সিডিইউ-সিএসইউ এবং এসপিডি দল মিলে ‘বড়জোট’ সরকার গঠনের পথে বড় পা ফেলেছে: তথাকথিত ‘কোয়ালিৎসিয়ন্সফেরট্রাগ’ বা জোটের চুক্তির খসড়া তৈরি৷ শুধু এসপিডি দলের সদস্যদের সেই খসড়া অনুমোদন করা বাকি৷
বিজ্ঞাপন
একটি চূড়ান্ত বৈঠকে একটানা ১৮ ঘণ্টা আলাপ-আলোচনার পর জোটের চুক্তির নিষ্পত্তি হলো মঙ্গলবার ভোররাতে৷ ম্যারাথন বৈঠকে সর্বাপেক্ষা কণ্টকিত সমস্যাগুলির সমাধান করেন তিন দলীয় প্রধান: খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের সভাপতি আঙ্গেলা ম্যার্কেল, খ্রিষ্টীয় সামাজিক দলের সভাপতি হর্স্ট জেহোফার এবং সামাজিক গণতন্ত্রীদের সভাপতি সিগমার গাব্রিয়েল৷ প্রধানদের নিয়ে সব মিলিয়ে মোট ৭৭ জন প্রতিনিধি মাথা ঘামিয়েছেন সেই চূড়ান্ত বৈঠকে৷
জোটের চুক্তিতে কার কোথায় ‘হস্তাক্ষর'
এই বড়জোট যদি সত্যিই ক্ষমতায় আসে, তাহলে সেটা হবে ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে তৃতীয় বড়জোট৷ এবং এক এসপিডি দলের সদস্যদের মতিগতি ছাড়া সেই বড়জোটের পথে আপাতত কোনো বাধা নেই, কেননা জোটচুক্তি সংক্রান্ত বৈঠকে সংশ্লিষ্ট দলনেতারা সকলেই বলছেন, ঐ চুক্তিতে তাদের নিজস্ব হস্তাক্ষর প্রমাণ মাপের এবং সুস্পষ্ট৷
ধরা যাক ন্যূনতম পারিশ্রমিকের প্রশ্নটি, যেখানে সামাজিক গণতন্ত্রীরা ঘণ্টায় সাড়ে আট ইউরো'র মজুরি চালু করতে আকুল ছিল৷ তাদের সে মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে: ২০১৫ সালের সূচনা থেকেই এই ন্যূনতম পারিশ্রমিক চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ তবে মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস অবধি সময় পাবে অন্য কোনো ধরনের ন্যূনতম মজুরি নির্দিষ্ট করার জন্য, এমনকি সে মজুরি ঘণ্টায় সাড়ে আট ইউরোর নীচে হলেও৷
অপরদিকে সিডিইউ-সিএসইউ দল তথাকথিত ‘ম্যুটাররেন্টে' বা মায়েদের অবসরভাতার শর্তটি বজায় রাখতে পেরে খুশি: ১৯৯২ সালের আগে যে সব মায়েরা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তাদের অবসরভাতা বাড়ানোর এই পরিকল্পনা রক্ষণশীলদের কাছে যেমন প্রিয় তেমনই গুরুত্বপূর্ণ৷ এসপিডি দল খুশি, কেননা যে সব শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন কম বলে তাদের অবসরভাতাও শেষমেষ নিতান্ত কম হয় কিংবা হতে পারে, তাদের সরকারি তরফ থেকে মাসে ৮৫০ ইউরো ন্যূনতম অবসরভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ২০১৭ সাল থেকে৷
যেসব বিষয়ে সমঝোতার পর জার্মানিতে জোট
বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্যের কারণে এক মাস ধরে জার্মানির জোট সরকারের ব্যাপারে আলোচনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ ১৮ ঘণ্টা আলোচনার পর জোট গঠনে একমত হলেও কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন তা ঠিক হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনে চুক্তি সম্পন্ন
অনেক বিষয়ে মতানৈক্য থাকায় কয়েক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা চললেও জোট সরকার গঠনের প্রয়াস সাফল্যের মুখ দেখছিল না৷ বার্লিনে ১৮ ঘণ্টার বৈঠক শেষে বুধবার সকালে সে অপেক্ষার অবসান হয়েছে৷ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় দুটি দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী (সিডিইউ) ও সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি) দল৷ দলের প্রতিনিধিরা সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে৷ মন্ত্রণালয় বণ্টনের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷
ছবি: JOHN MACDOUGALL/AFP/Getty Images
সমঝোতার পথ
সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের পর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পেয়েছিল অন্তত ৪২ ভাগ ভোট৷ অনেকেই সিগমার গাব্রিয়েলের নেতৃত্বাধীন সামাজিক গণতন্ত্রী দলকে ম্যার্কেলের দলের ভবিষ্যৎ অংশীদার হিসেবে দেখেছিলেন৷ যদিও দু দলের মধ্যে অনেক বিষয়েই মতপার্থক্য ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ন্যূনতম মজুরি : নীতির লড়াই
জাতীয় ন্যূনতম মজুরি – এই একটি ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে নীতিগত ব্যবধান অনেক বেশি৷ চূড়ান্ত চুক্তিতে প্রতি ঘণ্টার ন্যূনতম মজুরি সাড়ে আট ইউরো নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমনটা এসপিডি দাবি করেছিল৷ কিন্তু ২০১৫ সালের আগে এটি কার্যকর হবে না৷ সিডিইউ-র আশঙ্কা এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক মানুষ চাকরি হারাবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মহাসড়কে টোলের প্রস্তাব
জার্মানির মহাসড়কগুলোতে টোল দেয়ার বিষয়টিতে দুই দলই রাজি নয়৷ কিন্তু সিডিইউ’র বাভারিয়ান সহযোগী সিএসইউ’র প্রধান হর্স্ট জেহোফার তাঁর ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের উপর টোল আরোপ করলেই কেবল তিনি কোনো জোটে যাবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কে বেশি পেনশন পাবে?
