জার্মানিতে বসবাসকারী তুরস্কের মানুষ প্রেসিডেন্ট ও সংসদীয় নির্বাচনে ভোট দিতে শুরু করলেন। জার্মানিতে বসেই তারা এই ভোট দিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
তুরস্কে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের নির্বাচন আগামী ১৪ মে। কিন্তু দেশের বাইরে বসবাসকারী নাগরিকরা বৃহস্পতিবার থেকে ভোট দেয়া শুরু করলেন। জার্মানিতে ১৫ লাখ তুরস্কের নাগরিক আছেন। তারা বৃহস্পতিবার থেকে ভোট দিতে শুরু করেছেন।
এর আগে দেখা গেছে, জার্মানিতে বসবাসকারী তুরস্কের মানুষ এর্দোয়ানের কট্টর সমর্থক। কিন্তু এবার এর্দোয়ান কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। সমীক্ষা বলছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রীতিমতো লড়াই হচ্ছে। কিছু সমীক্ষা এর্দোয়ানকে পিছিয়ে রেখেছে।
জার্মানিতে তুরস্কের মানুষদের ভোট নিয়ে
আগামী ৯ মে পর্যন্ত জার্মানিতে বসবাসকারী তুরস্কের মানুষ ভোট দিতে পারবেন। জার্মানিতে তুরস্কের মানুষের মোট সংখ্যা প্রায় ২৮ লক্ষ। তার মধ্যে ১৫ লক্ষ মানুষ তুরস্কের নাগরিক। তারাই ভোট দিতে পারবেন।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তুরস্ককে জানিয়ে দিয়েছে, মোট ১৬টি ভোটকেন্দ্র অনুমোদন করেছে সরকার। এর আগে কখনো এতগুলি ভোটকেন্দ্র হয়নি। ২০১৮ সালে ১৩টি ভোটকেন্দ্র ছিল।
বার্লিন, কোলন, স্টুটগার্ট, নুরেমবার্গ-সহ যে সব শহরে তুরস্কের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা আছেন, সেখানে ভোটকেন্দ্র করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
জার্মানিতে এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তা
২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এর্দোয়ান ও জার্মানির মধ্যে বেশ তিক্ততা ছিল। এর্দোয়ান অভিযোগ করেছিলেন, জার্মানি তার প্রচারে বাধা দিচ্ছে।
ভোট ১৪ মে, চ্যালেঞ্জের মুখে এর্দোয়ান
গত ২০ বছর ধরে কড়াহাতে তুরস্ক শাসন করছেন এর্দোয়ান। এবারের ভোটে তিনি কি জিততে পারবেন?
ছবি: ADEM ALTAN/AFP/Getty Images
এর্দোয়ানের শাসন
গত দুই দশক ধরে তুরস্ক শাসন করছেন এর্দোয়ান। সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রপতি-প্রধান ব্যবস্থা চালু করেছেন। কড়াহাতে বিক্ষোভের মোকাবিলা করেছেন। ইউরোপ তথা বিশ্ব যাতে তুরস্ককে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয় তার চেষ্টা করেছেন। এর আগের নির্বাচনগুলিতে কার্যত কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েননি তিনি। কিন্তু এ বার পড়েছেন।
ছবি: Burhan Ozbilici/AP Photo/picture alliance
বিরোধী প্রার্থী
এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী প্রার্থী হলেন কেমাল কিরিচদারোলু। সাবেক আমলা। বছর দুয়েক আগেও ভাবা যায়নি, তিনি প্রধান বিরোধী প্রার্থী হয়ে এর্দোয়ানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। তিনি সৎ ও দায়িত্বশীল মানুষ বলে পরিচিত। আমলা থাকার সময় তিনি কঠোরভাবে দুর্নীতির মোকাবিলা করতে চেয়েছেন। একাধিকবার তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে।
ছবি: Depo Photos/ABACA/abaca/picture alliance
এর্দোয়ানের সমস্যা
আবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে এর্দোয়ানের পথে প্রধান কাঁটা হলো, জিনিসের দাম বাড়া নিয়ে মানুষের ক্ষোভ। শুধু যে জিনিসের দাম বেড়েছে তাই নয়, দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের কথা না শুনে এর্দোয়ান নিজের আর্থিক নীতি নিয়ে চলেছেন। তাতে সংকট বেড়েছে। তার প্রভাব মানুষের জীবনে, কর্মসংস্থানে গিয়ে পড়েছে।
ছবি: Safak Hacaloglu/Depo/IMAGO
ভূমিকম্পের পর উদ্ধারে দেরি নিয়ে ক্ষোভ
গত ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণপূর্ব তুরস্কে পরপর দুইটি প্রবল ভূমিকম্পের ফলে ৪০ হাজারের মতো মানুষ মারা যান। বিরোধীদের অভিযোগ, পরিস্থিতি অনুযায়ী যেভাবে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে সরকারের ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত ছিল, তা হয়নি। পরে এর্দোয়ান উদ্ধারকাজে দেরির জন্য ক্ষমা চান।
ছবি: ELOISA LOPEZ/REUTERS
বিরোধীদের দাবি
বিরোধীরা মূলত কয়েকটি দাবিতে একজোট হয়েছেন। এর্দোয়ানকে সরাতে হবে এবং জিনিসের দাম কমাতে হবে ও অর্থনীতির হাল ফেরাতে হবে। সাধারণ মানুষের দাবি, জিনিসের দাম প্রচুর বেড়েছে, কিন্তু তাদের আয় বাড়ছে না। উপরের ছবিটি তুরস্কের ওয়ার্কার্স পার্টির সমাবেশের।
ছবি: Tolga Ildun/ZUMAPRESS.com/picture alliance
কেমালের কামাল
কেমাল কিরিচদারোলুর কৃতিত্ব হলো, তিনি অনেকগুলি বিরোধী দলকে একজোট করতে পেরেছেন। সাধারণ সূত্র হলো, এর্দোয়ান-বিরোধিতা। তাছাড়া কেমাল অন্য দলের অধিকাংশ দাবিই মেনে নিয়ে তাদের জোটে টেনে এনেছেন।
ছবি: ADEM ALTAN/AFP/Getty Images
সমীক্ষা কী বলছে?
