জার্মানিতে শিশুদের যৌন নিপীড়ন, শারীরিক নির্যাতন ও হত্যা বাড়ছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর সারা দেশে ১০০-রও বেশি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে, যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে কয়েক হাজার শিশু৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার জার্মানিতে ২০১৮ সালে ঘটা অপরাধের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়৷ সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশে অন্তত ১৩৮ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে৷ এই শিশুদের ৮০ ভাগের বয়স ছয় বছরেরও কম৷ এছাড়া সে-বছর জার্মানিতে ৯৮ জন শিশুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে পুলিশ৷
শৈশব কি হারিয়ে যাচ্ছে?
ঢাকা-কলকাতার মধ্য বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের মধ্যে ক’জন আজকাল মাঠে-ময়দানে, জঙ্গলে খেলাচ্ছলে শৈশব উপভোগ করার সুযোগ পায়? জার্মানিতে শিশুদের ৬ বছরের আগে স্কুলে যাওয়া নিষেধ, অক্ষরজ্ঞান তখনই হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
ফিরিয়ে দাও শৈশব
দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক নগরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার মূলমন্ত্র হলো প্রতিযোগিতা৷ একেবারে ছোট বয়স থেকেই তাই চাপের শেষ নেই৷ পড়াশোনা, নাচগান, আঁকা, শরীরচর্চা, খেলাধুলা – সব কিছুতেই সেরা হয়ে ওঠার জন্য শিশুদের উপর চাপ দেওয়া হয়৷ এর পরিণাম কি ভালো হতে পারে?
ছবি: AP
সন্তান পালনে পেশাদারি সাহায্য
অন্য সব বিষয়ের মতো সন্তান পালনের ক্ষেত্রেও পুরানো অনেক ধ্যানধারণা আজ অচল হয়ে পড়েছে৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীরা জার্মানিতে বাবা-মায়েদের এই কাজে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করেন৷ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তারা সন্তান পালন সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দেন৷ স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাই ধাত্রীর পারিশ্রমিক দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
বাবা-মা একটু সময় দিলে
জন্মের পর শিশুর জন্য বাবা-মায়ের স্পর্শ, তাদের আদর-ভালোবাসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু তাদের অত সময় আছে কি? জার্মানিতে নানা মডেলের আওতায় বাবা-মা প্রথম বছরে সন্তানের সঙ্গে অনেক সময় কাটানোর সুযোগ পান৷ রাষ্ট্র ও কর্মদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য সেই ব্যবস্থা করে দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পুঁথিগত শিক্ষার প্রস্তুতি
এক থেকে দুই বছর বয়সের মধ্যে জার্মানির শিশুরা সাধারণত কিন্ডারগার্টেনে যাবার সুযোগ পায়৷ কিন্তু সেখানে পুঁথিগত শিক্ষা নিষিদ্ধ৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের কাছ থেকে খেলাচ্ছলে জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে নানারকম শিক্ষা পায় কচিকাচারা৷ স্কুলে যাবার আগে এই প্রস্তুতি তাদের খুব কাজে লাগে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মবোধ
ঢাকা-কলকাতার মতো শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে অনেক শিশু সহজে মাটির সংস্পর্শে আসতে পারে না৷ জার্মানিতে শিশুদের প্রকৃতির কোলে যেতে উৎসাহ দেওয়া হয়৷ এমনকি কিছু এলাকায় জঙ্গলের মধ্যেই কিন্ডারগার্টেন রয়েছে৷ গাছপালা ও নানা প্রাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় হয় তাদের৷
ছবি: Jens Schlueter/ddp
