জার্মান সংসদের একটি কর্মকালের মেয়াদ চার বছর৷ ভোটপত্রে দু'বার সিল দিতে হয় ভোটারদের: একবার একজন প্রার্থী, দ্বিতীয়বার কোনো একটি দলের সমর্থনে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান সংবিধানের ৩৮তম সূত্রের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সার্বজনীন, মুক্ত, সমতাপূর্ণ ও গোপন নির্বাচনের' মাধ্যমে ‘বুন্ডেসটাগের' সদস্যদের নির্বাচন করা হবে৷ এর অর্থ, সব প্রাপ্তবয়স্ক (যাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর) তাঁদের সম্পত্তি, শিক্ষার মান অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে ভোট দিতে পারবেন৷ প্রত্যেক ভোটারের দু'টি করে ভোট থাকবে: প্রথমটি কোনো প্রার্থীর জন্য; দ্বিতীয়টি কোনো দলের সমর্থনে৷ এছাড়া ভোটদান পর্ব গোপনে সম্পন্ন হবে৷
একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন অথবা সুইজারল্যান্ডের থেকে জার্মান নির্বাচন পদ্ধতির মূল পার্থক্য হলো এই যে, জার্মানিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রত্যক্ষ নয়, বরং প্রতিনিধিত্বমূলক৷ এক্ষেত্রে সাংসদদের একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে৷ তাঁরা জনগণের মনোভাব ও ইচ্ছার প্রতিনিধি৷ সুইজারল্যান্ডকে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের আদর্শ দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়৷ সুইসরা গণভোটের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করে থাকেন৷ জার্মানিতে কিন্তু শুধুমাত্র গণপ্রতিনিধি, অর্থাৎ সাংসদদের মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় – আইন পাস করা হয়৷ সেই হিসেবে প্রত্যেক গণপ্রতিনিধির উপর একটি গুরুভার ন্যস্ত রয়েছে৷
জার্মান সংবিধানের বয়ানে সাংসদরা ‘সমগ্র জনগণের প্রতিনিধি এবং কোনো আদেশ বা নির্দেশে আবদ্ধ নন ও শুধু তাদের নিজেদের বিবেকের কাছে দায়ী৷' সংবিধানের দৃষ্টিতে সাধারণ ভোটারদেরও নির্বাচন পদ্ধতির উপর নজর রাখার, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্পিত৷ যদি কোনো ভোটারের মনে হয় যে, ভোটপর্বে কোনোরকম ব্যাঘাত বা ব্যতিক্রম হয়েছে, তাহলে তিনি ভোট বাতিল করার দাবি তুলতে পারেন৷
জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি
জার্মানরা শুধু সিডিইউ বা এসপিডি নয়, কিছু ছোট এবং বিরল দলকেও ভোট দিতে পারে৷ এই যেমন, প্রাণী সুরক্ষা পার্টি কিংবা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি৷ ভাবছেন, এরা কারা? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
প্রাণী সুরক্ষা দল
জার্মানিতে প্রাণী অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা সুযোগ পেলে পুরো হাইওয়ে বন্ধ করে দেন যাতে ব্যাঙেরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে৷ এমন দেশে তাই ‘অ্যানিমেল প্রোটেকশন পার্টি’ বা প্রাণী সুরক্ষা দল থাকবে না, তা কি হতে পারে? তবে গ্রিন পার্টির কারণে এ দলের পালে হাওয়া কম থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
দ্য রিপাবলিকানস
ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর৷ জার্মানির রয়েছে নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টি, নাম আরইপি৷ তবে এই দলের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই৷ জার্মান রিপাবলিকনরা হচ্ছেন ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী, যারা নিজেদের ‘রক্ষণশীল দেশপ্রেমিক’ এবং দেশের ‘সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়’ রক্ষায় লড়াইরত বলে মনে করেন৷
ছবি: DW
দ্য পার্টি
