জার্মানিতে জোট সরকার: প্রাথমিক আলোচনায় একমত সিডিইউ, এসপিডি
৯ মার্চ ২০২৫
জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে জার্মানির নির্বাচনে বিজয়ী রক্ষণশীল সিডিইউ ও বাভারিয়ায় তাদের সহযোগী দল সিএসইউ এবং সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা৷
সিডিইউ/সিএসইউ এবং এসপিডি অভিবাসন, অর্থনীতি এবং সমাজকল্যাণ সম্পর্কিত নীতিমালা নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছেছেছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস শনিবার জানিয়েছেন, জার্মানির পরবর্তী জোট সরকার গঠনের জন্য আলোচনারত দলগুলো একটি চুক্তিতে একমত হয়েছে৷
দলগুলো একমত হয়েছে যে, ম্যার্ৎসের খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন - সিডিইউ এবং বাভারিয়ায় তাদের সহযোগী দল খ্রিস্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন - সিএসইউ বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মধ্য-বামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল - এসপিডি এর সঙ্গে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবে৷
ম্যার্ৎস জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
শিগগিরই শুরু আনুষ্ঠানিক আলোচনা
এসপিডির সহ-নেতা এবং সংসদীয় দলের নেতা লার্স ক্লিংবাইল এবং অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বার্লিনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ম্যার্ৎস জানান, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন৷
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে স্থলসীমান্তে নথিবিহীন অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাসহ নানা ইস্যুতে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা৷
ক্লিংবাইল বলেন, এসপিডি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে যে, যোগ্যতার সময়সীমা কমিয়ে জার্মানির নাগরিকত্ব আইনের সাম্প্রতিক যে সংস্কার আনা হয়েছে তা নতুন সরকারের আমলেও বহাল থাকবে৷
কর নীতি নিয়েও আংশিকভাবে আলোচনা হয়েছে৷ মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর বোঝা কমানোর পরিকল্পনা, জ্বালানি বিল কমানো এবং রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) স্থায়ীভাবে হ্রাস করার পরিকল্পনা ছিল আলোচনার বিষয়৷
ক্লিংবাইল জানিয়েছেন যে, তার দল ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি ১৫ ইউরো (এক ইউরো = প্রায় ১৩০ টাকা) এবং স্থিতিশীল অবসরভাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলোর বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছে৷
জার্মানিতে দুই বিরোধী দল রাজনীতিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে
01:52
This browser does not support the video element.
ম্যার্ৎস জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক জোট গঠনেক আলোচনার ভিত্তি হবে একটি যৌথ নথি৷ এই আলোচনা প্রয়োজনে আগামী সপ্তাহে শুরু হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানিতে শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের হুমকি এবং রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইউক্রেনের উপর তীব্র চাপের কথা উল্লেখ করে ম্যার্ৎস বলেন, ‘‘আমরা যে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি - সর্বোপরি আন্তর্জাতিক পরিস্থিত সম্পর্কে সচেতন৷''
ইস্টারের আগে জোট গঠনের লক্ষ্য
ইস্টারের আগেই আলোচনা শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ম্যার্ৎস৷
জার্মানিতে জোট সরকার সাধারণত দুইটি পর্যায়ে গঠিত হয়৷ প্রথমে দলগুলো অনুসন্ধানমূলক আলোচনা করে এবং তারপর আনুষ্ঠানিক জোট আলোচনায় প্রবেশ করে৷
আলোচনারত দুই দল আগামী সপ্তাহের আগেই একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়৷ ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত করতে এবং সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির জন্য পার্লামেন্টের মাধ্যমে জার্মানির ঋণসীমা শিথিল করার আশা করছে দল দুটি৷
