গত জুলাই মাসে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর থেকে জার্মানিতে অনেক বেশি তুর্কি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে আড়াই গুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান ফুংকে মিডিয়া গোষ্ঠীর খবর অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর অবধি ৪,৪৩৭ জন তুর্কি নাগরিক রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, যা কিনা গোটা ২০১৫ সালে যত তুর্কি নাগরিক জার্মানিতে অ্যাসাইলাম চেয়েছিলেন, সেই সংখ্যার আড়াই গুণের বেশি৷ ফুংকে'র রিপোর্ট বলছে, জানুয়ারি থেকে জুন অবধি তুরস্ক থেকে অ্যাসাইলামের অ্যাপ্লিকেশন পড়েছে মাসে প্রায় ৩৫০টি, অক্টোবর অবধি তা বেড়ে দাঁড়ায় মাসে প্রায় ৪৮৫ এবং আগামীতে তা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে৷
জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা ইতিপূর্বে বলেছিলেন যে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের বিরোধীরা জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন৷ জার্মান সংসদে সিডিইউ-সিএসইউ গোষ্ঠীর স্বরাষ্ট্রনীতি বিষয়ক মুখপাত্র স্টেফান মায়ার কিন্তু এবার বলেছেন, ‘‘আমরা তুরস্কের সব সরকার সমালোচক নাগরিককে এখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে বলে তুরস্কের সমস্যার সমাধান করতে পারব না৷ (এর্দোয়ান) চান যে বিরোধীপক্ষ উধাও হোক৷''
জার্মানিতে উদ্বাস্তুদের থাকার ব্যবস্থা
২০১৫ সালে তিন লাখ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী জার্মানিতে আসবেন, বলে ধরে নিয়েছিল ফেডারাল অভিবাসন দপ্তর৷ এখন সে সংখ্যা সাড়ে চার লাখ হবার সম্ভাবনা৷ সেক্ষেত্রে উদ্বাস্তুদের থাকার ব্যবস্থা কোথায় হবে, তাই নিয়েই চিন্তা...
ছবি: Picture-Alliance/dpa/P. Kneffel
প্রাথমিক অভ্যর্থনা কেন্দ্রে প্রথম তিন মাস
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে রাখার জন্য এই ‘রিসেপশান সেন্টারগুলি’ আছে – যেমন রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্যের ট্রিয়ার শহরে৷ উদ্বাস্তুরা জার্মানিতে পৌঁছনোর পর তাঁদের সাধারণত এ ধরনের প্রাথমিক অভ্যর্থনা কেন্দ্রে রাখা হয়৷ সেখানে তিন মাস থাকার পর তাঁদের কোনো শহর কি জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Tittel
টাউন হলে ক্যাম্পবেড
প্রাথমিক রিসেপশান সেন্টারগুলো পুরোপুরি ভর্তি, কাজেই সাময়িক বাসস্থান হিসেবে অন্যান্য ভবন কাজে লাগানো হচ্ছে৷ নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফালিয়া রাজ্যের হাম শহরের টাউন হলে ৫০০ উদ্বাস্তুর থাকার আয়োজন করা হয়েছে৷ ৭০০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের হলটিতে বেড়া দিয়ে দিয়ে আলাদা আলাদা ‘ঘরের’ ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ প্রত্যেকটি ‘ঘরে’ ১৪টি ক্যাম্পবেড রাখা চলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Fassbender
ক্লাশরুমে রাত্রিবাস
উদ্বাস্তুর স্রোতে শহরগুলি নাজেহাল! আখেন শহরকে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে ৩০০ উদ্বাস্তুকে রাখার ভার নিতে হয়৷ একমাত্র সমাধান: উদ্বাস্তুদের শোয়ার জন্য ইন্ডা গিমনাজিয়ুম নামের একটি স্কুলের ক্লাশরুমে ম্যাট্রেস পাতা৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/R. Roeger
তাঁবুতে বাস
বর্তমানে জার্মানিতে ক্রমেই আরো বেশি সাময়িক উদ্বাস্তু শিবির সৃষ্টি করা হচ্ছে – তাঁবু গেড়ে৷ স্যাক্সনি আনহাল্ট রাজ্যের হালব্যারস্টাট শহরে এ ধরনের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প সৃষ্টি করে আরো অনেক বেশি উদ্বাস্তুদের রাখা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/J. Wolf
ড্রেসডেনের টেন্ট ক্যাম্প
উদ্বাস্তুদের জন্য একটি সুবিশাল টেন্ট ক্যাম্প বা ‘তাঁবু শিবির’ সৃষ্টি করা হয়েছে স্যাক্সনি রাজ্যের রাজধানী ড্রেসডেন শহরে৷ শৌচাগারের সামনে লম্বা লাইন পড়ে, খাবারের জন্যও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়৷ এখানে আপাতত ১৫টি দেশ থেকে আগত মোট এক হাজার মানুষের বাস৷ আগামীতে আরো শ’খানেক মানুষ এখানে থাকতে বাধ্য হবেন৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/A. Burgi
কনটেইনারে বাস
তাঁবুর বদলে উদ্বাস্তুদের কনটেইনারে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে কোথাও কোথাও৷ ট্রিয়ারে ২০১৪ সাল থেকেই এই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে৷ আজ সেখানে এক হাজারের বেশি উদ্বাস্তু বাস করেন৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/H. Tittel
উদ্বাস্তু আবাসের উপর আক্রমণ
বাডেন ভুর্টেনব্যার্গ রাজ্যের রেমকিঙ্গেন শহরে গত জুলাই মাসের ১৮ তারিখে একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে৷ অজ্ঞাত আততায়ীরা যে বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, সেখানে উদ্বাস্তুদের রাখার কথা ছিল৷ উদ্বাস্তুদের প্রতি এ ধরনের বিরূপ মনোভাব এখন অন্যত্রও পরিলক্ষিত হচ্ছে, বিশেষ করে জার্মানির পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলে৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/SDMG/Dettenmeyer
নতুন আবাসন গড়ার কাজ চলেছে