হ্যাঁ, এই দলের নাম ‘দ্য পার্টি’৷ জার্মানির স্যাটায়ার ম্যাগাজিন ‘টাইটানিক’ এর সম্পাদকরা ২০০৪ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ দলটির প্রধান হচ্ছেন মার্টিন স্যোনেবর্ন (ছবিতে)৷ ২০১৪ সালে তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে দলটির জন্য একটি আসন নিশ্চিত করেন৷ ভবিষ্যতে দলটির অবস্থা আরো ভালো হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon/M. Ossowski
গণভোট দল
জার্মানির রেফারেন্ডাম পার্টি বা গণভোট দলের কাছে সুইজারল্যান্ড এক বিশাল অনুপ্রেরণা৷ দলটি চায় দেশের সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গনভোটের মাধ্যমে জনগণ নেবে৷ সুইজারল্যান্ডে ২০১৬ সালে তেরোটি গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি
জার্মানির এমএলপিডি একটি ছোট দল, যদিও দেশটির অর্ধেক মানুষ এক সময় কমিউনিস্ট ছিলেন৷ মানে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৯ সাল অবধি যখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানি তখন শাসন করেছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি৷ বর্তমানে উগ্র বামপন্থি এমএলপিডি’র জার্মান রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Link
ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি
‘অ্যালায়েন্স সি - ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি’ একটি ক্রিশ্চিয়ান পার্টি, যেটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে৷ খ্রিষ্টান-মৌলবাদীদের একটি দল এবং শ্রমিক, পরিবেশ এবং পরিবারভিত্তিক একটি দল একত্র হয়ে এই দল গড়ে৷ বাইবেলের মান রক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে চায় এই দল৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall
6 ছবি1 | 6
‘বুন্ডেসটাগ'
জার্মান সংসদের নাম ‘বুন্ডেসটাগ' – আক্ষরিক অর্থে, ফেডারাল সম্মেলন৷ ২০০২ সাল থেকে বুন্ডেসটাগের সদস্যসংখ্যা হলো ৫৯৮৷ এর মধ্যে ২৯৯টি আসন অধিকার করেন সেই সব প্রার্থী, যাঁরা সংশ্লিষ্ট ২৯৯টি নির্বাচনি এলাকায় সর্বাধিক ভোট লাভ করেছেন৷ এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অপর কোনো শর্ত নেই৷ এমন প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হয়৷ সংসদের বাকি ২৯৯টি আসনের দাবিদাররা আসেন ভোটারদের দ্বিতীয় বা দলীয় ভোট থেকে৷ রাজনৈতিক দলগুলির তথাকথিত ‘প্রাদেশিক প্রার্থী তালিকা' অনুযায়ী, এই সাংসদরা বুন্ডেসটাগে আসন গ্রহণ করেন৷ ১৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিটি দল রাজ্য বা প্রদেশ অনুযায়ী তাদের প্রার্থী তালিকা পেশ করে; প্রদেশিক তালিকাগুলি মিলিয়ে প্রত্যেক দলের একটি ‘ফেডারাল প্রার্থী তালিকা' সৃষ্টি হয়; এই তালিকার শীর্ষের থাকেন দলের শীর্ষ প্রার্থী৷ এ-বছরও আঙ্গেলা ম্যার্কেল সিডিইউ দলের শীর্ষ প্রার্থী, যেমন মার্টিন শুলৎস এসপিডি দলের তালিকার শীর্ষে৷ মনে রাখা দরকার, জনগণ নয়, সাংসদরাই তাদের সমর্থনের মাধ্যমে ফেডারাল চ্যান্সেলর নির্বাচন করে থাকেন৷
প্রথম ও দ্বিতীয় ভোট
প্রত্যেক ভোটারের যে দু'টি ভোট থাকে, এক হিসেবে তার মধ্যে দ্বিতীয় ভোটটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, এই দ্বিতীয় ভোট থেকেই বুন্ডেসটাগে কোন দলের কয়টি আসন থাকবে, তা নির্ধারিত হয়৷ উদাহরণস্বরূপ, কোনো দল যদি দ্বিতীয় ভোটের ৩৫ শতাংশ পেয়ে থাকে, তবে সংসদে সেই দলের ৩৫ শতাংশ আসন থাকবে৷ দ্বিতীয় ভোটের মাধ্যমে ভোটাররা সংসদে রাজনৈতিক দলগুলির দলগত শক্তি ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইত্যাদি নির্ধারণ করে থাকেন৷ দ্বিতীয় ভোটের মাধ্যমে একটি দল কতগুলি আসন জয় করেছে, তা নির্দিষ্ট হওয়ার পর সেই বাড়তি আসনগুলি প্রাদেশিক প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী বণ্টন করা হয়৷ প্রসঙ্গত, ভোটাররা এক দলের প্রার্থীকে তাদের প্রথম ভোট ও আরেক দলকে তাদের দ্বিতীয় ভোট দিতে পারেন৷ শুধুমাত্র প্রথম বা দ্বিতীয় ভোট প্রদান করাও সম্ভব৷
