জার্মানিতে এক গবেষণায় উদ্বেগজনক তথ্য বেরিয়ে এসেছে– দেশটিতে ২০০৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাখির সংখ্যা ১৫ শতাংশ কমেছে৷ কেন এভাবে পাখি কমে যাচ্ছে তা নিয়েও চলছে গবেষণা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির প্রকৃতি এবং প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গোষ্ঠী নাবু-র এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানিতে পাখির সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে৷ ২০১৭ সালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, আগের বারো বছরে ১ কোটি ২৭ লক্ষ প্রজননক্ষম পাখির জোড়া উধাও হয়ে গেছে৷
নাবু'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিপন্ন নয় এমন প্রজাতির পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে৷ এসবের মধ্যে রয়েছে স্টারলিং, চড়ুই, ফিঞ্চ, গোল্ডক্রেস্টস, ভরতপক্ষী এবং ইয়েলোহ্যামারস পাখি৷ অন্যদিকে যেসব পাখি বিপন্নের তালিকায় রয়েছে, সেগুলোর সংখ্যা আবার সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে, কেননা, সেগুলো রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
পাখির পাশাপাশি উড়ন্ত কীটপতঙ্গের হারও কমে যাচ্ছে৷ গবেষণা বলছে, ২০১৭ সালের আগে ২৭ বছরে কীটপতঙ্গের সংখ্যা কমেছে ৭৬ শতাংশ৷ তবে ঠিক কী কারণে, পাখি এবং কীটপতঙ্গ এভাবে কমে যাচ্ছে তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না গবেষকরা৷ এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে দোষ দেয়া যাচ্ছে না, কেননা, উষ্ণ তাপমাত্রা পাখি এবং কীটপতঙ্গের জন্য ইতিবাচক৷
বাংলাদেশে কেমন আছে পাখিরা
‘চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা, কোথায় উজল এমন ধারা...তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি, পাখির ডাকে জেগে৷’ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কালজয়ী এ গানের মতোই বাংলাদেশের গ্রাম-বাংলা পাখির কলকাকলিতে মুখর ছিল একসময়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশের পাখি
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৬৫০টি৷ এর মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত৷ অবশিষ্ট ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়, বাকি ১৪৩ প্রজাতি অনিয়মিত দেখা যায়৷ নিয়মিত ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের ‘আবাসিক’ এবং ১৭৬ প্রজাতি ‘পরিযায়ী’ পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল৷ দেশের সব জায়গাতেই পাখিটি দেখা যায়৷ গাছের প্রাকৃতিক খোঁড়লে কিংবা ঝোঁপঝাড়ে এরা বাসা বাঁধে৷ ছোট এ পাখিটির ইংরেজি নাম ওরিয়েন্টাল ম্যাগপাই রবিন আর বৈজ্ঞানিক নাম ‘কপসিকাস সলারিস’৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি
তীব্র শীত ও খাদ্যাভাব থেকে বেঁচে থাকার জন্য শীত মৌসুমে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিযায়ী পাখিরা সাময়িকভাবে আবাস গড়ে৷ বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর মাসে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে এবং এপ্রিল মাস পর্যন্ত থাকে৷ বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির সবচেয়ে বড় কয়েকটি আবাস হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল ও হাকালুকি হাওর, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, ফেনীর মুহুরি সেচ প্রকল্প ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
লোকালয়ের পাখি
বাংলাদেশের লোকালয়ের আশপাশে কিছু পাখি সচরাচর দেখা যায়৷ দোয়েল, শালিক, কাক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ বাংলাদেশের সব জায়গাতেই এসব পাখি প্রচুর দেখা যায় এখনো৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বনের পাখি
বাংলাদেশের বনাঞ্চলে বেশ কিছু পাখি দেখা যায়, যেগুলো সাধারণত লোকালয়ে দেখা যায় না৷ এ ধরনের পাখির মধ্যে ধনেশ, পাহাড়ি ময়না, মদনা টিয়া, লালবুক টিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যানগুলোতে এসব পাখির দেখা মেলে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
