জার্মানিতে নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ কমছে৷ শুরু হয়েছে এ নিয়ে দুর্ভাবনা এবং কারণ অনুসন্ধান৷ সমাধানের উপায়, অর্থাৎ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখি করার ভাবনা-চিন্তাও চলছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়া৷ গত ১৫ই মে রাজ্যের নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৫৫.৫ ভাগ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাজ্যটিতে এই প্রথম কোনো নির্বাচনে ভোটের হার এত কম হলো৷ ডুইসবুর্গ আসনে আবার ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৩৮.১ ভাগ ভোট পড়েছে এবার৷ ভোটের এই নিম্নহারে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেখছেন অনেকে৷ কারো কারো প্রশ্ন- গণতন্ত্রের প্রতিই কি নিস্পৃহ বা বিরক্ত হয়ে পড়ছেন ভোটাররা?
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়ায় এত কম ভোট পড়ার কারণ জানতে স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল৷ দেখা গেল ভোট না দেয়া এবং ভোট দিতে অনিচ্ছুকদের নির্বাচনে অনিহার কারণ আসলে অনেক৷
‘রাজনীতিবিদরা মিথ্যেবাদী'
ডুইসবুর্গ সিটি সেন্টারের এক কফি শপে কফির কাপে চুমুক দিয়ে হেলগা নিকেলসেন বললেন, ‘‘রাজনীতিবিদরা মিথ্যেবাদী৷ তারা অঙ্গীকার করে এবং সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে৷'' ৭৬ বছর বয়সি হেলগা মনে করেন, তার মতো কর্মজীবন থেকে অবসর নেয়া মানুষদের ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবা অনেক আগেই বাদ দিয়েছেন রাজনীতিবিদরা, তাই তাদের ভোট দিতে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না৷
ভোটে জিতে ইতিহাসের পাতায় দুই ট্র্র্যান্সজেন্ডার নারী
মাঝে মাঝে দু-একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা উঠে এলেও জার্মান সমাজ যে এখনো অনেক মানবিক, সব মানুষের জন্যই যথেষ্ট উদার তা আবার বোঝা গেল টেসা গানসারার এবং নাইকে স্লাভিকের জয়ে৷ ছবিঘরে বিজয়ী দুই ট্র্যান্সজেন্ডার নারীর গল্প...
জার্মানিতে সমকামী এবং অন্যদের অধিকার
জার্মানিতে সমকামিতা আইনি স্বীকৃতি পায় ১৯৬৯ সালে৷ সে বছরই সমকামিতাকে ‘অপরাধ’ বিবেচনা না করার পক্ষে রায় দেয় আদালত৷ এখন জার্মানিতে সম লিঙ্গের মানুষদের বিয়েও আইনসিদ্ধ৷ ২০১৭ সালে আদালত সম লিঙ্গের কাউকে জীবনসঙ্গী করতে আগ্রহীদের এ অধিকার দেয়৷
ছবি: imago images/S. Zeitz
উদারতায় ভাটা?
তবে অতি সম্প্রতি জার্মানিতে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে উগ্রতা বাড়ছে৷
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে জার্মানিতে এলজিবিটি+-দের বিরুদ্ধে হেটক্রাইম, অর্থাৎ ঘৃণাসূচক অপরাধ শতকরা ৩৮ ভাগ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Brady
ভোটারদের ‘সবুজ সংকেত’
তবে বাভারিয়া এবং নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার ভোটাররা সব মানুষের অধিকারের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল৷ তাই বাভারিয়া থেকে টেজা গানসারার আর নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া থেকে নাইকে স্লাভিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ দুজনই গ্রিন পার্টির সদস্য৷ জার্মানিতে এই প্রথম কোনো ট্র্যান্সজেন্ডার নারী সংসদ সদস্য হলেন৷ এর আগে ক্রিস্টিয়ান শেঙ্ক নামের একজন বুন্ডেসটাগের সদস্য হলেও সংসদের মেয়াদ শেষেই নিজেকে তিনি পুরুষ ‘ঘোষণা’ করেন৷
‘এটা ট্র্যান্সজেন্ডারদের জয়’
রোববারের নির্বাচনে গ্রিন পার্টি তৃতীয় সফল দল হিসেবে উঠে আসে৷ ২০১৭ সালে যারা মাত্র ৮.৯ ভাগ ভোট পেয়েছিল সেই দল কিনা এবার পেয়েছে ১৪.৯ ভাগ ভোট৷ দলের এবং নিজের সাফল্যে গানসারার খুব খুশি৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘এটা সবুজদের জন্য এবং ট্র্যান্সজেন্ডারদের অধিকার আন্দোলনের জন্য বড় এক ঐতিহাসিক জয়৷’ ৪৪ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ ভোটযুদ্ধে আগেও জিতেছেন৷ ২০১৩ সালে বাভারিয়ার আঞ্চলিক সংসদের সদস্য হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: JOHN MACDOUGALL/AFP
স্লাভিকের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনে জেতার আনন্দ ইন্সটাগ্রামে স্লাভিক প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘এ তো রীতিমতো পাগলামো! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না৷ তবে সত্যি কথা হলো, এক ঐতিহাসিক জয়ের মাধ্যমে আমি পরবর্তী বুন্ডেসটাগের সদস্য হতে চলেছি৷’’
