জার্মানিতে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও সামান্য বেতন পান৷ কিন্তু যে চিকিৎসকদের নিজস্ব চেম্বার আছে তারা সরকারের টিকাদান কর্মসূচি থেকে অনেক লাভবান হচ্ছেন বলে মনে করেন মার্কো ম্যুলার৷
বিজ্ঞাপন
সব নাগরিককে দ্রুত টিকা দিতে গতবছরের শুরুতে দেশজুড়ে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র খুলেছিল জার্মানি৷ পাশাপাশি চিকিৎসকদের চেম্বারেও টিকা দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ছয়মাস পর টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তির সংখ্যা কমে যাওয়ায় অস্থায়ী ঐ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷
২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির পাঁচ হুমকি
ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করা বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারো চোখ রাঙাচ্ছে করোনা৷ সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, শিল্পে কাঁচামালের ঘাটতি কিংবা ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতাও তৈরি করছে অনিশ্চয়তা৷
ছবি: Gareth Fuller/empics/picture alliance
করোনার টিকা প্রতিরোধী ভ্যারিয়েন্ট
২০২১ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে গতি ফেরায় আস্থা পেয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা৷ তাই চাঙা হতে শুরু করে শেয়ার বাজার৷ কিন্তু নভেম্বর থেকে ওমিক্রনের ধাক্কা নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যান অবশ্য মনে করছে ওমিক্রনের প্রভাব ততটা প্রবল হবে না অর্থনীতিতে৷ তবে টিকা প্রতিরোধী নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিলে পরিস্থিতি আবার ওলট-পালট হতে পারে৷
ছবি: Waldemar Thaut/Zoonar/picture alliance
আইএমএফ-এর পরামর্শ
আইএমএফ বলছে, মহামারি প্রলম্বিত হলে মধ্য মেয়াদে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷ তাদের বর্তমান পূর্বাভাসের চেয়ে আগামী পাঁচ বছরে জিডিপি পাঁচ দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলার কমতে পারে৷ ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি দেশে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ৷ তবে স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ মানুষের টিকা সম্পন্ন হয়েছে৷
ছবি: Gil Cohen Magen/Xinhua News Agency/picture alliance
সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি
মহামারির ধাক্কা কাটলেও বিশ্ব বাণিজ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি অর্থনীতির গতি টেনে ধরতে পারে৷ এরই মধ্যে জার্মানিসহ ইউরোজোনের গাড়ি নির্মাতা দেশগুলো যন্ত্রাংশ সরবরাহের ঘাটতিতে তাদের উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছে৷ পরিবহণ ও লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি বলছে, ২০২২ সালেও এই পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি হবে না৷
ছবি: Getty Images/J. Schlueter
ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি
কাঁচামাল ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি উল্লম্ফন ঘটেছে৷ ইউরোজোন ও যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় সাম্প্রতিক বছরগুলোর রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এর লাগাম টেনে ধরতে সুদের হার বাড়াতে পারে বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে৷ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হলে ২০২২ সালের বেশিরভাগ সময় জুড়েই মূল্যস্ফীতি মানুষকে ভোগাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা৷
ছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance
চীনের ধীরগতি
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার ধীরগতি বিনিয়োগকারীদের চিন্তায় ফেলছে৷ ২০২০ সালে দেশটির ইলেকট্রনিক ও মেডিক্যাল পণ্যের চাহিদা গোটা বিশ্বকে মহামারির ধাক্কা সামলাতে সাহায্য করেছিল৷ সাম্প্রতিক সময়ে আলিবাবার মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেয়ায় তাদের অর্থনীতি কোণঠাসা হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে৷ তবে চীন বলছে, ২০২২ সালে তাদের মূল লক্ষ্য অর্থনীতি স্থিতিশীল করা৷
ছবি: Getty Images
ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা
ইউক্রেনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্কের ক্রম অবনতি হচ্ছে৷ এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটো দেশগুলোর অবরোধ ও যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখছেন অনেকে৷ এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ নর্ড স্ট্রিম টু গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দিলে তা সারা বিশ্বেই জ্বালানি সংকট তৈরি করবে৷ এতে তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে৷ সামনের দিনের বিশ্ব বাণিজ্য নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের উপরও৷
ছবি: Eric Baradat/Pavel Golovkin/AFP
6 ছবি1 | 6
এর কয়েক সপ্তাহ পর বিশেষজ্ঞরা বুস্টার ডোজ দেয়ার পরামর্শ দেন৷ কিন্তু ততদিনে টিকাদান কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকদের চেম্বারে টিকা দেয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে৷
প্রতি ডোজ টিকা দেয়ার বিনিময়ে চেম্বারের চিকিৎসকরা শুরুতে ২০ ইউরো (১,৯৩৪ টাকা) করে পেতেন৷ গতবছর সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের আগে এই টাকা বাড়িয়ে মধ্য নভেম্বর থেকে ২৮ ইউরো (২,৭০৮ টাকা) করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান৷
এরপর নতুন সরকার গঠনের পর নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাখ বড়দিন ও নতুন বছরের ছুটির মৌসুমে (২৪ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি) বুস্টার ডোজ দেয়ার গতি ধরে রাখতে প্রতি ডোজ টিকা দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রাপ্তি আরও বাড়িয়ে ৩৬ ইউরো (৩,৪৮২ টাকা) করেন৷
ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতি ডোজ টিকা দেয়ার জন্য চেম্বারের চিকিৎসকরা আট ইউরো (৭৭৪ টাকা) পেয়ে থাকেন৷ এই টাকা বিমা কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের দিয়ে থাকে৷ কিন্তু করোনার টিকা দেয়ার জন্য চিকিৎসকরা ‘ফেডারেল অফিস ফর সোশ্যাল সিকিউরিটি' অর্থাৎ রাজ্য কর্তৃপক্ষ তথা করদাতাদের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছেন৷
জার্মানির স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন মনে করে করোনার এক ডোজ টিকার জন্য চিকিৎসকদের ১০ ইউরো (৯৬৭ টাকা) দেয়া যথেষ্ট৷
জার্মানিতে চেম্বার থাকা একজন চিকিৎসক চেম্বার পরিচালনা ব্যয় বাদ দেয়ার পর বছরে গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ ইউরো (প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা) আয় করেন, যা একজন সাধারণ নাগরিকের গড় আয়ের চেয়ে অনেক বেশি৷ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরও বেশি প্রায় চার কোটি টাকা আয় করেন৷
করোনার কারণে বেশিরভাগ মানুষ তাদের আয়ের একটা বড় অংশ হারিয়েছেন৷ এরপরও তারা যা আয় করেছেন, তা থেকে কিছু অংশ চিকিৎসকদের দিতে হয়েছে (কারণ করদাতাদের টাকা চিকিৎসকদের দেয়া হয়েছে)৷ এটা যুক্তিসঙ্গত হয়নি৷ সমাজে অসমতা ও বিভাজন বাড়ার এটা আরেকটা উদাহরণ৷ চিকিৎসকরা অন্য যে-কোনো টিকার জন্য যে টাকা পান সেটাই যদি করোনার টিকার জন্য তাদের দেয়া হত তাহলে কি টিকাদান কর্মসূচি ব্যর্থ হত? সম্ভবত না৷ আর যদি হত, তাহলে সেটা আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিত৷