জার্মানিতে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা নিয়ে বিতর্ক
১৮ এপ্রিল ২০২৩
জার্মানিতে শেষ তিন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হলো। তারপরই এনিয়ে শুরু রাজনৈতিক বিতর্ক।
বিজ্ঞাপন
সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়েছিল ২০১২ সালে সাবেক চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সময়ে। ঠিক হয়েছিল, ২০২২ সালে জার্মানির সব পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সেই সময়সীমা বহাল রাখা সম্ভব হয়নি।
বামপন্থি ও বামমনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক নেতারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু রক্ষণশীল ও শিল্পবাণিজ্যপন্থি রাজনীতিকরা আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন।
কী বলছেন জার্মান রাজনীতিকরা?
গ্রিন পার্টি এই সিদ্ধান্তের বড় সমর্থক। দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর নেতা রিকার্ডা ল্যাং বলেছেন, ''এর ফলে আমরা রিনিউয়েবল এলার্জির নবায়নযোগ্য বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির জগতে প্রবেশ করলাম। এখন জার্মানির বিদ্যুতের অর্ধেক এখান থেকেই আসে।''
জ্বালানি সংকট : আলো নিভিয়ে ‘ভালো’ করছে জার্মানি
জার্মানির শহরগুলোতে রাতে বাতি নিভিয়ে রাখা শুরু হয়েছে৷ তাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় কিছু ভবনও ঢেকে যাচ্ছে আঁধারে৷ তবে আঁধার নামিয়ে শুধু বিদ্যুৎ বাঁচানো হচ্ছে না, মানুষের শরীর আর জলবায়ুও উপকৃত হচ্ছে৷
ছবি: Paul Zinken/dpa/picture alliance
আলো মানুষের ক্ষতিও করে
পর্যাপ্ত আলোর মতো স্বাভাবিক জীবনের জন্য সবার পর্যাপ্ত অন্ধকারও দরকার৷ বিভিন্ন গবেষণা এবং সমীক্ষায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত কৃত্রিম আলো চোখের ক্ষতি করে, অনিদ্রা, অবসাদ ও শারীরিক স্থুলতা বাড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO/ADR
কৃত্রিম আলো গাছ ও অন্য প্রাণীদেরও ক্ষতি করে
গাছ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও কৃত্রিম আলোয় নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে৷প্রবালের স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতা ব্যাহত করে কৃত্রিম আলো৷ সদ্যোজাত কচ্ছপছানারা আলোর ছটায় দিকভ্রান্ত হয়ে সাগরে না নেমে ডাঙার দিকে যেতে যেতে মারা যায়৷ আলোয় পোকামাকড়ের জীবনও বিপন্ন হয়৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি বছর গ্রীষ্মের সময় এই কৃত্রিম আলোর কারণে শুধু জার্মানিতেই ১০০ বিলিয়ন, অর্থাৎ এক হাজার কোটি নিশাচর পোকা মারা যায়৷
ছবি: Maria Alejandra Cardona/REUTERS
অকারণে জ্বলে এক তৃতীয়াংশ আলো
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডার্ক-স্কাই অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ঘরের বাইরে রাতে যে পরিমান আলো জ্বলে তার এক তৃতীয়াংশই অলাভজনক, অর্থাৎ ওসব জ্বালিয়ে আসলে কোনো লাভ হয় না৷ ডার্ক-স্কাই অ্যাসোসিয়েশন জ্বালানি সংকট শুরুর অনেক আগেই বলেছিল, অপ্রয়োজনীয় আলো নিভিয়ে রাখলে বছরে কমপক্ষে ৩০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে এবং পাশাপাশি জলবায়ুর ক্ষতিকর পরিবর্তনও হ্রাস পাবে৷
ছবি: Nigel Stripe/Zoonar/picture alliance
সংকটে বোধোদয়
বিজ্ঞানীদের কথায় সারা বিশ্ব এতদিন কান না দিলেও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়ায় সবার টনক নড়েছে৷ অনেক দেশই এখন কৃত্রিম আলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে৷ ফ্রান্স ইতিমধ্যে জানিয়েছে, আইফেল টাওয়ারের আলো এখন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত জ্বলবে না৷ অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আরো কিছু ভবনের আলো একটু দেরিতে জ্বালিয়ে একটু আগে নিভিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷
ছবি: Geoffroy Van Der Hasselt/AA/picture alliance
একই পথে জার্মানি
জার্মান সরকার রীতিমতো ‘এনার্জি সেভিং অর্ডিন্যান্স’ জারির মাধ্যমে সারা দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে৷ এ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে রাতে সিটি হল, জাদুঘর, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন ভবনের বাইরের আলো জ্বালানো নিষেধ৷ দিনে নিওন সাইনও জ্বলবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত৷
ছবি: Sabine Gudath/IMAGO
রাজধানীর বড় অংশেই আঁধার
রাজধানী বার্লিনের অন্তত ২০০ বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনসহ অনেক জায়গায় রাতে এখন আর আলো জ্বালানো হয় না৷ ভিক্টোরিয়া কলাম, বার্লিন ক্যাথেড্রালের মতো ভবনেও এখন সূর্য ডোবার পর আর আলো জ্বলে না৷
ছবি: Paul Zinken/dpa/picture alliance
ভাইমারের রাস্তার আলোও কম জ্বলে
জার্মানির মধ্যাঞ্চলের শহর ভাইমারের বিভিন্ন ভবন তো বটেই, এমনকি রাস্তার আলোও আগের মতো সারা রাত জ্বলে না৷ অর্ডিন্যান্স জারির আগেই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রাস্তার আলো সন্ধ্যার আঁধার নামার ৩০ মিনিট পরে জ্বালিয়ে সূর্যোদয়ের ৩০ মিনিট আগে নেভানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে নগর কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Michael Reichel/dpa/picture alliance
7 ছবি1 | 7
দলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ''২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানির ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ এই উৎস থেকেই আসবে। এর ফলে পরিবেশ রক্ষা পাবে এবং অর্থনীতির ভিত শক্ত হবে এবং মানুষ ভালো কাজ পাবে।''
জার্মান চ্যান্সেলর শলৎসের দল এসপিডি জানিয়েছে, ''পরমাণু বিদ্যুৎকে বিদায়। অনিশ্চিত, অপরিষ্কার, আর্থিক দিক থেকে অলাভজনক শক্তিনীতিকেও বিদায়।''
কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন জোটের শরিক এফডিপি বলেছে, তারা এই সিদ্ধান্তে একেবারই খুশি নয়। দলের নেতা ও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি যদি তার হাতে থাকত, তবে তিনি তিনটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বন্ধ হতে দিতেন না।
রক্ষণশীল সিএসইউ জানিয়েছে, ''এটা জার্মানির কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত হবে।''
সিডিইউ জানিয়েছে, ''এই তিনটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল সবচেয়ে নিরাপদ ছিল।''