‘‘জার্মান সরকারের কাছে আমার সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা’’
ম্যার্কেলের নতুন সরকারের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশাই রয়েছে৷ সেরকমই কিছু প্রত্যাশার কথা জানা যাক এই ছবিঘরের মাধ্যমে৷
ছবি: DW/E. Shoo
হাইনরিশ নেটেকোভেন (৫৯), ফুল বিক্রেতা
আসলে জার্মানিতে আমরা ভালোই আছি৷ তবে ভালো হতো যদি জার্মান সরকার করদাতাদের টাকাটা অন্যভাবে খরচ করতো৷ এখানে রাস্তার দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা দেখে খারাপ লাগে৷ গ্রিসের মতো কোনো দেশকে যদি জার্মানি সাহায্য করে, তাহলে সে টাকাটা আমাদের জন্য হারিয়ে যায়৷ এসব দেশকে সাহায্য করা দরকার তা ঠিক৷ তবে গ্রিসের সমস্যার জন্য গ্রিসের জনগণই দায়ী, কারণ তারাই তো কর আদায় করে না৷
ছবি: DW/E. Shoo
সারা কেটার (২৮), শিশুদের ডাক্তার
সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা, যেন স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে আরো বেশি কর্মী নিয়োগ এবং কাজের নির্ধারিত সময় ঠিক করে দেওয়া হয়৷ আমাদের ক্ষেত্রে ওভারটাইম ব্যতিক্রম কিছু নয়, বরং তা একেবারেই সাধারণ ব্যাপার৷
ছবি: DW/E. Shoo
জারকাস ইব্রাহিম (৫৩), ট্যাক্সিচালক
আমার প্রত্যাশা, জার্মানিতে আরো বেশি কর্মসংস্থান হবে৷ এখানে সিস্টেমটা এমন যে, তুমি বড় কেউ হলে আরো বড় হতে পারো, অথবা তুমি ছোট বলে কিছুই হবার সুযোগ নেই৷ আগে আমি বেশ কয়েক জায়গায় চাকরি করেছি এবং সবগুলোই হারিয়েছি৷ শেষ পর্যন্ত আমি বাধ্য হয়ে নিজে ব্যবসা করছি, শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য৷
ছবি: DW/E. Shoo
মারিয়ো প্লেটাউ (৪২), বেকার
আমার প্রত্যাশা যে, জার্মানিতে করদাতাদের টাকাটা যেন জার্মানির জন্য খরচ করা হয় – ব্যাংক বা অন্য কোনো দেশকে না দেওয়া হয়৷ অন্য দেশকে সাহায্য করা যেতে পারে, তবে এতো বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে নয়৷ সরকারের উচিত আমাদের টাকা শিক্ষা, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য খরচ করে দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়া৷ যাঁরা যুদ্ধের পর দেশকে পুনর্গঠন করেছেন, তাদের এখন মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ ইউরো অবসরভাতা পাওয়া উচিত৷
ছবি: DW/E. Shoo
নাদিন সাসেনরাট (৪৪), শিক্ষক
আমার প্রত্যাশা, সরকার পরিবর্তনের ফলে যেন শিক্ষাক্ষেত্রে আরো বেশি টাকা ব্যয় করা হয়৷ এই মুহূর্তে আমরা দেখছি যে, সাধারণ এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্লাসে অত্যন্ত কম অর্থ ব্যয় করা হয়৷ শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য কম অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে৷ আমার প্রত্যাশা হলো, যে সব শিশুরা স্বাভাবিক নয়, তাদের জন্য একটু বেশি টাকা ব্যয় করতে হবে৷
ছবি: DW/E. Shoo
মার্গারেটে ভ্যুস্টেনফেল্ড (৮০) অবসরপ্রাপ্ত নারী
আমি চাই, অবসরভাতা বাড়ানো হোক৷ গতবার এতোটাই কম বেড়েছে, যে তা কোনো কাজে আসেনি৷ আমি আমার সময়ে দু’বছর ট্রেনিং করার পর খুবই অল্প বেতনে অফিসে চাকরি করেছি৷ পাঁচ বছর কাজ করার পর চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে আমাকে বিয়ে এবং অন্য শহরে চলে যাওয়ার কারণে৷ আমার স্বামী চায়নি যে আমি চাকরি করি৷ আজ আমি খুবই কম অবসরভাতা পাচ্ছি এবং বিধবা হিসেবেও আমার স্বামীর অবসরভাতা থেকেও যা পাই, সেটাও খুবই সামান্য৷
ছবি: DW/E. Shoo
আনেমারি ক্যুন (১৯) সাবিনা নুহি (২১)
