নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, জার্মানিতে ততই বড় হয়ে উঠছে প্রচারণায় ভুয়া খবরের প্রভাব নিয়ে শঙ্কা৷ এক সমীক্ষা বলছে, অপপ্রচারের সবচেয়ে বড় শিকার একজন প্রার্থী এবং তিনি নারী৷
বিজ্ঞাপন
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর নতুন সংসদ এবং চ্যান্সেলর নির্বাচন করবে জার্মানি৷ আভাজ নামের এক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা বলছে, নির্বাচনের প্রচারণাকে ঘিরে ভুল তথ্য বা ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে ব্যাপক হারে৷ সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবরের শিকার সবুজ দলের চ্যান্সেলর প্রার্থী আনালেনা বেয়ারবক৷
আভাজ-এর গবেষকরা অসংখ্য ভুয়া খবর বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, রক্ষণশীল প্রার্থী আরমিন লাশেট, সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের প্রার্থী ওলাফ শলৎস-সহ অন্য সব প্রার্থীর চেয়ে ৭০ শতাংশেরও বেশি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে ৪০ বছর বয়সি বেয়ারবকের বিরুদ্ধে৷
আভাজ-এর ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর ক্রিস্টফ শট জানান, আনালেনা বেয়ারবক নির্বাচনি প্রচারণায় অনেক দেরিতে নেমেছেন, তারপরও তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারই সবচেয়ে বেশি৷ এর সম্ভাব্য কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তিনি নারী- এ কারণে তা হতে পারে, বা এমনও হতে পারে যে তিনি বেশ কিছু ‘কঠিন' ধারণা এবং বার্তা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন বলেই তাকে সহজে এসবের শিকার করা যাচ্ছে৷''
ভুয়া তথ্য বা খবর বুঝব কীভাবে?
গবেষণা বলছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে বিশ্বে অন্তত ৮০০ জন বা তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ ফলে খবর, তথ্য শেয়ারের সময় সতর্ক থাকতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে?
ছবি: Facebook
তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন
ভুয়া তথ্য ও খবর দ্রুত খুঁজে পাবার উপায় জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘ফুল ফ্যাক্ট’৷ ফেসবুকে কিছু শেয়ারের আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছে তারা৷
প্রথম প্রশ্ন
খবরটি কে দিয়েছে? প্রথমে নিজেকে এই প্রশ্নটিই করুন৷ সূত্র বিশ্বস্ত না হলে সেটা শেয়ার করবেন না৷ আর সূত্র নতুন হলে তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন৷
ছবি: imago images / ZUMA Press
দ্বিতীয় প্রশ্ন
কি যেন নেই? লিংকে ঢুকে পুরো খবরটা পড়ুন৷ ছবি, ব্যবহার করা নম্বর, কারও মন্তব্য এসব খেয়াল করুন৷ অনেক সময় সূত্রের উল্লেখ না করে মন্তব্য ব্যবহার করা হয় কিংবা কনটেক্সট ছাড়াই মন্তব্য দেয়া হয়৷ খবরের সঙ্গে থাকা ছবি কিংবা ভিডিও ভুয়া হতে পারে৷ ভিডিওতে ব্যবহৃত কণ্ঠ পরিবর্তিত থাকতে পারে৷
ছবি: Facebook/G.M. Masud Rana
তৃতীয় প্রশ্ন
খবরটি পড়ার পর আপনি কেমন অনুভব করছেন? যারা ভুয়া খবর ছড়ায় তারা মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে চায়৷ তারা জানে আপনাকে রাগিয়ে তুলতে পারলে কিংবা চিন্তিত করতে পারলে আপনি খবরটিতে ক্লিক করবেন৷ তাই শেয়ারের আগে নিজের অনুভূতিটা জানার চেষ্টা করুন৷ ভাল অনুভব করলে শেয়ার করুন৷ আর খটকা লাগলে অন্যান্য সূত্র দেখে যাচাইয়ের চেষ্টা করুন৷ ছবিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের শেয়ার করা একটি ভুয়া খবর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Facebook
ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট
ভারতের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘বুম লাইভ’কে বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে বিদ্যমান ছবি ও ভিডিওর যথার্থতা পর্যালোচনার দায়িত্ব দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে৷ www.boombd.com/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকেও (https://www.facebook.com/Boombangladeshnews) তাদের কাজ দেখা যায়৷
বিডি ফ্যাক্ট চেক
