কয়েক দশক ধরে চালু থাকা এক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে অভিবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার পথ সুগম করার পথে বেশ খানিকটা এগিয়েছে জার্মান সরকার৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু থাকা এই ব্যবস্থা জার্মানিতেও সবার জন্য অনেক আগেই চালু করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা৷
জার্মান সরকার জানিয়েছে যে, নতুন নাগরিকত্ব আইনটির খসড়া তৈরি করা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজারের প্রস্তাবিত আইনে দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং ইইউভুক্ত নয় এমন দেশের নাগরিকদের জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হবে৷
জার্মানিতে ২০২১ সালের শরতে সামাজিক গণতন্ত্রী, সবুজ আর মুক্ত গণতন্ত্রীদের জোট সরকার গঠনের পরই নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়৷ ডয়চে ভেলে এই বিষয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে দ্বৈত নাগরিকত্ব না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়েও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷
সেরকম এক ‘ক্ষতিগ্রস্ত' মার্ক ইয়ং মনে করেন, জার্মানিতে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ আরো দশ বছর আগেই চালু করা উচিত ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘সেসময় আমি জার্মান নাগরিকত্ব পেতে খুবই আগ্রহী ছিলাম৷ তবে মার্কিন পাসপোর্টও ছাড়তে চাইনি৷ আগের পাসপোর্ট ধরে রাখার অর্থ আনুগত্য ভাগ করা নয়, যা অনেক রক্ষণশীল জার্মান মনে করেন৷ এটা শুধু আপনি কে তারই প্রকাশ ঘটায়৷ এই পরিবর্তন অনেক আগেই করা উচিত ছিল৷''
গ্রিন কার্ড দিয়ে বিদেশি কর্মীদের কাছে টানতে চায় জার্মানি
সামাজিক গণতন্ত্রীদের নেতৃত্বাধীন জোটের অভিবাসন আইন পরিবর্তনের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আরো দক্ষ কর্মীদের জার্মানিতে এনে দেশটির কর্মী সংকট কাটানো৷
আইনে মূলত তিনটি পরিবর্তন
জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীরা পাঁচ বছর থাকার পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ বর্তমানে আট বছর পর তা করা যায়৷
জার্মানিতে জন্ম নেয়া কোনো শিশুর বাবা-মায়ের অন্তত একজন যদি পাঁচ বছর বা বেশি সময় ধরে জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাস করে থাকেন, তাহলে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জার্মান নাগরিকত্বের জন্য বিবেচিত হবে৷
দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করা হবে৷
জার্মানিতে বিরোধী দল মধ্যডানপন্থি খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ অবশ্য অতীতে ক্ষমতায় থাকাকালে এ ধরনের সংস্কার প্রস্তাব বারংবার বাতিল করে দিয়েছে৷ দলটির নেতা ফ্রিডরিশ মেয়ারৎস এআরডিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গত ডিসেম্বরে বলেন, ‘‘জার্মান নাগরিকত্ব খুবই মূল্যবান একটা কিছু, তাই এটিকে যত্ন সহকারে বিবেচনা করা উচিত৷''
উল্লেখ্য, জার্মানিতে বর্তমানে কারোই দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই - বিষয়টি এমনও নয়৷ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বর্তমানেও রয়েছে, তবে তা বেশ সীমিত এবং সবার জন্য প্রযোজ্য নয়৷ নতুন আইন এটিকে আরো অনেক সহজ করে দেবে৷
প্রতিবেদন: বেন নাইট/এআই
প্রিয় মানুষকে ডাকার ১০ জার্মান শব্দ
অনেকেই নিজের প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে নানা নামে ডাকতে ভালোবাসেন। কেউ ডাকেন 'বেবি', কেউ বা 'হানি'। তবে এক্ষেত্রে জার্মানদের রয়েছে বিশেষ কিছু শব্দ, যা শুনতে মোটেও আদুরে মনে না-ও হতে পারে।
