জার্মানিতে গত এক দশকে নাৎসি অনেক এলাকা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে৷ কিছু ভবন করা হয়েছে জাদুঘর বা প্রদর্শনীর স্থান৷ এ মাসে ফোগেলসাং স্কুলটিতে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী, যেটি ছিল নাৎসিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা স্কুল৷
বিজ্ঞাপন
ফোগেলসাং দুর্গে প্রতিটি কোণায় নাৎসি প্রতীক ছড়িয়ে আছে৷ আছে ভাস্কর্যও৷ ১৯৩০-এর দশকে ফোগেলসাং দুর্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্কুলটি৷ সেখানে এই চিত্রকলা প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, যা দেখলে মনে হবে নাৎসীদের আভিজাত্য নতুন করে জেগে উঠেছে৷ এক দশক আগে আইফেল এলাকার এই স্থানটিতে ৬০ বছর ধরে সাধারণের প্রবেশ সীমিত ছিল৷ এতদিন এটা ন্যাটো সেনাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে৷
‘ফোগেলসাং' মানে পাখির গান৷ এই দুর্গটি সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় ২০০৬ সালে৷ বেলজিয়ামের সৈন্যরা নাৎসি প্রতীক ও ভাস্কর্যের কারণে এক ধরনের মানসিক চাপে ভুগছিল, আর তাই তারা জায়গাটি থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়৷ কেবল দেয়ালে নয়, মেঝেতেও স্বস্তিকা চিহ্নের ছড়াছড়ি৷ ইতিহাসবিদরা বলছেন, এখানে ঢুকলে মানুষ একটা বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন৷ কট্টরপন্থা এবং জাতীয়তাবাদ একসাথে কীভাবে গড়ে উঠেছিল৷ ফোগেলসাং নিয়ে গবেষণা করছেন গাব্রিয়েলে হার্জহাইম৷ তিনি বললেন, ‘‘প্রদর্শনীতে এসে পর্যটকরা জানতে চান, এই প্রদর্শনী আসলে আমাকে কী শেখাচ্ছে?''
ফোগেলসাং যখন নাৎসি বিদ্যালয় ছিল
৪ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনীটি শুরু হয়, যেটি আয়োজন করতে সময় লেগেছে সাড়ে চার বছর৷ আর এতে খরচ হয়েছে ৫ কোটি মার্কিন ডলার৷ হিটলার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৩৩ সালে এই কলেজটি প্রশাসনের কর্মী ও দলের শীর্ষ নেতাদের তৈরি করতে কাজ শুরু করে৷ এমন আরও দু'টি কলেজ ছিল৷ মূলত এখানকার শিক্ষার্থীদের দেয়া হতো শারীরিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা৷ ২০০০ পুরুষ শিক্ষার্থী সেখানে প্রশিক্ষণ নিত৷ এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা নাৎসি দলে ভালো পদ পেত৷ চার বছরের কার্যক্রম শেষ করে তারা দলের যোগ্য হতো৷ তবে এর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচ্য ছিল না৷ শিক্ষার্থীদের বয়স হতে হতো ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে৷ বিবাহিতদের অগ্রাধিকার দেয়া হতো৷ নাৎসি কর্মকর্তা রবার্ট লে এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা৷ ফোগেলসাং স্কুলের মূল কাজ ছিল সেখানকার শিক্ষার্থীদের অভিজাত ভাবতে শেখানো৷ তাদের বিশেষ পোশাক পরতে হতো, চার বছরের কার্যক্রম শেষে যখন তাদের পুরো জার্মানি সফরে পাঠানো হতো, তখন ভবিষ্যত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হতো তাদের৷
প্রদর্শনীতে যা দেখানো হচ্ছে
প্রদর্শনীতে মূলত ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, কীভাবে নাৎসি আচরণ গণহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে৷ স্কুলের সেইসব প্রশিক্ষণার্থীর ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে, যাদের চেহারা নিষ্পাপ, যাদের পরনে বিশেষ ইউনিফর্ম, তারা কাজ করছে, খেলছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানকার প্রশিক্ষণার্থীরা সাধারণ সৈন্য হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেয়৷ এদের মধ্যে ৭০ ভাগই যুদ্ধে প্রাণ হারায়৷ অনেককে নৃশংস কিছু অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছিল৷
হেরোইন, কোকেনের উদ্ভাবক কে? জার্মানরা!
