পুরুষ মুরগি ডিম দেয় না৷ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় অনেক দেশেই জন্মের পরপরই মোরগ ছানাগুলোকে মেরে ফেলা হয়৷ গণহারে মোরগ ছানা হত্যা বন্ধ করতে আইন পাস হলো জার্মানিতে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ ঘোষণা করেছে, জার্মানিতে গণহারে মুরগির পুরুষ বাচ্চা মেরে ফেলা নিষিদ্ধ আইন আগামী ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে৷ মুরগি চাষ প্রক্রিয়া অমানবিক, অনৈতিক বলে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমালোচনা হচ্ছিল৷ পুরুষ মুরগি ডিম দেয় না, মাংসের জন্যও সেরা পছন্দ নয়, ফলে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় মুরগির খামারগুলোতে পুরুষ বাচ্চাগুলোকে জন্মের পরপরই হত্যা করা হয়ে থাকে৷
পোষা প্রাণীর মরদেহ দিয়ে সার তৈরি
কলম্বিয়ার মেদেয়িন শহরের ‘প্লেইয়া’ নামের এক কোম্পানি পোষা প্রাণী থেকে সার তৈরি করে৷ সেগুলো দিয়ে গাছও জন্মাচ্ছে তারা৷ এটি এক পরিবেশবান্ধব উপায় বলে দাবি তাদের৷
ছবি: Simon Echavarria
শুরুর কথা
ডেনিয়েল কোরেয়া ও মেলিসা নারানিয়ো কলম্বিয়ার মেদেয়িনের সিইএস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি মেডিসিনে পড়েছেন৷ তারা পশুর মরদেহ থেকে সার তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে থিসিস করেছেন৷ সেটাকেই তারা পরবর্তীতে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে ২০১৭ সালে ‘প্লেইয়া’ নামের এক কোম্পানি গঠন করেন৷ তারা পোষা প্রাণীর মরদেহ থেকে সার তৈরি করছে৷ সেই সারে নতুন গাছও জন্মাচ্ছে৷ বিশ্বের গুটি কয়েক কোম্পানি এই কাজ করছে৷
ছবি: Simon Echavarria
পরিবেশবান্ধব
কোরেয়া জানান, মৃতদেহ পোড়াতে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন হয়, যা থেকে কার্বন নির্গমন হয়৷ আর মরদেহ কবর দিলে তা থেকে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হতে পারে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মৃতদেহ ব্যাকটেরিয়া ও ফরমালডিহাইড দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করতে পারে৷ কিছু কফিনের বার্নিশও মাটিকে দূষিত করে৷ ছবিতে প্লেইয়া কোম্পানির গ্রিনহাউস দেখা যাচ্ছে যেখানে মরদেহ থেকে সার তৈরি ও তা দিয়ে উদ্ভিদ জন্মানো হয়৷
ছবি: Manuel Rueda
নতুন নয়
গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কৃষকরা মরদেহ অপসারণের খরচ কমাতে পশুপাখির মরদেহ থেকে সার তৈরি করছেন৷
ছবি: Manuel Rueda
পদ্ধতি
ছবিতে যেমন দেখছেন, প্রতিটি ঘরে একটি করে পোষা প্রাণীর মরদেহ আছে৷ মাটি আর কাঠের টুকরোর স্তূপের নীচে সেগুলো রাখা হয়েছে৷ সার তৈরির প্রক্রিয়া দ্রুত করতে মরদেহের উপর তরল ছিটিয়ে দেয়া হয়৷ এই তরলে ব্যাকটেরিয়া থাকে৷ মাটির কারণে মরদেহ থেকে পচা গন্ধ বের হতে পারেনা৷ এভাবে একটি কুকুর বা বিড়াল থেকে সার তৈরি করতে প্রায় দুই মাস লাগে৷ পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে একটি গ্রিনহাউসের মধ্যে৷
ছবি: Simon Echavarria
মালিককে টাকা দিতে হয়
প্লেইয়াতে ১০ জন কাজ করছেন৷ প্রতিমাসে তারা প্রায় দুশ’ পশু সংগ্রহ করেন৷ পশুর ওজন ও সেবাভেদে পোষা প্রাণীর মালিকদের কাছ থেকে ৫০ (চার হাজার ২৩৫ টাকা) থেকে দেড়শ ডলার (১২ হাজার ৭০৫ টাকা) নেয় প্লেইয়া৷ ছবিতে প্লেইয়ার এক গ্রাহককে তার পোষা কুকুর ললিতার মরদেহ থেকে তৈরি সার দিয়ে জন্মানো গাছের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷ গাছের সঙ্গে ললিতার ছবিও রাখা আছে৷
ছবি: Simon Echavarria
সেবার ধরন
দুই ধরনের সেবা আছে৷ এক, মালিকরা তাদের পোষা প্রাণী থেকে পাওয়া সার দিয়ে প্লেইয়ার মেমোরিয়াল গার্ডেনে গাছ উৎপাদন করতে দিতে পারেন৷ কিংবা তারা চাইতে পারেন যে, ঐ সার দিয়ে জন্মানো একটি গাছ টবসহ তাদের কাছে পাঠানো হোক (ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে)৷ এই সেবাটিই বেশি জনপ্রিয়৷
ছবি: Manuel Rueda
মানুষের মরদেহ থেকে সার
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্য প্রশাসন মানুষের মরদেহ থেকে সার তৈরির অনুমোদন দেয়৷ ‘রিকম্পোজ’ নামে এক কোম্পানি এই অনুমোদনের জন্য লবি করেছিল৷ তাদের দাবি, মরদেহ কবর দেয়া বা পুড়িয়ে না ফেলে সার তৈরি করলে এক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমানো যায়৷ ছবিতে শিল্পীর চোখে রিকম্পোজ কোম্পানির সার তৈরির জায়গা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সেবার মূল্য
মরদেহ থেকে সার তৈরি করতে চার লাখ ৬৬ হাজার টাকা নেয় রিকম্পোজ৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন তাদের দেহ থেকে সার তৈরির জন্য নিবন্ধন করেছেন৷ সার তৈরির পর তা গ্রাহকের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে কিংবা রাজ্যের কোনো নেচার রিজার্ভে পাঠানো হবে৷ কলোরাডো ও ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য প্রশাসনও এমন অনুমোদন দেয়ার কথা ভাবছে৷ ছবিতে গরুর মরদেহ থেকে তৈরি উপাদান দেখাচ্ছেন রিকম্পোজের সিইও ক্যাটরিনা স্প্যাড৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Thompson
8 ছবি1 | 8
গণহারে মুরগির পুরুষ বাচ্চা হত্যা নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জার্মানির কৃষিমন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনার৷ বাচ্চা মোরগ হত্যা করাকে ‘অমানবিক' ও গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বার্থে প্রাণী সুরক্ষাকে গুরুত্ব না দেয়ার বিষয়ে ২০১৯ সালে জার্মান প্রশাসনিক আদালত এক রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে৷
মুরগির পুরুষ ছানার জন্ম রোধ করতে জার্মান কৃষকদের এখন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে, যাতে ভ্রুণেই লিঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব হয়৷
প্রতি বছর শুধু জার্মানিতেই মুরগির প্রায় সাড়ে চার কোটি পুরুষ বাচ্চাকে হত্যা করা হয়৷ প্রাণী সুরক্ষা কর্মকর্তারা একে ‘চিক শ্রেডিং' বা মুরগির ছানা জবাইবলে অভিহিত করেছেন৷