সরকারের ‘ব্যর্থ জলবায়ু নীতি'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একটি মালবাহী ট্রেন থামিয়ে রেখেছিলেন জার্মানির পরিবেশ আন্দোলনকারীরা৷
বিজ্ঞাপন
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মোটরগাড়ির শিল্পায়ন দায়ী এই দাবি তুলে মঙ্গলবার একদল পরিবেশ আন্দোলনকারী জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শহর ভল্ফসবুর্গে ফোল্কসভাগেনের নতুন ২০০টি গাড়ি বোঝাই ট্রেনটি কয়েক ঘণ্টার জন্য থামিয়ে রাখেন৷
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, ৩০-৩৫ জনের মতো পরিবেশ আন্দোলনকারী এতে অংশ নিয়ে ভোল্কসভাগেনের কারখানা এবং একটি স্থানীয় স্টেশনের মধ্যে একটি সেতুর ওপর ট্রেনটিকে থামতে বাধ্য করে৷
পুলিশের ১৫ জন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলেও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷
জার্মান রেল সংস্থা ডয়চে বানের মতে, ট্রেনটি ভল্ফসবুর্গে ফোল্কসভাগেনের কারখানা ছেড়ে যাওয়ার পর এর গতিরোধ করা হলেও অন্য ট্রেন চলাচলে কোনো প্রভাব পড়েনি৷
জার্মান প্রেস এজেন্সি ডিপিএ'র ভাষ্য, আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা ওই গাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটানোর চেষ্টা করেছেন৷ তবে ফোল্কসভাগেন জানিয়েছে, এই ঘটনায় তাদের গাড়ি উৎপাদন ও বিতরণে কোনো প্রভাব পড়েনি৷
জীববৈচিত্র্যের দিকেও নজর দিতে বিজ্ঞানীদের আহ্বান
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে৷ তবে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা জীববৈচিত্র্যকে নষ্টের হাত থেকে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জাতিসংঘের প্রতিবেদন
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘ সমর্থিত প্যানেল আইপিসিসি বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ সেই সবের ভিত্তিতেই রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন৷ এবার সেরকমই একটি প্যানেল, যা ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস’ বা আইপিবিইএস নামে পরিচিত, জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ ১৩০ দেশের বিজ্ঞানীরা ছিলেন সেই প্যানেলে৷
ছবি: IPBES
জলবায়ু পরিবর্তনের সমান হুমকি
জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক প্রধান রবার্ট ওয়াটসন (ছবি) প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য যতটা হুমকি, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিও ততটাই৷ এ কারণে দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য ও পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সবাইকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসাই আমাদের যে লক্ষ্য, তা পূরণের ক্ষমতা দূর্বল হয়ে যেতে পারে৷’’
ছবি: imago/J. Jeske
দশ লক্ষ প্রজাতি হুমকির মুখে!
আইপিবিইএস-এর প্রতিবেদন বলছে, গাছপালা ও পশুপাখির সংখ্যা এমন হারে কমছে, যা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন৷ বর্তমানে প্রায় দশ লক্ষ প্রজাতি হুমকির মুখে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে৷ এর মধ্যে কিছু প্রজাতি নাকি কয়েক দশকের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে!
ছবি: picture-alliance/Kyodo
পাঁচটি কারণ
গত ৫০ বছরে প্রকৃতির অবনতির পেছনে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ এগুলো হচ্ছে, জমি ও সাগরের অত্যধিক ব্যবহার, জীবন্ত প্রাণীদের যথেচ্ছ ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং দখলদারি প্রজাতি (যেমন কচুরিপানা)৷
ছবি: Maheder Haileselassie
মাটির উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে
ভূমি অবক্ষয়ের কারণে ২৩ শতাংশ জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদন পদ্ধতি প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: AP
ডেড জোন
জমিতে ব্যবহৃত সারের একটি অংশ নানাভাবে সাগরের পানিতে গিয়ে মেশে৷ এভাবে উপকূলীয় এলাকায় আড়াই লক্ষ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি অঞ্চলে ‘ডেড জোন’ গড়ে উঠেছে বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Seiden
ভর্তুকি বন্ধের আহ্বান
বর্তমানে সাগরের প্রায় ৫৫ শতাংশ এলাকায় মাছ ধরার ট্রলার কিংবা জাহাজ ঘুরে বেড়ায়৷ এতে মাছের অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে৷ আর এসব জাহাজ পরিচালনায় বিভিন্ন দেশের সরকার অনেক ভর্তুকি দিয়ে থাকে৷ এছাড়া কৃষিখাতেও অনেক দেশ ভর্তুকি দেয়৷ তাই বিজ্ঞানীরা এসব ভর্তুকি কমিয়ে মাছ ধরা ও কৃষি উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন খাতে ভর্তুকি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: DW
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাড়া
প্রতিবেদনটি প্যারিসে প্রকাশিত হয়েছে৷ এরপর একদল বিজ্ঞানী ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সঙ্গে দেখা করেন৷ এরপর মাক্রোঁ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কমাতে তাঁর দেশের কয়েকটি পরিকল্পনার কথা জানান৷ এর মধ্যে আছে, খাদ্য উৎপাদনে সারের ব্যবহার কমানো, রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে ক্ষয়ে যাওয়া মাটির ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা, প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো ইত্যাদি৷