলচ্চিত্র শিল্পে ‘সো পালাস্ট’ যখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, এসেন শহরের ‘লিষ্টবুর্গ’ সিনেমা হল তখন স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নির্দশন হয়ে উঠেছে৷ ৫০ এবং ৬০-এর দশকে সিনেমার প্রিমিয়ারের জন্য এই হলটিকেই সাধারণত বেছে নেয়া হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে বড় থিয়েটার
লিষ্টবুর্গ থিয়েটারে ১২৫০টি আসন রয়েছে৷ নির্মাণের পর ৮৫ বছর ধরে বিখ্যাত জার্মান চলচ্চিত্রগুলোর প্রিমিয়ার হয়েছে এখানে৷ ১৯৫১ সালের জুলাইতে অ্যামেরিকান সায়েন্স ফিকশন মুভি ডেস্টিনেশন মুন-এরও প্রদর্শনী হয়েছিল এখানে৷
ছবি: Otto Häublein/Fotoarchiv Ruhr Museum
বৃহত্তম মাল্টিপ্লেক্স
লিষ্টবুর্গের সাথে পরে যুক্ত হয় এসেনের নাম৷ জার্মানির বৃহত্তম মাল্টিপ্লেক্স এটি৷ এর আসন সংখ্যা ৫৩৭০ এবং এর মধ্যে হল আছে ১৬টি৷ এমনকি পুরো ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স এটি৷ প্রতিদিন তাই হাজারো দর্শক এখানে বসে চলচ্চিত্র উপভোগ করেন৷ কিন্তু এক শতক আগেও চিত্রটা কিন্তু একেবারে ভিন্ন ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর গল্প
ছবিতে গতি সঞ্চার শুরু হয় ১৮৯৫ সালে, যখন অগাস্ট এবং লুইস লুমিয়ার প্যারিসে প্রথম শর্ট ফিল্ম প্রদর্শন করেন৷ এর অনেক পরে, ১৯০৭ সালের ২১শে এপ্রিল নিজ বাড়িতে ‘থিয়েটার অফ লিভিং পিকচার্স’ নির্মাণ করেন কার্ল গ্যাব্রিয়েল৷ বর্তমানে তা গ্যাব্রিয়েল ফিল্ম থিয়েটার নামে পরিচিত, যেখানে এখনও ছবি দেখানো হয়৷
ছবি: CC-BY-SA-Privatarchiv Büche München
পূর্ব জার্মানির বায়োস্কোপ
বার্লিনে কার্ল মার্ক্স নামের যে রাস্তা আছে, সেখানকার ‘কিনো ইন্টারন্যাশনাল’ একসময় পূর্ব জার্মানির ছবি প্রিমিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল৷ এখন সেটি ঐতিহাসিক ভবন হিসেবে সংরক্ষিত৷ জার্মানি বিভক্ত হওয়ার তিন মাস পর ১৯৬৩ সালের ১৫ই নভেম্বর এটার উদ্বোধন হয়৷ ১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর বার্লিন দেয়ালের পতনের দিন হাইনার কারো-র ‘কামিং আউট’ ছবির প্রিমিয়ারের পর, সেখানে আর কোনো চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়নি৷
ছবি: DW/E. Jahn
সবচেয়ে বড় স্ক্রিন
‘রুন্ডকিনো’ – রুন্ড মানে গোল এবং কিনোর অর্থ ছবিঘর৷ ড্রেসডেন শহরে ১৯৭২ সালে নির্মিত হয় এই থিয়েটারটি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্থাপত্যের এক অনন্য নির্দশন এটি৷ এই ভবনটি ২০০৩ সাল থেকে সংরক্ষিত করা হয়েছে৷ বিশাল বড় এই থিয়েটারে আছে ৮৯৮টি আসন এবং বিরাট বড় স্ক্রিন৷
ছবি: Bundesarchiv, Bild 183-L1012-0015/cc-by-sa
ব্লকবাস্টারের প্রদর্শনী
ব্রেমানে অবস্থিত ‘অস্ট্রেটর’ নামের এই সিনেমা হলটি ১৯৬৯ সালের ৭ই নভেম্বর নির্মিত হয়৷ এখানে সাধারণ চলচ্চিত্রের চেয়ে ব্লকবাস্টার মুভিগুলোই বেশি দেখানো হত৷ যে কারণে ব্যবসায়িক সাফল্য এর অনেক বেশি৷ ১৩৪ আসনের এই থিয়েটারটি ‘সিনেমাটিক পোগ্রামিং’-এর জন্য জার্মান সরকারের বিশেষ পুরস্কারও পেয়েছে৷