দীর্ঘদিন আলোচনায় থাকা অভিবাসন আইনের খসড়া সংসদে উত্থাপন করেছে জার্মান সরকার৷ এরপর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে সমালোচনা৷ কেউ কেউ বলছেন, দক্ষ শ্রমিকদের আকৃষ্ট করতে আইনের যথেষ্ট সংস্কার হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগে দক্ষ শ্রমিকদের অভিবাসনে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া উত্থাপনের পর তুমুল বিতর্ক হয়৷
নতুন প্রস্তাবে পাঁচ মাস আগেই মন্ত্রিসভার সায় পেয়েছিলেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কয়েক বছর ধরেই জার্মানিতে তথ্য-প্রযুক্তি ও প্রকৌশল খাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাবের কথা বলে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা৷ অন্যান্য কারিগরি খাতেও রয়েছে যথেষ্ট জনবল সংকট৷ জার্মানিতে ধীরে ধীরে বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা৷ তাঁদের জন্য সেবাখাতেও প্রয়োজন প্রচুর লোক৷
ঐতিহাসিক মোড়
রক্ষণশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সেহোফার বুন্ডেসটাগে খসড়া উপস্থাপন করেন৷ একে একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ প্রস্তাবিত আইনে কারা, কী শর্তে জার্মানিতে কাজ করতে আসতে পারবে, তা স্পষ্ট করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
তবে খুব সতর্কতার সঙ্গে তিনি এটিও জানিয়ে দিয়েছেন, জার্মানিতে অভিবাসননীতি কিছুটা শিথিল করা হলেও চাকরির বাজারের অবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করে তা যে-কোনো সময় পালটে ফেলা যাবে৷
ইউরোপে বাংলাদেশিদের আশ্রয় পাওয়ার হার বাড়ছে
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর গত ১০ বছরের হিসেব বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সফল হওয়ার হার বাড়তির দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
তিন ধরনের সুরক্ষা
শরণার্থী, হিউম্যানিটারিয়ান ও সাবসিডিয়ারি – এই তিন ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে৷ যাঁরা শরণার্থী স্ট্যাটাসের যোগ্য নন, কিন্তু দেশে ফিরে গেলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের সাবসিডিয়ারি সুরক্ষা দেয়া হয়৷ আর অসুস্থতা ও অভিভাবকহীন শিশুদের মানবিক (হিউম্যানিটারিয়ান) বিবেচনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Schlesinger
২০১৭
বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গতবছর ১৬,০৯৫টি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ আর একই সময়ে বাংলাদেশিদের করা ২,৮৩৫টি আবেদন সফল হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে সেটি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ৷ জার্মানিতে আবেদন পড়েছে ২,৭২৫টি৷ সফল হয়েছে ৩১৫টি৷ এমনিভাবে অন্য কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান এরকম – যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৬৩০; সফল ৬৫), ইটালি (আবেদন ৫,৭৭৫; সফল ১,৮৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১৫; সফল ৪৪০)৷
ছবি: imago/Cronos
২০১৬
বাংলাদেশিরা ১৪,০৮৫টি আবেদন করেছেন৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে ২,৩৬৫টি৷ অর্থাৎ সফলতার হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৬৬৫; সফল ১১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৪০৫; সফল ৮০), ইটালি (আবেদন ৬,২২৫; সফল ১,৬১০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১০; সফল ৪৪০)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
২০১৫
সেবছর সফলতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷ আবেদন পড়েছিল ১১,২৫০টি৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ১,৭৮৫টি৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৬৫; সফল ৩৫), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,০১৫; সফল ১২০), ইটালি (আবেদন ৫,০১০; সফল ১,২২৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৫৬০; সফল ৩১৫)৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
২০১৪
আবেদন ৭,৫৮০টি৷ সফল ৭৮৫৷ শতকরা হার ১০ দশমিক ৩৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪৬৫; সফল ৫০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৭০০; সফল ৭৫), ইটালি (আবেদন ৭৩৫; সফল ৩১৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৮৭০; সফল ২৬৫)৷
