জার্মানির বাভারিয়া রাজ্য়ের মুখ্য়মন্ত্রী মার্কুস শ্য়োডার করোনার টিকা নেয়া বাধ্য়তামূলক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন- বিশেষ করে নার্সদের জন্য়৷ ভুল সময়ে শ্য়োডার এই চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের ইয়েন্স থুরাও৷
বিজ্ঞাপন
করোনা মহামারির সময়ে নিজেকে অন্য়তম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন শ্য়োডার৷ স্বাস্থ্য় ও সেবাখাতে কাজ করা কর্মীদের জন্য় টিকা বাধ্য়তামূলক করার কথা তিনিই সবচেয়ে বেশি বলছেন৷ এক্ষেত্রে বয়স্ক রোগী ও বাসায় থাকা রোগীদের নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি সামনে নিয়ে আসছেন৷
করোনার শুরু থেকেই জার্মানির রাজনীতিকরা বলে আসছেন,টিকা আসলেও সেটা নেয়া বাধ্য়তামূলক করা হবে না৷ কারণ অনেকে মনে করছেন, করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে মানুষের চলাফেরা সীমিত করাসহ অন্য়ান্য় যে ব্য়বস্থা নেয়া হচ্ছে, সেগুলো মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি৷ মানুষ মনে করছে, অনেকদিন ধরে তারা নিজেদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারছে না৷
সম্প্রতি জরিপে দেখা গেছে, নার্স ও ডাক্তারদের অনেকে টিকা নিতে চান না৷ এই সংখ্য়াটা ধারনার চেয়েও বেশি হওয়ায় শঙ্কিত হয়ে শ্য়োডার টিকা বাধ্য়তামূলক করার চেষ্টা শুরু করেছেন৷
জার্মানিতে অতীতেও কিছু টিকা নেয়া বাধ্য়তামূলক ছিল৷ যেমন প্রবীণরা পোলিও টিকার কথা মনে করতে পারেন৷ এছাড়া করোনা শুরু হওয়ার কয়েকমাস আগে জার্মান সংসদ শিশু এবং ডে-কেয়ার সেন্টার ও স্কুলসহ স্বাস্থ্য়সেবা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কর্মীদের জন্য় হামের টিকা বাধ্য়তামূলক করেছে৷ সাংবিধানিক আদালতও সবসময় বাধ্য়তামূলক টিকার বিরোধিতা খারিজ করে দিয়েছেন৷ করোনার টিকা বাধ্য়তামূলক করলে আইনত কোনো সমস্য়া হবে না৷
অনেক স্বাস্থ্য়কর্মী মনে করছেন, রেকর্ড সময়ে টিকা তৈরি ও তা ব্য়বহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া যারা টিকা নিচ্ছেন তারা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারছেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের সংখ্য়া অনেক বেশি৷ কড়া লকডাউন চলছে, যদিও ফ্রান্স ও স্পেনের মতো ততটা কড়া নয়৷ মানুষকে নিয়মের মধ্য়ে থাকতে বাধ্য় করার মতো পুলিশ জার্মানির নেই৷ তাই নাগরিকরা যেন স্বেচ্ছায় সরকারকে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে, তার উপর রাজনীতিবিদদের নির্ভর করতে হবে৷ এবং আশা করতে হবে যেন নাগরিকরা ক্রমে টিকার গুরুত্ব বুঝতে পারেন৷
টিকা বাধ্য়তামূলক করতে চাওয়ার আলোচনা তোলার সবচেয়ে বাজে সময় এখন৷ শ্য়োডার সেটাই বেছে নিয়েছেন৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান৷ সেই দৌড়ে এগিয়ে উন্নত দেশগুলোই৷ উন্নয়নশীল কয়েকটি দেশ থাকলেও কোনো ‘অনুন্নত দেশ’ এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি৷ বিভিন্ন দেশের টিকা কার্যক্রমের পরিসংখ্যান জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Fedja Grulovic/REUTERS
ইসরায়েল
করোনার টিকা কার্যক্রমে সবার চেয়ে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ইসরায়েল৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে তারা ১৯ ডিসেম্বর থেকে৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে৷ অর্থাৎ, ১৭ ভাগ জনগোষ্ঠীকে এরই মধ্যে টিকার আওতায় এনেছে ইসরায়েল, যা সবার চেয়ে বেশি৷
ছবি: Tsafrir Abayov/AP/picture alliance
সংযুক্ত আরব আমিরাত
পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সোয়া আট ভাগের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছে৷ মোট আট লাখ ২৬ হাজার ডোজ টিকা দিয়েছে তারা এই সময়ের মধ্যে৷
ছবি: Reuters/S. Kumar
বাহরাইন
