জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারবিহীন শিশু বা কিশোর শরণার্থীদের একটা অংশ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে৷ এদের কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না৷ কোথায় যাচ্ছে এই শিশুরা? এই ঘটনাকে আতঙ্কের বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture alliance / Uli Deck/dpa
বিজ্ঞাপন
শরণার্থীদের গ্রহণ করার পর থেকেই জার্মানিতে কয়েক হাজার শিশু কিশোর নিখোঁজের খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করছেন তারা গুরুতর কোনো বিপদে পড়েনি৷ তবে তাদের নিরাপদ আবাসন ও নিয়মিত খোঁজ খবরের জন্য জার্মান সরকারকে আরও সচেষ্ট হওয়ার অনুরোধ করেছেন৷
জার্মানির কেন্দ্রীয় অপরাধ তদন্ত অফিসের এক জরিপে দেখা যায়, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে নিখোঁজ শিশু-কিশোরের সংখ্যা ৮ হাজার ৪০০ ছিল৷ ২০১৯ সালের প্রথম মাসেই নিখোঁজ ৩ হাজার ২০০জন৷
অভিবাবকহীন শরণার্থীদের জন্য নিয়োজিত সেবামূলক সংগঠন ফেডারেল অ্যাসোশিয়েশন ফর আন-অ্যাকম্প্যানিড রিফিউজি মাইনরের কর্মকর্তা টোবিয়াস ক্লাউস বলেন, ‘‘নিখোঁজের সংখ্যা কমিয়ে আনা গেছে৷ তবে, মনে রাখতে হবে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যাও অধিক হারে কমেছে৷''
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই জরিপের জন্য ৭২০জন সেবাদানকারী ব্যক্তি কাজ করছেন এইসব শরণার্থী শিশুদের জন্য৷ সেই সব কর্মীদের দাবি, শরণার্থী কিশোর নিখোঁজের সংখ্যা কমেছে কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়নি৷ প্রায়শই নিখোঁজ হচ্ছে৷ অনেকে একেবারে উধাও হয়ে যাচ্ছে যাদের হদিসও পাওয়া যাচ্ছে না৷''
ক্লাউস জানান, বেশিরভাগই নিখোঁজ হচ্ছে সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্র থেকে৷ অর্থাৎ তারা শরণার্থী জীবনের শুরুতেই নিখোঁজ হচ্ছেন৷ তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, নিখোঁজ শিশুদের বয়স ১৪-১৭ এর মধ্যেই বেশি৷ তারা প্রাথমিকভাবে জার্মানিতে আশ্রয় নিলেও পরে ইউরোপের অন্যদেশে আত্মীয় বা পরিচিত কারও পরিবারের সঙ্গে নিজেদের সিদ্ধান্তেই চলে যাচ্ছে৷ এটিকে নিখোঁজ না বলে অবস্থান পরিবর্তন বলা যায়৷ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘ধরা যাক একটি ছেলে মিউনিখে প্রবেশ করেছে, কিন্তু তার আত্মীয় থাকে হামবুর্গে৷ সে হামবুর্গ চলে গেলো৷ আনুষ্ঠানিকভাবে গেলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও হিসাব রাখা সহজ হয়, দুই স্থানে শরণার্থী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবও রাখতে পারে৷ তবে সচরাচর এমনটি ঘটে না বলেই নিখোঁজের সংখ্যা বেশি হচ্ছে৷''
ইউরোপে বাংলাদেশিদের আশ্রয় পাওয়ার হার বাড়ছে
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর গত ১০ বছরের হিসেব বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সফল হওয়ার হার বাড়তির দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
তিন ধরনের সুরক্ষা
শরণার্থী, হিউম্যানিটারিয়ান ও সাবসিডিয়ারি – এই তিন ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে৷ যাঁরা শরণার্থী স্ট্যাটাসের যোগ্য নন, কিন্তু দেশে ফিরে গেলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের সাবসিডিয়ারি সুরক্ষা দেয়া হয়৷ আর অসুস্থতা ও অভিভাবকহীন শিশুদের মানবিক (হিউম্যানিটারিয়ান) বিবেচনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Schlesinger
২০১৭
বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গতবছর ১৬,০৯৫টি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ আর একই সময়ে বাংলাদেশিদের করা ২,৮৩৫টি আবেদন সফল হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে সেটি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ৷ জার্মানিতে আবেদন পড়েছে ২,৭২৫টি৷ সফল হয়েছে ৩১৫টি৷ এমনিভাবে অন্য কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান এরকম – যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৬৩০; সফল ৬৫), ইটালি (আবেদন ৫,৭৭৫; সফল ১,৮৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১৫; সফল ৪৪০)৷
ছবি: imago/Cronos
২০১৬
