1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে ‘দারিদ্র্য অভিবাসন’

নওমি কনরাড/এআই২ জানুয়ারি ২০১৪

জার্মানির রক্ষণশীল দল খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন (সিএসইউ) এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷ দরিদ্রতার কারণে অভিবাসী বৃদ্ধি পেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা, যদিও অনেকেই এই শঙ্কা অর্থহীন মনে করছেন৷

ছবি: imago/epd

জার্মান সরকারের নবনিযুক্ত বিদেশি বিষয়ক কমিশনার আইদান ও্যজুগুজ সিএসইউ-র উদ্বেগ একেবারেই আমলে নিচ্ছেন না৷ বরং রাগত স্বরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবছর সিএসইউ-র কাছ থেকে একই কথা শুনি৷ আবার পরবর্তীতে তারা স্বীকার করে নেয় যে তাদের শঙ্কা সত্যি হয়নি৷'' যখনই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশের কর্মীদের অন্য দেশে কাজ খোঁজার স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তখনই রক্ষণশীল সিএসইউ জার্মানির সামাজিক কল্যাণ তহবিলের উপর অভিবাসীদের ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে৷ সিএসইউ হচ্ছে বাভারিয়ায় আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)-এর সহযোগী৷ বলা বাহুল্য, বর্তমান জোট সরকারে তাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে৷

সদ্য প্রকাশিত এক পেপারে সিএসইউ রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে আসা ‘দারিদ্র্য অভিবাসন' ঠেকাতে কঠোর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ জানুয়ারি থেকে এই দুটি দেশের কর্মীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশেও স্বাধীনভাবে কাজের সন্ধান করতে পারবে৷ সিএসইউ ধারণা করছে, এখন দেশ দু'টি থেকে বিপুল সংখ্যক সামাজিকভাবে অনগ্রসর মানুষ জার্মানিতে আসবে৷ এরপর তারা জার্মানির সমাজ কল্যাণ ও সন্তান লালনপালন তহবিল থেকে নিয়মিত অর্থ নিয়ে জীবনযাপন করবে৷

ছবি: imago/epd

সিএসইউ-র আঞ্চলিক মুখপাত্র হান্স-পেটার উল একটি সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ‘‘এ সব ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে হবে৷'' সামাজিক তহবিল নিয়ে কেউ প্রতারণা করলে শাস্তি হিসেবে জার্মানি থেকে বের করে দেওয়া এবং পরবর্তীতে জার্মানিতে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারিরও পক্ষে সিএসইউ৷ পাশাপাশি অভিবাসীদের সামাজিক কল্যাণ তহবিলের আওতায় আনার আগে কমপক্ষে তিন মাস সময় নেয়ারও দাবি জানিয়েছে বাভারিয়ার রক্ষণশীল দলটি৷

পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা

বর্তমান জোট সরকারে থাকা মধ্য-বামপন্থি এসপিডি অবশ্য সিএসইউ-র এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে৷ আর বাম দলের চেয়ারম্যান ব্যার্ন্ড রেক্সিংগার সমালোচনার পাশাপাশি সিএসইউ-র বিরুদ্ধে বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন৷

পাশাপাশি ক্লাউস সিমারমানের মতো স্বাধীন পর্যবেক্ষকরাও এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন৷ ‘ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ লেবার'-এর পরিচালক সিমারমান বরং জানান, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে আসা অধিকাংশ অভিবাসীই প্রশিক্ষিত কর্মী৷ তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীও রয়েছেন৷ ‘‘আর এ ধরনের জনশক্তি জার্মানির এখন খুব দরকার'', বলেন সিমারমান৷

জার্মান সরকারের নবনিযুক্ত বিদেশি বিষয়ক কমিশনার আইদান ও্যজুগুজছবি: picture-alliance/dpa

পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানিতে বসবাসরত বুলগেরীয় এবং রোমানীয় অভিবাসীদের মধ্যে অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় বেকারত্বের হার কম৷ শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সামাজিক কল্যাণ তহবিলের সুবিধাভোগীদের মধ্যে মাত্র ০ দশমিক চার শতাংশ রোমানীয় বা বুলগেরীয়৷

সর্বোচ্চ দু'লাখ

সিমারমান মনে করেন, ২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী জার্মানিতে আসার সম্ভাবনা কম৷ এ বছর বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়া থেকে সর্বোচ্চ দু'লাখের মতো অভিবাসী জার্মানিতে আসতে পারেন বলে ধারণা করেন তিনি৷ শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাবও সিমারমানের বক্তব্যকে সমর্থন করে৷

এসপিডি-র সদস্য ও্যজুগুজ অবশ্য স্বীকার করেন, জার্মানিতে অনেক দরিদ্র অভিবাসী রয়েছে৷ বিশেষ করে ডর্টমুন্ড এবং বার্লিনে রোমা সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ রয়েছে, যারা নিজেদের দেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে জার্মানিতে এসেছে৷

যারা দারিদ্র্য অভিবাসনের শিকার, তাদের মধ্যে উপযুক্ত শিক্ষার অভাব রয়েছে এবং তারা মূলত কম মজুরির খণ্ডকালীন কাজের উপর নির্ভরশীল৷ এই জনগোষ্ঠীকে ‘প্রতারক' হিসেবে আখ্যা না দিয়ে বরং পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনকে আরো দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত সহযোগীতা করার পক্ষে ও্যজুগুজ৷

প্রসঙ্গত, ইইউ নাগরিকরা জার্মানিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কল্যাণ তহবিল থেকে সুবিধা নিতে পারবেন কিনা তা নির্ধারণের চেষ্টা করছে আদালত৷ যদি তারা কাজ করে তাহলে শিশু কল্যাণ এবং অন্যান্য তহবিল থেকে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে৷

তবে আইন বলছে, ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশের নাগরিকরা যদি শুধুমাত্র কাজ খোঁজার জন্য জার্মানিতে আসে, তাহলে তারা সামাজিক কল্যাণ তহবিলের সুবিধা নিতে পারবে না৷ বিষয়টি ইউরোপীয় আইনের লঙ্ঘন কিনা – সে বিষয়ে জার্মানির রাজ্য পর্যায়ের দু'টি আদালত পরস্পর বিরোধী রায় দিয়েছে৷ এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে তাই এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি৷

নিছক প্রচারণা?

তথ্য উপাত্ত ভিন্ন কথা বললেও সিএসইউ তাদের অবস্থানে অনড় থাকার পক্ষে৷ এর পেছনে সম্ভবত রাজনৈতিক কারণ কাজ করছে৷ বাভারিয়ায় আগামী ১৬ মার্চ পৌরসভা নির্বাচন, এবং ইউরোপীয় নির্বাচন আগামী ২৫ মে৷

জার্মানির ক্ষমতাসীন সিডিইউ/সিএসইউ জোট অতীতেও নির্বাচনের সময় অভিবাসী বিরোধী বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ১৯৯৯ সালের কথা৷ তখন সিডিইউ-র রোলান্ড কখ ‘‘অঙ্গীভূতকরণকে হ্যাঁ, দ্বৈত নাগরিকত্বকে না'' স্লোগান দিয়ে হেসে রাজ্যের নির্বাচনে জয়লাভ করেন৷

বার্লিনে বসবাসরত বুলগেরীয় শিক্ষার্থী স্টানিমির দ্রাগিভ অভিবাসী সংক্রান্ত এই বিতর্ককে হাস্যকর এবং অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ তবে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের এ ধরনের কথাবার্তায় ক্ষুব্ধ তিনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