দুই জনের বেশি একসঙ্গে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জার্মানি৷ রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সোমবার থেকে কার্যকর হবে এই নিষেধাজ্ঞা৷
বিজ্ঞাপন
রোববার জার্মানির ১৬ রাজ্যের প্রধানদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সেখান থেকে বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত এসেছে৷ দুই জনের বেশি একসঙ্গে চলাচলে আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা, তবে একই পরিবারের সদস্য ও একই ঘরে বসবাসরতদের এই নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷
নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেককে নিজেদের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে৷ ম্যার্কেলের ভাষণের ঠিক আগে নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়ার মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট জানিয়েছেন, নিয়ম না মানলে ২৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হতে পারে৷
লাশেট জানিয়েছিলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে৷ তবে ম্যার্কেল তার ভাষণে প্রাথমিকভাবে দুই সপ্তাহের জন্য এই নিয়ম কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন৷
নিষেধাজ্ঞার বিস্তারিত
- রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, চুল কাটার সেলুন থেকে শুরু করে যেসব সেবা প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের মধ্যে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয় সেগুলো বন্ধ থাকবে৷
- ঘরের বাইরে প্রত্যেককে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷
- কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে৷
- এসব বিধিনিষেধ পরামর্শ নয়, বরং নিয়ম, যা সবাই মানতে বাধ্য৷ এমনটাই উল্লেখ করেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
কোয়ারান্টিনে থাকবেন ম্যার্কেল
এদিকে আঙ্গেলা ম্যার্কেল ঘরে কোয়ারান্টিনে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টেফান সাইবার্ট৷ বার্তা সংস্থা এএফপি এমন তথ্য দিয়েছে৷ শুক্রবার যে ডাক্তার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন তিনি নিজেই নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন৷ আর সে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ম্যার্কেল৷
সাইবার্ট বিবৃতিতে বলেন, চ্যান্সেলর নিজেই ঘরে কোয়ারান্টিনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ সামনের দিনগুলোতে তাকে নিয়মিত পরীক্ষা করা হবে৷ এই সময়ে তিনি ঘর থেকেই অফিসের কাজ করবেন৷
এফএস/এডিকে
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