চলতি বছরে জার্মানিতে বিভিন্ন তুর্কি মসজিদ, সাংস্কৃতিক সমিতি ও রেস্টুরেন্টের উপর আক্রমণের ঘটনা ২০১৭ সালে সাকুল্যে ১৩ থেকে বেড়ে ইতিমধ্যেই ৩৭-এ দাঁড়িয়েছে৷ এজন্য প্রধানত কুর্দি আন্দোলনকারীদেরই দায়ী করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে তুর্কি প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর আক্রমণের পরিসংখ্যান দেওয়ার সময় জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মন্তব্য করেন, ‘‘তুরস্কের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষের জার্মানিতে বাস; ফলে জার্মানিতে চিরকালই তুর্কি-কুর্দি সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে৷ আফরিনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দরুণ তা বিশেষ তীব্রতা পেয়েছে৷’’
জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত ৩০ লাখ মানুষ বাস করেন, যাদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ কুর্দি৷ অতীতেও জার্মানিতে বারংবার তুর্কি ও কুর্দিদের মধ্যে সংঘর্ষঘটেছে, বিশেষ করে যখন আশি ও নব্বই-এর দশকে কুর্দিদের সঙ্গে তুরস্কের সংঘাত চরমে ওঠে৷ সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে পুনরায় উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো আফরিনে তুরস্কের সামরিক অভিযান, যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি কুর্দি যুব গোষ্ঠী সহিংসতার ডাক দিয়েছে৷
পালাবার পথ নেই
গত মার্চে আফরিনে ঢুকে পড়েছিল তুরস্কের সেনা৷ মহল্লায় মহল্লায় চালিয়েছে হামলা৷ সামান্য সম্বলটুকু নিয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন সাধারণ মানুষ৷ তেমনই কিছু ভয়াবহ ছবি আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
গৃহহীন
গত মার্চে দু’দিক থেকে যুদ্ধ চলেছে সিরিয়ায়৷ একদিকে বিদ্রোহ দমনের নামে নিজের দেশের সরকার হামলা চালিয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর৷ অন্যদিকে তুরস্ক ঢুকে পড়ে আফরিনে৷ বাড়ি ঘর ছেড়ে সকলেই পালাতে শুরু করে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
অজানা যাত্রা
সে সময় আফরিনে ঢুকে পড়ে তুরস্কের সৈন্যরা৷ পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে হামলা চালায়৷ বাধ্য হয়েই সব ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ইতিহাস ফিরে আসে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্বে স্বনামধন্য চিত্রগ্রাহকদের ক্যামেরায়ধরা পড়েছিল এমনই বহু ছবি৷ শরণার্থীদের মিছিল৷ সিরিয়ায় সেই ছবিই ফিরে এসেছে একুশ শতকে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ঠিকানাহীন
বন্দুকের নল, বারুদবাহী ট্যাংক উপেক্ষা করেই সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাবা-মা৷ কিন্তু তাঁরা জানেন না কোথায় যাবেন৷ কোথায় একটু আশ্রয় পাবেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ভাঙা স্বপ্ন
ক্রমাগত বোমার আঘাতে ভেঙে যায় ট্রাক, জিপ৷ সেই ভেঙে যাওয়া যানবাহনেই ঘর ছেড়ে পালান সাধারণ মানুষ৷ অনেকেই চেষ্টা করেন দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী ইউরোপে আশ্রয় নিতে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
তবু বেঁচে থাকা
কিছুদিন আগে এক সাংবাদিককে এক সিরিয়ার শরণার্থী বলেছিলেন, দেশে ফিরতে চান তিনি৷ কিন্তু যাওয়ার রাস্তা বন্ধ৷ যাঁরা তখন পালাচ্ছিলেন, তাঁদের জন্য ইউরোপের রাস্তাও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ আফরিনের মানুষের মুখেও সেই একই কথা৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
6 ছবি1 | 6
আফরিনে তুরস্কের অভিযান শুরু হয় গত জানুয়ারি মাসে৷ গত রবিবার তুর্কি সেনাবাহিনী ও তুরস্ক সমর্থিত সিরীয় যোদ্ধারা শহরটি পুরোপুরি দখল করে নেয়৷ হাজার হাজার অধিবাসী আফরিন ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, বলে কুর্দি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷ আফরিনের পতনের পর জার্মানিতে কুর্দিদের রোষ ও হতাশা বার্লিন, নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফেলিয়া, শ্লেষভিগ-হলস্টাইন ও বাডেন-ভ্যুর্টেনব্যার্গ রাজ্যে বিভিন্ন তুর্কি মসজিদ ও অপরাপর তুর্কি প্রতিষ্ঠানের উপর সহিংস আক্রমণের আকার ধারণ করে৷