ছবি: Dwi Anoraganingrum/Geisler/picture alliance
5 ছবি1 | 5
‘ভোটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল'
অনেকে জানালেন ভোটের দিনে তারা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন৷ একজন বললেন, ‘‘সেদিন আমরা বাচ্চাদের নিয়ে অ্যামিউজমেন্ট পার্কে গিয়েছিলাম৷'' আরেকজন দেখালেন কাজের অজুহাত, ‘‘আমার তো সেদিন কাজ ছিল!'' আবার কেউ কেউ নির্বিকারভাবে জানালেন সেদিন যে কোনো নির্বাচন ছিল তা-ই জানা ছিল না৷ তবে ভোট না দেয়ার কারণ ভিন্ন হলেও একটি বিষয়ে অনেকেরই খুবই মিল৷ ভোট দিতে না যাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক৷
দ্রব্যের অগ্নিমূল্য এবং আরো কারণ...
নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়ার কয়েকটি অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এবার ভোট কম পড়েছে৷ সেসব এলাকার অনেক অভিবাসীই জার্মান ভাষা শেখেননি৷ বিশেষায়িত কাজে প্রশিক্ষণ নেননি বলে অনেকের আয় যৎসামান্য৷ অনেকের জীবন আবার সরকারের সমাজ কল্যাণ ভাতার ওপর নির্ভরশীল৷ তাদের মধ্যে যারা ভোটার তারা জার্মানির সমাজের সঙ্গে নিজেকে এখনো মানিয়ে নিতে পারেননি বলেই নির্বাচনের বিষয়ে অনাগ্রহী রয়ে গেছেন বলে অনেকের ধারণা৷
আবার ২৪ বছর বয়সি ইয়োনাস জিচি মনে করেন, ইউক্রেন সংকটের কারণে দ্রব্যমূল্য এত বেড়েছে যে মানুষ দৈনন্দিন খরচের টাকা জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণ স্পষ্ট ভাষায় জানালেন এ কারণে নিজের বাড়ির রাস্তার বিপরীত দিকে ভোট কেন্দ্র জেনেও ১৫ মে তিনি ভোট দিতে যাননি৷
রাজনীতিবিদদের হতাশা
এবার নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্য নির্বাচনে সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসপিডি)-র ভরাডুবি হয়েছে৷ তবে এসপিডির নেতা ফ্রাঙ্ক ব্যোর্নার ২০১২ সাল থেকে জয়ের যে ধারা শুরু করেছিলেন তা বজায় রেখেছেন৷ কিন্তু দল হেরে যাওয়ায় এবং নিজের এলাকায় ভোটের হার এত কম হওয়ায় নিজের জয়টা তিনি উদযাপন করতে পারছেন না৷ তিনি মনে করেন অনেক ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাননি বলেই মাত্র ২৬.৭ ভাগ ভোট পেয়েছে তার দল৷
জার্মান নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
রোববারের জার্মান নির্বাচনে শীর্ষ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল৷ আর ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করেছে সিডিইউ/সিএসইউ৷ বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশের পর দলগুলোর সমর্থক ও নেতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Maja Hitij/Getty Images
এসপিডির আনন্দ
রোববার জার্মানির সময় সন্ধ্যা ছয়টায় বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের পর সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডির সমর্থকদের আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে৷ কারণ গতবারের চেয়ে এবার তাদের ভোট বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ৷ তবে তখনও এসপিডি শীর্ষ দল হতে যাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত ছিল না৷ সোমবার সকাল হওয়ার আগেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়৷ সাময়িক সরকারি ফল অনুযায়ী ২৫.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা, যা সিডিইউ/সিএসইউ দলের চেয়ে প্রায় দুই শতাংশ বেশি৷
ছবি: Maja Hitij/Getty Images
শলৎস চ্যান্সেলর হতে চান
এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শলৎস দলের ফলাফলে খুশি৷ তিনি নিশ্চিত যে তারই চ্যান্সেলর হওয়া উচিত৷ তিনি বলেন, অনেক ভোটারই এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তারা ‘সরকারে পরিবর্তন’ চান৷
ছবি: Lisa Leutner/AP/picture alliance
সিডিইউতে শোক
ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করেছে সিডিইউ/সিএসইউ৷ সাময়িক সরকারি ফলে দেখা যাচ্ছে দলটি এবার মাত্র ২৪.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ গতবারের চেয়ে প্রায় নয় শতাংশ কম৷
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
হার মানতে নারাজ লাশেট
এমন ফলের পর সিডিইউ/সিএসইউর চ্যান্সেলর প্রার্থী লাশেট বলেছেন, ‘‘ইউনিয়নকে ভোট দেয়া মানে বাম নেতৃত্ব গঠিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া৷ সে কারণে আমরা সিডিইউ/সিএসইউর নেতৃত্বে সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাব৷’’
