জার্মানিতে পড়তে খুব ভালো ফলাফল নয়, প্রয়োজন ভালো জ্ঞান৷ নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকলে এখানে এসে ভালো করা সম্ভব৷ এমনটা মনে করেন মোহাম্মদ রবিউল হোসেন৷ তিনি জার্মানির বন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে গবেষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন৷
বিজ্ঞাপন
তরুণ গবেষক মোহাম্মদ রবিউল হোসেন জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের বায়োমেডিকেল সেন্টারে পোস্টডক করছেন৷ একইসঙ্গে আছেন জুনিয়র গ্রুপ লিডার ও লেকচারার পদে৷ জার্মানিতে হাতে গোণা কয়েকটি ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেলেন্স রয়েছে৷ বন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক তার একটি৷ সেখানকার কার্ডিওলজি বিভাগে একমাত্র এশিয়ান রবিউল৷
বলা হয়ে থাকে, পিএইচডি করেও জার্মানিতে শিক্ষকতার বা গবেষণার চাকরি পাওয়া কঠিন৷ রবিউল সেখানে ব্যতিক্রম৷ তবে এখন সুযোগ আগের চেয়ে বেশি বলে মনে করেন তিনি৷
বাংলাদেশে রবিউল পড়তেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগে৷ বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে চাকরিও শুরু করলেন৷ তখনই ভাবনা এল বিদেশে উচ্চশিক্ষার৷ তবে অনেকের মতই সুযোগ খোঁজা এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ছিল না৷
২০১১ সালে জার্মানিতে আসেন রবিউল৷ এমনকি দুইটা মাস্টার্সও করেন৷ তারপর পিএইচডি৷ এখন করছেন পোস্টডক৷ জার্মানিতে পড়াশোনার মান ভালো এবং এখানে প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণার সুযোগও বেশি বলে মনে করেন রবিউল৷ সে কারণেই উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন জার্মানিকে৷
কোন স্কলারশিপের অধীনে জার্মানি আসেননি রবিউল৷ তিনি মনে করেন, জার্মানিতে পড়তে বা গবেষণায় যুক্ত হতে ভালো ফলাফলের চেয়ে ভালো জ্ঞান প্রয়োজন৷ উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ আছে, অথচ কেমন করে প্রস্তুতি নিতে হবে জানেন না এমন শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ আছে তার৷
‘‘এখন অনেক সহজে তথ্য পাওয়া যায়৷ সেগুলো যোগাড় করতে হবে৷ বাংলাদেশ থেকে এখানে পড়াশোনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন৷ তবে কোন শিক্ষার্থী যদি আপডেটেড থাকেন, তার পছন্দের ফিল্ডে সবশেষ গবেষণাগুলো সম্পর্কে৷ তিনি যদি সবসময় খোঁজখবর রাখেন, তাহলে এখানে এসে ভালো করা সম্ভব,'' বলেন রবিউল৷ তার মতে জার্মানিতে মাস্টার্স পর্যায়ে আসাটা সহজ এবং পরবর্তী ধাপগুলোতে পৌঁছা সম্ভব৷
কোন কিছুই সহজে আসে না৷ এর জন্য পরিশ্রম করতে হয়, এটাই রবিউলের মন্ত্র৷ গবেষণার কাজ ভালো লাগে তার৷ ভবিষ্যতেও তা চালিয়ে যেতে চান তিনি৷
জার্মানিতে পড়তে আসার আগে যা যা জানা প্রয়োজন
প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন৷ জার্মানিতে কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষা পাওয়া যায়৷ তবে জার্মানির উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ার আগে শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন৷ পড়ে নিন সেগুলো৷
ছবি: DW
টিউশন ফি নেই, তবে
জার্মানির ১৬টি রাজ্যের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো টিউশন ফি নেই৷ এটা সত্য৷ তবে এক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সুনির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রোগ্রামে আবেদন করলে বিনা খরচায় পড়ার সুযোগ আছে৷ সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা যেসব শর্ত মনে লেখাপড়া করে, বিদেশিদেরও সেগুলো মানতে হবে৷ ‘স্টাডি এবরোড’ প্রোগ্রাম এবং প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা ফ্রি নয়৷
ছবি: Fotolia/Janina Dierks
বেশি কাজের মানসিকতায় লাগাম টানুন