এসপিডি’র দাবি, যেসব কর্মী ৪৫ বছর ধরে চাকরি করছেন, তাদের পূর্ণ পেনশন দিতে হবে, যদি তাদের বয়স ৬৩ বছরও হয়৷ এমনকি ১৯৯২ সালের আগে যাদের সন্তান আছে সেসব মায়েদের পেনশন বোনাস দেয়ার পক্ষে সিডিইউ৷ চূড়ান্ত চুক্তিতে দুটি দাবিকে একসাথে করা হয়েছে, যার ফলে জার্মানির কয়েকশ’ কোটি ইউরো খরচ হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীর্ষ চাকরিগুলোতে বেশি নারী
বিএমডাব্লিউ’র বোর্ড সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১২.৫ ভাগ নারী৷ দুই দলই বলেছে, এটা যথেষ্ট নয়৷ তারা দেখতে চায়, পাবলিক কোম্পানিগুলোর শীর্ষ পদে নারীদের নিযুক্ত করা হচ্ছে৷ তারা শীর্ষ পদগুলোতে নারীদের নিয়োগ ৩০ ভাগ বাড়ানোর পক্ষে একমত হয়েছে, যা বর্তমানের চেয়ে তিনগুন বেশি৷
ছবি: imago/Sven Simon
স্বাস্থ্যসেবা
স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে খুব দ্রুতই সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দল৷ বিমার পরিমাণ বাড়ানো হবে এবং জনস্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম শেষ করা হবে৷
ছবি: Waldbreitbacher Franziskanerinnen
পররাষ্ট্রনীতি
আশা করা হচ্ছে, সামাজিক গণতন্ত্রী দলের ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন৷ ফলে জার্মান পররাষ্ট্রনীতিতে অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে, বলে ধারণা করছেন অনেকে৷ তবে, সিডিইউ এর কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ে অর্থমন্ত্রী বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জ্বালানি নীতিতে সমঝোতা
দুই দলই দেশের চাহিদা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ বাড়ানোর পরিকল্পনায় একমত হয়েছে৷ এসপিডি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎখাতে ৭৫ ভাগ ব্যবহারের পক্ষে, অন্যদিকে সিডিইউ বলেছে, ৫০ থেকে ৫৫ ভাগই যথেষ্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তৃণমূল কর্মীদের অধিকার
জার্মানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলের সদস্যরা জোট সমর্থনের অধিকার পেয়েছে৷ ফলে এসপিডি তার তৃণমূল সমর্থকদের জিজ্ঞেস করবে তারা এই জোটে যাবে কিনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
সিএসইউ দল পাচ্ছে তাদের ‘কার টোল ট্যাক্স' বা মোটরওয়ে'তে প্রাইভেট গাড়ি চালানোর জন্য শুল্ক বা মাশুল - যা কিনা সিএসইউ প্রধান হর্স্ট জেহোফার'এর কাছে মানসম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ জেহোফারের প্রস্তাব ছিল, বিদেশিরা যখন জার্মানির ‘আউটোবান' বা মোটরওয়ে'গুলি ব্যবহার করে, তখন সুইজারল্যান্ড কিংবা ফ্রান্সের মতো তাদের এখানেও মোটরওয়েগুলির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাশুল দেওয়া উচিৎ৷
দ্বিবিধ নাগরিকত্ব নিয়ে বিবাদে এসপিডি দল দৃশ্যত তাদের দৃষ্টিভঙ্গী জারি করতে পেরেছে: জার্মানিতে জন্ম, এমন অভিবাসী-সন্তানদের এবার তাদের ২৩ বছর বয়স হবার মধ্যে জার্মানি কিংবা বাবা-মায়ের জন্মের দেশের নাগরিকত্বের মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে না৷ সিএসইউ দলের সাধারণ সম্পাদক আলেক্সান্ডার ডব্রিন্ট কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন যে, এর অর্থ এই নয় যে, জার্মানিতে এবার থেকে দ্বিবিধ নাগরিকত্ব চালু হল৷
শেষ বেড়া
বড়জোট গঠনের পথে শেষ বাধা কিন্তু সামাজিক গণতন্ত্রীদের নিজেদের আরোপিত একটি শর্ত: তারা চায় যে, দলের সদস্যরা এই জোটচুক্তি অনুমোদন করুন৷ দলের সদস্য বলতে চার লক্ষ তিয়াত্তর হাজার মানুষ৷ তাদের মধ্যে পত্রমারফত গণভোট হবে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে৷ এসপিডি'র সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রেয়া নালেস কিন্তু আশাবাদী যে, দলের সদস্যদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই জোটচুক্তি অনুমোদন করবেন৷
সেক্ষেত্রে ১৭ ডিসেম্বর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বুন্ডেস্টাগে আবার চ্যান্সেলর পদে নির্বাচিত হবেন - চ্যান্সেলর হিসেবে তাঁর তৃতীয় কর্মকালের জন্য৷