1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে প্রতি ২৫ জনে একজন আশ্রয়প্রার্থী

৫ জুলাই ২০২৫

জার্মানিতে ২০২৪ সালে স্বীকৃত আশ্রয়প্রার্থী ও সুরক্ষার নিশ্চিত অধিকার পাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩ লাখ৷ এর মধ্য দিয়ে জার্মানির জনসংখ্যা বেড়েছে চার দশমিক এক ভাগ৷

বার্লিনের পুরাতন টেগেল বিমানবন্দর
জার্মানির বার্লিনের পুরাতন টেগেল বিমানবন্দরকে বানানো হয়েছে শরণার্থী আশ্রয়কেন্ত্র৷ সেখানে আশ্রয়প্রার্থীরা খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন৷ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance

রক্ষণশীলদের নেতৃত্বে থাকা দেশটির নতুন সরকার এই সংখ্যাটি কমাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল রেজিস্টার অফ ফরেইন ন্যাশনালস জানিয়েছে, ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সুরক্ষা মর্যাদা পাওয়া মানুষের সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় অন্তত এক লাখ ৩২ হাজার বেড়েছে৷ এই পরিসংখ্যানে আশ্রয়প্রার্থী এবং অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা পাওয়া মানুষদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷

জার্মানির ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য বলছে, ৩৩ লাখ স্বীকৃত শরণার্থীর মধ্যে ইউক্রেন থেকে আসা ১০ লাখেরও বেশি যুদ্ধ শরণার্থী রয়েছেন৷ সিরীয়দের সংখ্যা সাত লাখ ১৩ হাজার৷ আফগানিস্তানের নাগরিকদের সংখ্যা তিন লাখ ৪৮ হাজার৷ ইরাকি আছেন এক লাখ ৯০ হাজার৷ তুরস্কের নাগরিকের সংখ্যা এক লাখ ৫৭ হাজার৷ আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা দুই লাখ ৭৭ হাজার৷ তাদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক এসেছেন সোমালিয়া, ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়াসহ হর্ন অফ আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলো থেকে৷

পরিসংখ্যান বলছে, আট কোটি ৩৩ লাখ মানুষের দেশ জার্মানির প্রতি ২৫ জনে একজন আশ্রয়প্রার্থী৷ তবে, জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য বা অঞ্চল ভেদে এই সংখ্যার তারতম্য হতে পারে৷

শরণার্থীদের মধ্যে তারুণ্যের আধিক্য

পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানিতে অবস্থানরত শরণার্থীরা জার্মানদের তুলনায় তরুণ৷ কারণ, ২০২৪ সালে শরণার্থীদের গড় বয়স ছিল ৩২ বছর৷ জার্মানির মোট জনসংখ্যার গড় বয়স ৪৫ বছর ছয় মাস৷

জার্মানিতে ইউক্রেনীয়দের গড় বয়স ৩৫ বছর৷ সিরিয়ান এবং আফগান শরণার্থীদের গড় বয়স যথাক্রমে ২৮ এবং ২৭ বছরের একটু কম৷

স্বীকৃত শরণার্থীদের অন্তত ৪৫ শতাংশ নারী৷ ইউক্রেনীয়দের মধ্যে নারীর সংখ্যা অন্তত ৬০ ভাগ৷ কারণ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় পুরুষেরা দেশ ছাড়েননি বা তাদের ছাড়তে দেয়া হয়নি৷

পরিসংখ্যান আরো বলছে, জার্মানিতে স্বীকৃত শরণার্থীদের চার ভাগের এক ভাগ ১৮ বছরেরও কম বয়সি শিশু এবং কিশোর-কিশোরী৷

জার্মানির ভিসায় কড়াকড়ি বাড়ছে: যা যা জানা দরকার

01:17

This browser does not support the video element.

ইউরোপে সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থী জার্মানিতে

৩৩ লাখ শরণার্থীর মধ্যে ৮২ শতাংশের বা ২৭ লাখের বেশি মানুষের জার্মানিতে বসবাসের অনুমতি রয়েছে৷ আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছেন চার লাখ ২৭ হাজার জন৷

এক লাখ ৭১ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷ তাদের দেশ ছেড়ে যেতে বলা হলেও তারা এখনও জার্মানিতেই রয়েছেন৷ এ সব ক্ষেত্রে জোরপূর্বক নির্বাসন বা স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন করতে এক মাস থেকে বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে৷

আরো এক লাখ ৩৬ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে তথাকথিত সহনশীলতা বা ডুলডুং-এর আওতায় জার্মানিতে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ মূলত এসব আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হয়নি৷ কিন্তু শারীরিক অবস্থাসহ বিশেষ বিবেচনায় তাদের প্রত্যাবাসন না করে জার্মানিতে অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে৷