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
সবুজ দলের রেকর্ড ফল
ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে এবার পরিবেশবাদী সবুজ দল৷ সাময়িক সরকারি ফল বলছে তারা এবার ১৪.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ ফলে তাদের ছাড়া জোট সরকার গঠন এবার প্রায় অসম্ভব৷
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
এফডিপি কিছুটা ভালো করেছে
গতবারের চেয়ে এবার প্রায় এক শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে ব্যবসাবান্ধব মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দল৷ এবার তাদের ভোট প্রাপ্তির হার ১১.৫ শতাংশ৷ ফলে তারা কিছুটা খুশি৷ সবুজ দলের মতোই নতুন জোট সরকারে তাদের প্রয়োজন হতে পারে৷
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture alliance
বাম দলে হতাশা
সাময়িক সরকারি ফল বলছে এবার মাত্র ৪.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে বাম দল৷ দলের প্রধান সুজানে হেনিশ-ভেলজো বলছেন, ‘‘আমরা অবশ্যই বাজেভাবে হেরেছি৷’’
ছবি: Cathrin Mueller/REUTERS
এএফডিও কিছুটা হতাশ
গতবার তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট (১২.৬ শতাংশ) পেয়েছিল অভিবাসনবিরোধী এই দলটি৷ এবার ১০.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছে তারা৷ দলের উপনেতা বেয়াট্রিক্স ফন স্টর্শের (মাঝে) মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে এই ফলে তারা কিছুটা হতাশ৷ তবে দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা টিনো ক্রুপালা (ডানে) এই ফলকে ‘সলিড’ বলছেন৷ সঙ্গে এটাও যোগ করেছেন, ‘‘অবশ্যই হার ব্যথাও দেয়৷’’
ছবি: Ronny Hartmann/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
নির্বাচনেআগ্রহবাড়ানোরউপায়কী?
রবার্ট ফেরকাম্প অবশ্য জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়ায় ভোটের হার কমতে দেখে মোটেই হননি৷ তিনি মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানি আরো কয়েকটি রাজ্যে ভোটারদের মাঝে নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ‘ট্রেন্ড' লক্ষ্য করা গেছে, সুতরাং নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়াতেও এমন হতেই পারে৷ তবে অধ্যাপক এবং নির্বাচন বিশ্লেষক ফেরকাম্পের মতে, ভোটারদের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনা গণতন্ত্রের স্বার্থেই জরুরি৷
ভ্রাম্যমানভোটকেন্দ্র
ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চারটি উপায় ভেবে বের করেছেন রবার্ট ফেরকাম্প৷ তার প্রথম প্রস্তাব- ভোটার যদি ভোটকেন্দ্রে আসতে না চায় তাহলে তার কাছেই চলে যেতে পারে ভোটকেন্দ্র, অর্থাৎ ভ্রাম্যমান ভোটকেন্দ্র চালু করা যেতে পারে যার মাধ্যমে ভোটারের বাড়ি বা কর্মস্থলে গিয়েও ভোট গ্রহণ করা সম্ভব৷
ভোটার হওয়ার বয়স ১৬ করা
ফেরকাম্প মনে করেন, ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করে দিলেও নির্বাচনে ভোটের হার বাড়বে৷ তার এই ভাবনা মোটেই বাস্তবতাবর্জিত নয়, কারণ, জার্মানির চারটি রাজ্য ইতিমধ্যে ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ করেছে৷
‘জোড়া' নির্বাচন
দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচন আর আঞ্চলিক নির্বাচন একসঙ্গে হলে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ে৷ তাই সব রাজ্যে ‘বান্ডেল ইলেকশন', অর্থাৎ একই দিনে জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টিও নীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখতে বলেছেন ফেরকাম্প৷
পোস্টাল ও ডিজিটাল ভোট
ফেরকাম্পের চতুর্থ প্রস্তাব ভোট কেন্দ্র, রাজ্য এমনকি দেশের বাইরে থাকা ভোটারও যাতে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে পোস্টাল এবং ডিজিটাল ভোটের ব্যবস্থা করা৷
ফ্রাঙ্ক ব্যোরনার মনে করেন ফেরকাম্পের প্রতিটি প্রস্তাবই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত, কারণ, ‘‘ডেমোক্রেসির ডেমোক্র্যাটদের খুব দরকার৷'' জনগণের জন্যই তো নির্বাচন, সুতরাং ভোটগ্রহণ যত বেশি ভোটারবান্ধব হবে, ততই ভালো৷
জার্মানিতে ব্যালট বাক্স থেকে সরকার গঠনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া
