পরিবেশ দূষণ কমাতে শুধু ইলেকট্রিক গাড়ি যথেষ্ট নয়৷ জাহাজ চলাচলের কারণে প্রতি বছর ১০০ কোটি টন কার্বন নির্গমন ঘটে৷ জার্মানির এক দম্পতি নৌযানের ক্ষেত্রেও ব্যাটারি ও ফুয়েল সেল প্রয়োগে অগ্রগতি আনছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির শ্লেসভিক বন্দরে নতুন জলযানের উদ্বোধন হয়েছে৷ প্লাইউডের তৈরি ছোট নৌকা হলেও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সেটি সাজানো হয়েছে৷ গোটা বিশ্বের জাহাজ শিল্পের জন্য এই নৌকা বিশাল অগ্রগতির সূচনা করবে বলে দাবি করা হচ্ছে৷ সে কারণে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উৎসব পালিত হয়েছে৷ চালকবিহীন এই যান কার্বন নির্গমন ছাড়াই চলতে পারে৷ ‘আনলিশ ফিউচার বোটস' কোম্পানির লার্স এঙেলহার্ড বলেন, ‘‘তিন বছরের মধ্যে আমরা বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে ৫০ থেকে ৮০টি নৌকায় রূপান্তর ঘটাতে পারবো বলে আশা করছি৷ তারপর আরও বড় আকারে সেই কাজ করার লক্ষ্য রয়েছে৷ কারণ মাত্র দুই-তিনটে, এমনকি ১০০ ইলেকট্রিক বোট তৈরি করেও কোনো লাভ নেই৷ যত দ্রুত সম্ভব ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জলযান নির্গমনহীন করে তোলাই হলো লক্ষ্য৷''
আন্তর্জাতিক বাজারের দিকেও এই উদ্যোগের নজর রয়েছে৷ এর পরের ধাপে ১২ মিটার দীর্ঘ সম্পূর্ণ নির্গমনহীন ও চালকবিহীন ফেরি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যেটি ডেনমার্কে যেতে পারে৷
জলযানও কার্বন নির্গমনমুক্ত করার উদ্যোগ
03:53
এই উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা দম্পতি গাড়ি শিল্পে কাজ করে নতুন মোটরের ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন৷ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তারা দুই ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে চান৷ স্টেফানি এঙেলহার্ড মনে করেন, ব্যাটারি ও ফুয়েল সেল প্রযুক্তি হিসেবে পরস্পরের সম্পূরক৷ লার্স বলেন, চার্জ করা ও চালানোর জন্য ব্যাটারি এবং রেঞ্জ বাড়ানোর লক্ষ্যে চার্জার হিসেবে ফুয়েল সেল ব্যবহার করা যেতে পারে৷
বড় বড় কোম্পানি এই প্রকল্পের উপর যথেষ্ট আশা রাখছে৷ ভ্যুয়র্ট ইলেকট্রনিক্সের প্রতিনিধি আলেক্সান্ডার গ্যার্ফার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এর অর্থ হলো নির্মাণের নতুন উপাদান সৃষ্টি করতে হবে৷ অথবা প্রচলিত উপকরণ একই সঙ্গে হালকা অথচ দক্ষ করে তুলতে হবে৷ কম্পোনেন্ট প্রস্তুতকারক হিসেবে আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে৷ তারপর সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশ করতে হবে৷''
পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে গোটা জাহাজ নির্মাণ শিল্প বড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছে৷ জাহাজ চলাচলের কারণে প্রতি বছর ১০০ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন ঘটে৷ জার্মানির মতো শিল্পোন্নত দেশেও এত পরিমাণ নির্গমন ঘটে না৷
তাহলে কী করা যায়? কেউ কেউ পুরানো প্রযুক্তি প্রয়োগ করছে৷ কিন্তু পরিমাণ, গতি ও মূল্যের বিচারে পালতোলা নৌকা পাল্লা দিতে পারে না৷
পরিবেশবান্ধব জলবায়ু সম্মেলন
জার্মানির বন শহরে চলছে দুই সপ্তাহব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন৷ কার্বন নির্গমন কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করার এই সম্মেলনকে যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
বিমান পরিবহণ
সম্মেলনে আসা ২০ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীর অধিকাংশই বিমানে করে জার্মানির বনে এসেছেন৷ অথচ বিমান হচ্ছে কার্বন নির্গমনের একটি বড় উৎস৷ অর্থাৎ অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেকেই পরিবেশের ক্ষতি করে পরিবেশ বাঁচানোর আলোচনা করতে এসেছেন৷ কিন্তু বিমান ছাড়া তো আর বিকল্পও নেই৷ জার্মানি অবশ্য এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
অফসেট
এটি জলবায়ু সংক্রান্ত একটি ‘টার্ম’৷ কার্বন নির্গমনের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার একটি উপায় এটি৷ বিমান পরিবহণসহ অংশগ্রহণকারীদের রাতে হোটেলে থাকা, লাইট, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, এসব নানা কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে দিতে জার্মানি ‘সার্টিফায়েড এমিশন রিডাকশন’ বা সিইআর ক্রেডিট কিনবে৷ আরও জানতে ক্লিক করুন উপরে (+) চিহ্নে৷
ছবি: DW/H. Kaschel
সিইআর ক্রেডিট