উপকূলীয় পাখি
বাংলাদেশের উপকূল ও চরাঞ্চলে নানা রকম পাখি দেখা যায়৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গাঙচষা, বিভিন্ন প্রজাতির গাঙচিল, পানচিল, বাটান, গুলিন্দা উল্লেখযোগ্য৷ উপকূলীয় পাখি বিভিন্ন আবাসস্থলের মধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়ায় দমারচর, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ, পটুয়াখালীর সোনারচর ও ভোলার চরকুকরিমুকরি উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জলাশয়ের পাখি
বাংলাদেশের সব এলাকার জলাশয়গুলোতে প্রায় সারা বছরই দেখা যায় কিছু পাখি৷ খাবারের খোঁজে এসব পাখি জলাশয়ে ঘুরে বেড়ায়৷ নানারকম বক, পানকৌড়ি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পোষা পাখি
বাড়িতে অনেকেই পাখি পোষেন৷ পোষা পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিদেশি ঘুঘু, কবুতর, বাজরিগার, কাকাতুয়া, লাভ বার্ডসহ নানা রকমের পাখি৷ পোষা পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাজরিগার, কাকাতুয়া আর লাভ বার্ডের৷ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকে ময়না, টিয়া, দেশি ঘুঘু ইত্যাদিও খাঁচায় পুষে থাকেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পোষা পাখির বাজার
বাংলাদেশে পোষা পাখির সবচেয়ে বড় বাজার ঢাকার কাঁটাবনে৷ এখানকার শতাধিক দোকানে বিক্রি হয় নানা রকম খাঁচার পোষা পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বনের পাখি বিক্রি
বন্যপ্রাণি আইনে বনের পাখি বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও খোদ ঢাকাতেই বিক্রি হয় বনের পাখি৷ অনেকে খাঁচায় পোষার জন্য কেনেন এসব পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখি শিকার
বন্যপ্রাণী আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না থাকার কারণে বাংলাদেশে পাখি শিকার হরহামেশাই হয়ে থাকে৷ গ্রামে গ্রামে পাখি শিকারের অন্যতম হাতিয়ার এয়ারগান৷ এছাড়া বিভিন্ন রকম ফাঁদ, বিষটোপ দিয়েও প্রচুর পাখি শিকার করা হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখি যখন খাবার
খাবার জন্য বনের পাখি শিকার নিষিদ্ধ৷ তবে বাংলাদেশে অনেকেই ফাঁদ পেতে পাখি ধরেন মাংস খাওয়ার জন্য৷ আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এসব পাখি বিক্রিও হয় বিভিন্ন জায়গায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
12 ছবি1 | 12
গবেষকরা মনে করছেন, পাখি এবং কীটপতঙ্গের হার কমার সঙ্গে আধুনিককালের বড় কৃষি প্রকল্পের সংযোগ থাকতে পারে৷ উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে, কৃষকরা যে কীটনাশক ব্যবহার করেন, তা পাখি এবং কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ মোটের উপর একই জমিতে ক্রমাগত কৃষিকাজ করায় এবং আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ানোয় পাখিদের জন্য প্রয়োজনীয় ঝোঁপঝাড়ও কমে যাচ্ছে৷
নেদারল্যান্ডসের রেডবাউড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাস্পার হলমান মনে করেন, ‘‘যেসব পাখি কৃষিজমির আশেপাশে বসবাস করে, সেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ কৃষি জমিতে আধুনিকতার ছোঁয়া সম্ভবত পাখির হার দ্রুতহারে কমার কারণ৷''
জার্মানির কৃষকদের অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য পাখি কমার পেছনে কৃষিজমিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকে দায়ী করতে রাজি নয়৷ অ্যাসোসিয়েশেন এক মুখপাত্র মনে করেন, এই বিষয়ে আরো গবেষণা না করেই কৃষকদের দায়ী করা ঠিক হবে না৷
তবে দায় যারই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে, কীটপতঙ্গ এবং পাখির সংখ্যা কমছে৷ আর এগুলো কমতে থাকলে তা কৃষিখাতের জন্যও কোনো সুখবর নয়, কেননা, ফসলের পরাগায়ন যে সেগুলোর মাধ্যমেই ঘটে!
ফাবিয়ান স্মিডট/এআই
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