তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে জার্মানি৷ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক উপরে উঠেছে। জার্মান আবহাওয়া দপ্তর আজ সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জনগণকে রোদে দীর্ঘক্ষণ থাকা এড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। (প্রতীকী চিত্র)ছবি: Martin Lelievre/AFP
বিজ্ঞাপন
জার্মান আবহাওয়া দপ্তর আজ সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
জার্মান আবহাওয়া দপ্তর "তীব্র তাপ" সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে যা আজ উত্তর জার্মানিতে প্রবেশ করবে এবং আগামীকল পূর্বদিকে ছড়িয়ে পড়বে। তবে ইউরোপের অন্যান্য অংশের তুলনায় জার্মানির অবস্থা এখনও ভালো। মঙ্গলবার স্পেনের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রিতে পৌঁছেছিল।
শুষ্ক বসন্তের প্রেক্ষাপট
এই তাপপ্রবাহ আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে কারণ জার্মানি সম্প্রতি রেকর্ড ভাঙা শুষ্ক বসন্তকাল অতিক্রম করেছে। জার্মানিতে বসবাসকারীরা সম্ভবত ইতিমধ্যেই এই ভিন্নধরনের শুষ্ক বসন্তকাল লক্ষ্য করেছেন যা এখন গ্রীষ্মকালে রূপান্তরিত হচ্ছে।
জার্মান আবহাওয়া দপ্তরের মতে, এই বসন্তকাল রেকর্ডে তৃতীয় শুষ্কতম ছিল। ১৮৮১ সাল থেকে কেবলমাত্র আরও দুটি বছর - ১৮৯৩ এবং ২০১১ - মার্চের শুরু থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত এর চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
জার্মানির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এই বছর প্রতি বর্গমিটারে মাত্র ৯৬ লিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি ১৯৬১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গড় ১৮৬ লিটারের মাত্র অর্ধেক। সংস্থাটি এটিকে একটি চরম খরা বলে অভিহিত করেছে।
বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক পার্থক্যও দেখা গেছে। উত্তর-পূর্ব জার্মানিতে মাত্র ৪০ লিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, অন্যদিকে জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় আল্পাইন অঞ্চলে ৩০০ লিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রভাব
এই পরিস্থিতি জার্মানির জন্য একটি জটিল পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। শুষ্ক বসন্তের পর এই তীব্র তাপপ্রবাহ কৃষি, জল সরবরাহ এবং জনস্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা জনগণকে পর্যাপ্ত পানি পান করতে, রোদে দীর্ঘক্ষণ থাকা এড়াতে এবং শীতল স্থানে অবস্থান করতে পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
স্পেনের বন-বাঁচানো বুনো ঘোড়াদের বাঁচাবে কে?
স্পেনের গালিসিয়া অঞ্চলের বনজঙ্গলকে দাবানল থেকে বাঁচাতো এই বুনোঘোড়াগুলি৷ কিন্তু তারাও এখন ঝুঁকিতে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
দাবানল ও বুনোঘোড়া
স্পেনের এই গ্রামে প্রতি গ্রীষ্মেই ফিরে আসে দাবানলের ঝুঁকি৷ কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে লুসিয়া পেরেজ তার বুনোঘোড়াদের এখানে চড়ানো শুরু করার পর থেকে তা লক্ষণীয়ভাবে কমেছে৷ এই ঘোড়াদের খুরের ঘষার ফলে ও ঘোড়াগুলি তাদের প্রিয় হলদে ফুলের গাছ খেয়ে ফেলার ফলে দাবানল ছড়াতে সহায়ক এমন গাছ কমে যায়৷ অন্য প্রাণীদের তুলনায় বুনোঘোড়াদের শারীরিক গঠন এখানকার পরিবেশের সাথে ভালো করে মানিয়ে নিতে পারে৷