নিষিদ্ধ কয়েকটি ওষুধ উদ্ভাবনের সঙ্গে জার্মানদের নাম জড়িয়ে আছে৷ ছবিঘরে থাকছে সেগুলোর কথা৷
প্যার্ভিটিন
এটি খেলে মানুষের মনে ভয় ঢুকতে পারে না৷ এছাড়া মানুষের মধ্যে মনোযোগের ক্ষমতাও বাড়ায় প্যার্ভিটিন৷ জাপানি এক কেমিস্ট তরল আকারে এটি তৈরি করলেও, জার্মানির টেমলার কোম্পানি ওষুধটির মান উন্নয়ন করে ১৯৩৭ সালে এর পেটেন্ট নেয়৷ পরের বছর থেকে বিক্রি শুরু হয়৷ এখনও তা বলবৎ আছে, তবে অবৈধভাবে এবং অন্য নামে, ক্রিস্টাস মেথ৷
‘মিরাকল পিল’
প্যার্ভিটিনের গুণের কারণে নাৎসি সেনাদের কাছে এটি ‘মিরাকল পিল’ নামে পরিচিত ছিল৷ ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ডে আর পরের বছর ফ্রান্সে নাৎসিরা যে সৈন্য পাঠিয়েছিল, তাদেরকে প্যার্ভিটিন দেয়া হয়েছিল৷ জানা যায়, ফ্রান্স দখলের সময় নাৎসি শাসক সৈন্যদের প্রায় ৩৫ মিলিয়ন প্যার্ভিটিন ট্যাবলেট দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa-Bildarchiv
হিটলার নিজেও?
তিনিও প্যার্ভিটিনে আসক্ত ছিলে কিনা, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক আছে৷ হিটলারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক টেও মোরেল-এর কাগজপত্রে একটি ওষুধের পাশে ‘X’ চিহ্নের উপস্থিতি এই বিতর্কের কারণ৷ তবে এই বিষয়টিতে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও হিটলার যে নিয়মিত শক্তিশালী ওষুধ সেবন করতেন, সেটা জানা গেছে৷
ছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library
হেরোইন
ঊনিশ শতকের শেষ দিকে জার্মানির বিশ্বখ্যাত ওষুধ কোম্পানি বায়ার-এর একটি বিজ্ঞাপনের স্লোগান ছিল, ‘‘কাশি নেই, ধন্যবাদ হেরোইনকে৷’’ বুঝতেই পারছেন চিকিৎসকরা সেই সময় রোগীদের এটি খাওয়ার পরামর্শ দিতেন৷ মৃগী রোগ, অ্যাজমা, সিজোফ্রেনিয়া ও হৃদরোগের চিকিৎসায় শিশু ও বয়স্কদের হেরোইন দেয়া হতো৷ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শুধুমাত্র কোষ্ঠকাঠিন্যতার কথা বলতো বায়ার৷
হেরোইনের উদ্ভাবক
ছবির এই মানুষটির নাম ফেলিক্স হোফমান৷ হেরোইনের উদ্ভাবক তিনি৷ তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় বোধ হয়, তিনি অ্যাসপিরিন-এর জনক৷ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কিন্তু জার্মানিতে হেরোইন সেবন বৈধ ছিল৷
কোকেন
দক্ষিণ অ্যামেরিকার কোকা পাতায় ক্ষারজাতীয় একটি রাসায়নিক উপাদান খুঁজে পেয়েছিলেন জার্মান কেমিস্ট আলবার্ট নিমান৷ এর নাম তিনি দিয়েছিলেন কোকেন৷ সংক্ষেপে জার্মানরা কোকেনকে বলে ‘কোক’৷ তাই ইউরোপে কেউ আপনাকে কোক সেবন করেন কিনা জানতে চাইলে কোকাকোলা নয়, কোকেনের কথা বলছে বলে বুঝতে হবে কিন্তু!
ছবি: Merck Corporate History
প্রফুল্লভাব এনে দেয়?