পারস্য উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনের প্রতি ১০০ জনের চারজন এরই মধ্যে টিকা পেয়েছেন৷ এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের পরেই তাদের অবস্থান৷ মোট টিকাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
যুক্তরাষ্ট্র
করোনার টিকা বিতরণের মোট সংখ্যায় সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৫৩ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন৷ কিন্তু শতকরা হিসেবে ৬ জানুযারি পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন এক দশমিক ছয় শতাংশ৷
ছবি: Alex Edelman/AFP
যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম চালু করে যুক্তরাজ্য৷ তাদের হালনাগাদ তথ্যটি ২৭ ডিসেম্বরের৷ সেই হিসাবে সাড়ে নয় লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করেছে তারা, যা মোট জনগোষ্ঠীর সোয়া এক ভাগের বেশি৷
ছবি: Danny Lawson/empics/picture alliance
চীন
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিনোফার্মের টিকার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে চীন৷ শেষ ধাপের ট্রায়ালে আছে আরো কয়েকটি৷ তবে অনুমোদনের আগে পরীক্ষা পর্যায়েই সেসব টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৪৫ লাখ মানুষের দেহে৷ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশটিতে শতকরা হিসাবে সেটি একভাগেরও কম৷ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা দেশটির৷
ছবি: Zhang Yuwei/AP/picture alliance
রাশিয়া
ট্রায়াল শেষের আগেই বিশ্বে সবার আগে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকার অনুমোদন দিয়ে আলোচনায় আসে রাশিয়া৷ ৫ জানুয়ারির ঘোষণা অনুযায়ী দেশটি এরই মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে স্পুটনিক ফাইভ নামের সেই টিকা দিয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক ভাগের কম৷
ছবি: Natacha Pisarenko/AP Photo/picture alliance
জার্মানি
২৭ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপের দেশগুলো একজোটে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে৷ তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে জার্মানি৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে তিন লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন৷ জনসংখ্যার হিসাবে এটি এক ভাগের প্রায় অর্ধেক৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
ইটালি
মোট সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে জার্মানির চেয়ে ইটালি কিছুটা এগিয়ে৷ করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ভোগা দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন লাখ সাত হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক পাঁচ-এক ভাগ৷
ছবি: Matteo Bazzi/REUTERS
ক্যানাডা
১৬ ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়া শুরু করে ক্যানাডা৷ এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত সেখানে করোনার প্রতিষেধক পেয়েছেন, যা জনসংখ্যার দশমিক চার-তিন ভাগ৷
ছবি: Adrian Wyld/REUTERS
স্পেন
৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্পেনে এক ৩৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে, যদিও জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে তা উল্লেখযোগ্য নয়৷
ছবি: Alvaro Calvo/Government of Aragon/Getty Images
বাকি বিশ্ব
ইউরোপের সব দেশেই করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশও তড়িঘড়ি করেই কার্যক্রম শুরু করেছে৷ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে ৫২ হাজার ডোজ বিতরণ করেছে৷ তবে এই দৌড়ে এখনও যোগ দিতে পারেনি সিংহভাগ উন্নয়নশীল ও কোনো অনুন্নত দেশ৷ সব মিলিয়ে বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় মাত্র দশমিক দুই ভাগ টিকা বিতরণ করা হয়েছে৷