স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক
সাধারণত ৬ বছর বয়সে স্কুলে যায় জার্মানির বাচ্চারা৷ তখনই পড়াশোনা শুরু হয়৷ প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা বাধ্যতামূলক৷ স্কুলে আলাদা ইউনিফর্ম নেই৷ প্রথম দিনে কচিকাচাদের উপহারে ভরা এক বিশেষ ঠোঙা দেওয়ার রেওয়াজ আছে৷
ছবি: DW
পড়ার চাপ
স্কুলের পড়াশোনা স্কুলেই শেখানোর চেষ্টা করা হয়৷ বাড়িতে ফিরে কিছু হোমওয়ার্ক করলেই চলে৷ সাধারণত গৃহশিক্ষক বা কোচিং ক্লাসের প্রয়োজন পড়ে না৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতা দূর করতে বাড়তি সাহায্যের ব্যবস্থা রয়েছে৷ শিক্ষা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে বলে জার্মানিতে অনেক সংস্কার আটকে আছে বলে নানা মহলে অভিযোগ ওঠে৷
ছবি: Imago/Jochen Tack
7 ছবি1 | 7
২০১৮ সালে শিশুদের যৌন নিপীড়নের মোট ১৪ হাজার ৬০০ অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ৷ অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৪০ জন শিশুর ওপর চলেছে যৌন নিপীড়ন৷ দেশজুড়ে এমন ঘটনা যে বাড়ছে তা পরিসংখ্যান থেকে বেরিয়ে এসেছে৷ ২০১৭-র তুলনায় ২০১৮ সালে এমন অপরাধ ছয় দশমিক ৪৩ ভাগ বেড়েছে৷
তবে পুলিশ মনে করে, ১৪ হাজার ৬০০ অভিযোগ পেলেও অপরাধের প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি৷ যৌন নিপীড়কদের অনেকেই শিশুদের পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা প্রতিবেশী বলে সব ঘটনা পুলিশকে জানানো হয় না৷ জার্মানির ফেডারেল অপরাধ বিভাগের প্রধান হোলগার ম্যুনশ বলেছেন, ‘‘পুলিশ যেসব অভিযোগের কথা জানতে পেরেছে শুধু সেসবই উঠে এসেছে পরিসংখ্যানে৷ অনেক অপরাধের ঘটনাই অগোচরে থেকে যায়৷''
আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে শিশুদের পর্নো ভিডিও তৈরি এবং প্রচারও ১৪ শতাংশ বেড়েছে৷
এসিবি/কেএম (এএফপি, ডিপিএ)
জার্মানিতে কোন বয়সে শিশুরা কী কী অধিকার পান?
জার্মানিতে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের অধিকার সীমিত৷ রেস্তোরাঁ হোক বা সিনেমা, প্রতিটি স্থানে তাদের জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে, এসবের লঙ্ঘন করলে বাবা-মাকে শাস্তির পাশাপাশি ৫০ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/R. Märzinger
সিনেমা
৩ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের সিনেমা হলে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই জার্মানিতে৷ তবে চার বছর থেকে শিশুরা কেবল শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখতে পারবে৷ এসব ছবিতে নির্দিষ্ট করা থাকে কোন সিনেমা ৬, ১২, ১৬ বা ১৮ বছর বয়সি দর্শকের জন্য প্রযোজ্য৷ ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুরা রাত ৮টা পর্যন্ত, ১৬ বছরের শিশুরা রাত ১০ টা পর্যন্ত এবং ১৮ বছরের ছেলে-মেয়েরা রাত ১২টা পর্যন্ত সিনেমা হলে মুভি দেখতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Deklofenak
ডিস্কো
১৪ বছর পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের ডিস্কোতে যাওয়ার অনুমতি নেই৷ ১৪ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত রাত ১০ টা পর্যন্ত ডিস্কোতে থাকতে পারে, তবে সাথে প্রাপ্তবয়স্ক কেউ থাকতে হবে৷ ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সি ছেলে-মেয়েরা একাই ডিস্কো যেতে পারে এবং থাকতে পারে রাত ১২টা পর্যন্ত৷ ১৮ বছর পর ডিস্কোতে যাওয়ার পুরোপুরি অনুমতি আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেস্তোরাঁ
