ইউগভ জরিপ বলছে, জার্মানদের দুই-তৃতীয়াংশ প্রথম দর্শনে প্রেমে বিশ্বাস করেন৷ ওদিকে যাদের বাঁধা সঙ্গী কিংবা সঙ্গিনী আছে, তাদের এক-তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন যে, তারা অন্তত একবার অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানরা তাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী এবং তাদের যৌনজীবন নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট, বলছে জার্মানিতে প্রেম ও যৌনতা সংক্রান্ত একটি নতুন জরিপ ও প্রকাশনা৷
বইটির নাম ‘ভিয়ার ডয়চেন উন্ড ডি লিবে' বা ‘আমরা জার্মানরা এবং প্রেম ও যৌনতা'৷ বইটির ভিত্তি হলো ইউগভ সংস্থার একটি জরিপ৷ ঐ জরিপে ১২,০০০-এর বেশি জার্মানকে তাদের প্রেম, পারস্পরিক সম্পর্ক ও যৌন প্রবণতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়৷
ইউগভ-এর জরিপ অনুযায়ী ৭২ শতাংশ জার্মান বলেছেন যে, তাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী তাদের জীবনের মুখ্য প্রেমকাহিনী এবং তারা যৌন সম্ভোগের দৃষ্টিকোণ থেকেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট৷ কিন্তু প্রতি তিনজন জার্মানের মধ্যে একজন বলেছেন যে, তিনি অন্তত একবার অপর কোনো পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে ক্ষণিকের সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন – যারা এ ধরণের সম্পর্ক বহির্ভূত ‘অ্যাফেয়ারে' জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে মাত্র দু'জন নিজের সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে সে-কথা জানানোর সাহস পেয়েছেন৷
যৌন খেলনার ইতিহাস
বর্তমান যুগে সেক্স টয় বা যৌন খেলনা, যেমন ভাইব্রেটরের মতো টয়গুলো কেবল একটা উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়, আর তা হলো আনন্দ৷ যদিও ভাইব্রেটরের আবিষ্কার হয়েছিল নারীদের যৌনতার ওপর পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Spata
সবই প্রাকৃতিক: বিশ্বের প্রথম ডিলডো
কাঁচা কলা হোক বা উটের শুকনো গোবর- প্রাচীন কালে গ্রিস ও মিশরের মানুষ এগুলোর ওপর পিচ্ছিল পর্দার্থের প্রলেপ দিয়ে যৌন খেলনা বানিয়ে নিত৷ এছাড়া আরও বিকল্প ছিল বাঁকানো পাথর, চামড়া বা কাঠের বস্তু৷ বিশ্বের প্রথম ‘ডিলডো’ কিন্তু জার্মানিতেই আবিষ্কার হয়েছিল, তাও আবার ২৮,০০০ বছর আগে৷ ২০ সেন্টিমিটার লম্বা এই পাথরটি কেবল যে ‘সেক্স টয়’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো তা-ই নয়, আগুন জ্বালানোর কাজেও ব্যবহৃত হতো৷
ছবি: Phallus von der Hohle Fels/J. Lipták/Universität Tübingen
খুলে দাও
ডিলডো শব্দটি প্রথম এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ডিলাটারে’ থেকে, ১৪০০ শতাব্দিতে৷ এর মানে হচ্ছে খুলে দাও৷ আর ইতালিতে দিলেত্তো মানে খোল৷ ইতালীয় রেনেঁসার একশ বছর পর চামড়া ও অলিভ অয়েল দিয়ে যৌন খেলনা তৈরি হতো৷ তবে ইতিহাস বলে শুনতে যতটা আনন্দদায়ক হওয়ার কথা খেলনাটি ততটা ছিল না৷
ছবি: Vassil
নারীর আকাঙ্ক্ষা?