বাংলাদেশিরা ১৪,০৮৫টি আবেদন করেছেন৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে ২,৩৬৫টি৷ অর্থাৎ সফলতার হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৬৬৫; সফল ১১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৪০৫; সফল ৮০), ইটালি (আবেদন ৬,২২৫; সফল ১,৬১০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১০; সফল ৪৪০)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
২০১৫
সেবছর সফলতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷ আবেদন পড়েছিল ১১,২৫০টি৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ১,৭৮৫টি৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৬৫; সফল ৩৫), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,০১৫; সফল ১২০), ইটালি (আবেদন ৫,০১০; সফল ১,২২৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৫৬০; সফল ৩১৫)৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
২০১৪
আবেদন ৭,৫৮০টি৷ সফল ৭৮৫৷ শতকরা হার ১০ দশমিক ৩৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪৬৫; সফল ৫০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৭০০; সফল ৭৫), ইটালি (আবেদন ৭৩৫; সফল ৩১৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৮৭০; সফল ২৬৫)৷
ছবি: Megan Williams
২০১৩
সফলতার হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ৷ আবেদন ৮,৩৩৫৷ সফল ৫৯৫৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৫০; সফল ২০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮৩০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ৫৯০; সফল ৩০০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৬১৫; সফল ১৪৫)৷
ছবি: picture alliance/robertharding/A. Robinson
২০১২
সফলতার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১৯০; সফল ১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮০০; সফল ৫০), ইটালি (আবেদন ১,৪১০; সফল ১,০৪৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৫৫; সফল ৮৫)৷
ছবি: Imago/Rainer Weisflog
২০১১
সফলতার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১১০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৮০; সফল ৪০), ইটালি (আবেদন ৮৬৫; সফল ৬৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৭০; সফল ৪৫)৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/M. Cohen
২০১০
সফলতার হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১০৫; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৬০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ২১৫; সফল ৪০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ২,৪১০; সফল ২৫)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Uhlemann
২০০৯
সফলতার হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৭৫; সফল ৪৫), ইটালি (আবেদন ৮৮৫; সফল ৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৭৮০; সফল ৩৫)৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
২০০৮
সফলতার হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৯৫; সফল ৯৫), ইটালি (আবেদন ৯৫০; সফল ৫০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৬৬০; সফল ৩৫)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
৩২ দেশের হিসাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্যরাষ্ট্র এবং ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা ইএফটিএ-এর অন্তর্ভুক্ত আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোস্ট্যাট৷ আরও পরিসংখ্যান জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Megan Williams
12 ছবি1 | 12
ক্লাউস নিখোঁজের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ‘বিতাড়িত করা' উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক কিশোর মনে করে তাদের ইউরোপে রাখা হবে না দেশে ফেরত পাঠানো হবে৷ সেই আশঙ্কা থেকে তারা পালিয়ে যান৷ এসব নিখোঁজ শরণার্থীদের মধ্যে আফগানদের সংখ্যা সর্বাধিক৷ মরোক্কো ও আলজেরিয়ানও রয়েছে৷''
তবে টোবিয়াস ক্লাউস এও বলেন, ‘‘৮০ শতাংশ নিখোঁজ শরণার্থীর খোঁজ বের করতে পারলেও বাকি ২০ শতাংশ নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়৷ এদের মধ্যে পাচারের শিকারও হচ্ছে কেউ কেউ৷'' সেটি নিয়ে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে বলে জানান তিনি৷