২০১৭ সালে কাজ শুরু করে এই ওয়েবসাইট (https://bdfactcheck.com/)৷ ফেসবুকেও তাদের একটি পাতা (https://www.facebook.com/bdfactcheck/) আছে৷ আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন, জনসভা ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করে বিডি ফ্যাক্ট চেক৷ এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভুয়া সংবাদ, ছবি কিংবা ভিডিও ভাইরাল হয় সেগুলোরও ফ্যাক্টচেক করে তারা৷
Fact খুঁজি
এটি বাংলাদেশের আরেকটি ফ্যাক্ট-চেক করা ওয়েবসাইট৷ http://factkhuji.org/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি তাদের একটি ফেসবুক পাতাও (https://www.facebook.com/factkhuji/) আছে৷
সতর্ক হন
করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসেই বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৮০০ জন বা তার চেয়েও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে ‘অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে৷ ফলে সামাজিক মাধ্যমে খবর বা তথ্য শেয়ারের আগে সবার একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/SOPA Images/A. K. Sing
8 ছবি1 | 8
ভুয়াখবরেরউদাহরণ
চ্যান্সেলর প্রার্থী হিসেবে আনালেনা বেয়ারবকের নাম ঘোষণার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় তিনি নাকি শিশুদের জন্য ঘরে সব ধরনের প্রাণী পোষা নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন৷ ভুয়া খবরটি চোখে পড়া মাত্রই সবুজ দলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়৷ পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়, খবরটি সর্বৈব মিথ্যা৷ কিন্তু অপপ্রচার তাতে থামেনি৷ নতুন নতুন ভুয়া খবর আসতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-প্রাভাবিত মূলধারার গণমাধ্যমে৷
ভুয়াখবরেরআশঙ্কাজনকবিস্তার
ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে সবুজ বা অন্য দলগুলোর পদক্ষেপ দৃশ্যত খুব বেশি কাজে আসছে না৷ আভাজ-এর সমীক্ষা বলছে, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রচার করা ভুয়া খবর খুব দ্রুতই কোনো-না-কোনোভাবে পৌঁছে যাচ্ছে বেশির ভাগ ভোটারের কাছে৷ অর্ধেকেরও বেশি ভোটার একটা ভুয়া খবর অন্তত পড়ছেন, শুনছেন বা দেখছেন- এমনটিও জানাচ্ছেন গবেষকরা৷
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ কিন্তু এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া তথ্য, মিথ্যা সংবাদ৷ ডয়চে ভেলে চেষ্টা করছে বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে আপনাদের সঠিক তথ্য জানানোর৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xiao Yijiu
শিশুদের আশঙ্কা কি বেশি?
শিশুদের নিয়ে আলাদা করে কোনো আশঙ্কা নাই৷ যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন৷ আক্রান্তদের পাঁচ জনের চারজনের ওপর এই ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের মতোই প্রভাব ফেলবে৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশু ও তরুণ বয়সিরা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ মধ্যবয়সিরা এতে আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত সেবা ও চিকিৎসায় তাদেরও সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ৷
ছবি: Reuters/A. Jalal
কী খেলে ঠেকানো যাবে করোনা?
কোনো কিছু খেয়েই করোনা ঠেকানো যাবে না৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য সুষম খাবার এমনিতেই প্রয়োজন৷ অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে৷ কেউ রসুন খাওয়ার কথা বলছেন, কেউ ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কথা বলছেন৷ রসুনে নানা উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো৷ রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে তা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক শরীরে গেলে তা করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷
ছবি: AFP/C. De Souza
গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা উচিত?
নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর পর গরম পানি পান করলে ভাইরাস মারা যাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷ মুখে বা শরীরে একবার ভাইরাস প্রবেশ করলে কোনো খাবার বা পানীয় দিয়েই তা আটকানো যাবে না৷ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম৷
ছবি: Colourbox/Haivoronska_Y
অ্যান্টিবায়োটিক বা কোনো ওষুধে কাজ হবে?
