হামবুর্গে জুলাই মাসে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে প্রথমবার মিলিত হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ এদিকে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে অটল হিলারি ক্লিন্টন৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পেছনে রাশিয়ার হাত নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই৷ এমন প্রেক্ষাপটেওয়াশিংটনে ক্ষমতাকেন্দ্রের উপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা কম নয়৷ ট্রাম্প ও পুটিন এতকাল শুধু টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ মঙ্গলবারের আলোচনায় দুই নেতা প্রথম সাক্ষাতের পরিকল্পনাও করে ফেললেন৷ জার্মানির হামবুর্গ শহরে আগামী ৭ ও ৮ই জুলাই জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে দুই নেতাই উপস্থিত থাকবেন৷ তখনই প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সেরে ফেলার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তাঁরা৷
গত ৪ঠা এপ্রিল সিরিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল৷ এর মধ্যে ট্রাম্প ও পুটিন টেলিফোনে কথাও বলেননি৷ মঙ্গলবারের আলোচনায় সিরিয়া প্রসঙ্গও উঠে আসে৷ সে দেশে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে দুই দেশ কাজ করার অঙ্গীকার করেছে৷ কাজাখস্তানে বুধ ও বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, অ্যামেরিকা সেখানে প্রতিনিধি পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস৷ উত্তর কোরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে চরম ইসলামপন্থি জঙ্গিদের মোকাবিলার বিষয়েও আলোচনা করেন ট্রাম্প ও পুটিন৷
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ সম্পর্কে প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন পরাজিত ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন৷ নিউ ইয়র্কে এক সভায় তিনি বলেন, ভ্লাদিমির পুটিন ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর প্রধান জিম কোমি ভোটারদের ভয় দেখিয়ে তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন৷ তাঁর মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ‘ই-মেল কেলেঙ্কারি' নিয়ে মোক্ষম সময়ে আরও তদন্তের প্রয়োজনীয়তার কথা লিখে এফবিআই প্রধান কোমি তাঁর ভাবমূর্তির ক্ষতি করেন৷ সেইসঙ্গে পুটিন তাঁর প্রতিপক্ষকে সাহায্য করতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে তাঁর অভিযোগ৷ গত বছর ৭ই অক্টোবর নারীদের সম্পর্কে ট্রাম্পের বিরূপ মন্তব্যের টেপ প্রকাশিত হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উইকিলিক্স ক্লিন্টনের সহকর্মীদের কিছু ই-মেল ফাঁস করে দেয়৷ একইসঙ্গে অবশ্য তিনি নির্বাচনি প্রচারের সময় নিজের কিছু ভুলও স্বীকার করেন৷
ভ্লাদিমির পুটিনের ভিন্ন রূপ
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ ছবিঘরে পুটিনের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/A. Novosti/RIA Novosti/Kremlin
কেজিবি থেকে ক্রেমলিন
পুটিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৫ সালে৷ আশির দশকে তিনি কেজিবি এজেন্ট হিসেবে জার্মানির ড্রেসডেনে কর্মরত ছিলেন৷ বার্লিন ওয়ালের পতনের পর রাশিয়ায় ফিরে গিয়ে বরিস ইয়েলৎসিনের ক্রেমলিনে প্রবেশ করেন তিনি৷ ইয়েলৎসিন তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে পুটিনের নাম ঘোষণা করলে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M.Klimentyev
প্রথম প্রেসিডেন্সি
বড় পদে যাওয়ার আগ অবধি রাশিয়ার সাধারণ জনতা পুটিনকে বলতে গেলে চিনতেনই না৷ ১৯৯৯ সালের আগস্টে চেচনিয়ার একদল সশস্ত্র মানুষ রাশিয়ার দাগেস্তান দখল করে নিলে পুটিন লাইম লাইটে আসেন৷ প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিন তখন তাঁকে চেচনিয়াকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব দেন৷ সেবার বর্ষবরণের আগের রাতে অপ্রত্যাশিতভাবে পদত্যাগ করেন ইয়েলৎসিন এবং পুটিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
গণমাধ্যমে কঠোর পুরুষ
সোচিতে একটি প্রীতি হকি গেমে পুটিনের দল ১৮-৬ গোলে জয়লাভ করে৷ এরমধ্যে আটটি গোলই করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট!
ছবি: picture-alliance/AP/A. Nikolsky
বাকস্বাধীনতায় লাগাম
পুটিন বিরোধীদের এক ব়্যালিতে এভাবে মুখে টেপ লাগিয়ে তার উপরে পুটিন লিখে হাজির হয়েছিলেন এক প্রতিবাদকারী৷ ২০১৩ সালে সেদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা রিয়া নোভোস্টিকে সংস্কারের ঘোষণা দেয় ক্রেমলিন এবং সেটির দায়িত্ব উগ্র পশ্চিমাবিরোধী মতের জন্য পরিচিত এক ক্রেমলিনপন্থির হাতে তুলে দেয়া হয়৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রেস ফ্রিডম সূচকে ১৭৮টি দেশের মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান ১৪৮তম৷
ছবি: Getty Images/AFP/V.Maximov
পুটিনের ভাবমূর্তি: কাজে বিশ্বাসী এক ব্যক্তি
রাশিয়ায় অনেকে বিশ্বাস করেন পুটিন কাজে বিশ্বাসী৷ এই ভাবমূর্তি গড়তে গিয়ে গণমাধ্যমে মাঝেমাঝেই ঊর্দ্ধাঙ্গ অনাবৃত ঘৌড়সওয়ারের বেশে বা জুডোতে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার বেশে পুটিনের ছবি প্রকাশ হয়৷ রাশিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারায় পুটিনের প্রশংসা করেন অনেকে, পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Nikoskyi
গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ
২০০৭ সালে পুটিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি যখন ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করে, তখন সমালোচকরা দাবি করেন, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক ছিল না৷ পুটিনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রণের কণ্ঠরোধে অভিযোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে দাঙ্গা পুলিশ৷ সেই বিক্ষোভ ব়্যালিতে একটি পোস্টারে লেখা ছিল, ‘ধন্যবাদ, না!’
ছবি: Getty Images/AFP/Y.Kadobnov
সাজানো ঘটনা
ক্রাইমিয়ার সেভাস্টোপোলে একটি ছোট সাবমেরিনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে পুটিনকে৷ বলা হয়ে থাকে, কৃষ্ণ সাগরের গভীরে তিনি গিয়েছিলেন এই সাবমেরিনে করে৷ এরকম ছবি মাঝে মাঝেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ কখনো তিনি বুনো বাঘকে কাবু করেন চেতনানাশক দিয়ে কিংবা ওড়ের বিলুপ্তপ্রায় সারসের সঙ্গে৷ এভাবে এক দুঃসাহসী অভিযাত্রীর বেশে পুটিনকে উপস্থাপন করা হয়৷