২০২৫ সাল নাগাদ জার্মানিতে শিক্ষকের সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে৷ ক্যারিয়ার পরিবর্তনকারীরা বা অন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষরা শিক্ষকের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে, তাসত্ত্বেও অনেক জায়গা খালি থাকবে৷ এক গবেষণায় জানা গেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানি দক্ষতা এবং সঠিকতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত৷ আর পরিচিত একটি ভালো স্কুল সিস্টেমের জন্য, যা বুদ্ধিমান, যোগ্য এবং সুশিক্ষিত শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারে৷ তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা জার্মানির স্কুল সিস্টেম সম্পর্কে অশনিসংকেত দিচ্ছে৷
ব্রেটেলসমান স্টিফটুংয়ের এক গবেষণা জানিয়েছে, জার্মানিতে প্রাথমিক স্কুলের জন্য ৩৫,০০০ শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে৷ ২০২৫ সাল নাগাদ ১০৫,০০০ নতুন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের প্রয়োজন হবে৷ অথচ সেই সময়ে এই পদগুলো পূরণের জন্য উপযুক্ত প্রার্থীর সংখ্যা হবে ৭০,০০০৷
জার্মানির শিক্ষক ইউনিয়ন জিইডাব্লিউ-র প্রধান ইলকা হফমান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এরকম এক উল্লেখযোগ্য ঘাটতি উঠতি বয়সি শিক্ষার্থীদের অর্জনে প্রভাব ফেলবে৷ এই বিপর্যয় গত কয়েকবছর ধরে তৈরি হচ্ছিলো, এখন সেটা আমাদের আঘাত করছে৷''
শিক্ষকদের ঘাটতি তৈরির কারণ কী?
শিক্ষকদের এই বড় ঘাটতির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ব্রেটেলসমানের গবেষকরা৷ একটি কারণ হচ্ছে, আগামী সাত বছরে অনেক শিক্ষক অবসরে যাবেন৷ ফলে তাঁদের পদগুলোতে নতুন নিয়োগ দিতে হবে৷ পাশাপাশি গত কয়েক বছরে জার্মানিতে সন্তান জন্মহার বেড়ে গেছে৷ এ কারণে স্কুলগুলোতেও বাড়তি শিক্ষকের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে৷
মোটের উপর, জার্মানির স্কুল সিস্টেমে একটি পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা চাইলে এখন সারাদিন স্কুলে কাটাতে পারে৷ অর্থাৎ দুপুর বারোটা বা একটা নাগাদ ক্লাস শেষে বাড়ি রওয়ানা হওয়ার বদলে চাইলে তারা ক্লাসে আরো বেশি সময় থাকতে পারে৷ এই বাড়তি সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষকেরও ঘাটতি রয়েছে৷
এই ঘাটতি কাটানোর একটি উপায় হচ্ছে, অন্য বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা স্নাতকদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া৷ কিছু স্কুল ইতোমধ্যে এমন মানুষদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে বটে, তবে সেটাও সংখ্যায় বেশ সীমিত৷ আর অন্য পেশার বা শিক্ষায় শিক্ষিতদের স্কুল শিক্ষক হিসেবে কাজ করাটাও সহজ ব্যাপার নয়৷
তবে বাচ্চাদের শেখানো সহজ কাজ নয়
ইলকা হফমান মনে করেন, অন্য পেশা থেকে শিক্ষকতায় আসতে আগ্রহীদের জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রয়োজন আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ক্যারিয়ার পরিবর্তনকারীদের শিশুদের বেড়ে ওঠার সময়কার মানসিকতা সম্পর্কে জানতে হবে৷ ক্লাসরুমে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের মোকাবিলার জন্য তাঁদের প্রস্তুত হতে হবে৷ ক্লাসের সবচেয়ে ‘দুর্বল' এবং সবচেয়ে ‘সবল' শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই থেকে চার বছরের ব্যবধান থাকতে পারে৷''
ক্যারিয়ার পরিবর্তন করে শিক্ষকতা পেশায় আগতরাও স্বীকার করেছেন যে, কাজটি সহজ নয়৷ এজন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে৷ আর বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, আপাতত ঘাটতি কিছুটা মোকাবিলায় অন্য পেশার মানুষদের শিক্ষক হিসেবে প্রস্তুত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে শিক্ষকের ঘাটতি কাটাতে আরো কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে৷
কার্লা ব্লাইকার/এআই
জার্মানিতে বিদেশি বংশোদ্ভূত শিশুরা
ফটোগ্রাফার মার্টিনা হেন্সকে ও লেখক টাটিয়ানা লাইশারিং জার্মানির বিভিন্ন জায়গা স্কুল ঘুরে বিদেশি বংশোদ্ভূত শিশুদের ছবি তুলেছেন৷ এই ছবিঘরে সেই শিশুরাই জানাচ্ছে ওরা কিভাবে জার্মানির জীবনধারার সাথে একাত্ম বোধ করে৷
ছবি: Martina Henschke
আমার দেশ খুবই সুন্দর!
