জার্মানিতে অবস্থানরত এক তুর্কি নাগরিককে বন্দি করে ফেরত পাঠাতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক৷ পলাতক এই ধর্মতত্ত্বের শিক্ষকের বিরুদ্ধে গত বছর তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভল্যুট চাভুশোলু জানিয়েছেন এরই মধ্যে জার্মানিকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে৷ তুর্কি টেলিভিশন চ্যানেল টিআরটি হাবেরকে চাভুশোলু জানান, ধর্মতত্ত্বের শিক্ষক আদিল ওকসুজকে জার্মানিতে দেখা গেছে, এমন তথ্য পাওয়ার পরই তারা বার্লিনের কাছে এই অনুরোধ জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যদি এই লোক সেখানে থাকে, তবে তাকে চিহ্নিত করে, গ্রেপ্তার করে তুরস্কের কাছে ফেরত পাঠানো হোক৷''
ওকসুজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী হিসেবে কাজ করার অভিযোগ তুরস্ক সরকারের৷ ফেতুল্লাহ গুলেনকে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী করে আঙ্কারা৷
তুরস্কের শিল্পীদের আঁকা ব্যঙ্গচিত্র
যে দেশে সংবাদপত্রের স্বধীনতার মুখ চেপে ধরা হয়েছে, সে দেশে কার্টুনিস্টরা কতদূর যেতে সাহস করেন? জার্মানির কাসেল শহরের কারিকাটুরা গ্যালারিতে তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রের কিছু নমুনা প্রদর্শিত হচ্ছে৷
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
‘আমি কোথায়?’ ভাবছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল
২০১৫ সালে তুরস্কের ‘লেমান’ ব্যঙ্গপত্রিকার প্রচ্ছদে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে দেখানো হয় ‘সুলতান’ এর্দোয়ানের পাশে বসা অবস্থায়৷ ‘এ আমি কোথায় এসে পড়লাম?’ ভাবছেন ম্যার্কেল; তাঁর পরনেও মধ্যযুগীয় অভিজাত জার্মান মহিলাদের বাস৷ ইস্তানবুলের তিনটি নেতৃস্থানীয় ব্যঙ্গপত্রিকার মধ্যে ‘লেমান’ অন্যতম৷ তুর্কি প্রধানমন্ত্রী দাভুতোগলু একবার পত্রিকাটিকে ‘‘নীতিবিগর্হিত’’ বলে অভিহিত করেছিলেন৷
ছবি: LeMan/Caricatura
বুদ্ধিমানেরা সবাই জেলে
২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে দেড় লাখ মানুষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ও ৪০ হাজার মানুষকে জেলে পোরা হয়েছে – তাদের মধ্যে বহু সাংবাদিক, লেখক ও আন্দোলনকারী৷ ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে আঁকা এই কার্টুনটিতে ৬৬ বছর বয়সি কার্টুনিস্ট ইজেল রোজেনটাল দেখাচ্ছেন, বন্দিরা কীভাবে একটি অশোভন মুদ্রা প্রদর্শন করছে আর প্রহরীরা বলছে, তারা এই ‘বেজন্মা’ বুদ্ধিজীবীদের কি পরিমাণ ঘৃণা করে৷
ছবি: Rozental/Caricatura
গুলেন সর্বত্র
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনরত ফেতুল্লাহ গুলেন ও তাঁর সমর্থকরা জুলাইয়ের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী, বলে এর্দোয়ানের অভিযোগ এবং বহু তুর্কি নাগরিক সত্যিই তা বিশ্বাস করেন৷ কার্টুনিস্ট ইগিট ওয়েজগুর-র ব্যঙ্গচিত্রে এক তুর্কি বলছেন: ‘‘৯০ শতাংশ তরমুজ নাকি গুলেনের শিষ্য৷’’ সঙ্গের তুর্কিটি বলছেন: ‘‘হতেই পারে৷’’
ছবি: Özgür/Caricatura
এর্দোয়ানের বিপক্ষে গেলেই বিপদ
গত এপ্রিল মাসের গণভোটে ৫১ দশমিক তিন শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোটে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ও প্রেসিডেন্টের প্রভূত ক্ষমতা বাড়ে৷ ভোটের আগে মিডিয়াকে বিরোধীদের হয়ে ‘হায়ির’ বা ‘না’ ভোটের সপক্ষে আন্দোলনের খবর খোলাখুলিভাবে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি৷ তাই মার্চ মাসে ইপেক ওয়েজসুসলু এই কার্টুনটি আঁকেন: জলের মিস্ত্রির পশ্চাদ্দেশে ‘হায়ির’ উল্কিটা বেরিয়ে পড়েছে৷