অস্ট্রিয়ান নিউরোলজিস্ট ও সাইকোঅ্যানালিসিস-এর জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড গবেষণার উদ্দেশ্যে কোকেন সেবন করেছিলেন৷ এরপর তিনি বলেছিলেন, কোকেন ক্ষতিকারক নয়৷ কোকেন খেলে মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে, এমনও বলেছিলেন তিনি৷ অবশ্য কোকেন নিয়ে ফ্রয়েডের এই ইতিবাচক ভাব বেশি দিন থাকেনি৷ কারণ তাঁর এক বন্ধু অতিমাত্রায় কোকেন নেয়ায় প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
ছবি: Hans Casparius/Hulton Archive/Getty Images
এক্সটাসি
মার্কিন কেমিস্ট আলেক্সান্ডার শুলগিন-কে ‘পার্টি ড্রাগ’ বলে পরিচিত এক্সটাসি-র উদ্ভাবক মনে করা হলেও, জার্মান কোম্পানি ম্যার্ক সেই ১৯১২ সালেই এটি উদ্ভাবন করেছিল এবং ‘৩,৪-মিথাইলেন-ডিঅক্সি-মেথ-অ্যাম্ফেটামিন’ (এমডিএমএ) নামে বর্ণহীন এক তেলের পেটেন্ট নিয়েছিল৷ অবশ্য সেই সময় কেমিস্টরা মনে করেছিলেন যে, এর কোনো বাণিজ্যিক মূল্য নেই৷
ছবি: picture-alliance/epa/Barbara Walton
8 ছবি1 | 8
সেখানে তারা ইহুদিদের জোর করে কষ্টকর কাজে বাধ্য করত৷ চালাতো ভয়াবহ নির্যাতন৷ এদের মধ্যে একজন প্রশিক্ষণার্থী ফ্রান্স ম্যুরের লিথুয়ানিয়ায় কয়েক হাজার ইহুদি হত্যার জন্য দায়ী৷ তাকে বলা হতো ‘ফিলনিয়াসের কসাই'৷
দর্শণার্থীদের প্রতিক্রিয়া
২০০৬ সালে ফোগেলসাং যখন সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হলো, তখন অনেক মানুষ এটাকে সংরক্ষণের সমালোচনা করেছিল৷ গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণ ও পর্যটন বিভাগের পরিচালক জন লেনন বলেছেন, যখন কয়েক দশক ধরে কোনো স্থান বন্ধ রাখা হয় এবং পরে তা খুলে দেয়া হয়, তখন এটির ইতিহাস বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়৷ ইহুদিরাও বলছেন, এ ধরনের স্থানগুলো খুলে দেয়ার চেয়ে যেসব স্থানে ইহুদিদের নির্যাতন করা হয়েছে, সেসব নির্যাতন কেন্দ্রগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার৷
নাৎসি এলাকাগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ
নাৎসি এলাকা হিসেবে ফোগেলসাং এর মতো এলাকাগুলোতে গত দুই দশক ধরে বিনিয়োগ বাড়ছে৷ প্রতি বছর সেখানে দর্শনার্থী বাড়ছে৷ জার্মানদের মধ্যে এক ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা হলো, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তারা এ ধরনের এলাকাগুলো সংরক্ষণ করতে চাচ্ছে৷ কেননা এর আগ পর্যন্ত কনসেন্ট্রেশন বা নির্যাতন ক্যাম্পগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে বেশি নজর ছিল প্রশাসনের৷ সে সময় জার্মানির লক্ষ্য ছিল নাৎসিদের কাহিনি ইতিহাস থেকে সমূলে উৎপাটন করা৷ যেন সেই ভয়াবহ অতীত সবাই ভুলে যায়৷
প্রদর্শনীর প্রধান আয়োজক আক্সেল ড্রেকোল জানালেন, নতুন প্রজন্মের অনেকের মনে আগ্রহ জন্মেছে – কেন তাদের পিতামহ বা প্রতিপিতামহ হিটলারকে সমর্থন করেছিল৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই মারা গেছেন, যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁরাও আর বেশিদিন থাকবেন না৷ তাই জানা যাবে না আসলে কী ঘটেছিল৷ এই ছবিগুলো সেই গল্প বলবে৷
স্মরণে হিটলারের পরাজয়ের দিন
৭০ বছর আগের এই দিনে প্রায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধের দামামা বন্ধ হয়েছিল৷ সেদিনই হিটলারের বাহিনী আত্মসমর্পন করেছিল৷ তাই জার্মানি প্রতি বছর স্মরণ করে সেই দিনটিকে৷
ছবি: DW/F. Müller
দীর্ঘতম যুদ্ধের স্মৃতি
আখেন শহরের হ্যুর্টিগেনের কাছের এই জঙ্গলে হিটলারের বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল৷ ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে ১৯৪৫ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে এই যুদ্ধ৷ তারপর আত্মসমর্পন করে জার্মানরা৷ জার্মানির মাটিতে আর কোথাও এত দীর্ঘ যুদ্ধ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Oliver Berg
রেমাগেনের সেই ‘অলৌকিক’ সেতু