জার্মানির কেনা এই ক্রেডিট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে জাতিসংঘের ‘ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম’ বা সিডিএম-এর অধীনে যেসব প্রকল্প নিবন্ধিত আছে সেখানে ব্যবহৃত হবে৷ সিডিএম সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন উপরে (+) চিহ্নে৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
কাগজের ব্যবহার
আগের যে কোনো সম্মেলনের চেয়ে এবার কাগজের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ সম্মেলনের তথ্য সংক্রান্ত বেশিরভাগ কাগজপত্র প্রিন্ট না করে ইলেক্ট্রনিক উপায়ে ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে৷ তবে এরপরও কেউ প্রিন্ট চাইলে তাঁকে প্রিন্ট করে দেয়া হচ্ছে৷ তবে সেটা একই পাতার এপাশ-ওপাশ করে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
রিসাইকেল
একেক রকমের ময়লা ফেলার জন্য একেক রকমের ‘ডাস্টবিন’ রাখা হয়েছে৷ সেখানে পাওয়া ময়লা এবং সম্মেলনের জন্য তৈরি করা ব্যানারগুলো রিসাইকেল করে ভবিষ্যতের জলবায়ু সম্মেলনের জন্য পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল কিংবা ব্যাগ তৈরির কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
প্লাস্টিক বোতল
এটি ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ফেলার জায়গা৷ এ সব বোতল জমা দিয়ে পাওয়া অর্থ ‘নিউ ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম’-কে দান করা হবে৷ এটি ‘কোকা কোলা ফাউন্ডেশন’ ও ‘গ্লোবাল ওয়াটার চ্যালেঞ্জ’-এর একটি যৌথ উদ্যোগ৷ পানি পানের জন্য প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে বিনামূল্যে বার বার ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল দেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
হাইড্রোজেন বাস
হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে চলে এই বাস৷ এটা এখনও ব্যয়বহুল ও জটিল এক প্রক্রিয়া৷ তবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে জার্মান গবেষকরা এই প্রযুক্তিতে কার্যকর করার চেষ্টা করছে৷ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের এক জোন থেকে আরেক জোনে নিয়ে যেতে এই বাস ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
ইলেকট্রিক গাড়ি
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে তৈরি বিদ্যুৎ দিয়ে চলছে এই বাস৷ কপ২৩-এ ব্যবহৃত ইলেকট্রিক গাড়িগুলো বেশিভাগই কোরিয়ায় তৈরি৷ ই-কারের জগতে জার্মান গাড়ি নির্মাতারা এখনও কোরিয়া, জাপান ও চীনাদের চেয়ে পিছিয়ে আছে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
সাইকেল
পরিবেশবান্ধব এই বাহনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ নেক্সটবাইক কোম্পানির প্রায় ছয়শটি সাইকেল কপ-এ ব্যবহৃত হচ্ছে৷ অংশগ্রহণকারীরা একটি অ্যাপ ডাউনলোড করলে সেখান থেকে একটি পিন পাচ্ছেন৷ সেই পিন দিয়ে যে কোনো সাইকেল খুলে নিয়ে যাতায়াত শুরু করতে পারছেন৷ সেবাটি অবশ্যই বিনামূল্যে৷
ছবি: DW/A. Setiawan
হাইব্রিড বাস
এটি আসলে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব নয়৷ নামই বলে দিচ্ছে যে, এতে ডিজেল ও বিদ্যুৎ দুই-ই ব্যবহৃত হয়৷ অংশগ্রহণকারীদের আনা নেয়ায় এই বাসেরও ব্যবস্থা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: DW/A. Setiawan
10 ছবি1 | 10
কোন ইঞ্জিন শেষ পর্যন্ত কন্টেনার জাহাজে কাজে লাগবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ শ্লেসভিকে তৈরি এই প্রোটোটাইপ অভ্যন্তরীণ এবং উপকূলীয় এলাকায় জাহাজ চলাচল ক্ষেত্রে অগ্রগতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ স্টেফানি এঙেলহার্ড বলেন, ‘‘নৌযানে সেন্সর বসিয়ে পরিমাপ করে আমরা এই প্রযুক্তির প্রয়োগের গভীর মূল্যায়ন করছি৷ কোন সেন্সর কোন পরিস্থিতিতে খুব ভালো কাজ করে, সেই তথ্য সংগ্রহ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে শেখানোর চেষ্টা চলছে৷ এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রযুক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে শেষে অটোনমাস ড্রাইভিং সম্ভব করাই হলো উদ্দেশ্য৷''
ফেয়ারওয়ে চিহ্নিত করতে ভাসমান বয়া সেন্সরগুলিকে দিকনির্ণয় করতে সহায়তা করছে৷ তবে ইঞ্জিনের একটি অংশ এখনো না থাকায় প্রোটোটাইপ নৌকাটিকে এখনো টেনে নিয়ে যেতে হয়৷
প্রকল্পের অর্থায়নের প্রক্রিয়া অবশ্য শুরু হয়ে গেছে৷ স্টার্টআপ কোম্পানি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে৷ পরবর্তী পর্যায়ের জন্য দুই কোটি ৩০ লাখ ইউরোর বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে৷