জোট সরকার গঠনের উদ্যোগ ব্যর্থ হবার পর জার্মানিতে নতুন নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে৷ কিন্তু জার্মান প্রেসিডেন্ট সরকার গঠনের সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান প্রেসিডেন্টের পদ যে শুধু আলঙ্কারিক নয়, সোমবার থেকে তা আবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ সাধারণ নির্বাচনের প্রায় দু'মাস পরে ‘জামাইকা' জোট সরকার গঠনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে৷ এই অবস্থায় সংসদ ভেঙে নতুন করে নির্বাচন ডাকার কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার আগে জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বাকি সব বিকল্প খতিয়ে দেখতে চান৷ সেই লক্ষ্যে তিনি একাধিক দলের নেতাদের সঙ্গে নিভৃতে আলাপ-আলোচনা করছেন৷ সোমবার তিনি বলেন, ‘‘সব দলই আশা করি সংলাপের জন্য প্রস্তুত৷''
বর্তমান সংকট কাটানোর সহজ চাবিকাঠি রয়েছে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের হাতে৷ প্রেসিডেন্ট হবার আগে পর্যন্ত স্টাইনমায়ার এই দলেরই নেতা ছিলেন৷ কিন্তু সোমবারই দলের সভাপতি মার্টিন শুলৎস আরও একবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দল আবার মহাজোট সরকারের সদস্য হবে না৷ তিনি বলেন, এসপিডি দল নতুন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত৷ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, দলের সমর্থকরাও এই অবস্থানের পক্ষে৷ বুধবার শুলৎস প্রেসিডেন্ট স্টাইনমায়ারের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷
নতুন নির্বাচন হলে জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে আবার ইউনিয়ন শিবিরের প্রার্থী হতে প্রস্তুত আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নির্বাচনের আগে তিনি ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যে জয়ের ক্ষেত্রে তিনি আরও চার বছরের জন্য চ্যান্সেলর থাকতে চান৷ ম্যার্কেল সেই প্রতিশ্রুতি ভাঙাতে চান না৷ সংখ্যালঘু সরকার গঠনের চেয়ে নতুন নির্বাচনই চাইছেন তিনি৷
জার্মানিতে নতুন নির্বাচনের বিকল্প কী হতে পারে, এখনো তার কোনো স্পষ্ট রূপরেখা দেখা যাচ্ছে না৷ আবার নতুন করে ‘জামাইকা' জোট গঠনের প্রচেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে৷ যে দল সপ্তাহান্তে এই আলোচনা ভেঙে দিয়েছে, জার্মান প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবারই সেই উদারপন্থি এফডিপি দলের নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ জামাইকা জোট গঠনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল বলে অন্য দলগুলির কয়েকজন প্রতিনিধি যে দাবি করেছেন, লিন্ডনার তা অস্বীকার করেন৷ তিনি আলোচনায় সবুজ দলের আধিপত্যের সমালোচনা করেন৷
জার্মানিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে গভীর আগ্রহের সৃষ্টি করছে৷ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সংস্কারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে জার্মানিতে দ্রুত এক স্থিতিশীল সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে৷ আগামী সরকারের প্রধান থাকলেও চ্যান্সেলর ম্যার্কেল কতটা শক্তিশালী থাকতে পারবেন, সেই প্রশ্নও বিভিন্ন মহলে উঠে আসছে৷
জার্মানিতে সরকার গঠন করবে জামাইকা কোয়ালিশন?
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ সিডিইউ-সিএসইউ ওএসপিডি-কে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট নয়, নতুন সরকারের রং হতে পারে কালো-হলুদ-সবুজ৷ অর্থাৎ সিডিইউ-সিএসইউ-এর সঙ্গে জোট গড়তে পারে এফডিপি ও সবুজ দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
জার্মানিতে বিদেশি পতাকার রং
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আবারো নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছে সিডিইউ বা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরা৷ অর্থাৎ চতুর্থবারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর হতে চলেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু সরকার গঠনের ক্ষেত্রে চিরাচরিত কালো-হলুদ নয়, দেখা দিতে পারে জামাইকা, কেনিয়া বা ট্র্যাফিক লাইটের মতো কোয়ালিশন৷
ছবি: Getty Images
কালো-লালের দিন শেষ?
চার বছর আগে, সিডিইউ-সিএসইউ আর সামাজিক গণতন্ত্রী, মানে এসপিডি দল একত্রে জোট সরকার গঠন করেছিল৷ অর্থাৎ বৃহৎ কোয়ালিশনের রং ছিল কালো-লাল৷ কিন্তু ২০১৭ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পর এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস বেশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে এবার আর মহাজোটের সম্ভাবনা নেই৷ বরং বিরোধী দল হিসেবেই সংসদে বসবে এসপিডি৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
তৃতীয় বৃহত্তম দল এএফডি
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি বা জার্মানির জন্য বিকল্প দল (এএফডি)৷ এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে৷ তুলনামূলকভাবে জার্মানির রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন দল হলেও, প্রতিষ্ঠার পাঁচ মাস পরের নির্বাচনেই প্রায় পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে সাড়া ফেলে দেয় এই দল৷ আর এবার, সেই এএফডি-ই তৃতীয় বৃহত্তম দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
জামাইকা কোয়ালিশন
নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালেই এএফডি-র সঙ্গে জোট বাঁধতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি, মুক্ত গণতন্ত্রী (এফডিপি), সবুজ দল এবং বামদলের মতো বড় দলগুলি৷ নির্বাচনের পরেও তারা সেই অবস্থানেই রয়েছে৷ তাই এএফডি যদি জোটের বাইরে থেকে যায়, তবে সরকার গঠন করতে সিডিইউ-সিএসইউ দলের হাত ধরতে পারে এফডিপি আর সবুজ দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কেনিয়া কোয়ালিশন
ভোটের অঙ্ক অনুযায়ী অবশ্য আরো একটি কোয়ালিশনের সুযোগ আছে৷ আর সেটা হচ্ছে সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি এবং সবুজ দলের, যদিও প্রথম দুটি দলেরই সম্মিলিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকছে৷ অর্থাৎ কেনিয়ার ফ্ল্যাগের রঙে কালো-লাল-সবুজের৷ অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এ সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিলেও গত বছর স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যেও কিন্তু জোট গঠন করেছিল এই দলগুলি৷
ছবি: Fotolia/aaastocks
লাল-লাল-সবুজ
এসপিডি আর বামদলের সঙ্গে সবুজ দলের জোট হলে তা হতে পারতো লাল-লাল-সবুজের জোট৷ তবে সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলে এসপিডি দলের ভরাডুবির ফলে সে সম্ভাবনা আর নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Michael Reichel
ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন
যথেষ্ট আসনসংখ্যা না থাকার কারণে লাল-হলুদ-সবুজ বা এসপিডি-এএফডি আর সবুজ দলেরও আর জোট গড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