1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে নারী-পুরুষে বেতন বৈষম্য

৯ এপ্রিল ২০০৯

গত মাসের শেষ দিকে বার্লিনে সারা জার্মানি থেকে নারীরা জড়ো হন৷ লক্ষ্য ছিল একই কাজের জন্য পুরুষ এবং নারীর বেতনের মধ্যে যে বৈষম্য রয়ে গেছে তার প্রতিবাদ করা৷ অবাক হলেও সত্যি যে গোটা ইউরোপে জার্মানিতে এই বৈষম্য সবচেয়ে বেশি৷

ছবি: picture-alliance/dpa

মার্চের ২০ তারিখকে বেছে নেয়া হয়েছিল প্রতিবাদের দিন হিসেবে৷ নাম দেয়া হয়েছিল ইক্যুয়ল পে ডে অর্থাৎ সমান বেতনের দিন৷

জার্মানিতে পুরুষরা যে বেতন পায় একই কাজের জন্য নারীরা পায় গড়ে তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ৷ জার্মানিতে আয়কর ব্যবস্থার কারণে অনেক নারী পার্ট টাইম চাকরি বেছে নেন, কারণ তাদের স্বামীরা ফুল টাইম চাকরিতে ব্যস্ত, তারা বেতনও পায় বেশি৷ জানান, ডুসেলডর্ফের এক গবেষণা কেন্দ্র ডাব্লিউ এস আই-এর গবেষক এসট্রিড জিগলার৷

জার্মানিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে কর্মজীবি মহিলাদের সন্তান দেখাশোনা করা হয়৷ এসব প্রতিষ্ঠানেও ইদানিং উপচে পড়ছে বাচ্চা৷ নতুন করে দায়িত্ব তারা নিতে অপারগ৷ একারণেই চাকরি এবং বাচ্চা দেখাশোনার কাজ – দুটো একসঙ্গে সামলানো যে কোন মহিলার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য৷

তবে জার্মানির পূর্বে এবং পশ্চিমে কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা যায়৷ ২০০৬ সালের একটি সমীক্ষায় জানানো হয়েছে জার্মানির পশ্চিমে একই কাজের জন্য পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বেতনের পার্থক্য রয়েছে শতকরা ২৫ শতাংশ৷ সে তুলনায় পুর্বে বেতনের ক্ষেত্রে পার্থক্য মাত্র ৬ শতাংশ৷ ১৯৯০ সালে দুই জার্মানির একত্রিকরণ পর্যন্ত সাবেক পূর্ব জার্মানির প্রায় প্রতিটি নারীই ছিলেন কর্মজীবি৷ বাচ্চাদের দেখাশোনার ব্যবস্থা ছিল এবং সেটাকে বেশ স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হত৷ একজন পুরুষ সহকর্মীর সমান বেতনই তারা পেত৷ জানান, বিজনেস এন্ড প্রফেশনাল উইমেন নামক সংগঠনের সভাপতি ডাগমার বিশফ৷ তিনি আরো বলেন, বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ার পর সাবেক পূর্ব জার্মানিতে চালু ব্যবস্থা গোটা জার্মানিতে প্রবর্তন করা হয়নি বরং করা হয়েছে উল্টোটি৷ জার্মানিতে যেসব মহিলা ঘর-সংসার, বাচ্চা-কাচ্চার চেয়ে চাকরিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তাদেরকে প্রায়ই খারাপ মা বা মা হওয়ার উপযোগী নয় - এমন কথা শুনতে হয়েছে৷ এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন৷

জার্মানিতে নারী দিবসের একটি পুরনো পোস্টারছবি: ullstein bild - Stary

জার্মানিতে উল্লেখযোগ্য এবং স্বনামধন্য ৩০টি সংস্থার মধ্যে মাত্র দুটি সংস্থার পরিচালনা বোর্ড-এ আসন নিয়ে আছেন দু জন নারী৷ এবং সেখানেও তারা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের থেকে কম বেতন পাচ্ছেন৷ এসব কারণেই ইক্যুয়ল পে ডে- র প্রতিবাদ ছিল আরো জোরালো৷ মৌচাকের গায়ে সরাসরি যেন ঢিলটি গিয়ে লেগেছে৷

