গত বছর শরণার্থীদের যে ঢল নেমেছিল, ইদানীং তা সামলে নিয়েছে জার্মানি৷ কিন্তু যারা আপাতত জার্মানিতেই থেকে যাচ্ছেন, তাদের অধিকার ও কর্তব্য স্থির করতে স্থির হয়েছে এক নতুন আইন৷
বিজ্ঞাপন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার বেশ দ্রুত গতিতে ইন্টিগ্রেশন সংক্রান্ত এক আইন কার্যকর করতে চলেছে৷ এর মূলমন্ত্র হলো, শরণার্থীরা তাদের কর্তব্য পালন করলে রাষ্ট্রও তাদের বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেবে৷
অর্থাৎ জার্মানিতে বসবাস ও কাজকর্ম করতে গেলে জার্মান ভাষা শিখতে হবে, জার্মানির ‘মূল্যবোধ' মেনে নিতে হবে৷ এই শর্ত না মানলে তাদের আর্থিক ভাতায় কাটছাঁট করা হবে, অন্যান্য কিছু সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হবে৷
বলা বাহুল্য, এমন আইনের খসড়া নিয়ে জার্মানিতে যথেষ্ট তর্ক-বিতর্ক চলছে৷ সরকার অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থনে বলছে, এই প্রথম রাষ্ট্রের উপরও যথেষ্ট চাপ বাড়ানো হচ্ছে৷ শরণার্থীদের ভাষাশিক্ষা বা ইন্টিগ্রেশন কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা বা তার উন্নতি করা সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে৷ সেই অবকাঠামো থাকলে তবেই শরণার্থীদের উপর সংশ্লিষ্ট কোর্সে ভর্তি হবার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হবে৷ তাঁরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে৷ তবে এমন মনোভাবকে ‘পপুলিজম' আখ্যা দিচ্ছেন সমালোচকরা৷
একেবারে নিখুঁত ও আদর্শ আইন সম্ভব না হলেও জার্মানির পড়ন্ত জন্মহারের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক আলেক্সান্ডার কুডাশেফ৷
বহুল চর্চিত ইন্টিগ্রেশন আইনের পাশাপাশি শরণার্থীদের কল্যাণে আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষ করে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উপর বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে৷
সিরিয়া থেকে যেভাবে জার্মানিতে এসেছে একটি পরিবার
জীবন বাঁচাতে সিরিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছেন অনেক শরণার্থী৷ জার্মানির ইমিগ্রেশন সেন্টার সেসব মানুষের সংগ্রাম নিয়ে আয়োজন করেছে একটি প্রদর্শনীর৷ সেখানেই জানা গেলো কোটো পরিবারের বেঁচে থাকার গল্প৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
আলেপ্পোয় সুখি সংসার
২০১৬ সালে তোলা কোটা পরিবারের ছবি৷ খলিল, তাঁর স্ত্রী হামিদা, সন্তান মান্নান, ডোলোভান, আয়াজ এবং নের্ভানা৷ তখন সিরিয়ায় কোনো গৃহযুদ্ধ ছিল না, ছিল না ধ্বংসলীলা৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত
সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর সময় খলিল কোটো সেদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি শাখার প্রধান ছিলেন৷ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর চাকুরি হারান এই ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার৷ একসময় খাদ্য এবং পানির অভাব প্রকট হতে থাকে৷ ২০১৪ সালের এপ্রিলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তারা তুরস্ক চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে খলিলের মা বাস করতেন৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
ধাপে ধাপে আগানো
খলিল তুরস্কে কোনো কাজ খুঁজে পাননি৷ তাই ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাঁর পরিবার জার্মানিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন৷ খলিলের ভাই ইউরোপে বাস করেন৷ তিনিই পরিবারটিকে জার্মানিতে আসতে উৎসাহ যোগান৷ শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আসার পথে বুলগেরিয়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে ছয় মাস কাটান কোটো পরিবার৷ এই চামচটি সেই শিবিরের এক স্মৃতিচিহ্ন৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
জার্মানিতে স্বাগতম
অবশেষে জার্মানিতে কোটো পরিবার৷ জার্মানির উত্তরের শহর ব্রেমেনে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে৷ সেখানকার এক নারী খলিলকে এই জিন্সের প্যান্টটি দিয়েছেন, জার্মানিতে পাওয়া তাঁর প্রথম পোশাক এটি৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
খলিলের সন্তানরা এখন জার্মান স্কুলে যাচ্ছেন৷ আর খলিল এবং তাঁর স্ত্রী হামিদা শিখছেন জার্মান৷ ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার জার্মানিতে একটি চাকরি পাবেন বলে আশা করছেন৷ সিরিয়ায় ফেলে আসা অতীত মাঝে মাঝে মনে করে আনন্দ খোঁজেন তারা৷ আয়াজের সিরিয়ার স্কুলের আইডি কার্ড এটি৷