দীর্ঘদিন ধরে সহবাস মানেই ছিল পুরুষের চরম উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছানো৷ পুরুষ শাসিত সেসব সমাজে নারীদের ‘অরগাজম’ বা তাদের তৃপ্তি দেয়াটাকে অবহেলা করা হতো৷ যেসব নারীর যৌন চাহিদা বেশি থাকত, তাদের হিস্টিরিয়া রোগী মনে করত পুরুষরা৷ তাদের জন্য নানা ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল৷
ছবি: Fleury/Siegfried Giedion
নারীদের যৌন চাহিদার চিকিৎসা
নারীদের এ ধরনের ‘হিস্টিরিয়া’ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল৷ একটা নির্দিষ্ট বয়সে প্রায় সব নারীর মধ্যেই দেখা যাচ্ছিল৷ এর ফলে কখনো কখনো অনেকের জ্বরও হতো৷ এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তাররা এই টেবিলে যোনী ম্যাসাজের পরামর্শ দিতেন৷ কেননা, সেসময় হস্তমৈথুন ছিল নিষিদ্ধ৷
ছবি: George Henry Taylor
ডিলডো যখন ভাইব্রেটরে পরিণত হলো
ধনী নারীদের যে কোনো রোগের চিকিৎসা ছিল, কেননা, ডাক্তাররা অনেক অর্থ পেতেন৷ আর তাই তারা কাজে লেগে গেলেন কীভাবে তাদের যৌন হিস্টিরিয়ার চিকিৎসা করা যায়৷ ১৮৮০-র দশকে ভিক্টোরিয়ার আমলে ড. জোসেফ মরটিমার প্রথম ইলেকট্রো ম্যাকানিকেল ভাইব্রেটর আবিষ্কার করেন৷ এই যন্ত্রের ফলে ১০ মিনিটেই চরম উত্তেজনায় পৌঁছে যেতেন নারীরা৷
ছবি: Collections of The Bakken Museum, Minneapolis, USA
সুখী গৃহিনীরা
বিংশ শতাব্দিতে বিভিন্ন কোম্পানি ভাইব্রেটর বানানো শুরু করে৷ স্বাস্থ্য সেবা হিসেবে বিজ্ঞাপন ছাপা হতে লাগলো বিভিন্ন ম্যাগাজিনে৷ ডাক্তাররা এতে মোটেও খুশি হননি৷ অনেকের মনে হলো, অরগাজমের জন্য নারীদের বুঝি আর পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজন থাকবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Grimm
6 ছবি1 | 6
সিঙ্গলস বা যাদের কোনো বাঁধা সঙ্গী বা সঙ্গিনী নেই, তাদের যৌনজীবন দৃশ্যত ঠিক অতটা সন্তোষজনক নয়৷ সিঙ্গলদের মাত্র ৪৪ শতাংশ বলেছেন যে, তাদের যৌনজীবন সন্তোষজনক৷
নারী-পুরুষের সম্পর্কে বিবাহ আজও একটি জনপ্রিয় ধারা৷ ৬০ শতাংশ জার্মান বিয়ের ব্যাপারে খুশি৷ কিন্তু এক-তৃতীয়াংশের তথাকথিত ‘পরীক্ষামূলক বিবাহ'তেও আপত্তি নেই, উভয় পক্ষ স্বেচ্ছায় মেয়াদ না বাড়ালে যে বিবাহ নিজে থেকেই ভেঙে যায়৷ জার্মানিতে সঙ্গী ও সঙ্গিনী, অথবা সঙ্গিনী ও সঙ্গীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান গড়ে ৫ দশমিক ৮ বছর৷
কিন্তু জরিপে দেখা গেছে যে, জার্মানরা অতিমাত্রায় রোম্যান্টিক৷ প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মান বলেছেন যে, তারা প্রেমে পড়লে হাতে স্বর্গ পান; তাদের মধ্যে ১৩ শতাংশ আবার প্রেমে পড়লে বাকি সব কিছু ভুলে যান৷
যৌনতা
জরিপ থেকে দেখা গেছে যে, জার্মানরা গড়ে পাঁচজন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন৷ এক্ষেত্রে যাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে, দেখা যায়, তাদের গড় যৌন সহযোগীর সংখ্যা আট; অপরদিকে বিবাহিতদের ক্ষেত্রে যৌনসঙ্গী বা সঙ্গিনীদের সংখ্যা পাঁচ ছাড়ায়নি৷
জার্মানরা দৃশ্যত আরো কম বয়সে প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা করছেন৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে গড়ে ১৭ দশমিক ১ ও পুরুষদের ক্ষেত্রে গড়ে ১৭ দশমিক ৪ বছর বয়সে৷
যৌন সম্ভোগের ক্ষেত্রে জার্মানরা তাড়াহুড়ো করেন না৷ মৈথুন চলে গড়ে ১৫ মিনিট ধরে৷ ৪৫ শতাংশ জার্মান তার আগে মিনিট দশেক ধরে ‘ফোরপ্লে' বা শৃঙ্গার করেন৷ ১৫ মিনিটের মৈথুনে ৬১ শতাংশ জার্মান সন্তুষ্ট৷
প্রেম ও যৌনতার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিও উঁকিঝুঁকি মারছে৷ পুরুষদের এক-তৃতীয়াংশ বলেছেন, তাদের কোনো রোবট বা যান্ত্রিক পুতুলের সঙ্গে যৌন সম্ভোগে আপত্তি নেই, যদি তা ‘সত্যি' বলে মনে হয়৷ মহিলাদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ কোনো যন্ত্রমানবের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে আগ্রহী৷
যৌনমিলনের দশ সুফল
মানসিক চাপ কমানো থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্র ভালো রাখা – নিয়মিত যৌনমিলন এমন নানা সুফল বয়ে আনে৷ স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়েবএমডি এবং ম্যান’সে হেলথ জানিয়েছে এই তথ্য৷ চলুন জেনে নেই সঙ্গমের দশটি সুফলের কথা৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