ছবি: Megan Williams
২০১৩
সফলতার হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ৷ আবেদন ৮,৩৩৫৷ সফল ৫৯৫৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৫০; সফল ২০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮৩০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ৫৯০; সফল ৩০০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৬১৫; সফল ১৪৫)৷
ছবি: picture alliance/robertharding/A. Robinson
২০১২
সফলতার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১৯০; সফল ১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮০০; সফল ৫০), ইটালি (আবেদন ১,৪১০; সফল ১,০৪৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৫৫; সফল ৮৫)৷
ছবি: Imago/Rainer Weisflog
২০১১
সফলতার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১১০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৮০; সফল ৪০), ইটালি (আবেদন ৮৬৫; সফল ৬৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৭০; সফল ৪৫)৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/M. Cohen
২০১০
সফলতার হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১০৫; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৬০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ২১৫; সফল ৪০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ২,৪১০; সফল ২৫)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Uhlemann
২০০৯
সফলতার হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৭৫; সফল ৪৫), ইটালি (আবেদন ৮৮৫; সফল ৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৭৮০; সফল ৩৫)৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
২০০৮
সফলতার হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৯৫; সফল ৯৫), ইটালি (আবেদন ৯৫০; সফল ৫০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৬৬০; সফল ৩৫)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
৩২ দেশের হিসাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্যরাষ্ট্র এবং ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা ইএফটিএ-এর অন্তর্ভুক্ত আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোস্ট্যাট৷ আরও পরিসংখ্যান জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Megan Williams
12 ছবি1 | 12
এতদিন পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের কাউকে চাকরি দিতে হলে আগে সেই কাজে ইউরোপের কোনো যোগ্য নাগরিককে না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হতো৷ কিন্তু নতুন প্রস্তাবে সে বাধ্যবাধকতা আর রাখা হচ্ছে না৷ খসড়া প্রস্তাবে এই বিষয়টিকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা হচ্ছে৷
এই আইন পাস হলে কারিগরি দক্ষতা থাকা অভিবাসীদের জার্মানিতে আসা অনেক সহজ হয়ে যাবে৷ এখন পর্যন্ত কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হতো৷
শ্রমিক হিসেবে মেনে নেয়ার প্রস্তাব
জার্মান শ্রমমন্ত্রী হুব্যার্টুস হাইল আরেকটি প্রস্তাবে অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়া কিছু প্রত্যাশীকেও মেনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী রাষ্ট্র-অনুমদিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, বা সপ্তাহে অন্তত ২০ ঘণ্টা কাজ করেন, জার্মান ভাষা শিখেছেন এবং এরই মধ্যে ১৮ মাস ব্যক্তিগত খরচ বহন করার সক্ষমতা দেখিয়েছেন, তাঁদের এই স্ট্যাটাস দেয়া যেতে পারে৷
হাইল এই প্রস্তাবকেই ‘বাস্তবধর্মী’ বলে উল্লেখ করেন৷ তাঁর যুক্তি, জার্মানিতে যাঁরা এখন কাজ করছে. তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে আবার অন্যদিকে অন্য দক্ষ শ্রমিকদের বাইরে থেকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা খুবই অযৌক্তিক৷
সর্বপ্যাপী সমালোচনা
আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মধ্য-ডানপন্থি খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন- সিডিইউ, বাভারিয়া রাজ্যে দলটির সহযোগী খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন- সিএসইউ এবং মধ্য-বামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল- এসপিডি জোটবদ্ধ হয়ে চালাচ্ছে জার্মান সরকার৷ নতুন এই অভিবাসন নীতি নিয়ে সব পক্ষের সমালোচনার মুখেই পড়েছে সরকার৷