আশ্রয়নীতিতে বড় পরিবর্তন চান চ্যান্সেলর ম্যার্ৎস

রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল সিডিইউ/সিএসইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস মাস দুয়েক আগে জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়েছেন৷ ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আশ্রয় ইস্যুতে কঠোর হয়েছেন তিনি৷ শরণার্থীর সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে বেশ মনোযোগী তার সরকার৷

জার্মানিতে সুরক্ষা চাওয়া বেশিরভাগ মানুষ মূলত স্থল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশটিতে আসেন৷ জার্মানির সঙ্গে সেসব দেশেরই সীমান্ত রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড ছাড়া অন্য দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য৷ যদিও সুইজারল্যান্ড ইইউর ঘনিষ্ঠ অংশীদার৷ প্রতিটি দেশই নিরাপদ হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত৷

ম্যার্ৎসের যুক্তি হলো, আশ্রয়প্রার্থীদের জার্মানিতে পৌঁছানোর আগে অন্য ইইউ দেশে (এবং সুইজারল্যান্ডে) তাদের আশ্রয় আবেদন করা উচিত৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথম যে ইইউ দেশে পৌঁছান সেখানে তাদের আবেদন জমা দিতে হয়৷

অনিয়মিত অভিবাসনে কঠোর হচ্ছে জার্মানি

01:48

This browser does not support the video element.

কিন্তু অনেক আশ্রয়প্রার্থী সেটা করেন না৷ বিশেষত পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে কিংবা যে অঞ্চলটিতে নিজের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব আছে, আশ্রয়প্রার্থীরা সেখানেই পৌঁছাতে চান৷

কিন্তু বর্তমান জার্মান সরকার সেই সুযোগটিকেও সীমিত করে আনছে৷ কারণ, প্রতিবেশী নয়টি দেশের সঙ্গে থাকা সীমান্তে কড়া পাহারার পাশাপাশি সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে দেশটি৷ প্রতিবেশী দেশগুলো এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও নিজেদের অবস্থানে অনড় জার্মান সরকার৷

স্থগিত পারিবারিক পুনর্মিলন

অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা পাওয়া শরণার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলনের অধিকার স্থগিত করেছে জার্মানি৷ এ সংক্রান্ত সরকারের একটি পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগ৷ এই বিতর্কিত ও সমালোচিত সিদ্ধান্তের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে সিরিয়ান পরিবারগুলো৷

মানবাধিকার সংস্থা প্রো অ্যাসিল বলেছে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বড় ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে৷ এতে সমাজে অন্তর্ভু্ক্তির পথ কঠিন হওয়ার পাশাপাশি অনিয়মিত অভিবাসনের ঝুঁকিও বাড়ছে৷ সন্তান, বাবা-মা বা স্বামী/স্ত্রীর সঙ্গে পুনর্মিলনের কোনো আইনি পথ না থাকলে কিছু মানুষ জার্মানিতে থাকা প্রিয়জনের কাছে পৌঁছাতে অনিয়মিত এবং অনিরাপদ পথ বেছে নেয়ার ঝুঁকি নেবেন বলে শঙ্কা করছে এনজিওটি৷

দক্ষ কর্মীর ঘাটতি মানে কী?

01:38

This browser does not support the video element.

আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ

চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগেই ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছিলেন, প্রতি বছর জার্মানিতে আশ্রয় চাইতে আসা মানুষের সংখ্যা এক লাখের নিচে রাখতে চান তিনি৷

বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ট অবশ্য বলেছেন, বার্ষিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা দুই লাখের নিচে নামিয়ে আনতে চান তিনি৷

জার্মানির সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ফোকাস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই একটি দেশের শরণার্থীদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার একটি সীমা থাকে৷ আর তাই অতীতের ঊর্ধ্বসীমা নিয়ে কথা বলা সঠিক ছিল৷''

তিনি বলেন, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে ছয় লাখেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয় আবেদন নেয়া হয়েছে৷ এছাড়াও দশ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়, ইইউ আইনের অধীনে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন৷

ডোব্রিন্ট বলেছেন, এমন বাস্তবতায় ‘‘আমরা তাত্ত্বিকভাবে দুই লাখের নীচে রাখার কথা বললেও আজকের দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংখ্যাটিও অনেক বড়৷''

তিনি আরো বলেন, আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিবাসনের পথ শক্তিশালী করা প্রয়োজন৷ কারণ, জার্মানির শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি প্রতিনিয়ত তীব্র হচ্ছে৷

সীমান্তে কড়াকড়ির সমালোচনা নাকচ করলেন জার্মান চ্যান্সেলর

01:58

This browser does not support the video element.

সের্টান স্যান্ডারসন/টিএম/এসবি

প্রথম প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২৫ ইনফোমাইগ্রেন্টস

অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