1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে নির্বাচনের প্রক্রিয়া

১৩ জুন ২০১৭

জার্মান সংসদের একটি কর্মকালের মেয়াদ চার বছর৷ ভোটপত্রে দু'বার সিল দিতে হয় ভোটারদের: একবার একজন প্রার্থী, দ্বিতীয়বার কোনো একটি দলের সমর্থনে৷

Deutschland Bundestagswahl 2013
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler

জার্মান সংবিধানের ৩৮তম সূত্রের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সার্বজনীন, মুক্ত, সমতাপূর্ণ ও গোপন নির্বাচনের' মাধ্যমে ‘বুন্ডেসটাগের' সদস্যদের নির্বাচন করা হবে৷ এর অর্থ, সব প্রাপ্তবয়স্ক (যাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর) তাঁদের সম্পত্তি, শিক্ষার মান অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে ভোট দিতে পারবেন৷ প্রত্যেক ভোটারের দু'টি করে ভোট থাকবে: প্রথমটি কোনো প্রার্থীর জন্য; দ্বিতীয়টি কোনো দলের সমর্থনে৷ এছাড়া ভোটদান পর্ব গোপনে সম্পন্ন হবে৷

একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র      

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন অথবা সুইজারল্যান্ডের থেকে জার্মান নির্বাচন পদ্ধতির মূল পার্থক্য হলো এই যে, জার্মানিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রত্যক্ষ নয়, বরং প্রতিনিধিত্বমূলক৷ এক্ষেত্রে সাংসদদের একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে৷ তাঁরা জনগণের মনোভাব ও ইচ্ছার প্রতিনিধি৷ সুইজারল্যান্ডকে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের আদর্শ দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়৷ সুইসরা গণভোটের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করে থাকেন৷ জার্মানিতে কিন্তু শুধুমাত্র গণপ্রতিনিধি, অর্থাৎ সাংসদদের মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় – আইন পাস করা হয়৷ সেই হিসেবে প্রত্যেক গণপ্রতিনিধির উপর একটি গুরুভার ন্যস্ত রয়েছে৷

জার্মান সংবিধানের বয়ানে সাংসদরা ‘সমগ্র জনগণের প্রতিনিধি এবং কোনো আদেশ বা নির্দেশে আবদ্ধ নন ও শুধু তাদের নিজেদের বিবেকের কাছে দায়ী৷' সংবিধানের দৃষ্টিতে সাধারণ ভোটারদেরও নির্বাচন পদ্ধতির উপর নজর রাখার, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্পিত৷ যদি কোনো ভোটারের মনে হয় যে, ভোটপর্বে কোনোরকম ব্যাঘাত বা ব্যতিক্রম হয়েছে, তাহলে তিনি ভোট বাতিল করার দাবি তুলতে পারেন৷         

‘বুন্ডেসটাগ'

জার্মান সংসদের নাম ‘বুন্ডেসটাগ' – আক্ষরিক অর্থে, ফেডারাল সম্মেলন৷ ২০০২ সাল থেকে বুন্ডেসটাগের সদস্যসংখ্যা হলো ৫৯৮৷ এর মধ্যে ২৯৯টি আসন অধিকার করেন সেই সব প্রার্থী, যাঁরা সংশ্লিষ্ট ২৯৯টি নির্বাচনি এলাকায় সর্বাধিক ভোট লাভ করেছেন৷ এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অপর কোনো শর্ত নেই৷ এমন প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হয়৷ সংসদের বাকি ২৯৯টি আসনের দাবিদাররা আসেন ভোটারদের দ্বিতীয় বা দলীয় ভোট থেকে৷ রাজনৈতিক দলগুলির তথাকথিত ‘প্রাদেশিক প্রার্থী তালিকা' অনুযায়ী, এই সাংসদরা বুন্ডেসটাগে আসন গ্রহণ করেন৷ ১৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিটি দল রাজ্য বা প্রদেশ অনুযায়ী তাদের প্রার্থী তালিকা পেশ করে; প্রদেশিক তালিকাগুলি মিলিয়ে প্রত্যেক দলের একটি ‘ফেডারাল প্রার্থী তালিকা' সৃষ্টি হয়; এই তালিকার শীর্ষের থাকেন দলের শীর্ষ প্রার্থী৷ এ-বছরও আঙ্গেলা ম্যার্কেল সিডিইউ দলের শীর্ষ প্রার্থী, যেমন মার্টিন শুলৎস এসপিডি দলের তালিকার শীর্ষে৷ মনে রাখা দরকার, জনগণ নয়, সাংসদরাই তাদের সমর্থনের মাধ্যমে ফেডারাল চ্যান্সেলর নির্বাচন করে থাকেন৷