২৩শে ফেব্রুয়ারির পার্লামেন্ট নির্বাচনে সিডিইউ/সিএসইউ ২৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে৷ এসপিডি ১৬ দশমিক চার শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে৷ অভিবাসনবিরোধী অতি-ডানপন্থি অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড বা জার্মানির জন্য বিকল্প - এএফডি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে৷ এএফডি'র সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে নির্বানের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ম্যার্ৎস৷
জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর খতিয়ান
রোববার জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন৷ ছবিঘরে এক নজরে দেখে নিন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং তারা কী চায়।
ছবি: Florian Gaertner/photothek/imago images
সিডিইউ/সিএসইউ
মধ্য-ডানপন্থি সিডিইউ এবং বাভারিয়ায় এর আঞ্চলিক সহযোগী সিএসইউ যৌথভাবে ইউনিয়ন নামে পরিচিত। বয়স্ক, গ্রামীণ এবং গির্জাগামী মানুষের মধ্যে দলটির সমর্থন বেশি। শিল্প নেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং নিম্ন বা মাঝারি শিক্ষার ভোটারদের মধ্যেও ভালো ফল করেছে তারা। কর্পোরেট কর কমানো, উচ্চ-আয়ের মানুষদের সুবিধা প্রদান, আশ্রয়বিধি কঠোর করা, অপরাধী শরণার্থীদের বহিষ্কার করা ইত্যাদি এর এজেন্ডায়। দলটির নির্বাচনী রঙ- কালো৷
ছবি: Christof Stache/AFP/Getty Images
এসপিডি
মধ্য-বামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল- এসপিডি ঐতিহ্যগতভাবে শ্রমিক শ্রেণী এবং ট্রেড ইউনিয়নের দল। ঐতিহ্যগতভাবে জার্মানিতে এসপিডির সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল পশ্চিম জার্মানির শিল্প অঞ্চল, বিশেষ করে রুওর অঞ্চল, হেসে এবং লোয়ার সাক্সনি রাজ্য। ন্যূনতম মজুরির মতো সামাজিক নীতি গ্রহণ, ধনীদের ওপর কর আরোপ এবং নিম্ন ও মাঝারি আয়ের মানুষের করের বোঝা কমাতে চায় এসপিডি। দলটির নির্বাচনি রঙ- লাল।
ছবি: Bernd von Jutrczenka/dpa/picture alliance
গ্রিন পার্টি
পরিবেশবাদি দলটির মূল ভোটার ভিত্তি শহুরে সুশিক্ষিত জনগণ, বিশেষ করে পশ্চিম জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক শহরগুলোতে। তবে ধীরে ধীরে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হচ্ছে দলটি। ফ্রাইডে ফর ফিউচার এবং জলবায়ু নিয়ে নানা কর্মসূচি তরুণদের দলটির প্রতি আকৃষ্ট করছে। স্বাভাবিকভাবেই দলটির নির্বাচনী রঙ- সবুজ।
ছবি: Daniel Roland/AFP
এফডিপি
নয়া-উদারপন্থি মুক্ত বাজারের সমর্থক মুক্ত গণতন্ত্রী দল- এফপিডি সাধারণত ব্যবসায়ী, ডেন্টিস্ট এবং আইনজীবীদের কাছে জনপ্রিয়। শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে এর জনপ্রিয়তা কম। ব্যক্তির স্বাধীনতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা কমানোই হচ্ছে দলটির মূলনীতি। ইউরোপপন্থি এই দল কর ছাড়ের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছে। দলটির নির্বাচনী রঙ- হলুদ।
ছবি: Hannes P Albert/dpa/picture alliance
ডি লিংকে
বামপন্থি দল ডি লিংকের মূল ঘাঁটি সাবেক পূর্ব জার্মান অঞ্চলে। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো বিলুপ্ত করে দিতে চায় দলটি। অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম মজুরি অনেক বাড়ানো, অবসরের বয়েস কমানো, অভিবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া ইত্যাদি। দলটির নির্বাচনি রঙ- লাল।
ছবি: Hendrik Schmidt/dpa/picture alliance
এএফডি
অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড বা জার্মানির জন্য বিকল্প- এএফডি একটি কট্টর ডানপন্থি অভিবাসী বিরোধী দল। গঠিত হওয়ার পর গ্রিন ছাড়া অন্য প্রায় সব দল থেকেই সমর্থকেরা এই দলের প্রতি আনুগত্য বদল করেছেন। পূর্ব জার্মানিতে এর সাফল্য তুলনামূলক বেশি। জার্মান ঐতিহ্যে গুরুত্ব দেয় দলটি, ইসলামকে জার্মান সমাজের অংশ মনে করে না। দলটির নির্বাচনী রঙ- হালকা নীল।
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
বিএসডাব্লিউ
২০২৪ সালে গঠিত এই পপুলিস্ট দলটি খুব দ্রুতই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সারা ভাগেনক্নেশট জোট বা ব্যুন্ডনিস সারা ভাগেনক্নেশট- বিএসডাব্লিউ এর চেয়ারম্যান সাবেক বামপন্থি নেত্রী সারা ভাগেনক্নেশট। পূর্ব জার্মানিতে এই দলের সমর্থন বেশি। সামাজিক বিচার, চাকরির নিরাপত্তা ইত্যাদি ইস্যুতে বামপন্থি নীতিতে থাকলেও অভিবাসন, লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু ইস্যুতে তাদের নীতির সঙ্গে ডানপন্থিদের মিল রয়েছে। দলটির নির্বাচনী রঙ- বেগুনি।