উদ্বাস্তুদের বসবাসের জন্য একাধিক পৌর এলাকায় নতুন বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে, যেমন বাভেরিয়ার একেনটাল শহরে৷ এখানে মোট ৬০ জন মানুষ বাস করতে পারবেন৷ আগামী বছরের সূচনাতে এখানে প্রথম উদ্বাস্তুরা বসবাস করতে পারবেন, বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Picture-Alliance/dpa/D. Karmann
8 ছবি1 | 8
জুলাইয়ের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্ক সম্ভাব্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে৷ অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার সন্দেহে হাজার হাজার চাকরিজীবীকে বরখাস্ত করা হয়েছে, বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ‘কু'-র প্রচেষ্টার পর থেকে তুরস্কে জরুরি অবস্থা চলেছে৷
ন্যাটোর তুর্কি কর্মকর্তারাও জার্মানিতে আশ্রয় চান
জার্মানিতে ন্যাটোর যেসব সামরিক ঘাঁটি আছে, সেখানকার অধিকাংশ তুর্কি সামরিক কর্মচারী সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও আংকারায় ফিরতে অস্বীকার করেছেন বলে প্রকাশ৷ কাজেই বার্লিন এখন ‘বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে' করণী স্থির করছে৷ ১৫ই জুলাইয়ের ‘কু' প্রচেষ্টার পর তাদের আংকারার সামরিক হেডকোয়ার্টার্সে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়, কিন্তু তারা ফিরতে অস্বীকার করেন৷
তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পাঁচটি কারণ
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন এর্দোয়ান৷ তাঁর সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এসেছিল বলেই অভ্যুত্থান হতে পারেনি৷ তবে জনসমর্থনই তো সবসময় অভ্যুত্থান ঠেকাতে পারে না৷ তাহলে কেন ব্যর্থ হলো অভ্যুত্থানের চেষ্টা?
ছবি: Getty Images/G.Tan
এর্দোয়ানকে আটকাতে না পারা
অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যই ছিল রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করা৷ এ লক্ষ্য পূরণের জন্য এর্দোয়ানকে অবরুদ্ধ করাই ছিল প্রথম কাজ৷ সে কাজে ব্যর্থ হয়েছে অভ্যুত্থান প্রয়াসের সঙ্গে জড়িত সেনাসদস্যরা৷ তাঁকে ধরার চেষ্টা করেছিল বিমান বাহিনীর একটি অংশ৷ কিন্তু এর্দোয়ান সে চেষ্টা ব্যর্থ করে অভ্যুত্থানকেও ব্যর্থ করে দেন৷
ছবি: Reuters/H.Aldemir
প্রেসিডেন্ট ভবনে তীব্র প্রতিরোধ
আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট ভবনের ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল সেনাবাহিনী৷ কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, সেনাসদস্যরা প্রেসিডেন্ট ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কিছুটা খাটো করেই দেখেছিলেন৷ সে কারণে এক রকমের সমন্বয়হীনতা দেখা যায় প্রেসিডেন্ট ভবন আক্রমণে৷ ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ শেষ পর্যন্ত সেখানেও ব্যর্থ হয় সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/E. Ortac
পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা
পুলিশের ওপরও শুরুতে সেনা সদস্যদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না৷ পুলিশ বুঝে উঠতে পারছিল না অভ্যুত্থানের প্রয়াসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, নাকি সমর্থন দেবে৷ তাই শুরুতে প্রায় নিষ্ক্রিয়ই ছিল তারা৷ কিন্তু এর্দোয়ান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার পর পুলিশও রুখে দাঁড়ায়৷
ছবি: Reuters/M.Sezer
ধর্মীয় নেতাদের আস্থা অর্জন করতে না পারা
ধর্মীয় নেতাদের আস্থায় নেয়ার চেষ্টা করেনি সেনাবাহিনী৷ ফলে এর্দোয়ান স্মার্ট ফোনে ভাষণ দেয়ার পর মসজিদগুলো থেকেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়৷ ফলে পরিস্থিতি দ্রুত চলে আসে এর্দোয়ানের অনুকূলে৷ এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এফকান আলাকে গ্রেপ্তার করতে না পারা এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর দখল নিতে কালক্ষেপণ করার বিষয়টিও অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করায় ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: Reuters/Prime Ministry Pool
সমাজের ‘উঁচুমহলের’ সমর্থন না পাওয়া
অভ্যুত্থানের চেষ্টার সঙ্গে জড়িতরা জনমত একেবারেই বুঝতে পারেনি৷ তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানের প্রয়াস নতুন কিছু নয়৷ তবে বর্তমানে তুর্কি সমাজ একেবারেই সামরিক অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানানোর অবস্থায় নেই৷ তাছাড়া ব্যবসায়ী সমাজ এবং অভিজাত শ্রেণির সমর্থন আদায়েও ব্যর্থ হয়েছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/G.Tan
5 ছবি1 | 5
ডয়চে ভেলের তুর্কি বিভাগের খবর অনুযায়ী, জুলাই মাস যাবৎ প্রায় ৬০ জন তুর্কি কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী তাদের কর্মকাল সমাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও জার্মানিতে রয়ে গেছেন৷ তাদের অনেককে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমনকি পাসপোর্ট বাতিল করার ঘটনাও ঘটেছে৷ ইতিপূর্বে বার্লিনের তুর্কি দূতাবাসের মিলিটারি অ্যাটাশে তুরস্কে ফিরতে অস্বীকার করেন ও সপরিবারে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন৷