আইনমন্ত্রী হাইকো মাস সাততাড়াতাড়ি যে আইনের খসড়া পেশ করেছেন, তাকে ‘সাইড এফেক্ট যুক্ত সেডেটিভ’ বটিকা বলে গণ্য করেন ক্রিস্টফ রিকিং৷ এমনকি এই ‘প্রতীকী পদক্ষেপ’ বিপজ্জনক হতে পারে, বলে তাঁর ধারণা৷
বিজ্ঞাপন
ভয়ের বশে কিছু করা উচিত নয়৷ অথচ জার্মান সরকার যে নতুন সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধী আইন প্রণয়ন করতে চলেছেন, তার জন্মই ভয় থেকে – সন্ত্রাসের ভয়৷ আইনের খসড়া অনুযায়ী ভবিষ্যতে জার্মানি থেকে ইসলামপন্থি জিহাদিরা সিরিয়া কিংবা ইরাকে যাওয়ার চেষ্টা করলে, তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে৷ এছাড়া সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত দেওয়াটাকেও অপরাধ পদবাচ্য করা হচ্ছে৷
এই নতুন আইন কিন্তু প্রতীকী রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়৷ এই আইন শুধু আপামর জনসাধারণকে বোঝানোর প্রচেষ্টা যে, সরকার ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে কিছু একটা করছেন৷ বলা যেতে পারে, এটা এক ধরনের সেডেটিভ, যদিও তার সম্ভাব্য ‘সাইড এফেক্ট' কম নয় – কেননা এই আইনের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, কোনো বাস্তব অপরাধ নয়, অপরাধের পরিকল্পনাটাকেই অপরাধ বলে গণ্য করা হবে৷
অথচ যারা বাস্তবিক বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা সোজা হবে না – কেন না একজন ইসলামপন্থির বিরুদ্ধে আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে, তার কোনো জিহাদি সন্ত্রাস শিবিরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার অভিপ্রায় ছিল৷ কোনো তরুণ মুসলিম যদি জার্মানি থেকে তুরস্ক যাত্রা করে, তবে সেটাই কি তার সন্ত্রাসী অভিপ্রায়ের প্রমাণ হবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় জিহাদি হবার অভিপ্রায় ঘোষণা করাটাই কি অব্যর্থ সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে?
সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত দেওয়া সংক্রান্ত সূত্রটিও স্রেফ লোক-দেখানো, কেননা বৈদেশিক বাণিজ্য আইন এবং দায়রা আইনে ইতিমধ্যেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা রয়েছে৷ এক্ষেত্রে ফেডারাল সরকারের যুক্তি হলো, জাতিসংঘ গত সেপ্টেম্বরে ‘বিদেশি যোদ্ধা' সংক্রান্ত যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, সেই প্রস্তাবেরই বাস্তবায়ন করছেন জার্মান সরকার৷ কিন্তু জাতিসংঘের ‘ফরেন ফাইটার্স' প্রস্তাবটি ছিল প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির জন্য৷
ফেডারাল জার্মান অপরাধ দপ্তরের কর্মকর্তারাও নতুন আইনের খসড়ায় বিশেষ সন্তুষ্ট নন৷ তাদের বক্তব্য হলো, সর্বাগ্রে আরো বেশি পুলিশকর্মী নিয়োগ এবং তদন্তকারীদের উন্নততর সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা উচিত৷ কিন্তু সেটা ব্যয়সাপেক্ষ, অন্তত নতুন আইন প্রণয়নের চেয়ে বেশি ব্যয়সাপেক্ষ তো বটেই৷ কাজেই...
আইএস বিরোধী লড়াইয়ের আঁচ জার্মানিতে
গত জুন মাসে ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনটির লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ লেগেছে জার্মানিতেও৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
জার্মানিতে সংঘর্ষ
সুদূর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতার আঁচ জার্মানিতেও দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরের হামবুর্গ ও সেলে শহরে মঙ্গলবার (০৭.১০.১৪) কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উগ্রপন্থি মুসলমানদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Markus Scholz
গনসচেতনতার উদ্যোগে বাধা
জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে৷ কখন উগ্রপন্থিরা তাদের বাধা দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/Alexander Koerner
কোবানিতে তীব্র লড়াই
এদিকে সিরিয়ার কোবানি বা আইন আল-আরব শহরে আইএস জঙ্গিদের ব্যাপক হামলা চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে এক লাখেরও বেশি সিরীয় কুর্দি এলাকা ছেড়েছে৷ অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে৷ আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের আধা সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/SEDAT SUNA
আপাতত রক্ষা
কুর্দি এই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আইন আল-আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে আইএস-এর হামলা তীব্র হওয়ার পরপরই তাঁরা তুরস্কে আশ্রয় নেন৷
ছবি: DW/Alice Martins
আতঙ্ক
তখনও আইন আল আরব সীমান্তে চলছে তীব্র লড়াই৷ এই কুর্দি পরিবার আইন আল-আরব থেকে এসে তুরস্কের সীমান্তে অপেক্ষা করছে৷ ইরাকে কুর্দি নারীদের আইএস যেভাবে তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে, তাড়াতাড়ি পালাতে না পারলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের৷
ছবি: DW/Alice Martins
অসহায়ত্ব
তুরস্কেও ভালো নেই আইন আল-আরব ছেড়ে আসা কুর্দিরা৷ খাবারদাবার, এমনকি খাওয়ার পানিও ঠিকমতো জোটে না৷ একটি সংগঠন তাই চাঁদা তুলে পানির বোতল কিনে এনে বিতরণ করছে শরণার্থীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Alice Martins
দীর্ঘ অপেক্ষা
প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন একজন৷ আইন আল-আরব ছেড়ে আসা সিরীয়দের সে খাবারগুলো দিতে চান৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে্ তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ ওদিকে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে শরণার্থীরা৷
ছবি: DW/Alice Martins
যাত্রী চাই
সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুর্কি সরকার৷ এক মিনিবাস চালক তাই যাত্রীর অপেক্ষায়৷ শরণার্থীদের কেউ যদি তাঁর মিনিবাসে ওঠেন, তাতে নিজের তো সামান্য কিছু আয় হবেই, শরণার্থীদেরও উপকার হবে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: DW/Alice Martins
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইএস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস বা আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইএস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ আর ইরাকে নুরি আল-মালিকির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট বিদ্রোহীদেরই পাশে ছিল৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে৷ তবে ওবামা সরকার এখন আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ জঙ্গি সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Matthew Bruch
এবার আইন আল-আরব?
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আরব সাধারণের কাছে ‘কোবানি’ নামেই পরিচিত৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের এ শহরের একটা অংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ এবার কি তবে আইন আল-আরবও দখল করে নেবে আইএস? তারপর?