1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আতঙ্কে আছেন সৌদি নারী শরণার্থীরা

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সৌদি আরব থেকে জার্মানিতে যেসব নারী আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা এখনও পরিবারের সদস্যদের নানা হুমকির কারণে আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন৷ ডয়চে ভেলে এমন কয়েকজন নারী ও অধিকার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে৷

ছবি: picture-alliance/dpa/T. Vogler

অধিকার বিশেষজ্ঞদের ধারণা সৌদি দূতাবাস এই নারীদের পরিবারের কাছে তথ্য সরবরাহ করছে৷ এই সব নারীরা তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে ফোনে যেসব হুমকি পান, তাহলো ‘তুমি কোথায় লুকাবে? আমরা জানি তুমি তোমার অ্যাপার্টমেন্টে নেই৷ আমরা খুব শিগগিরই তোমার অবস্থান জানতে পারবো৷ এমনকি তুমি যদি বিশ্বের শেষ প্রান্তে গিয়ে লুকাও তবুও৷ আমাদের লোক আছে, যারা সর্বক্ষণ তোমাকে নজরে রাখছে৷'

আয়েশা (ছদ্মনাম) এমন সব ধরণের ফোন বার্তা একসাথে করে সেগুলোর প্রিন্ট নিয়ে অনুবাদ করে জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে৷ এমনই এক বার্তায় লেখা, ‘দূতাবাসের লোকজন তোমার খবর জানে৷' 

কেনো পালালেন আয়েশা?

আর দশটা সৌদি নারীর মতোই আয়েশাকে তাঁর প্রতিটা কাজে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হতো৷ একা বাইরে যেতে পারতেন না তিনি৷ এক পর্যায়ে এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়, প্রথম সাক্ষাতেই যাকে ভয়ংকর মনে হয়েছিল তাঁর৷ তাই সিদ্ধান্ত নেন পালানোর৷ আয়েশার বাবা এমন একটি অ্যাপ ব্যবহার করতেন, যার মাধ্যমে মেয়ের চলাফেরার প্রতিটি বিষয় নজর রাখতেন৷ একদিন গেম খেলার ছলে আয়েশা তাঁর বাবার মোবাইল চুরি করেন এবং ঐ অ্যাপের পাসওয়ার্ড বদলে দেন৷ এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে জার্মানিতে আসার পরিকল্পনা করেন৷ জার্মানিতে পৌঁছেই আশ্রয়ের আবেদন করেন৷

২০১৭ সালের অক্টোবরে আয়েশার আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হয়৷ হালে শহরের যে অ্যাপার্টমেন্টে তিনি ছিলেন, সেখানে একরাতে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এক আরব ব্যক্তি দাঁড়িয়েছিলেন৷ আয়েশা পুলিশকে ফোন করলেও কোনো অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি৷ এরপর ২০১৮ সালের আগস্টে বোরকা পরিহিত এক নারী তাঁর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন৷ যখন তিনি দরজা খোলেন ঐ নারীর সঙ্গে থাকা এক পুরুষ জোর করে অ্যাপার্টমেন্ট ঢুকে পড়ে৷ আয়েশা বাথরুমে ঢুকে পুলিশকে ফোন করলে পুলিশ তাঁকে আবারো আশ্রয়শিবিরে নিয়ে যায়৷ এরপর একের পর এক হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ পান তিনি৷ যেখানে লেখা ছিল ‘কেউ তোমাকে আমাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না৷' একটি নাম্বার তাঁর ভাইয়ের বলে জানান তিনি৷ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে হামবুর্গে চলে যান তিনি৷ এখন সেখানেই আছেন৷

জার্মানির হাল্বেরস্টাট এ একটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে৷ সেখানে আয়েশাসহ কয়েকজন নারীর সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ তাঁদের কথা থেকে ডয়চে ভেলের সাংবাদিকরা ধারণা করছেন বার্লিনের সৌদি দূতাবাস এই নারীদের তথ্য তাঁদের পরিবারের কাছে জানায়৷ 

সৌদি আরবে ধর্ষণের শিকার নারী

02:13

This browser does not support the video element.

আয়েশার মতই আতঙ্কে আছেন নুরা আর মাশাহিল (ছদ্মনাম)৷ জার্মানিতে পৌঁছানোর কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁরা হুমকি দেয়া হোয়াটস অ্যাপ ম্যাসেজ পান, যেমন ‘তুমি কি ভেবেছো আমরা জানি না কোথায় আছো? সৌদি দূতাবাস আমাদের সব তথ্য দিচ্ছে৷ তোমার জীবনপ্রদীপ খুব শিগগিরই নিভে যাবে৷' দুই নারীই জানালেন এসব বার্তা তাঁদের মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যন্ত করে ফেলে৷ এরপরও তাঁরা ইতিবাচক যে দিকটা ভাবেন তাহলো সৌদি আরব থেকে পালানোর সুযোগ তাঁরা পেয়েছেন, যেখানে নির্যাতনের শিকার কত নারী এই সুযোগ পান না৷ তাই অন্য নারীদের জন্য নিজেদের কথা জানানোর সাহস করেছেন তাঁরা৷

এদিকে, জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জার্মানির আশ্রয়কেন্দ্রে সৌদি আরবের কোনো গুপ্তচর থাকার সম্ভাবনা নেই৷ জার্মানির ১৬টি রাজ্যের আশ্রয়শিবিরে তারা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন৷ তারা এই বিষয়টি নিয়ে অবগত৷ তাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা৷

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সৌদি কিশোরী রাহাফ মোহাম্মদের দেশ থেকে পালানোর খবর বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঠাঁই করে নেয়৷ কিন্তু রাহাফের মতো সবাই সৌভাগ্যবান নয়৷ দিনা আলী ২০১৭ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়া পালাতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু ফিলিপাইন্স থেকে তাঁকে সৌদিতে ফেরত পাঠানো হয়৷ তারপর থেকে তাঁর কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মী নোথনা বেগম বললেন, ‘‘যেসব নারীকে সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হয়, তাঁদের বিরুদ্ধে অবাধ্যতার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অভিযোগ আনা হয়৷ তাঁদের দীর্ঘ সময় কারাভোগ করতে হয় এমনকি চাইলে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের ফাঁসিও দিতে পারে৷''

সাক্সনি আনহাল্ট রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সৌদি আরবের ১৪৬ জন নাগরিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন, যাদের মধ্যে ৯৭ জনকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷

প্রতিবেদন: এসথের ফেলডেন, নিনা রেড্ডি, কাইরা লেভিন/এপিবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