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর, ভাইরাসের জন্য নয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসুস্থ শরীরে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে৷ সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন৷ এখনো নভেল করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শিগগিরই হয়তো আসবে সুখবর৷
ছবি: imago/Science Photo Library
আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কোনো প্রভাব রয়েছে?
এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস মারা যায়৷ কিন্তু এত উচ্চ তাপমাত্রা কোনো দেশেই থাকে না৷ অনেকে মনে করছেন গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময় জরুরি৷ কিন্তু প্রচণ্ড গরম পানি দিয়ে স্নান করলেই তা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Lipinski
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কি করোনা ভাইরাস শনাক্ত সম্ভব?
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে তাপমাত্রা বোঝা সম্ভব, ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চত করা সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে কারো শরীরে জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যাবে না৷ সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ দিনের পরও ভাইরাস শরীরে কর্মক্ষম থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/P. Mikheyev
টাকার মাধ্যমে কী করোনা ছড়ায়?
শরীরের বাইরে করোনা ভাইরাস কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে৷ ফলে আমদানি করা কোনো পণ্য বা চিঠির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে৷ ময়লা টাকা থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷ ফলে টাকা লেনদেনের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত৷ যত বেশি সম্ভব হাত-মুখ-নাক-কানে হাত নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷
ছবি: DW
মশা বা অন্য পশুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল এক ধরনের বেড়াল থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ নভেল করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ ধারণা করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনো মাধ্যম হয়ে মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়েছে৷ তবে মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এটি আপনার মধ্যে ছড়াবে না৷ সতর্কতা হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়ার আগে ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ-মাংস বা পোচ করা ডিম থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Rose
কিভাবে থাকবো নিরাপদ?
সবচেয়ে জরুরি হাত পরিষ্কার রাখা৷ সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করতে হবে৷ যদি সাবান না থাকে, ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, হাত ধুয়ে নিন৷ অথবা হাতের কনুইয়ে মুখ ঢাকুন৷ হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি দিলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন অন্য়রা৷ হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানো ও কোলাকুলি থেকেও বিরত থাকুন৷
ছবি: AFP/N. Almeida
আমি কী মারা যাবো?
করোনায় আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন, এমন আশঙ্কা একেবারেই কম৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন৷ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন৷ অনলাইনে যা দেখবেন, সব বিশ্বাস না করে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সন্ধান করুন৷ সাবান, স্যানিটাইজার নিজে কিনে জমিয়ে রাখবেন না৷ আপনি নিরাপদ থাকলেও আপনার আশেপাশের মানুষ নিরাপদ না থাকলে সহজেই তার কাছ থেকে ছড়াবে ভাইরাস৷ ফলে নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও থাকার সুযোগ দিন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Moore
10 ছবি1 | 10
ভুয়াখবরেরমূলউৎস
উৎস মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম৷ ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, - বলতে গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সব প্ল্যাটফর্ম থেকেই ছড়ানো হচ্ছে ভুয়া খবর৷ গবেষকরা বলছেন, আজকাল যে কেউ ঘরে বসে যে কারো ছবি এডিট করে যা খুশি লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে তা-ই করা হচ্ছে৷
মূলধারারগণমাধ্যমেরভূমিকা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূতিকাগার হলেও ভুয়া খবর প্রচারে খুব বড় ভূমিকা রাখছে মূল ধারার গণমাধ্যম৷