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
মানুষ ও ঘোড়ার সম্পর্ক যেমন
সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় মানুষ এই বুনোঘোড়াদের ওপর দখল ফলাতে শুরু করেছে৷ প্রতি বছর ‘রাপা দে বেস্তাস’ উৎসবে এই বুনোঘোড়াদের অজ্ঞান করে টীকা দেওয়া হয়, কোনো ঘা বা আঘাতের চিকিৎসাও করা হয় সেই সময়৷ তাদের চুল এমনভাবে কেটে দেওয়া হয়, যাতে তারা নেকড়েদের নজরে না পড়ে৷ স্পেনের এই অঞ্চলে এমন প্রায় দশ হাজার বুনোঘোড়া রয়েছে৷
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
খরচসাপেক্ষ ও লাভহীন পেশা
কিন্তু বুনোঘোড়াদের দেখভাল করা বেশ খরচসাপেক্ষ৷ প্রতিটি ঘোড়ার বাচ্চা বিক্রি করলে ৬০ ইউরোর মতো পাওয়া যায়, কিন্তু বুনোঘোড়ার ঠিকঠাক ভরনপোষণ করতেই লাগে একশ ইউরোর কাছাকাছি৷ সরকারের তরফে এই শ্রেণির বুনোঘোড়াদের সাংস্কৃতিক মর্যাদা দেওয়া হলেও নতুন আইন প্রণয়ণে বা আরো লগ্নি করতে আগ্রহী নয় তারা৷ ফলে স্থানীয়দের ক্ষোভ থেকেই গেছে৷
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
ঘোড়া যেভাবে সরকারের টাকা বাঁচাচ্ছে
এই প্রজাতির বুনোঘোড়ার সংখ্যা আরো নিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ালে তা সরকারের জন্য লাভজনক হতে পারে বলে মনে করেন আলকালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ মেলিনা বারিও৷ তার মতে, যে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের খরচ হয় আট থেকে দশ হাজার ইউরো, এই মাত্রার দাবানল আটকাতে পারে এমন এক একটি বুনোঘোড়া৷ কিন্তু সরকারের মতে, যত ঘোড়া আছে, তাদের পর্যটন ও অন্যান্য খাতে ব্যবহার করেও ঘোড়ার মালিকদের লাভের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব৷
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
কেন এখনো এই বুনোঘোড়াদের দেখভাল করছে মানুষ
আগে সপ্তাহে একবার ঘোড়াদের দেখতে যেতেন নিকো ও লুসিয়া৷ এখন তাদের প্রতিদিনই যেতে হয় কারণ ঘোড়াদের জীবন নিরাপদ নয়৷ নিয়মিত দেখাশোনা না করলে ঘোড়াগুলি অধৈর্য্য হয়ে পড়ে ও পালিয়ে গেলের গাড়িচাপা পড়ে যায়৷ কখনো কখনো এই ঘোড়াগুলি ভুল করে পাশের কোনো ক্ষেতে চলে গেলে ক্ষেতের মালিকরা এসে ঘোড়াদের ওপর হামলা করে৷ তাদের মতে, এই ঘোড়াগুরি প্রকৃতির রত্ন, তাই লাভজনক না হলেও তাদের দেখাশোনা করাটা নিকো ও লুসিয়ার নৈতিক কর্তব্য৷
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
ইতিহাসে মোড়া ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ
পনেরোশ শতাব্দী থেকে স্পেনের গালিসিয়া অঞ্চলে চলে আসছে বুনোঘোড়াদের বার্ষিক চিকিৎসা ও শুশ্রূষার এই রীতি৷ কিছু কিছু এলাকায় এটি পরিণত হয়েছে বার্ষিক পর্যটন উৎসবেও৷ কিন্তু সরকার ও স্থানীয়দের মধ্যে দ্বিমত থাকায় এই ঐতিহ্য এখন প্রশ্নের মুখে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের বহু এলাকার সাথে সাথে স্পেনেও বাড়ছে দাবানলের ঝুঁকি৷ এই পরিস্থিতিতে বন-বাঁচানো বুনোঘোড়াদের গুরুত্ব অনেকটাই৷