সেদিন সারা জার্মানিতে প্রায় ১৮০টিরও বেশি প্রতিবাদ সমাবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ এই সমাবেশগুলোয় রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সমর্থন এবং সহযোগিতাও ছিল৷ অংশগ্রহণ করেছিল বেশ কিছু মহিলা এবং নারী বিষয়ক সংস্থা৷ জার্মানির দেখাদেখি আন্দোলন শুরু হয়েছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম এবং সুইজারল্যান্ডে৷ পোল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ইটালিও আর পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়৷

বেতন বৈষম্য নিয়ে জার্মান নারীদের ভাবনা

বিজনেস এন্ড প্রফেশনাল উইমেন নামক সংস্থার সদস্য ডাগমার টেরবেৎসনিক৷ তিনি বলেন, আমরা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, আমেরিকায় আমাদের মূল দপ্তর৷ ১৯৮৮ সাল থেকেই আমরা এ বিষয় নিয়ে কাজ করছি৷ যদিও আমরা জার্মানিতে তার পরেও আমরা ইংরেজিতে ইক্যুয়ল পে ডে - র কথা বলছি৷ আমাদের প্রতীক লাল ব্যাগ বা রেড পার্স এই শব্দটিও ইংরেজি ভাষা থেকে নেয়া৷ লাল ব্যাগ প্রতীকের মধ্যে দিয়ে বৈষম্যমূলক বেতন বোঝানো হয়েছে৷ আরেক দিক থেকে বোঝায়– নির্যাতন৷ শব্দগুলো বেশ সহজ তাই আমরা তা ব্যবহার করছি৷

বিশ্বের কয়টি দেশে নারীরা সমান মজুরি পেয়ে থাকে?ছবি: AP

গ্যাবি কোস্টার কাজ করেন ক্যাশিয়ার হিসেবে৷ তার ভাষায়, ব্যাক্তিগত ভাবে আমি এসব নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি৷ জানতামও না৷ কখনো কাউকে বলতেও শুনিনি আমার বেতন কম বা আমি খুবই কম উপার্জন করি বা তুমি আমার চেয়ে ৫০ ইউরো বেশি পেয়েছো৷ তবে সবসময়ই সবাইকে বলতে শুনেছি এসব নিয়ে কথা বলতে নেই, কেন জানিনা৷ টাকা পয়সা নিয়ে, কম বেতন নিয়ে অভিযোগ করতে নেই – এটাই সব সময় বলতে শুনেছি৷ তবে আমি বলতে পারি এই মুহূর্তে অসংখ্য কর্মস্থলে বেতন অনেক কম৷ সাধারণভাবে যা হওয়া উচিৎ তার চেয়ে অনেক কম৷ কেন তা আমি জানি না৷

জার্মানির অর্তনীতি বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করছে জিলকে আঙ্গার ৷ তিনি জানালেন, আমি মনে করি এর সঙ্গে সময়ের একটি যোগসূত্র রয়েছে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রম বাজারে কাজের চাহিদা বাড়ে বা কমে৷ তবে নারী যে পুরুষদের চেয়ে কম পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তা অনেক দিন ধরেই চলছে৷ ১৯ শতকে প্রথম যে নারী আন্দোলন হয়েছিল তখন থেকেই সমান বেতনের দাবি জানিয়ে আসছে নারীরা৷ সত্যি কথা বলতে এটা নতুন কিছু নয়৷ নারীরা নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে পুরোপুরি স্বাধীন করতে চাচ্ছেন, এই ধারণাটি বর্তমান সময়ের, বলতে গেলে নতুন, আধুনিক চিন্তা-ভাবনার একটি অংশ৷ বেতন নিয়ে আমাদের নতুন একটি আইন পাশ হয়েছে৷ বলা যেতে পারে নারীদের ধীরে ধীরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে স্বাধীনতার দিকে৷ ফলে যা করা প্রয়োজন তা হল সমাজে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যথার্থ কাঠামো৷ আমি মনে করি নারীরা পুরুষের সমান উপার্জন করবে কিনা তা কোন কিছুর সঙ্গে জড়িত নয়৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