জনগণের ইচ্ছার ন্যায্য প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে জার্মানির নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে উঠেছে৷ অনেক নাগরিকেরও সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেই৷ এমনই কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Kalker
নেই আলাদা ভোটার তালিকা
জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সব মানুষকেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নাম নিবন্ধন করতে হয়৷ তাই সেই তালিকা থেকে শুধু জার্মান নাগরিকদের বেছে নিয়ে ডাকযোগে ভোট দেবার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়৷ জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে নির্ধারিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গেলেই ভোট দেওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Güttler
ডাকযোগে ভোট দেবার সুযোগ
ভোটার হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পেলে সশরীরে ভোট না দিলেও চলবে৷ কোনো কারণ না দেখিয়ে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগেভাগেই ভোট দেওয়া সম্ভব৷ যে সব জার্মান নাগরিক বিদেশে থাকেন, তারাও জার্মানিতে তাদের সর্বশেষ বাসস্থানের পৌরসভার মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট সংগ্রহ করতে পারেন৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/picture alliance
নাগরিকদের দুটি করে ভোট
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা দুটি করে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ প্রথমটি নির্বাচনি কেন্দ্রে সরাসরি প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের কোনো দলের জন্য৷ প্রার্থী ও দল ভিন্ন হলেও চলবে৷ দ্বিতীয় তালিকায় দলীয় সমর্থনের অনুপাতের ভিত্তিতে সংসদে অর্ধেক আসনে প্রার্থী স্থির করা হয়৷
ছবি: C. Ohde/blickwinkel/McPHOTO/picture alliance
‘বোনাস’ ভোটের জটিল হিসেব
ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯ জন স্থানীয় প্রার্থীর সরাসরি এবং দ্বিতীয় ভোটের ভিত্তিতে বাকি ২৯৯ জনের দলীয় মনোনয়ন অনুযায়ী সংসদে আসন পাওয়ার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে সংসদে সদস্যসংখ্যা ৫৯৮ ছাপিয়ে যায়৷ কোনো দল যদি শতকরা হিসেবে দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রথম ভোট পায়, তখন জটিল এক নিয়মের ভিত্তিতে সেই দল সংসদে কিছু বাড়তি আসন লাভ করে৷ তখন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাকি দলগুলিকেও বেশি আসন দিতে হয়৷
সব দল সংসদে স্থান পায় না
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানির গণতন্ত্রের দুর্বলতা কাটাতে সংবিধান প্রণেতারা অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলির ক্ষমতা সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ না পেলে কোনো দল সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে স্থান পায় না৷ তবে নির্বাচনি কেন্দ্রে কমপক্ষে তিনটি আসন পেলেও সংসদীয় দলের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Tim Brakemeier/dpa/picture alliance
ভোটগ্রহণের দিন রোববার
জার্মানিতে ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণত রোববারের দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়৷ নাগরিকেরা ছুটির দিনে নির্বিঘ্নে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হলে গণনা শুরু হয়৷ শিল্পোন্নত দেশ হয়েও জার্মানি নিরাপত্তার খাতিরে এখনো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে না৷ কাগজের ব্যালট গণনার পর দ্রুত ফলাফল জানতে অবশ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Stratenschulte
ভোটের ফল প্রকাশের পর জনগণ ‘ক্ষমতাহীন’
নির্বাচনি প্রচারের শেষে ভোট দেবার সময় পর্যন্ত ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী ও দলকে বেছে নিতে পারেন৷ তবে জার্মানিতে সাধারণত জোট সরকার ক্ষমতা গড়ে৷ নির্বাচনের পর আসনসংখ্যার বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী দল জোট গড়ার উদ্যোগ শুরু করে৷ সাধারণত প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর নির্দিষ্ট শরিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ দলীয় কর্মসূচি নিয়ে দরকষাকষির পর জোট সরকারের ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি স্থির হয়৷