যারা যৌনজীবনে সক্রিয়, তারা নাকি অসুস্থতাজনিত ছুটি কম নেন৷ হ্যাঁ, এমনটাই মনে করেন যৌনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইভোন কে. ফুলব্রাইট৷ তাঁর কথায়, নিয়মিত যৌনসঙ্গম করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে৷ পেনসেলভেনিয়ার উইল্কস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও দেখান যে, যেসব শিক্ষার্থী সপ্তাহে এক বা দু’দিন যৌনমিলনে লিপ্ত হন তাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা যারা এর চেয়ে কম ‘সেক্স’ করেন তাদের তুলনায় বেশি৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
যৌনকামনা বাড়ায়
নিয়মিত যৌনজীবন যৌনতার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে৷ বিশেষ করে নারীদের যোনিপথ পিচ্ছিল রাখতে, সেখানে রক্তচলাচল বাড়াতে এবং নমনীয়তা ঠিক রাখতে নিয়মিত যৌন জীবনের বিকল্প নেই, মনে করেন শিকাগোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লওরেন স্ট্রাইচার৷
নারীর মূত্রাশয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ‘পেলভিক ফ্লোর’ শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন৷ আর ভালো যৌনজীবন নারীর মূত্রাশয়ের মাংসপেশীকে সক্রিয় রাখে৷ বিশেষ করে ‘অরগ্যাসমের’ সময় ‘পেলভিক ফ্লোরের’ মাংসপেশী সংকুচিত হয়, যা একটি ভালো ব্যায়ামও বটে৷ জেনে রাখা ভালো, প্রায় ৩০ শতাংশ নারীর কোনো না কোনো সময় মূত্রাশয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Colourbox
রক্তচাপ কমায়
নিয়মিত যৌনজীবনের সঙ্গে রক্তচাপ কম থাকার একটি সম্পর্ক রয়েছে, মনে করেন গবেষক জোসেফ জে. পিনসন৷ তিনি জানান, গবেষণা বলছে যৌনমিলন (হস্তমৈথুন নয়) ‘সিস্টোলিক’ রক্তচাপ কমায়৷
ছবি: Colourbox
এটাও ব্যায়াম
যৌনমিলন একটা ভালো ব্যায়াম, বলেন পিনসন৷ কেননা এতে প্রতি মিনিটে পাঁচটি ক্যালোরি খরচ হয়, যা টিভি দেখার চেয়ে চার ক্যালোরি বেশি৷ তিনি জানান, যৌনমিলনে দু’ধরনের সুবিধা মেলে৷ এটি আপনার হৃদ কম্পনে গতি আনে এবং একইসঙ্গে অনেকগুলো মাংসপেশীকে সক্রিয় করে৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
সুস্থ যৌনজীবন আপনার হৃদপিণ্ডের জন্যও ভালো৷ হার্ট রেট ভালো রাখার পাশাপাশি এটি আপনার ‘এস্ট্রোজেন’ এবং ‘টেস্টোস্টেরনের’ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে৷ গবেষণা বলছে, যারা সপ্তাহে অন্তত দু’দিন যৌনমিলনে লিপ্ত হন তাদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর শঙ্কা, যারা খুব কম ‘সেক্স’ করেন তাদের চেয়ে অর্ধেক কম৷
ছবি: nebari/Fotolia
ব্যথা কমায়
ব্যথা কমাতে অ্যাসপিরিনের চেয়ে ‘অরগ্যাসম’ বেশি কার্যকর হতে পারে৷ নিউ জার্সি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেরি আর. কমিসারুক বলেন, ‘‘অরগ্যাসম ব্যথা বন্ধ করতে পারে৷ কেননা এতে যে হরমোন নিঃসৃত হয়, তা শরীরের ব্যথা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়৷’’
ছবি: Colourbox
প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
যেসব পুরুষের মাসে অন্তত ২১ বার ‘ইজেকুলেট’ হয় তাদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় কম, বলছে এক গবেষণা৷ তবে এই হিসেবে শুধু যৌনমিলন নয়, হস্তমৈথুনও অন্তর্ভুক্ত৷ তবে শুধু ‘সেক্স’ করলেই ক্যানসার মুক্ত থাকা যাবে কিনা, তা অবশ্য পুরোপুরি নিশ্চিত নয়৷ প্রোস্টেট ক্যানসারের পেছনে আরো অনেক কারণ থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঘুমে সহায়ক
যৌনমিলনের পর আপনি দ্রুত ঘুমাতে পারেন৷ কেননা ‘অরগ্যাসমের’ সময় যে হরমোন নিঃসৃত হয় তা দেহকে শিথিল করে এবং ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে আসে৷
ছবি: Colourbox
মানসিক চাপ কমায়
আপনার সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে থাকলে আপনার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমতে পারে৷ গবেষকরা মনে করেন, সুস্থ জীবনের জন্য ‘সেক্স’ এবং ঘনিষ্ঠতা অত্যন্ত জরুরি৷