আভাজ-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, সমীক্ষায় অংশ নেয়া প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন, মূল ধারার গণমাধ্যম যাচাই-বাছাই করে খবর প্রচার করলে ভুয়া খবরের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণ করা যেতো৷ কারণ, তাদের দাবি, তাদের কাছে যেসব ভুয়া খবর এসেছে সেগুলো তারা মূল ধারার গণমাধ্যমেই আগে দেখেছেন, শুনেছেন বা পড়েছেন৷
আভাজ-এর ক্যাম্পেই ডিরেক্টর ক্রিস্টফ শট মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো আলোচিত বা বিখ্যাত ব্যক্তির বিষয়ে যে কোনো খবর এলেই তা প্রচার করে দেয়া মূলধারার গণমাধ্যমের কাজ হতে পারে না৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই নানা বিষয়ে টুইট করতেন আর গণমাধ্যম তা প্রচার করতো, তাতেও মার্কিন গণমাধ্যম যথাযথভাবে গণমাধ্যমের দায়িত্ব পালন করেছে বলে তিনি মনে করেন না৷ তার মতে, সোশাল মিডিয়ার কোনো খবর গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে গণমাধ্যমের উচিত তা যাচাই করে ‘‘দায়িত্ব নিয়ে বৃহত্তর আঙ্গিক এবং বিশ্লেষণে ভুল তথ্য কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা সবাইকে ব্যাখ্যা করে বোঝানো৷''
যত গুজব বাংলাদেশে
পদ্মা সেতুতে লাগবে শিশুর মাথা, নিখোঁজ হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বেসিনে হারপিক ঢাললে মরবে এডিস মশা- এমন সব গুজব ছড়িয়েছে বাংলাদেশে৷ গুজবে কান দিয়ে জামায়াত নেতা সাঈদীকে চাঁদেও দেখেছিলেন কেউ কেউ৷
ছবি: bdnews24.com
পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে বলে যে খবর রটে যায়৷ এরপর সেতু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে জানান এটি গুজব৷
ছবি: bbc.com
চাঁদে সাঈদী
২০১৩ সালের মার্চে সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে বলে গুজব ছড়ানো হয়৷ এই খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির কর্মীরা দেশেজুড়ে তাণ্ডব চালায়, গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ৷
ছবি: banglareporter.com
নিখোঁজ স্যাটেলাইট
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিখোঁজ’ শিরোনামে একটি খবর বেনামী কিছু ওয়েবপোর্টাল ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে সরবারি ভাষ্যে এই খবরকে গুজব বলে নিশ্চিত করা হয়৷
ছবি: samakal.com
ডেঙ্গু প্রতিরোধে হারপিক
কমোডে বা বেসিনে হারপিক ও ব্লিচিং পাউডার ঢেলে এডিস মশা মারার একটি বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে বিশেষজ্ঞরা এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন৷ হারপিকের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও জানায়, এই তথ্যের কোনো সত্যতা নেই৷
ছবি: dw.com
হেফাজত
ঢাকার শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর অপারেশনে হেফাজতে ইসলামীর কর্মীদের মৃতের সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, গণমাধ্যমের সামনে ওই অপারেশন পরিচালিত হয়েছে, নিহতের ব্যাপারে যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা গুজব৷
ছবি: mobilenewsnetwork.wordpress.com
ছেলেধরা গুজব
পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজব ছড়িয়ে শিশুদের ধরে নেওয়া হচ্ছে বলে ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে পড়ে৷ ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ পরে এনিয়ে সতর্কবার্তা জারি করে সরকার৷ এই গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নত করে তাদের গ্রেপ্তার করে৷
ছবি: prothomalo.com
বিদ্যুৎ বন্ধ
ছেলেধরা গুজবের রেশ না কাটতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনদিন বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ম্যাসেঞ্জারেরর মাধ্যমে গুজব ছাড়িয়ে পড়ে৷ পরে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, এই খবরটি সঠিক নয়৷
ছবি: deshrupantor.com
মোটরযান আইন
সংশোধনী মোটরযান আইন অনুযায়ী জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ এক হাজার গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে৷ সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা ঠিক নয় বলে জানানো হয়৷
ছবি: Facebook/G.M. Masud Rana
ভুয়া নোট
এক পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্য পাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ছবি সম্বলিত নতুন ১০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে জানিয়ে সেই নোটের একটি ছবিও ছড়িয়ে যায় ফেসবুকে৷ পরে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় এই তথ্য ভুয়া৷
ছবি: somoynews.tv
ধর্ম অবমানার গুজব
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়৷ বাংলাদেশের আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