দ্য গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, অধিকাংশ সমীক্ষা কেমালকে সামান্য হলেও এগিয়ে রেখেছে। অন্তত, কেমাল লড়াই করছেন। দীর্ঘদিন পর এর্দোয়ান যে লড়াইয়ের মুখে পড়েছেন, তা সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে। এর্দোয়ানের কট্টর সমর্থকরা বলছেন, জিনিসের দাম বাড়ায় তারা বীতশ্রদ্ধ। তাই তারা এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন।
ছবি: DHA
কেমালের প্রতিশ্রুতি
কেমাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ও বিরোধীরা জিতলে তিনি তুরস্কে আবার সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করবেন। প্রেসিডেন্ট-প্রধান ব্যবস্থা থেকে সরে আসবেন। কারণ, একজনের হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত হোক, তা তারা চান না। এর্দোয়ানের শাসন হলো এক ব্যক্তির শাসন। তার কুফল মানুষ বুঝতে পারছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
ছবি: Alp Eren Kaya/Republican People's Party/Handout/REUTERS
বিরোধীদের কাছেও সহজ নয়
এর্দোয়ানকে হারানো, পার্লামেন্টে জেতা এই দুইটি কাজ বিরোধীদের পক্ষেও সহজ নয়। বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পার্লামেন্টে একেপি পার্টিকে বিরোধীরা সামান্য ব্যবধানে হারাতে পারলেও এর্দোয়ানকে হারাতে পারবেন না কেমাল। তার পক্ষে এর্দোয়ানের মতো রাজনীতিককে হারানো খুবই কঠিন। এর্দোয়ানের অনুগামীর সংখ্যা কম নয়। তাদের একটা অংশ নিঃসন্দেহে ক্ষুব্ধ। তা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তারা কি এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন?
ছবি: MURAT CETINMUHURDAR/PPO via REUTERS
বিরোধীরা আশাবাদী
প্রধান ছয়টি বিরোধী দলকে একজোট করতে পেরেছেন কেমাল। এই দলগুলি এখন এককাট্টা হয়ে লড়ছে। তাদের দাবি, জনগণের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, কেমাল জিতবেন। তিনি অঘটন ঘটাতে পারবেন।
ছবি: DHA
দুই দিনের কর্মসূচি বাতিল
এর্দোয়ান একটি টিভি-তে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মিনিট ২০ পরে এর্দোয়ান সাক্ষাৎকার ছেড়ে চলে যান। জানানো হয়, তার স্টমাক ফ্লু হয়েছে। তিনি দুই দিনের কর্মসূচি বাতিল করেন। রাশিয়ার সাহায্যে তৈরি তুরস্কের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনেও যেতে পারেননি তিনি। ভিডিওর মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন।
ছবি: MURAT CETINMUHURDAR/PPO via REUTERS
11 ছবি1 | 11
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবারও জানিয়ে দিয়েছে, জার্মানির নিয়ম হলো, নির্বাচনের ৩০ দিন আগে পর্যন্ত কোনো বিদেশি রাজনীতিক তাদের দেশে প্রচার করতে পারেন। তারপর নয়।
২০১৪ সালে কোলনে এর্দোয়ানের একটা সভা ছিল। সেখানে তিনি ভোটের আগে তার সমর্থকদের জড়ো করেছিলেন। এর্দোয়ানের দাবি ছিল, ওটা ভোটের প্রচার ছিল না। ইউরোপে ইউনিয়ন অফ টার্কিশ ডেমোক্র্যাট(ইউইটিডি)-এর দশ বছর পূর্তি উৎসব পালন করেছেন তিনি। জার্মানির বহু রাজনীতিক এর্দোয়ানকে ওই ইভেন্ট বাতিল করার আবেদন জানিয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে তার প্রচার নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।
২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি জার্মানিতে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পান। অথচ, অ্যামেরিকায় তিনি পান ১৭ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২১, ইরানে ৩৫ ও কাতারে ২৯ শতাংশ ভোট।
তবে এবার তিনি জার্মানিতে একইরকম সমর্থন পাবেন কি না, বোঝা যাচ্ছে না। কারণ, বিরোধী প্রার্থী কেমাল কিরিচদারোলু এবার তুরস্কে ভালো সাড়া পাচ্ছেন।