আমাদের প্রত্যাশা, ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে এবং আরো বেশি ছাত্রদের পড়ার জন্য বেশি সিটের ব্যবস্থা থাকবে৷ যাতে যে যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী, তা পড়ার সুযোগ পেতে পারে৷ বিশেষ করে আইন এবং ডাক্তারির মতো বিষয়ে৷ বড় শহরগুলোতে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থার উন্নতি চাই, যেন প্রথমেই ছাত্রছাত্রীরা থাকার জায়গা পায় এবং পরে তারা ছাত্রদের হোস্টেলে যেতে পারে৷
ছবি: DW/E. Shoo
ফাতিমা স্টোহর (৪৪) রুটির দোকানের কর্মী
সরকারকে দেখাতে হবে যে সিরিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের এখানে স্বাগত জানানো হয়৷ আমার জন্ম সিরিয়াতে৷ আমি আমার আত্মীয়দের দেখছি, যাদের সিরিয়া থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলোও দেখছি৷ সুযোগের অভাবে তাদের সমাজে মিশে যেতে সমস্যা হয়৷
ছবি: DW/E. Shoo
ভিলহেল্ম ভেস্টার (৫৯), জনসংযোগ প্রধান
আমার সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা যে, সরকার ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকটের অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে আরো বেশি গুরুত্ব দেবে৷ যে বিষয়ে জনগণের মনে বেশ কিছু প্রশ্নই রয়েছে৷ এবারের নির্বাচনে ‘আল্টারনাটিভে ফ্যুর ডয়েচলান্ড’ বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দলের সাফল্য দেখিয়ে দিচ্ছে, যে অনেক নাগরিক এই প্রশ্নে সমাধানসূত্রের আশা করছেন৷
ছবি: DW/E. Shoo
9 ছবি1 | 9
মুশকিল হয়, যদি কোনো দল দ্বিতীয় ভোট অনুযায়ী তাদের যত আসন পাওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি আসন প্রথম বা সরাসরি ভোটেই জয় করে থাকে৷ এ ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে এবং এর ফলে সংসদের আসনসংখ্যা বেড়ে যায়: দলটি প্রথম ভোটের মাধ্যমে যেসব আসন জয় করেছে, সেগুলি থেকে যায়, দ্বিতীয় ভোটের অনুপাত অনুযায়ী কমে যায় না৷ এর ফলে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যা বেড়ে যায়, কেননা, দ্বিতীয় ভোট অনুযায়ী অন্যান্য দলের প্রাপ্য আসনের অনুপাত বজায় রাখার জন্য তাদের বাড়তি আসন প্রদান করতে হয়৷
২০১২ সালে সরকার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে বাড়তি আসনের ব্যাপারে এই আপোশ করা হয়৷ এর অসুবিধা হলো এই যে, এর ফলে বুন্ডেসটাগের কলেবর খুব বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে৷ এ কারণেই সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর বুন্ডেসটাগের সদস্যসংখ্যা বেড়ে ৭০০ হবার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে৷ কাজেই বাড়তি আসনের সংখ্যা সীমিত করা নিয়ে আলোচনা চলেছে৷
ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ ভোটের বেড়া
এই প্রতিবন্ধক জার্মান নির্বাচন পদ্ধতির একটি বিশেষত্ব বলা চলে৷ তবেঅন্যান্য দেশেও এর চল রয়েছে৷ যেমন, ইসরায়েলে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ অথবা তুরস্কে ১০ শতাংশ ন্যূনতম ভোটের বেড়া, নয়তো একটি রাজনৈতিক দল সংসদে আসন নিতে পারে না৷ জার্মানিতে এই পাঁচ শতাংশ ন্যূনতম ভোটের শর্ত রাখার কারণ হলো, গত শতাব্দীর বিশের দশকে সংসদে বহু দলের উপস্থিতির ফলে স্থিতিশীল সরকার গঠন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ কিন্তু সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, পাঁচ শতাংশে না পৌঁছনোর কারণে বহু প্রদত্ত ভোটের অপচয় হয়: ২০১৩ সালের নির্বাচনে এই পন্থায় প্রায় ৭০ লাখ ভোট অপচয় হয়েছিল৷ ন্যূনতম ভোটের বেড়া নিয়ে যাবতীয় তর্ক-বিতর্ক সত্ত্বেও ২০১৭ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোটের বেড়া বহালই থাকছে৷