রেমাগেন শহরের এই সেতুটি ‘মিরাকল অফ রেমাগেন’ নামে পরিচিত৷ এমন নামকরণের কারণও আছে৷ ১৯৪৫ সালের ৭ই মার্চ প্রথমবারের মতো রাইন নদীর ওপরের এই সেতু অতিক্রম করে মিত্র বাহিনী৷ শুরু হয় জার্মান বাহিনীর বোমা বর্ষণ৷ মিত্র বাহিনী দখল করে নেয়ার দশ দিন পর ধসে পড়ে ব্রিজটি৷ কিন্তু আধুনিক জার্মানি সেই ইতিহাস ভুলেনি৷ ব্রিজটির ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘শান্তির জাদুঘর’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thomas Frey
রাইশভাল্ডের সমাধি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত অ্যামেরিকান যোদ্ধাদের মৃতদেহ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হলেও ব্রিটিশ যোদ্ধাদের জার্মানিতেই সমাধিস্থ করা হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের ১৫টি সমাধি রয়েছে জার্মানিতে৷ এর মধ্যে রাইশভাল্ড বনাঞ্চলের এই ‘কমনওয়েলথ ওয়ার সেমেট্রি’-ই সবচেয়ে বড়৷ ৭৬৫৪ জনকে সমাধিস্থ করা হয় এখানে৷
ছবি: Gemeinfrei/DennisPeeters
সবচেয়ে বড় যুদ্ধের স্মৃতি
জার্মানির মাটিতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হয়েছিল এই সিলো হাইটসে৷ ১৯৪৫ সালের ১৬ এপ্রিল বার্লিন অভিমুখে অভিযানের অংশ হিসেবে আক্রমণ শুরু করে সোভিয়েত বাহিনী৷ ৯ লাখ সৈন্য নিয়ে গড়া সোভিয়েত বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিল ৯০ হাজার জার্মান৷ অনেক সৈন্য মারা যায় সেই যুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Patrick Pleul
রুশ-জার্মান জাদুঘর
১৯৪৫ সালের ৮ই থেকে ৯ই মে-র মধ্যে বার্লিন-কার্লহোর্স্ট অফিসার্স মেস-এ আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করে জার্মান বাহিনী৷ সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর৷ জাদুঘরের মূল আকর্ষণ ইংরেজি, জার্মান এবং রুশ ভাষায় লেখা আত্মসমর্পনের সেই দলিল৷
ছবি: picture-alliance/ZB
সোভিয়েত সৈন্যদের স্মরণে
১ হাজার বর্গ মিটার জায়গা জুড়ে ট্রেপটাওয়ারের এই স্মৃতিসৌধ৷ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বার্লিন অভিযানে যেসব সোভিয়েত সৈন্য প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই গড়ে তোলা হয় এটি৷ স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোটি আসলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুটি প্রতীকি পতাকা৷ ‘রেড আর্মির’ প্রয়াত সদস্যদের স্মরণ করতে পতাকা দুটির আদল তৈরি করা হয়েছে লাল গ্রানাইট পাথর দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Matthias Tödt
পস্টডাম সম্মেলন
নাৎসি বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় বসে মিত্র শক্তির প্রধান তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং রাশিয়ার প্রধান৷ পস্টডামের সেসিলিয়ানহোফ প্যালেসে বসে সেই বৈঠক৷ হ্যারি ট্রুম্যান, উইনস্টন চার্ইল এবং জোসেফ স্ট্যালিন অংশ নিয়েছিলেন সেই বৈঠকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ralf Hirschberger
7 ছবি1 | 7
বাভেরিয়ার সরকার ওবারসালসব্যর্গ ডকুমেন্টেশন সেন্টারটিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে৷ তখন সারা বছরে ৩০ হাজার দর্শক হয়েছিল৷ অথচ গত বছর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজারে৷ এ কারণে প্রশাসন প্রদর্শনীর স্থান দ্বিগুণ বড় করতে ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো খরচ করছে৷
নাৎসি নীপিড়ন যেন মানুষকে আকৃষ্ট করছে! বার্লিনে ২০১০ সালে টেরর মিউজিয়াম খুলে দেয়ার পর বর্তমানে সেটি শহরের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে৷ প্রতি বছর ১০ লাখ পর্যটক সেটি দেখতে আসেন৷ ন্যুরেমব্যুর্গে নাৎসি পার্টির যেসব ভবনের সামনে হিটলার ৫ লাখ মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থানটি সংরক্ষণের জন্য এখন ৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো খরচ করা হচ্ছে৷ শহরটির মেয়র জানালেন, এটা কোনো পুনর্গঠন বা মেরামত নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম আসল ইতিহাস জানতে পারে৷
এটা কি ডার্ক টুরিজম?