লিন্ডা টয়টেবার্গের নেতৃত্বে ব্যবসাবান্ধব মুক্ত গণতন্ত্রী দল- এফডিপি খসড়া আইনকে ‘অনুপ্রেরণাহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন৷ এর ফলে তেমন বিশেষ কিছু পরিবর্তন আসবে না বলেও মনে করে দলটি৷
যেভাবে বাংলাদেশের পাশে জার্মানি
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জার্মানি৷ সামজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সবক্ষেত্রেই ইউরোপের দেশটি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বিশ্বস্ত সঙ্গী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উষ্ণ সম্পর্কের উপাখ্যান
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সাথে জার্মানির সুসম্পর্কের সূচনা৷ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে স্বিকৃতি দেয়া ইউরোপের প্রথম দিকের দেশগুলোর একটি জার্মানি৷ দুই জার্মানির একত্রিকরণকে স্বাগত জানাতে দেরি করেনি বাংলাদেশও৷ দেশটির বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও চার্চ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো স্থানীয় অংশীদারদের মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছে৷ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী হিসেবেও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য
যুক্তরাষ্ট্রের পরই বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি বাজার জার্মানি৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে তারা ৪২৮ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে, যার মধ্যে ৪০০ কোটি ডলারই ছিল তৈরি পোশাক৷ ৮.৩ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্য, ৭.২ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্যও রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে জার্মানি আমদানি করেছে প্রায় ৮২ কোটি ডলারের পণ্য, যার অর্ধেকই ছিল মেশিনারি বা যন্ত্রপাতি৷
ছবি: Imago/Blickwinkel
উন্নয়ন প্রকল্প
১৯৭০ এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন প্রকল্পে বাংলাদেশেকে ৩০০ কোটি ইউরোর আর্থিক সহায়তা করেছে জার্মানি৷ সবশেষ গত নভেম্বরে ঢাকায় দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে এক বৈঠকে ২৮.৫৩ কোটি ডলার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি আসে জার্মানির কাছ থেকে৷ যা ব্যয় হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও নগরে জলবায়ু মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রকল্পে৷
ছবি: DW/S. Burman
সংস্কৃতি বিনিময়
দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ দৃঢ় করতে ১৯৬১ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় জার্মান ভাষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গোয়েটে ইনস্টিটিউট৷ প্রতি বছর ১৫০০ শিক্ষার্থী এখান থেকে জার্মান ভাষা শিখছে৷ আছে জার্মান সাহিত্য, ইতিহাস ও রাজনীতির সাথে পরিচিত হবার ব্যবস্থাও৷ জার্মান চলচ্চিত্র, সংগীত ও সাহিত্য নিয়ে উৎসবের আয়োজনও করে থাকে গোয়েটে৷
উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি
জার্মান অ্যকাডেমিক এক্সচেইঞ্জ সার্ভিস (ডিএএডি), আলেক্সান্ডার ফন হুমবল্ট ফাউন্ডেশন, ডয়চে ভেলেসহ বিভিন্ন জার্মান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শিক্ষা ও গণমাধ্যমের উন্নয়নে অবদান রেখে চলছে৷ প্রতিবছর বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, তরুণ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের তারা বিভিন্ন বৃত্তি দিয়ে থাকে৷ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০০ ছাত্র-ছাত্রী জার্মানির উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি রয়েছে৷
ছবি: Munir Zaman
শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন
ফেডারেল মিনিস্ট্রি অফ ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট বা বিএমজেড-এর অধীনে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১৫ লাখ ইউরো সহযোগিতা দিয়েছিল জার্মানি৷ তৈরি পোশাক কারখানার সংস্কার উদ্যোগেও পাশে আছে দেশটি৷ ২০০৫ সাল থেকেই বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় সামাজিক ও পরিবেশগত মানদণ্ড নিশ্চিত করতে সহযোগিতা দিচ্ছে তারা৷ আছে ভবিষ্যত প্রতিশ্রুতিও৷
ছবি: DW/S. Burman
রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা সহ বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতা দিয়ে আসছে জার্মানি৷ এই খাতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটি প্রায় ৬.৭ কোটি ইউরো খরচ করেছে৷ পরবর্তীতে আরো ৩ কোটি ইউরো সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: DW/ P. Vishwanathan
বাংলাদেশে জার্মান প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে দীর্ঘদিন ধরে জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে৷ পঞ্চগড়ে ৪৭ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগড়ে উঠেছে জার্মান দু’টি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায়৷ দেশটির কালি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিজবের্ক বাংলাদেশে তাদের কারখানা চালুর ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সিমেন্সের বড় বিনিয়োগ
বাংলাদেশে এযাবতকালের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে জার্মানির প্রতিষ্ঠান সিমেন্স৷ পায়রায় ৮০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে ৭০০ কোটি ইউরো খরচ করবে তারা৷ যার অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে ৩৬০০ মেগাওয়াটের এলএনজি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের চুক্তি করে প্রতিষ্ঠানটি৷ বাংলাদেশের টেক্সটাইল, যোগাযোগ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schutt
অত্যাধুনিক পাসপোর্ট তৈরি
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়ার কাজ পেয়েছে জার্মান প্রতিষ্ঠান ফেরিডোস৷ ৩৪ কোটি ইউরোর এই প্রকল্প শেষ হবে ১২ বছরে৷ ২০১৮ সালের জুলাইতে দুই দেশের সরকারের মধ্যে এবিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷ সে অনুযায়ী জার্মান প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের জুনেই প্রথম পর্যায়ের ই-পাসপোর্ট সরবরাহের কথা রয়েছে৷ বিশ্বে প্রযুক্তিগতভাবে জার্মানির পর বাংলাদেশই এত শক্তিশালী পাসপোর্টের অধিকারী হবে, যা জাল করা প্রায় অসম্ভব৷
ছবি: DW/D. Guha
বাংলাদেশের উন্নয়নে জার্মান মডেল
এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি বাংলাদেশকে সমতাভিত্তিক উন্নয়নের জন্য একটি মডেল অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে৷ তাদের গবেষণা অনুযায়ী অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই আর দৃঢ় অর্থনীতি গড়ে তুলতে বাংলাদেশের সামনে জার্মানিই হতে পারে সম্ভাব্য মডেল৷ কেননা এসএমই খাতের বিকাশ, শিল্পভিত্তিক উন্নয়ন আর জনসংখ্যার বিকেন্দ্রিকরণের পাশাপাশি দেশটি তার সব এলাকায় সমানভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করেছে৷
ছবি: DW/M. Saleh
11 ছবি1 | 11
সবুজ দলের পার্লামেন্টারি নেতা কাটরিন গ্যোরিং-একার্ড্ট প্রস্তাবটিতে অভিবাসন আইন আধুনিক করার বদলে আরো ‘বাধা দেয়ার’ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন৷ সমাজতন্ত্রী বাম দলও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে৷
প্রো অ্যাসাইলের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে৷ সংস্থাটি বলছে, এ প্রস্তাবে কেবল জার্মানির অর্থনৈতির স্বার্থের কথাই বিবেচনা করা হচ্ছে, এর ফলে জার্মানিতে অভিবাসনে আগ্রহীদের খুব একটা লাভ হবে না৷
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরাও এই প্রস্তাব নিয়ে তেমন একটা উচ্ছ্বাসের কিছু দেখছেন না৷ ওসনাব্র্যুক ইউনিভার্সিটির অভিবাসন আইনের অধ্যাপক থমাস গ্রস বলছেন, ‘‘এত নিয়ন্ত্রিত আইনের কোনো মানে নেই৷ অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীরই কী হবে, তা এখনো মীমাংসা করা হয়নি৷ তাঁরা অনেক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী কাজের অনুমতি পাবেন৷ কিন্তু এটা রেসিডেন্স পারমিট নয়, বরং দ্বিতীয় শ্রেণীর অনিশ্চিত এক অনুমতি৷ খুব অল্প কিছু লোকের ওপর এটা প্রযোজ্য হবে৷’’
তবে স্বভাবতই অন্য সবার চেয়ে ঠিক বিপরীত মন্তব্য এসেছে কট্টর ডানপন্থি ও অভিবাসনবিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড- এএফডির পক্ষ থেকে৷ দলটির প্রতিনিধি গোটপ্রিড কুরিও মনে করেন, এই প্রস্তাবিত আইন কেবল আরো ‘অদক্ষ দরিদ্র শ্রমিকদের অভিবাসনে উৎসাহিত’ করবে৷
নতুন আইনটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা৷ সরকার অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আইন কার্যকরে অন্তত ছয় মাস সময় লেগে যেতে পারে৷ ফলে আগামী জানুয়ারিতে আইন কার্যকর করতে চাইলে তা পাস করতে হবে এই গ্রীষ্মেই৷