করোনা ভাইরাসে ডিসেম্বর মাসে জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার স্পর্শ করতে চলেছে, যা গত মাসের চেয়ে দ্বিগুন৷ এরই মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ দেশটির জন্য প্রথম দফার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি প্রাণঘাতি হয়ে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান রবার্ট কখ্ ইনস্টিটিউট এর হিসাবে চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহেই নয় হাজার ৮০১ জন মারা গেছেন যা নভেম্বরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ৷ করোনা গত মাসে দেশটির পাঁচ হাজার ৭৯৬ জনের জীবন কেড়ে নিয়েছিল৷ যেখানে অক্টোবরে মৃত্যুবরণ করেছেন ৯৬৪ জন আর সেপ্টেম্বরে ১৯০ জন৷
সংক্রমণের গতি রোধ করতে গত সপ্তাহে দেশজুড়ে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে৷ যদিও এর প্রভাব এখনও দেখা যাচ্ছে না৷ সব মিলিয়ে করোনার প্রথম ঢেউয়ে অন্যদের তুলনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারে লাগাম টেনে ইউরোপের দেশটি যে প্রশংসা পেয়েছিল তা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷
করোনার টিকা বিতরণে জার্মানির পরিকল্পনা
করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়ার পর তা কীভাবে দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনো কোনো টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি৷ কিন্তু জার্মানিতে কাদের, কখন এবং কীভাবে তা দেয়া হবে এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নভেম্বরের শুরুতেই সারাদেশে কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’তে ১৫ পাতার পরিকল্পনা লেখা হয়েছে৷ যদিও টিকা পাওয়ার পর তা বিতরণের পরিকল্পনাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তারা৷ তারপরও চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীকে যাতে এর আওতায় আনা যায়৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
পরিকল্পনার লক্ষ্য
টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কার হবে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, সেটা এখনও জানা যায়নি৷ কিন্তু টিকা হাতে আসার পর যাতে অন্য কোনো কারণে বিতরণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
কর্মপরিকল্পনা
টিকা দেয়ার জন্য কর্মপদ্ধতি এবং কাজের ধরন এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্যাকসিনের জন্য ছয়টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর কোনো ভ্যাকসিন বের করলে ইইউ-এর মাধ্যমে তা পাবে জার্মানি৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ৬০টি ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্রে তা পৌঁছে দেবে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
সাধারণ চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে
পুরো ব্যাপারটি ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ চিকিৎসকরা এটা বিতরণ করতে পারবেন না৷ ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রথম দফায় সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না৷ এছাড়া সাধারণ চিকিৎসকদের অফিসে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
যারা প্রাধান্য পাবেন
বয়স্ক মানুষ এবং যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতরাও থাকছেন এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
বার্লিন
বার্লিনের স্থানীয় সরকার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছে৷ ফাইজার এবং বায়োনটেকের তথ্য অনুযায়ী, বার্লিনে প্রথম দফায় ৯ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সে হিসেবে প্রথম দফায় বার্লিনের প্রতি ১০ জনের একজন টিকা পাবেন৷ একেকটা কেন্দ্রে দিনে তিন হাজার ৪০০ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বার্লিন৷ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন যারা নিতে আসবেন তাদের লাইন এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টিকা আসার পর
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ইনফেকশাস ডিজিজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বিতরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা, টিকা হাতে পাওয়ার পরই করা সম্ভব৷ যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বিভিন্ন বয়সে কীভাবে কাজ করে, কতটা কার্যকর ও নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/ANE
৩০ কোটি ভ্যাকসিন
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা করতে৷ ইইউ-এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন তারা৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এথিক্স কাউন্সিলের প্রধান আলেনা বুইক্স জানিয়েছেন, কোন কোম্পানির ভ্যাকসিনে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, কোন বয়সের মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়৷ আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে, তবে এরজন্য বিশেষ ফ্রিজের প্রয়োজন হবে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
প্রয়োজন কর্মী
এই কাজে কেবল চিকিৎসক না, প্রয়োজন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য কর্মী৷ সেজন্য সেনাবাহিনী এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছে কর্মী চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
গ্রামগুলোতে টিকা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ
শহরে যাতায়াত ও অন্য সুবিধা থাকলেও শহর থেকে যারা অনেক দূরে থাকেন, সেসব এলাকায় প্রবীণ মানুষ কীভাবে টিকা দান কেন্দ্রে পৌঁছাবেন সেটা একটা চিন্তার বিষয়৷
ছবি: picture-alliance/EibnerT. Hahn
11 ছবি1 | 11
গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত জার্মানিতে করোনায় মোট মৃত্যুবরণ করেছেন সাত হাজার ৮৯৬ জন; যা ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন, ইংল্যান্ডের মতো ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম৷
নতুন আরোপ করা লকডাউনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস, জরুরি নয় এমন সব দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে৷ দুই পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজনকে একত্রিত হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ তবে বড়দিন উপলক্ষ্যে ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর তা কিছুটা শিথিলের কথা রয়েছে৷
এদিকে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৭ ডিসেম্বর থেকে জার্মানিতে করোনার ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হওয়ার কথা৷ যদিও জনগোষ্ঠীর শতভাগ এই টিকার আওতায় আসতে অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে এক বছর৷
এফএস/এআই (ডিপিএ, এএফপি)
এ বছর জার্মানিতে যেভাবে ক্রিসমাস উদযাপন
করোনা সংকট জার্মানিতে ক্রিসমাসের আমেজে কেমন প্রভাব ফেলেছে, দেখুন এই ছবিঘরে...
