বৃহস্পতিবার রাতে জার্মানি-জুড়ে ট্রেন চালকরা একদিনের ধর্মঘট পালন করছেন। ফলে প্রচুর ট্রেন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা।
বিজ্ঞাপন
জার্মানির জাতীয় রেলওয়ের ট্রেন চালকদের এই ধর্মঘট শুক্রবার রাত পর্যন্ত চলবে। এর জেরে কয়েক হাজার ট্রেন বাতিল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছা্ড়া সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মালগাড়িও চলবে না।
ট্রেন চালকদের এই ধর্মঘটের ফলে দূরপাল্লার ট্রেনের পাশাপাশি আঞ্চলিক ট্রেন চলাচলও বিঘ্নিত হবে।
এই বছরে এই নিয়ে চারবার ধর্মঘটে গেলেন সরকারি রেলের কর্মীরা। গত ১৫ ও ১৬ নভেম্বরে কর্মীদের ধর্মঘটের জেরে ৮০ শতাংশ ট্রেন বাতিল করতে হয়েছিল।
কোন দাবিতে ধর্মঘট?
ট্রেন চালকদের ইউনিয়ন জিডিএলের দাবি, মাসিক বেতন ৫৫৫ ইউরো(প্রায় ৬৬ হাজার বাংলাদেশি টাকা) বাড়াতে হবে। তাছাড়া সপ্তাহে কাজের সময় ৩৮ ঘণ্টা থেকে ৩৫ ঘণ্টা করতে হবে। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে এককালীন তিন হাজার ইউরো দিতে হবে।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কাজের সময় কম করা যাবে না। তবে তারা ১১ শতাংশ বেতন বাড়াতে রাজি।
জার্মানিতে ধর্মঘটে জনজীবন বিপর্যস্ত
আমাদের দেশে অহরহ ধর্মঘটের কথা শোনা যায়৷ মনে হতে পারে বিদেশে হয়ত ধর্মঘট হয় না৷ কিন্তু জার্মানিতে চলছে রেল ও বিমান ধর্মঘট৷ ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক মানুষ৷
ছবি: Reuters/Kai Pfaffenbach
বিমান ধর্মঘট
ট্রেনচালকদের ধর্মঘট শেষ না হতেই জার্মানির বিমান পরিবহণ সংস্থা লুফৎহানসার পাইলটরা সোমবার থেকে ৩৫ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয়৷
ছবি: Reuters/Wolfgang Rattay
ফ্লাইট বাতিল
পাইলটদের ধর্মঘটের কারণে সোমবার ১,৪৫০টি ও মঙ্গলবার ২,৩০০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে৷ উড়োজাহাজ সংস্থাটি তাদের পেনশন ব্যবস্থা পরিবর্তনের যে পরিকল্পনা করেছে তার বিরুদ্ধে পাইলটদের এ ধর্মঘট চলছে৷
ছবি: Reuters/Ina Fassbender
অবসরের বয়স
লুফৎহানসা কর্মীদের অবসর নেয়ার বয়স বর্তমানের ৫৫ বছর থেকে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিক ইউনিয়ন৷
ছবি: Reuters/Michael Dalder
ধর্মঘটে সংহতির আহ্বান
পাইলটদের ইউনিয়ন ‘ফেরাইনিগুং ককপিট’ (ভিসি) লুফৎহানসার সাশ্রয়ী শাখা জার্মান উইংসে থাকা তাদের সদস্যদের ধর্মঘটে যাওয়ার আহ্বান জানায়৷ এ প্রসঙ্গে লুফৎহানসার এক বিবৃতিতে বলা হয়, এপ্রিলের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট আটবার ধর্মঘট করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Ina Fassbender
যাত্রীদের ভোগান্তি
পাইলটদের নতুন করে ডাকা ধর্মঘটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ১,৬৬,০০০ যাত্রী৷ লুফৎহানসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কেবল এক-তৃতীয়াংশ ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে৷
ছবি: Getty Images
ট্রেন ধর্মঘট
শুক্রবার জার্মান ট্রেন চালকদের ইউনিয়ন জিডিএল ৫০ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয়৷ শনিবার দুপুর থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত চলে এই ধর্মঘট৷ ফলে আঞ্চলিক ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছিল৷ যাত্রীদের পড়তে হয়েছিল ভয়াবহ ভোগান্তিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
ট্রেনের বিকল্প যখন বাস
গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক এ ধর্মঘটে সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীরা বিপাকে পড়েছিলেন৷ ট্রেন ধর্মঘটের কারণে অনেকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নেন দূরপাল্লার বাস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reichel
যানজটের আশঙ্কা
আশঙ্কা ছিল ট্রেন ধর্মঘটের কারণে সড়কপথে চাপ বাড়বে৷ ফলে রাস্তায় যানজটের আশঙ্কা ছিল৷ এছাড়া ১১টি রাজ্যে হেমন্তের ছুটি চলছে৷ তবে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, রাস্তায় ততটা চাপ চোখে পড়েনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুনসান প্ল্যাটফর্ম
ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই শনিবারে প্ল্যাটফর্মগুলো জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে৷ তবে বিদেশি যাত্রীদের কয়েকজনকে মালপত্র নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
বেশি বেতন, ওভার-টাইম কম
জিডিএল বেতনভাতা ৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে৷ সেইসাথে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা কমিয়ে ৩৭ ঘণ্টা করার দাবি জানিয়েছে৷ এছাড়া ওভার-টাইম কমানোর দাবিও জানানো হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/Sean Gallup
স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা
সোমবার রেল ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর ইউনিয়ন থেকে জানানো হয়েছে আপাতত কোনো ধর্মঘট দেয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই৷ কেননা জার্মান সরকার ইউনিয়নের বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করে আইন তৈরির কথা ভাবছে৷
ছবি: Reuters/Kai Pfaffenbach
11 ছবি1 | 11
ডিজিএলের চেয়ারম্যান আগে ঘোষণা করেছিলেন যে, রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের আলোচনা গত ২৪ নভেম্বর ভেস্তে গেছে। তারপর ইউনিয়ন পুরোদস্তুর ধর্মঘটে যাওয়ার বিষয়ে সদস্যদের রায় জানতে ভোটাভুটি করছে। বড়দিনের আগে তার ফল জানা যাবে।
রেলের বক্তব্য
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ''এই একদিনের ধর্মঘট দায়িত্বজ্ঞানহীন ও স্বার্থপর কাজ।'' রেলের হিউম্যান রিসোর্স ডিরেক্টর মার্টিন সেইলার জানিয়েছেন, ''কর্মীদের এই দাবি মানা সম্ভব নয়। তারপরেও তারা আলোচনায় না বসে ধর্মঘটের পথে গিয়েছে। একেবারে অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।''
জার্মানির সিভিল সার্ভিস ফেডারেশন এই দাবির বিরোধিতা করেছে।
জিডিএল রেলকর্মীদের ছোট ইউনিয়ন বলে পরিচিত। কিন্তু ট্রেন চালকরা এই ইউনিয়নের সদস্য বলে তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।