জার্মানিতে টিকা নিতে অনিচ্ছুক মানুষের উপর আরো চাপ
২ ডিসেম্বর ২০২১
আগামী সপ্তাহে নতুন সরকার কার্যভার গ্রহণ করার আগেই ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি আরো কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে৷ বিশেষ করে করোনা টিকা নিতে অনিচ্ছুকদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকট মোকাবিলায় আরো কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে জার্মানি৷ মঙ্গলবার বিদায়ী ও সম্ভাব্য চ্যান্সেলরের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে নীতিগত ঐকমত্যের পর বৃহস্পতিবার তাঁরা আবার টেলিফোন কনফারেন্সের মাধ্যমে মিলিত হয়ে একগুচ্ছ নতুন পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷
টানা তিন দিন ধরে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের হার সামান্য মাত্রায় কমে চলায় কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছে৷ তবে বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিকরা এখনো সতর্ক থাকার পক্ষে সওয়াল করছেন৷ বিশেষ করে হাসপাতালগুলির উপর চাপ মোটেই কমছে না বলে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরো কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন৷ সুযোগ সত্ত্বেও করোনা টিকা নিতে অনিচ্ছুক মানুষকে যতটা সম্ভব একঘরে করে রেখে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে দোকানবাজারসহ অনেক জায়গায় তাদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার কথা হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে আগামী বছরের শুরুতে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে৷ জার্মানির সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন৷ বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে৷
জার্মানির রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী পরিষদের বর্তমান সভাপতি নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেন্ডরিক ভ্যুস্ট বুধবার বলেন, করোনা সংক্রমণের নাটকীয় হার কমাতে কড়া পদক্ষপ নিতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে কোনো ঢিলেমির অবকাশ আর নেই৷ ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে সম্ভাব্য নতুন সরকার সংক্রমণ সুরক্ষা আইন আরো জোরালো করতে নতুন সংশোধনী আনতে রাজি হওয়ায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ সে ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লকডাউন জারি করা সম্ভব হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
মানুষের মধ্যে যোগাযোগ কমাতে এবং সর্বত্র টিকা নিতে অনিচ্ছুক মানুষের প্রবেশাধিকার সঙ্কুচিত করলে অর্থনীতির উপর বাড়তি চাপের আশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ বিশেষ করে দোকানবাজার ও অন্যান্য পরিষেবার ক্ষেত্রে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে আয়ও কমে যাবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন৷
জার্মানিতে করোনার চতু্র্থ ঢেউ
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি৷ সংক্রমণের হার, দৈনিক মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জার্মানিতে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব আসলে চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানার ইঙ্গিত৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
দৈনিক মৃত্যু বাড়ছে দ্রুত
ওপরের ছবিটি বন শহরের এক কবরস্থানের৷ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া স্ত্রীকে স্মরণ স্বামী৷ জার্মানির অনেক শহরেই এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট (আরকেআই)- এর তথ্য অনুযায়ী, গত পহেলা অক্টোবর সারা দেশে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ১৮ জন৷ ১৮ নভেম্বর সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২০১ জন৷ একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড এটি৷
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/imago images
কফিনেও সতর্কবার্তা
কবরস্থানে কফিনের সারি৷ একটি কফিনে জার্মান ভাষায় লেখা, ‘ইনফেকসিয়ন্সগেফার’, যার অর্থ ‘ইনফেকশনের ঝুঁকি’৷
ছবি: Robert Michael/dpa/picture alliance
ঝুঁকিতে বয়স্করা
ছবিতে এক ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ একজনকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার দৃশ্য৷ করোনায় বয়স্কদের প্রাণহানির শঙ্কা সবসময়ই বেশি৷ সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধাশ্রমে নতুন করে হানা দিয়েছে করোনা৷
ছবি: Jens Kalaene/dpa/picture alliance
শিশুরাও আক্রান্ত
জার্মানিতে শিশুরাও করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের সংক্রমণের হার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে৷ জার্মানির স্কুলে আগে থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করানো হয়৷ এখন সব শিশুকে টিকা দেয়া শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
আইসিইউ সংকট
লাইপসিশের এক হাসপাতালের আইসিইউতে করোনার চিকিৎসার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷ সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর ভিড়ও বাড়ছে৷ আইসিইউ খালি পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে অনেক হাসপাতালে৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি
হামবুর্গের এই স্টেশনের মতো জার্মানির সব শহরের গণপরিবহনে আবার ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ তবে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থবিধির কঠোর অনুসরণও সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ দুই ডোজ টিকা নেয়া, করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া কিংবা করোনা থেকে অতি সম্প্রতি সেরে ওঠা ব্যক্তিরাই কেবল ট্রেন, ট্রাম বা বাসে উঠতে পারেন৷
ছবি: Eibner/imago images
হোম অফিস
একটা সময় সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় জার্মানিতে হোম অফিসের বাধ্যবাধকতা অনেক শিথিল করা হয়েছিল৷ কিন্তু ‘ফোর্থ ওয়েভ’-এর আশঙ্কা জাগতেই আবার নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন৷ সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ঘরে বসে কাজ করাকেই আবার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অনেকে৷৷
ছবি: Imago/S. Midzor
ক্রিসমাস মার্কেটে কঠোরতা
ওপরে ফ্রাইবুর্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটের ছবি৷ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে ক্রিসমাস মার্কেট চলছে সেখানে৷ জার্মানির বেশিরভাগ শহরেই এভাবে ক্রিসমাস মার্কেট বসেছে৷ তবে বাভারিয়া রাজ্য কর্তৃপক্ষ খুব কঠিন নিয়মে শুরু করেছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ কোনো শহরে সপ্তাহে সংক্রমণ এক হাজার হবার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকা লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বাভারিয়া৷
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
আবার বিনা পয়সায় করোনা পরীক্ষা
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় সবাইকে নিজের খরচে করোনা পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিল জার্মান সরকার৷ কিন্তু করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত দেখা দিতেই আবার বদলে গেছে নিয়ম৷ ফিরে এসেছে বিনে পয়সায় করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
9 ছবি1 | 9
আরো বেশি কিশোর ও তরুণদের করোনা টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে শলৎস এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন৷ তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হলে শুধু বয়স্করা গুরুতর অসুস্থ হচ্ছেন, তরুণরাঅল্পেই সেরে উঠছে – এখন আর এমনটা দেখা যাচ্ছে না৷ ফারাক শুধু টিকাপ্রাপ্ত ও টিকা না নেওয়া মানুষের মধ্যে রয়েছে৷ শলৎস বলেন, কেউ টিকা না নিলে শুধু নিজেকে নয়, আশেপাশের শিশু ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে বিপদে ফেলা হয়৷