জার্মানির হানাও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে এবার পাল্টা হামলার আশংকা করছে পুলিশ৷ দেশটির মসজিদগুলোতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে উগ্র-ডানপন্থি বন্দুকধারীর হামলার পর এবার প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ যা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিচ্ছে তারা৷ জার্মান গণমাধ্যম ফুঙ্কা মিডিয়া গ্রুপের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে৷
তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে তারা বলছে, উগ্র বামপন্থিরা পরবর্তী হামলাটি ঘটাতে পারে৷ এমনকি উগ্র ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) সদস্যদের উপর সহিংসতা হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে৷
তবে, জার্মানির তৃতীয় বৃহৎ গণমাধ্যমটিকে তাদের সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে প্রতিশোধমূলক হামলার নির্দিষ্ট কোন হুমকি নেই৷ তবে এই আশঙ্কাও তারা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না৷
সরকারি তদন্তকারীদের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মসজিদগুলো পরবর্তী উগ্র ডানপন্থি হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্য হতে পারে৷ আর তা ঠেকাতে মসজিদগুলোর সামনে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হবে বলে শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সেহোফার৷
জার্মানিজুড়ে হানাওয়ে নিহতদের স্মরণ
জার্মানির নানা প্রান্তে হানাও হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণ করা হয়েছে৷ বুধবার রাতে উগ্র ডানপন্থি এক ব্যক্তির বন্দুক হামলায় প্রাণ হারান দশ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
শোক জানালেন প্রেসিডেন্ট
জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার শ্টাইনমায়ার ও তার স্ত্রী এলকে ব্যুডেনবেন্ডার হানাও শহরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের পাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান৷ এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন হেসে রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ফোল্কার বোফিয়ার৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
হানাও শহরে শ্রদ্ধা
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও শোক জানাতে হানাও শহরে জড়ো হয়েছিলেন শহরটির বাসিন্দারাও৷ টোবিয়াস আর নামের এক ব্যক্তিকে এই হত্যার পেছনে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ নিহতদের বেশিরভাগই বিদেশি বংশোদ্ভূত৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Hertzog
বার্লিনে শোক
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনের সড়কে শত শত জার্মান হাতে মোমবাতি নিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷
ছবি: DW/F. Hoffmann
শোকের ছায়া উৎসবেও
বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও পড়েছে শোকের ছায়া৷ নিহতদের স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা৷
ছবি: AFP/T. Schwarz
ঐক্য, সংহতির ডাক
জার্মানির দক্ষিণের শহর স্টুটগার্টে শহরে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেন মানববন্ধন ও শোভাযাত্রায়৷ সেসব প্ল্যাকার্ডে শোভা পাচ্ছিলো ‘বর্ণবাদের স্থান নেই’ এবং ‘ঘৃণা কোনো মত নয়’৷ অনেকেই মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে জার্মানির রাজনৈতিক লড়াই শিথিল হয়ে এসেছে৷ এজন্য মূলত দায়ী করা হয় উগ্র ডানপন্থি দল এএফডিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
মিউনিখে সংহতি
ছবিতে তুরস্কের পতাকা গায়ে একজনকে দেখা যাচ্ছে৷ হানাও হত্যাকাণ্ডে নিহত নয় জনের মধ্যে পাঁচ জনই তুর্কি-বংশোদ্বূত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
একতাই শক্তি
হামবুর্গ শহরেও শোক জানিয়েছেন জনগণ৷ ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘রক্ষা করতে হবে সংহতি’৷
ছবি: J. Große/imago images
7 ছবি1 | 7
এদিকে ব্যক্তিগত বন্দুকের মালিক এবং আবেদনকারীদের মানসিক পরীক্ষার দাবি তুলেছে দুইটি দল৷ সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হেলগা লিন্ড বলেছেন, ‘‘আমাদের অস্ত্র আইন সংস্কার করা প্রয়োজন কীনা হানাও এর সহিংসতার পর সেটি জোর দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে৷’’
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডি ভেল্টকে তিনি বলেন, ‘‘যদি কর্তৃপক্ষ অস্ত্রের মালিকদের মানসিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি যথাযথভাবে পরীক্ষা করতে না পারে তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই সে অনুযায়ী আইন সংশোধন করতে হবে৷’’
