শুধু উন্নয়নশীল দেশেই নয়, জার্মানির মতো উন্নত দেশেও দুর্নীতির মাত্রা একেবারে কম নয়৷ গত কয়েক বছরে ঘুস আদান প্রদানের ঘটনা ধরাও পড়েছে অনেক৷ আগের চেয়ে অনেকগুণ বেশি৷
বিজ্ঞাপন
তালিকার বাইরে থাকা সংখ্যাটা আরো বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ কেন্দ্রীয় অপরাধ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে ৯৫৫৪ টি ঘুস, অর্থ আত্মসাত ইত্যাদি ঘটনা ধরা পড়ে৷ ২০১১ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬,৭৯৫ তে৷ তার মানে জার্মানিতে দুর্নীতি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটাই ধরে নেওয়া যায়৷
তবে একথা মানতে রাজি নন নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের অপরাধ দপ্তরের তদন্তকারী ক্রিশ্টিয়ান ফোসক্যুলার ও ফ্রান্স-ইওসেফ ময়টার৷ তাঁরা বলেন, ‘‘আসলে আমরা আগের চেয়ে বেশি বেআইনি কার্যকলাপ উদঘাটন করছি৷ কেননা আগের চেয়ে আরো ভাল করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি আমরা৷''
আগের চেয়ে বেশি কর্মী নিয়োগ
বাস্তবিকই পুলিশ ও প্রসিকিউশন এক্ষেত্রে বেশি কর্মচারী পেয়েছেন এবং বিশেষ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নেও এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ হটলাইন ও বেনামিতে দুর্নীতির খবরাখবর জানানোর সুব্যবস্থা করা হয়েছে৷ পুলিশ ও কর তদন্তকারীদের মধ্যে সহযোগিতামূলক কাজকর্ম আরো ভালভাবে করা হচ্ছে৷ তবে বিশেষ করে দুর্নীতির কারণ এবং ঘুসদাতা ও গ্রহীতা সম্পর্কে গবেষণা জোরালো করা হয়েছে৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
দুর্নীতির ক্ষেত্রে আস্থার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে৷ ঘুস দাতা ও গ্রহীতা পরস্পর পরিচিত৷ অধিকাংশই ক্ষমতাশালী উচ্চপদস্থ পুরুষ, যারা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, অনুমোদন দিতে পারেন৷ গবেষকরা জানতে পেরেছেন, চাকরির তৃতীয় বছরে এসে দুর্নীতির প্রবণতাটা বাড়ে৷ একারণে নগর ও স্থানীয় প্রশাসনের অনেক উঁচু পদে কর্মচারীদের কিছুদিন পর পরই বদলানো হয়৷
হঠাৎ করে ঘটে না দুর্নীতি
দুর্নীতি হঠাৎ করে ঘটে না৷ দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে ধরা পড়লে কেউ পুলিশকে টাকা দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, এই ধরনের ঘটনা নিতান্তই বিরল৷ ফেডারেল অপরাধ দপ্তরের তথ্য মতে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের(৫৬%) চেয়ে সরকারি পর্যায়ে (৩৫%) দুর্নীতি কম ঘটে৷ রাজনীতিতে এই হার এক শতাংশ৷
দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো কর্মকর্তা ধরা পড়লে সমস্ত পেনশন হারাতে হয়৷ শিল্পকারখানায় অসৎ কাজ গোপন করার সুযোগটা বেশি৷ ২০১২ সালে দুর্নীতির কারণে ২৭৬ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতি হয়েছে৷ তদন্তকারী কর্মকর্তা ফ্রান্স-ইওসেফ ময়টার বলেন, ‘‘আমার অবাক লাগে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ল্যাপটপ বা অল্প কয়েক হাজার ইউরোর বিনিময়ে এই ধরনের কাজ করেন কেন৷''
ইদানীং দুর্নীতি দমন করার জন্য সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ওপর জোর দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান৷ বিশেষ করে অর্থপ্রদান ও গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদনের ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এক্ষেত্রে বিভিন্ন শাখায় কর্মীরা নিজেরাই পরস্পরের প্রতি নজর রাখতে পারেন৷ সহকর্মীদের বেআইনি কাজটা ধরিয়ে দিতে পারেন৷
কোলনে একটি আবর্জনা ভস্মীকরণের চুল্লি নির্মাণের কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়৷ জানা গেছে, নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানিটি কাজটি পাওয়ার জন্য রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলকে ‘চাঁদা' দিয়েছে৷ ব্যাপারটি গোপন রাখা হয়েছিল৷ আরেকটি ঘটনায় হার্টের ভালভ ও পেসমেকার প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের উৎপাদিত সামগ্রী ব্যবহারের জন্য দেশব্যাপী ডাক্তারদের ঘুস দেয়৷ অনেক ক্ষেত্রে এটা বিপজ্জনকও বটে৷