১৬ বছর পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীদের একা রেস্তোরাঁয় গিয়ে দীর্ঘ সময় কাটানোর অনুমতি নেই৷ কিন্তু ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে খাবার খেতে যেতে পারে তারা৷ ১৬ বছরের পর রাত ১২টা পর্যন্ত খাবার খেতে পারে৷ ১৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে যখন চাইবে যেতে পারবে, তবে সাথে বড় কেউ থাকতে হবে৷
১৪ বছর বয়স পর্যন্ত জার্মানিতে মদ খাওয়ার অনুমতি নেই৷ ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে বাবা-মা’র উপস্থিতিতে বিয়ার বা ওয়াইন খেতে পারে৷ ১৬ বছরের পর ওয়াইন বা বিয়ার খাওয়ায় কোনো বাধা নেই, তবে অন্য সব ধরনের অ্যালকোহল কেবল ১৮ বছর পূর্ণ হলেই খেতে পারে৷ এনার্জি ড্রিঙ্কের ক্ষেত্রে বয়সভেদে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে এ বিষয়ে আইন করা যায় কিনা তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷
ছবি: Colourbox
সিগারেট
১৮ বছরের আগ পর্যন্ত কেবল সিগারেট খাওয়া নয়, যে-কোনো ধরনের তামাকদ্রব্য দোকান থেকে কেনারও অনুমতি নেই৷ নিকোটিন নেই, এমন ই-সিগারেটের উপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ এমনকি মেশিন থেকে বা অনলাইনেও সিগারেট বা তামাক আছে এমন কোনো দ্রব্য কেনা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/Keystone/C. Beutler
ট্যাটু
এর ওপর নির্দিষ্ট কোনো বিধি-নিষেধ নেই৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্যাটু পার্লারগুলো ১৮ বছরের নীচের ছেলে-মেয়েদের ট্যাটু করতে চায় না৷ আর ১৪ বছরের কম বয়সিদের একেবারেই মানা করে দেয় দোকানগুলো৷ ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সিরা বাবা-মা’র উপস্থিতিতে ট্যাটু করতে পারে৷ আর ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বাবা-মা না থাকলেও তাদের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর লাগে৷
ছবি: picture-alliance/beyond/Sonntag
কানে ছিদ্র
ট্যাটুর মতো কান বা নাকে ছিদ্র করার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই৷ এক্ষেত্রে ট্যাটুর মতোই নিয়ম চালু আছে৷ চিকিৎসকরা ১৮ বছরের আগে ছেলে-মেয়েদের কানে ছিদ্র করার অনুমতি দেয় না৷ এছাড়া ছিদ্র করার আগে অ্যালার্জি টেস্ট করা এবং এর ফলে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে সেটাও জানানো বাধ্যতামূলক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেক্স
১৪ বছরের কম বয়সিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ‘যৌন হয়রানি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়৷ ১৪ থেকে ১৮ বয়সিরা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, তবে কেবল ২১ বছরের কম বয়সি ব্যক্তির সঙ্গে৷ ১৮ বছরের পর সেক্সের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে৷ পর্ন ওয়েবসাইট দেখার ক্ষেত্রে ১৮ বছর হওয়া জরুরি৷
১৩ বছর বয়সের পর হাতখরচ চালানোর জন্য ছোট-খাটো কাজ করার অনুমতি আছে, যেমন খবরের কাগজ বিলি, ছোটদের দেখ-ভাল করা, তবে দিনে দুই ঘণ্টার বেশি নয়৷ ১৫ বছর বয়সের পর গ্রীষ্মের ছুটিতে দুই মাস কাজ করতে পারে৷ স্কুলে পড়ালেখা শেষে আট ঘণ্টা কাজের অনুমতি আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ড্রাইভিং লাইসেন্স
১৫ বছর বয়সের পর মোপেড চালানোর অনুমতি আছে৷ ১৬ বছর বয়সের পর ১২৫ সি সি পর্যন্ত মোটরবাইক চালানোর লাইসেন্স দেয়া হয়৷ ১৭ বছরের পর গাড়ি চালানো শেখার লাইসেন্স পেতে পারে৷ গাড়ি চালানোর সময় কোনো প্রাপ্তবয়স্ককে সঙ্গে থাকতে হবে৷ ১৮ বছরের পর গাড়ির লাইসেন্স পাওয়া যায়, কিন্তু ভারী মোটরসাইকেল চালানোর জন্য ২০ বছর হওয়াটা জরুরি৷