বিক্ষোভ বনাম কূটনীতি
কুর্দি ভাষায় ‘নেভরোজ’ মানে হলো নওরোজ বা নববর্ষ, যা ছিল গত মঙ্গলবার৷ সেদিন হানোফার শহরে প্রায় ১১ হাজার কুর্দি ‘‘নেভরোজ মানে প্রতিরোধ – প্রতিরোধ মানে আফরিন'', এই নিশান হাতে নিয়ে আফরিনের উপর তুর্কি অভিযান ও জার্মান সরকারের তরফে তুরস্ককে অস্ত্র বিক্রয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন৷ জার্মানির বামদলের প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন৷ বিক্ষোভ মোটামুটি শান্তই থাকে, যদিও ওয়াইপিজি ও ওয়াইপিজে-র মতো সিরিয়ার কুর্দি গণসুরক্ষা গোষ্ঠীগুলির সমর্থনে ধ্বনি দেওয়া হয় ও ‘‘হত্যাকারী এর্দোয়ান’’৷
প্রবাসী ও অনাবাসী কুর্দিদের সমস্যা হলো এই যে, তাঁরা তাঁদের প্রচারণাকে বহুদিনের অভিজ্ঞতায় ফিলিস্তিনি কেফিয়ের পরিবর্তে সুট-বুট পরা অমায়িক লবিং-এ পরিণত করে ফেলেছে, যার প্রধান লক্ষণ, এই প্রচারণা প্রধানত শান্তিপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক; কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির মতো দেশগুলির তাতে আপত্তি নেই৷ বরং বামদল ও সাধারণভাবে জার্মান জনগণের তাতে সমর্থন আছে৷ কাজেই এ ধরনের ‘স্ট্রিট মবিলাইজেশন’ বা প্রকাশ্য বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা কুর্দিদের ‘লবিং অপারেশন' বা সরকার পর্যায়ে প্রচার প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করতে পারে৷
এসি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ, ইপিডি)
বাসন্তী উৎসব নওরোজ
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো পরবগুলোর মধ্যে পড়ে নওরোজ৷ প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই উৎসব উদযাপন করেন৷ নওরোজ ইরানি সৌর বর্ষপঞ্জিতে নববর্ষও বটে, আবার বসন্তের বার্তাবহও বটে৷
ছবি: DW/S. Amini
স্বীকৃতি
২০০৯ সালে ইউনেস্কো নওরোজকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় তুলে নেয়৷ ২০শে বা ২১শে মার্চ, রাত আর দিন যখন সমান হয়, তখন উদযাপিত হয় নওরোজ – মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম চীনের উইগুররা পর্যন্ত৷ বহু জাতির মধ্যে বন্ধনের সূত্র এই পরবটি জাতিসংঘেও পালিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/C. Ozdel
আতসবাজি
নওরোজের জন্ম ইসলাম ধর্ম প্রচলিত হওয়ার অনেক আগে৷ ইরানের শাসকবর্গ অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই পরবটিকে সহ্য করে এসেছেন, যদিও রাস্তায় আগুনের ওপর দিয়ে লাফ দেওয়ার রীতিটা সরকারের সবচেয়ে অপছন্দ৷
ছবি: ISNA
‘স’ দিয়ে শুরু সাতটি জিনিস
বিশেষ করে ইরানে, আবার আফগানিস্তানেও এই সাতটি ‘স’ বাদ দিয়ে নওরোজ হয় না৷ টেবিলে বা মাটিতে কাপড় বিছিয়ে তার ওপর এই সাতটি জিনিস সাজানো হয়, ফার্সিতে যাদের নাম ‘স’ দিয়ে শুরু হয়৷ টাকা, আপেল ও রসুন তার মধ্যে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ABEDIN TAHERKENAREH
রং করা ডিম
খ্রিষ্টীয় ইস্টার পরবের মতো নওরোজেও রং করা ডিম সাজানোর প্রথা আছে৷ সুদূর অতীতে ডিম উর্বরতার প্রতীক ছিল৷
ছবি: jadide.ir
বসন্তের বার্তাবাহী
ইরানে বসন্তের দূত হল হাজি ফিরোজ, যে নেচে গেয়ে বসন্তের আগমন জানান দেয়৷ তার লাল পোশাক বসন্তের উষ্ণতা আর আনন্দের প্রতীক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ABEDIN TAHERKENAREH
৩০ কোটি মানুষের পরব
নওরোজ উদযাপিত হয় প্রধানত ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, সিরিয়া আর মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে – যেমন (ছবিতে) তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান ও কিরগিজস্তানে৷
ছবি: Aida Azarnoush
হোয়াইট হাউসে নওরোজ
২০১৬ সালে হোয়াইট হাউসে নওরোজ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন মিশেল ওবামা স্বয়ং – এমনকি সাতটি ‘স’ পর্যন্ত বাদ পড়েনি৷