লাউরা ওর নিজের দেশ পর্তুগালকে নিয়ে খুব গর্ব বোধ করে৷ ‘‘টেলিভিশনে পর্তুগালের ছবি দেখে আমার সেখানে যেতে ইচ্ছে করে৷’’ লাউরার জন্ম জার্মানিতে হলেও ও পর্তুগালে গিয়ে পর্তুগিজ ভাষা শিখেছে৷ তবে ওর বাবা ওকে পর্তুগিজে প্রশ্ন করলে লাউরা জার্মানে উত্তর দেয়৷ জার্মানিতে জন্ম নেওয়া বেশিরভাগ বাচ্চার ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য৷ ঠিক এ বিষয়টিই হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে৷
ছবি: Martina Henschke
‘সোমালিয়া আমার জীবনের অঙ্গ’
দিকার ভাষায়, ‘‘আমি সোমালীয়, ইংরেজি, জার্মান ভাষা জানি, জানি কিছুটা ফ্রেঞ্চ, আরবী এবং অল্প কিছুটা তুর্কি ভাষাও৷’’ দিকার মতে, ভাষগুলোর মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে৷ তাছাড়া ও এটাও লক্ষ্য করছে যে, ওর পরিবারের মানুষজন আফ্রিকান এবং আরবী – এই দুই ভাষা মিলিয়ে কথা বলে৷
ছবি: Martina Henschke
মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়
বিভিন্ন ভাষা জানার যে বিশেষ সুবিধা রয়েছে, সে কথাই বোঝানো হয়েছে হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যলয়ের এই প্রদর্শনীটিতে৷ ফেরিদে অনেকগুলো ভাষা শোনার মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠছে৷ ওর ভাষায়,‘‘জার্মান এবং তুর্কি ভাষা আমি জানি আর ইংরেজি জানি সামান্য, স্কুলে শিখছি৷’’ মায়ের সাথে ফেরিদে খুব কমই তুর্কি ভাষায় কথা বলে৷ ভাই-বোনদের সাথে তুর্কি/জার্মান দুটোই আর তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান বন্ধুদের সাথে শুধু জার্মান ভাষায় কথা বলে সে৷
ছবি: Martina Henschke
খেলার মাঠে ভাষা চর্চা
বাড়ির কাছেই খেলার মাঠে বিভিন্ন দেশের মানুষ একসাথে হলে তাদের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়৷ ইব্রাহিমের কিন্তু এভাবেই ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে৷ ইব্রাহিম বসনীয় এবং জার্মান – এই দুই ভাষার মধ্য দিয়েই বড় হচ্ছে৷ তবে ইটালিয়ান ভাষা শিখতে ইব্রাহিম খুবই আগ্রহী, কারণ ওর বেশিরভাগ বন্ধুই যে এই ভাষায় কথা বলে!