তাই বলে ইঁদুর? সারাক্ষণ ঘরের আনাচেকানাচে অন্ধকারে দৌঁড়ে বেড়ানো, নানা রোগের জীবাণু বহনকারী এবং খচখচ শব্দ উৎপাদন করে চলা এই প্রাণীর নামেই অনেক জার্মান প্রেমিক তার প্রিয়তমাকে ডেকে থাকেন। অনেকে তাদের শিশু সন্তানকেও এই নামে ডাকেন। একসঙ্গে একাধিক শিশু সন্তান থাকলে বহুবচনে এই শব্দ হয়ে যায় ম্যাউশেন।
এই জার্মান শব্দের অর্থ হচ্ছে খরগোশ। নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারছেন, পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রেই এই শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। খরগোশ অবশ্য দেখতে ইঁদুরের চেয়ে একটু বেশি আদুরে। খরগোশকেও একসময় ইঁদুর প্রজাতির প্রাণী হিসাবেই বিবেচনা করা হতো। তবে ১৯১২ সালে তা পরিবর্তন করে লাগোমর্ফ নামের একটি গোত্রের প্রাণীর তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
ব্যারশেন
কেবল নারীদের ক্ষেত্রেই য সব আদুরে নাম বরাদ্দ, তা কিন্তু নয়। অনেক জার্মান নারী তার প্রিয়তমকে ব্যারশেন বা ছোট্ট ভাল্লুক নামে ডাকেন। বিশেষ করে প্রেমিক একটু নাদুসনুদুস হলে তো কথাই নেই।
ছবি: Axel Dobbertin/dpa/picture alliance
মাউজেব্যার
জার্মান প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরকে ইঁদুর আর ভাল্লুক ডেকেই ক্ষান্ত হয়নি। হয়তো একসময় এগুলোও পুরাতন লাগতে শুরু হয়েছে তাদের কাছে। এজন্য নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন কাল্পনিক এক প্রাণীর। তবে সেটাও ইঁদুর আর ভাল্লুক মিলে মাউজেব্যার অর্থাৎ ইঁদুর-ভাল্লুক। আপনাকে যদি কেউ আদর করে ইঁদুর-ভাল্লুক বলে ডাকে, আপনি খুশি হবেন?
ছবি: Walter Bieri/dpa/picture alliance
শ্নেকে
অল্প দূরত্ব যেতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগিয়ে দেয়া প্রচণ্ড ধীরগতির শামুকও হতে পারে আদরের নাম? জার্মানরা পারেও বটে। নাহলে অলস বলে গালি দেয়া ছাড়া কাউকে আদর করে শ্নেকে বা শামুক ডাকা যায়?
ছবি: James Hager/robertharding/picture alliance
শ্নুকি
আগেও বলেছি, জার্মানরা একই আদরের ডাক বারবার ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করতে শুরু করেছে। কিন্তু আগে তো তাও দুই প্রাণী মিলিয়ে একটা কাল্পনিক প্রাণী তৈরির কথা জানিয়েছি। এবার যে শব্দের কথা বলবো, এর কোনো অর্থই নেই। শ্নুকি আসলে কোনো শব্দই না, শুনতে আদুরে মনে হয় বলে অনেক জার্মান প্রিয়তমাকে এই শব্দ দিয়েই ডাকেন।
ছবি: Berit Kessler/Zoonar/picture alliance
পের্লে
এবার আসা গেছে মোটামুটি যৌক্তিক কিছু শব্দে। পের্লে হচ্ছে পার্ল বা মুক্তা। অবশ্য পুরো জার্মানি জুড়ে এই ডাক তেমন একটা প্রচলিত না। রুহর উপত্যাকার এলাকাগুলোতে বিশেষ করে এই ডাকনাম জনপ্রিয়।
আক্ষরিকভাবেই লিবলিং অর্থ হচ্ছে ডার্লিং বা প্রিয়তমা। অবশ্য এটা এতটাই প্রচলিত শব্দ যে কেবল প্রিয় মানুষ নয়, প্রিয় খাবার, বই ইত্যাদি সব প্রিয় জিনিসের ক্ষেত্রেই এই শব্দ ব্যবহার করা হয়।
ছবি: M. Baumann/blickwinkel/picture alliance
জুসে এবং জুসার
প্রিয়তমাকে মিষ্টি ভাবতে কে না পছন্দ করে? জুস শব্দের আক্ষরিক অর্থ মিষ্টি। কাকে বলা হচ্ছে তার লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে শব্দের কিছুটা পরিবর্তন হয়। প্রিয়তমাকে জুসে এবং প্রিয়তমকে ডাকা হয় জুসার নামে।
ছবি: Getty Images
শাৎস
জার্মানিতে প্রিয়তমাকে এবং প্রিয় ব্যক্তিকে আদর করে ডাকার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত শব্দ হচ্ছে শাৎস। প্রেমিক-প্রেমিকা ছাড়াও শিশু এমনকি বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। আক্ষরিকভাবে এর অর্থ হচ্ছে ট্রেজার বা সম্পদ। কেউ কেউ আরেকটু বাড়তি আদর যোগ করার জন্য শাৎসি বা শ্যাৎসেনও ব্যবহার করে থাকেন।