আর সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কেউ অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে তাকে মানসিক পরীক্ষা দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷ একই কথা বলেছেন গ্রিন পার্লামেন্টারি গ্রুপের অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক মুখপাত্র ইরিনে মিহালিচ৷ তিনি জানান, শারীরিক, মানসিক প্রবণতা বিবেচনা করে যোগ্যদেরই অস্ত্রের অনুমতি দেয়া হবে এমন লক্ষ্য তাদের৷
বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে ভাবতে শুরু করেছে সরকার৷ জার্মান সংবাদপত্র বিল্ডকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সেহোফার বলেছেন তিনিও অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য বাড়তি মানসিক পরীক্ষার নিয়মের পক্ষে৷ যাতে করে এটি নিশ্চিত করা যায়ে যে অস্ত্রধারী সাধারণ মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না৷
উল্লেখ্য, বুধবার ৪৩ বছর বয়সি এক জার্মান নাগরিক হানাওয়ের দুইটি শিশাবারে হামলা চালিয়ে আট বিদেশি বংশদ্ভূতকে হত্যা করেন৷ পরবর্তীতে হামলাকারী এবং তার মায়ের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
এফএস/এআই (এএফপি)
জার্মানিতে নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসলিমরা
জার্মানির হেসে রাজ্যের হানাও শহরে দক্ষিণপন্থি সন্ত্রাসীর গুলিতে নয় জন মারা গেছেন৷ দু’দিন আগেই নাশকতার পরিকল্পপনা করা কয়েকজন দক্ষিণপন্থিকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ মুসলিম সমাজ সরকারের কাছে নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
বারে গুলি
১৯ ফেব্রুয়ারি জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে হানাও শহরের একাধিক স্থানে হামলায় নয়জন প্রাণ হারান৷ পরে হামলাকারী ও তার মা-কে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/R. Orlowski
নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসলিমরা
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জার্মানিতে মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মহাসচিব আবদাসসামাদ এল ইয়াজিদি বলেন, মুসলিমরা ‘খুবই অনিরাপদ’ বোধ করছেন৷ তিনি বলেন, দক্ষিণপন্থার এমন উত্থান আগে কখনো দেখা যায়নি৷
ছবি: imago images/IPON
দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা
এই ঘটনার দু’দিন আগে জার্মান পুলিশ দেশটির ছয় রাজ্যে ১৩টি স্থানে অভিযান চালিয়ে এক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে৷ অভিযোগ রয়েছে, এরা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আশ্রয়প্রার্থী ও মুসলিমদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন৷ তারা চেয়েছিলেন জার্মানিতে একটি গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stein
নাশকতা পরিকল্পনার মূল হোতা পাঁচ উগ্র ডানপন্থি
জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ ঘটনার তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলেন পাঁচ জন উগ্র ডানপন্থি সন্ত্রাসী৷ বাকিরা এদের অর্থ জোগাচ্ছিলেন৷ এদের সবাই জার্মান ও পুরুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
অস্ত্রের খোঁজে
যে ছয় রাজ্যে অভিযান চালানো হয় তা হলো: বাডেন-ভ্যুটেমব্যার্গ, বাভেরিয়া, লোয়ার স্যাক্সনি, নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া, রাইনল্যান্ড-পালাটিনাটে এবং স্যাক্সনি-আনহাল্ট৷ দলটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ পুলিশ সম্ভাব্য হামলায় ব্যবহার করার অস্ত্রেরও খোঁজ করছে৷ জার্মান গণমাধ্যম জানিয়েছে, তারা হাতে তৈরি অস্ত্র ও হামলার আইডিয়া সম্বলিত ছবি পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
মসজিদে নিরাপত্তা চান মুসলিমরা
ডানপন্থি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের পর মুসলিমরা মসজিদগুলোকে সুরক্ষিত করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ জার্মান মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে আইজিএমজি-র চেয়ার আইমান মাজিয়েক পত্রিকা ড্যের স্পিগেলকে বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রের ভাবা উচিত৷’’ যেসব জায়গায় আগেও হামলা হয়েছে সেগুলোতে, বিশেষ করে পুলিশের উপস্থিতি জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: Imago Images/M. Schüler
বছরে একশ’ হামলা
জার্মানির বিভিন্ন মসজিদে বছরে প্রায় একশ’ হামলার ঘটনা নিবন্ধিত হয় বলে জানিয়েছে দেশটির মসজিদগুলোর সবচেয়ে বড় অ্যাসোসিয়েশন ডিটিব৷ গত কয়েক সপ্তাহে উনা, হাগেন, এসেন ও বিয়েলফেল্ডের মসজিদগুলোতে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
উগ্র ডানপন্থার উত্থান
গত জুনে ভাল্টার ল্যুবকে নামের এক রাজনীতিককে হত্যা এবং হালেতে একটি সিনাগগে হামলার ঘটনায় জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে সবার টনক নড়েছে৷ সম্প্রতি সামাজিক গণমাধ্যমে বেশ কিছু পোস্টও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