ছবি: Martina Henschke
‘আমি কিন্তু সুপারম্যান হতে চাই’
রামসেস বাড়িতে ওর মায়ের সাথে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে৷ তবে ওর দুটো পাসপোর্ট – জার্মান এবং কলোম্বিয়ান৷ রামসেস-এর ভাষায়, ‘‘আমার জন্ম যেখানেই হোক না কেন, আমি মনে করি আমি জার্মানিতেই জন্মেছি, ভাষা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই৷’’ তবে ওর সমস্ত ভাবনা জুড়ে রয়েছে শুধু একটাই, রামসেস-এর ভাষায়, ‘‘আমি সুপারম্যান হয়ে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখি৷’’
ছবি: Martina Henschke
স্বপ্ন দুই ভাষায়ই দেখি
এরমালের জন্ম জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে৷ ও এখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে৷ এরমানের সবচেয়ে ভালো লাগে বই পড়তে আর অঙ্ক করতে৷ ‘‘আমার নিজের কোনো বই নেই, তবে আমি প্রতি সপ্তাহেই লাইব্রেরি থেকে একসাথে অনেকগুলো ডাইনোসরাসের বই নিয়ে আসি৷’’ এরমাল ওর বাবা-মায়ের সাথে বেশিরভাগ সময় আলবেনীয় ভাষায় কথা বললেও ও স্বপ্ন দেখে জার্মান এবং আলবেনীয় ভাষাতে৷ ‘‘আমি তো এর চেয়ে বেশি ভাষা জানি না’’, বলে এরমাল৷
ছবি: Martina Henschke
‘‘আমি কিন্তু কিছুটা জার্মান’’
হাজার নামের এই মেয়েটির স্বপ্ন যে, ও বড় হয়ে ডাক্তার অথবা উকিল হবে৷ হাজার ওর ভাই-বোন এবং স্কুলের বন্ধুদের সাথে জার্মান ভাষায় কথা বলেলেও বাবা-মায়ের সাথে সে কথা বলে বার্বার ভাষায়৷ স্কুলে অবশ্য ইংরেজি শিখছে হাজার৷ ওর জন্ম জার্মানিতে, তবে বাবা-মা এসেছেন মরক্কো থেকে৷ হাজার নিজের সম্পর্কে বলে, ‘‘আমি মরোক্কান হলেও এখন অবশ্যই কিছুটা জার্মান৷’’
ছবি: Martina Henschke
‘আমার বন্ধুরা টিউনিশিয়ায়’
ইহেব্স-এর বাবা এসেছে টিউনিশিয়ায় থেকে আর মা ও নানা জার্ডান থেকে৷ ইহেব্স-এর আরবী ভাষা জানা থাকায় টিউনেশিয়ায় অনেকের সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়েছে৷ ওর ভাষায়, ‘‘আমি আসলে টিউনেশিয়ান, জার্মান নই৷’’ ওর ধারণা ও যেহেতু সবসময় জার্মান ভাষায় কথা বলে না, তাই সে জার্মান নয়৷ ভাষার মাধ্যমেই নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করে ইহেব্স৷ তবে ও সারা জীবন পরিবারের সাথে জার্মানিতেই কাটাতে চায়৷
ছবি: Martina Henschke
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
ইওয়ানে-র প্রিয় বিষয় জার্মান ভাষা আর সাঁতার কাটা৷ ওর মতে, জার্মান ভাষাটাই ও ভালো জানে৷ এর কারণ, ইওয়ানে-র জন্ম জার্মানিতে৷’’ ও কখনো থাইল্যান্ডে না গেলেও মায়ের সাথে থাই ভাষাতেই কথা বলে৷ তবে ওদের পরিবারের লোকজন বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷ ফলে সবার সাথে যোগাযোগ রাখাটা প্রায় সম্ভবই হয়ে ওঠে না৷ ‘‘আমার ‘কাজিন’ থাকে লন্ডনে, আর আমি জার্মানিতে৷ কাজেই আমরা একে অপরের সাথে নিয়মিত কথা বলতে পারি না৷
ছবি: Martina Henschke
জায়গা পরিবর্তন
ক্রিস্টিয়ান প্রথমে নাস্তা করে, তারপর দাঁত ব্রাশ করে তার দিন শুরু করে৷ পরে আবারো বিছানায় শুয়ে আরাম করে একটু গড়িয়ে নেয়৷ আচ্ছা, ‘‘জার্মান বলতে আসলে কাদের বোঝায়? যাঁদের জন্ম জার্মনিতে আর যাঁদের বাবা-মা জার্মান, তাঁদের?’’ প্রশ্ন তার৷ এর ব্যাতিক্রমও রয়েছে কিন্তু বলে সে৷ ক্রিস্টিয়ান লক্ষ্য করেছে, অনেকেই অন্যান্য দেশ থেকে জার্মানিতে আসেন, টাকা-পয়সা রোজগার করে ভালোভাবে জীবন কাটাতে৷