প্রথম ও দ্বিতীয় ভোট

প্রত্যেক ভোটারের যে দু'টি ভোট থাকে, এক হিসেবে তার মধ্যে দ্বিতীয় ভোটটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, এই দ্বিতীয় ভোট থেকেই বুন্ডেসটাগে কোন দলের কয়টি আসন থাকবে, তা নির্ধারিত হয়৷ উদাহরণস্বরূপ, কোনো দল যদি দ্বিতীয় ভোটের ৩৫ শতাংশ পেয়ে থাকে, তবে সংসদে সেই দলের ৩৫ শতাংশ আসন থাকবে৷ দ্বিতীয় ভোটের মাধ্যমে ভোটাররা সংসদে রাজনৈতিক দলগুলির দলগত শক্তি ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইত্যাদি নির্ধারণ করে থাকেন৷ দ্বিতীয় ভোটের মাধ্যমে একটি দল কতগুলি আসন জয় করেছে, তা নির্দিষ্ট হওয়ার পর সেই বাড়তি আসনগুলি প্রাদেশিক প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী বণ্টন করা হয়৷ প্রসঙ্গত, ভোটাররা এক দলের প্রার্থীকে তাদের প্রথম ভোট ও আরেক দলকে তাদের দ্বিতীয় ভোট দিতে পারেন৷ শুধুমাত্র প্রথম বা দ্বিতীয় ভোট প্রদান করাও সম্ভব৷

মুশকিল হয়, যদি কোনো দল দ্বিতীয় ভোট অনুযায়ী তাদের যত আসন পাওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি আসন প্রথম বা সরাসরি ভোটেই জয় করে থাকে৷ এ ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে এবং এর ফলে সংসদের আসনসংখ্যা বেড়ে যায়: দলটি প্রথম ভোটের মাধ্যমে যেসব আসন জয় করেছে, সেগুলি থেকে যায়, দ্বিতীয় ভোটের অনুপাত অনুযায়ী কমে যায় না৷ এর ফলে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যা বেড়ে যায়, কেননা, দ্বিতীয় ভোট অনুযায়ী অন্যান্য দলের প্রাপ্য আসনের অনুপাত বজায় রাখার জন্য তাদের বাড়তি আসন প্রদান করতে হয়৷ 

২০১২ সালে সরকার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে বাড়তি আসনের ব্যাপারে এই আপোশ করা হয়৷ এর অসুবিধা হলো এই যে, এর ফলে বুন্ডেসটাগের কলেবর খুব বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে৷ এ কারণেই সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর বুন্ডেসটাগের সদস্যসংখ্যা বেড়ে ৭০০ হবার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে৷ কাজেই বাড়তি আসনের সংখ্যা সীমিত করা নিয়ে আলোচনা চলেছে৷

ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ ভোটের বেড়া

এই প্রতিবন্ধক জার্মান নির্বাচন পদ্ধতির একটি বিশেষত্ব বলা চলে৷ তবেঅন্যান্য দেশেও এর চল রয়েছে৷ যেমন, ইসরায়েলে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ অথবা তুরস্কে ১০ শতাংশ ন্যূনতম ভোটের বেড়া, নয়তো একটি রাজনৈতিক দল সংসদে আসন নিতে পারে না৷ জার্মানিতে এই পাঁচ শতাংশ ন্যূনতম ভোটের শর্ত রাখার কারণ হলো, গত শতাব্দীর বিশের দশকে সংসদে বহু দলের উপস্থিতির ফলে স্থিতিশীল সরকার গঠন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ কিন্তু সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, পাঁচ শতাংশে না পৌঁছনোর কারণে বহু প্রদত্ত ভোটের অপচয় হয়: ২০১৩ সালের নির্বাচনে এই পন্থায় প্রায় ৭০ লাখ ভোট অপচয় হয়েছিল৷ ন্যূনতম ভোটের বেড়া নিয়ে যাবতীয় তর্ক-বিতর্ক সত্ত্বেও ২০১৭ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোটের বেড়া বহালই থাকছে৷

ভাগনার ফলকার / এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