ছবি: picture alliance/D. Kalker
ড্রেসডেনের গির্জা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তৈরি ড্রেসডেন শহরের ফ্রাউয়েনকির্শে গির্জাটি এই অঞ্চলে সৌহার্দ্যের প্রতীক৷ সাধারণত, এই গির্জায় ক্রিসমাসের সময় ভিড় জমান কয়েক হাজার মানুষ৷ এ বছর তা হবে না৷ বদলে, গির্জার অনুষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে সবার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
বাখের গির্জা
বিখ্যাত সংগীতস্রষ্টা ইওহান সেবাস্টিয়ান বাখ লাইপসিশ শহরের টোমাসকির্শে গির্জার সাথে দীর্ঘ ২৭ বছর যুক্ত ছিলেন৷ তার হাতে গড়া সেন্ট টমাস বয়েজ কয়ার আজও প্রতি বছর ক্রিসমাসের সময় নানা ধরনের ক্যারল পরিবেশন করে৷ এই গির্জায় জমায়েতের অনুমতি থাকলেও অন্যান্যবারের মতো হাজার হাজার মানুষ সেখানে যোগ দিতে পারবেন না৷ আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করা হাতে গোনা কয়েকজনই পারবেন অংশ নিতে৷
ছবি: Bachfest Leipzig/J. Schlueter
মিউনিখের ফ্রাউয়েনকির্শে
ক্রিসমাসের ভোর তিনটের সময় প্রতি বছর এই গির্জায় টানা ২০ মিনিট ধরে ঘণ্টা বাজানো হয়৷ ক্রিসমাসের অনুষ্ঠান তারাও সরাসরি সম্প্রচার করবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷ সশরীরে অনুষ্ঠান উপভোগ করার অনুমতি রয়েছে মাত্র ১৩০জনের৷
ছবি: picture-alliance/Chromorange/A. Gravante
কোলন ক্যাথিড্রাল
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ গির্জা কোলনের ক্যাথিড্রাল৷ ৫১৫ ফুট উঁচু এই ক্যাথিড্রালের ক্রিসমাসের বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষকে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ মানা হবে অন্যান্য করোনাবিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Berg
রাজার ক্যাথিড্রাল
আখেন শহরের ক্যাথিড্রালটি এক হাজার ২২৪ বছর পুরোনো৷ এই ক্যাথিড্রালে এক সময় জার্মান রাজাদের অভিষেকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো৷ জনপ্রিয় এই ক্যাথিড্রালেও এবার করোনার কারণে ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মাত্র ১২০জন৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
হামবুর্গের গির্জা
জার্মানির উত্তরাঞ্চলের ‘মিশেল’ গির্জায় ক্রিসমাসের সময় বেশ কয়েকদিন ধরে চলে টানা প্রার্থনা৷ এ বছর গোটা প্রার্থনাটাই হবে গির্জার ভেতরে ও বাইরে খোলা আকাশের নীচে অনেক বেশি জায়গা জুড়ে৷ কারণ, গুরুত্ব পাচ্ছে শারীরিক দূরত্ব ও করোনাবিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনের গির্জা
বার্লিনের কাইজার মেমোরিয়াল গির্জা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ আজও এই গির্জার গুরুত্ব মানুষের কাছে বেশ অনেকটাই৷ করোনাবিধি মেনে এখানে অন্যান্য বারের তুলনায় কম দর্শক ভিড় জমাবেন, কারণ, কড়াকড়ি কমানো হয়নি এখনো৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
সর্বোচ্চ চূড়া যে গির্জার
বিশ্বের সবক’টি গির্জার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু চূড়ার খেতাব রয়েছে উলম শহরের ম্যুনস্টার গির্জার৷ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই স্থানে এবার ভীড় অনেকটাই কম হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় ‘প্রোটেস্টান্ট গির্জা’য় ক্রিসমাস পালন করতে হলে প্রয়োজন হবে আগাম অনুমতির৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
এগারোটি প্রার্থনার অনুষ্ঠান
হিলডেশহাইম ক্যাথিড্রালে নিয়ম মেনেই পালিত হবে ক্রিসমাস৷ দর্শকের ভীড় সামলাতে মোট ১১টি প্রার্থনা আযোজিত হবে৷ প্রতিবারই বজায় রাখা হবে দূরত্ব৷ একেকটি প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে পারবেন সর্বোচ্চ ৮০জন৷
ছবি: Fotolia/panoramarx
নিয়ম মেনেই উৎসব
এরফুর্ট শহরের সবক’টি গির্জাতেই এবার ব্যাপক কড়াকড়ি৷ জার্মানির অন্যান্য গির্জার মতো এখানেও জারি আছে দূরত্ববিধি৷ গির্জার প্রবেশদ্বারের পাশেই রয়েছে হাতধোয়া ও জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা৷ এভাবেই সংকটের মধ্যেও সংযতভাবে উৎসব পালন করার পরিকল্পনায় জার্মানির গির্জাগুলি৷