নাৎসি এলাকাগুলো পুনরায় খুলে দেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসন পুরোপুরি সচেতন বলে দাবি করা হয়েছৈ৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা জানেন যে এটা ডার্ক টুরিজমের দিকে যেতে পারে, অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম এতে আকৃষ্ট হতে পারে৷ তা জেনেই তারা সব স্থান ও ছবিকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন৷ তাই ফোগেলসাং-এ এসে কোনো নব্য নাৎসির সুখানুভূতি হবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
হলোকস্টের স্মরণে জার্মানি যা করেছে, করছে
১৯৪৫ সালের ৮ মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ইউরোপে৷ এরপর থেকে হলোকস্টের শিকার হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের স্মরণে রাখতে এই গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনা সংরক্ষণ করে আসছে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sven Hoppe
ডাখাউ
মিউনিখের কাছে ডাখাউ-এ প্রথম কনসেনট্রেশন ক্যাম্পটি স্থাপন করেছিল নাৎসিরা৷ আডল্ফ হিটলারের ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর গড়ে তোলা কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী বা এসএস-এর সদস্যরা রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের সেই ইহুদি নিধন শিবিরে ধরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে বন্দি করতো৷ তারপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করতো তাঁদের৷ পরবর্তীতে নাৎসিদের স্থাপন করা অন্যান্য ক্যাম্পগুলো ঐ ডাখাউ-এর আদলেই তৈরি করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাৎসিদের ব়্যালি গ্রাউন্ড
ন্যুরেমব্যার্গে নাৎসি আমলের সবচেয়ে বড় প্রচারণা ব়্যালিটি অনুষ্ঠিত হতো৷ প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা একটি ‘গ্রাউন্ডে’ নাৎসিদের বার্ষিক কংগ্রেস এবং এই ব়্যালি অনুষ্ঠিত হতো, যাতে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করতেন৷ ছবিতে অসমাপ্ত কংগ্রেস হলটি দেখতে পাচ্ছেন৷ এটি বর্তমানে একটি জাদুঘর এবং ডকুমেন্টেশন সেন্টার৷
ছবি: picture-alliance/Daniel Karmann
হলোকস্টের মূল পরিকল্পনা
বার্লিনের ভানজে লেক এলাকার এই ‘ভানজে হাউস’-টিতে ইহুদি নিধনযজ্ঞের মূল পরিকল্পনা হয়েছিল৷ নাৎসি সরকার ও এসএস বাহিনীর মোট ১৫ জন সদস্য ১৯৪২ সালের ২০ জানুয়ারি এই ভবনে মিলিত হয়ে ‘ফাইনাল সলিউশন’ নামের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন৷ অর্থাৎ জার্মান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে সব ইহুদিদের তাড়ানো ও তাঁদের শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় এখানেই৷ ১৯৯২ সাল থেকে ভবনটি একটি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আনে ফ্রাঙ্কের স্মৃতি বিজড়িত
আনে ফ্রাঙ্ককে এখন অনেকেই চেনেন৷ তাঁর ডাইরিও পড়েছেন অনেকে৷ আনে ফ্রাঙ্ক সহ প্রায় ৫০ হাজার ইহুদিকে ব্যার্গেন-বেলজেনের এই কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/Klaus Nowottnick
হিটলারকে মারার ব্যর্থ পরিকল্পনা
জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি অপশাসন প্রতিরোধে ১৯৪৪ সালের ২০ জুলাই সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল ক্লাউস ফন স্টাউফেনব্যার্গ-এর নেতৃত্বে একটি দল হিটলারের ওপর বোমা হামলা চালায়৷ কিন্তু হত্যা পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হলে, সেই রাতেই বার্লিনের এই ‘বেন্ডলারব্লক’ ভবনে স্টাউফেনব্যার্গ ও তাঁর সঙ্গীদের গুলি করে হত্যা করা হয়৷ এই ভবনটি এখন ‘জার্মান রেসিস্টেন্স মেমোরিয়াল সেন্টার’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হত্যা স্মরণ
হেসে রাজ্যের হাডামারে একটি হাসপাতালের প্রায় ১৫ হাজার শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীকে হত্যা করা হয়৷ এরকম ‘অক্ষমদের’ নাৎসি সরকার ‘অবাঞ্চিত’ ঘোষণা করেছিল৷ তাই তাঁদের দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষাক্ত ওষুধ প্রবেশ করানোসহ বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করা হয়৷ পুরো জার্মানিতে এভাবে প্রায় ৭০ হাজার প্রতিবন্ধীকে মেরে ফেলে নাৎসি বাহিনী৷ পরবর্তীতে নিহতদের স্মরণে হাডামারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনে স্মৃতিস্তম্ভ
হলোকস্টের স্মরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের ৬০ বছর পর, বার্লিনের ঐতিহাসিক ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণের কাছে ‘মেমোরিয়াল টু দ্য মার্ডার্ড জিউস অফ ইউরোপ’ নামের এই স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপন করা হয়৷ নিহতদের স্মরণে সেখানে কংক্রিটের ২,৭১১টি স্ল্যাব বসানো হয়েছে৷ ইহুদি নিধনযজ্ঞের শিকার, এমন বহু মানুষের নামও লেখা আছে একটি জায়গায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমকামী হত্যা স্মরণ
বার্লিনের ঐ স্মৃতিস্তম্ভ থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত ‘টিয়ারগার্টেন’ নামক একটি উদ্যানে স্থাপন করা হয়েছে চার মিটার উঁচু এই স্মৃতিফলক৷ ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে নাৎসিদের হাতে নিহত সমকামীদের স্মরণে এটি স্থাপন করা হয়৷ এই স্তম্ভের মধ্যে থাকা একটি পর্দায় চোখ রাখলে দুটি ছবি দেখা যায়৷ একটিতে চুমু খাচ্ছেন দু’জন পুরুষ, অন্যটিতে দুই নারী৷
ছবি: picture alliance/Markus C. Hurek
সিন্টি ও রোমা হত্যা স্মরণ
বার্লিনের সংসদ ভবনের ঠিক উল্টো দিকে ২০১২ সালে একটি পার্ক উদ্বোধন করা হয়৷ নাৎসি আমলে নিহত প্রায় পাঁচ লক্ষ সিন্টি ও রোমার স্মরণে এটি স্থাপন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্মতিস্মারক হিসেবে ‘শ্টলপারশ্টাইন’
নব্বইয়ের দশকে শিল্পী গুন্টার ডেমনিগ নাৎসি নির্যাতনের শিকাররা যে সব বাড়িতে বাস করতেন, সেগুলোর সামনে রাস্তার ওপর সোনালি পাতের ছবির মতো এই স্মৃতিস্মারক বসানো শুরু করেন৷ এতে যিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন, তাঁর নাম, তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া ও মেরে ফেলার তারিখ লেখা আছে৷ ইউরোপের ১৮টি দেশে এরকম ৪৫ হাজারেরও বেশি ‘শ্টলপারশ্টাইন’ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিউনিখের ব্রাউন হাউস
নাৎসি আমল শেষের এত বছর পরও সে সময়ের স্মৃতি ধরে রাখতে তৎপর জার্মানি৷ তাই তো ৩০ এপ্রিল, ২০১৫-তে আরও একটি ডকুমেন্টেশন সেন্টার উদ্বোধন করতে যাচ্ছে জার্মানি৷ মিউনিখ শহরে হিটলারের অফিসের অদূরে যেখানে নাৎসিদের প্রধান কার্যালয় ছিল, সেই ব্রাউন হাউসে ‘ডকুমেন্টেশন সেন্টার ফর দ্য হিস্টরি অফ ন্যাশনাল সোশ্যালিজম’ নামের এই সেন্টারটির উদ্বোধন করা হবে৷