ছবি: Özsüslu/Caricatura
ট্রাম্পও বাদ যাননি
এর্দোয়ানই তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীদের একমাত্র লক্ষ্য নন৷ বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কার্টুনিস্টদের বিরাগভাজন হয়েছেন৷ ছবির কার্টুনটিতে বন্দুকধারী মার্কিন সৈন্যের পিছনে একটি ছেলে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘ওদের আমরা শেষমেষ কবে তাড়াব, বাবা?’ বাবা বলছেন, ‘আমাদের তেল ফুরোলে৷’
ছবি: Karabulat/Caricatura
সেক্স যেখানে টাবু
তুরস্কে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা চলে না – বিশেষ করে মহিলাদের যৌনতা নিয়ে তো নয়ই৷ মহিলা কার্টুনিস্ট রামিজে এরার-এর মোটাসোটা ‘ব্যাড গার্ল’ রক্ষণশীল সমাজের ধার ধারে না৷ ছবিতে সেই ব্যাড গার্ল পরপুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর পর সেল্ফি তুলছে; প্রেমিক বেচারা ভয়ে জড়োসড়ো: তার গিন্নি যদি ঐ ছবি ফেসবুকে দেখে ফেলেন?
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
দুনিয়াদারি
কার্টুনিস্ট মেহমেত চাগচাগ-এর দৃষ্টিতে দুনিয়ার অবস্থা আজ একটি ছবি দিয়েই বোঝানো যায়: বাগদাদ থেকে এথেন্স, বার্লিন থেকে প্যারিস অবধি এক পর্যায় ঘড়ি, আবহাওয়া অফিসে, পত্রিকার নিউজরুমে, হোটেল অথবা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে যেরকম থাকে – প্রতিটি ঘড়ি আসলে একটি টাইম বোমা, প্রত্যেকটির পিছনে ডায়নামাইট বাঁধা রয়েছে৷ শুধু কোনটা যে কখন ফাটবে, সেটা জানা নেই৷
ছবি: Cagcag/Caricatura
7 ছবি1 | 7
জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট এবং উলম শহরে ওকসুজকে দেখা গেছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে তুরস্কের বিভিন্ন গণমাধ্যমে৷ দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ বাডেন-ভ্যুরটেমবার্গে তাকে অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেয়ারও তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে এ সব গণমাধ্যম৷
তুরস্কের মোস্ট ওয়ান্টেড
তুরস্ক সরকার বলছে, গত বছরের জুলাইয়ে বিমানবাহিনী যে সদস্যরা বোমা হামলা চালিয়েছিলেন, ওকসুজ তাদের ‘বেসরকারি ইমাম' ছিলেন৷
ওকসুজকে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর আকিনচি বিমান ঘাঁটি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ কিন্তু দুই দিন পর তাকে ‘গুলেনপন্থি' এক বিচারক মুক্তির আদেশ দেন৷ তখন থেকেই পলাতক ওকসুজ আছেন তুরস্কের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায়৷
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর প্রকাশ করা এক ভিডিও ফুটেজে ওকসুজ ও তার সহকারি ব্যবসায়ি কেমাল বাটমাজকে ইস্তানবুলের মূল বিমানবন্দরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে৷ তুরস্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ফেতুল্লাহ গুলেনের সাথে ‘বৈঠক' করে ফিরছিলেন৷ তবে গুলেন বরাবরই এই অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন৷ ১৯৯৯ সাল থেকে পেনসিলভ্যানিয়ায় স্বেচ্ছানির্বাসনে আছেন গুলেন৷
বাটমাজকে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখন তার বিরুদ্ধে মামলা শুরুর অপেক্ষায় আছে৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে তুরস্ক, যার মধ্যে সাংবাদিক এবং বিরোধী দলের নেতারাও আছেন৷
ব্যাপক হারে এই ধরপাকড়ের কারণে তুরস্ক-জার্মানি সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত হয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান বিরোধী মত দমন করতে অভ্যুত্থানের ঘটনাকে কাজে লাগাচ্ছেন৷