একজন বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার ফাঁকে আপনি কতটা কাজ করতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করে দেয়া থাকে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র কোনো দেশের পাসপোর্টধারী নয়, এমন শিক্ষার্থীরা বছরে ১২০ দিন পূর্ণদিবস কিংবা ২৪০ দিন অর্ধদিবস কাজ করতে পারেন৷ এছাড়া সেমিস্টার চলাকালে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করা যাবে না৷ ভালো কথা, গোপনে বাড়তি কাজের চেষ্টা করবেন না৷ ধরা পড়লে বড় সমস্যা হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/MNStudio
যথাযথভাবে অনুদানের আবেদন করুন
আশার কথা হচ্ছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অনুদান এবং ফেলোশিপের ব্যবস্থা রয়েছে জার্মানিতে৷ আপনার বিষয় যাই হোক না কেন, আপনি যদি তাতে মেধাবী হন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য পরিশ্রমে আগ্রহী হন, তাহলে অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ ‘জার্মান অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস’ বা ডিএএডি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে থাকে৷ তবে অনুদানের আবেদন প্রফেশনালদের মতো হওয়া চাই৷
ছবি: DW
ভিসা জটিলতা
উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জার্মানিতে পড়তে আসার ভিসা পাওয়া একটু জটিল৷ তাঁদের বেশকিছুদিন সময় হাতে রেখে ভিসার আবেদন করতে হয়৷ আর জার্মানিতে আসার পর মাঝেমাঝেই যেতে হয় ‘আউসলান্ডারবেহ্যোর্ডে’ বা বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত সরকারি কার্যালয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব কিছুর কপি রাখুন
জার্মানিতে আসার পর আপনি নিয়মিতই বিভিন্ন চিঠি পাবেন৷ এমনকি কবে কবে বাড়ির সামনে কোন কোন ধরনের ময়লা রাখা যাবে, সেটাও জানবেন চিঠির মাধ্যমে৷ বুদ্ধিমানের কাজ হবে সব চিঠি জমা করে রাখা৷ তবে প্রয়োজন অনুযায়ী উত্তর দিতে ভুল করবেন না যেন৷ জার্মানিতে বসবাসের এক বিরক্তিকর দিক হচ্ছে দেশটির জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া৷ সেই প্রক্রিয়ার অংশ এ সব চিঠি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মান বলতে পারলে অনেক সুবিধা
এটাও সত্য, জার্মানির বড় শহরগুলোতে জার্মান না জেনেও বসবাস করা য়ায়৷ এছাড়া বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ইংরেজিতে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে৷ তবে কিছুটা জার্মান ভাষা শিখতে পারলে দেশটিতে জীবনযাপন অনেক সহজ হয়ে যাবে৷ আর আপনি যদি পড়ালেখা শেষে জার্মানিতে চাকুরি করতে চান, তাহলে ভাষা জানাটা অনেক জরুরী৷ এক্ষেত্রে ডয়চে ভেলের জার্মান ভাষা শিক্ষা কোর্স আপনাকে সহায়তা করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেকে নিজেরই সহায়তা করতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইভেট কলেজগুলো ব্যয়বহুল হলেও শিক্ষার্থীদের অনেক খেয়াল রাখেন৷ শিক্ষার্থী কোনো ক্লাস ক্রমাগত মিস করে গেলে তাকে তা জানানো হয়৷ ক্যাম্পাসে কখন, কোন প্রোগ্রাম হচ্ছে তাও সুনির্দিষ্টবাবে শিক্ষার্থীদের জানাতে উদ্যোগ আছে৷ জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম৷ কখন, কোথায় কেন ক্লাস হচ্ছে কিংবা কোন প্রোগ্রাম চলছে তার খোঁজ রাখার দায়িত্ব আপনার৷
ছবি: DW
জার্মানদের সঙ্গে থাকুন
জার্মানির বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে৷ তবে তাদের সেবা নেয়া বাধ্যতামূলক নয়৷ অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেছে দেয়া অ্যাপার্টমেন্ট শিক্ষার্থীর পছন্দ হয় না৷ আশার কথা হচ্ছে, অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো থেকে থাকার জায়গা বেছে নেয়া যায়৷ কাজটা কঠিন৷ তবে চেষ্টা করবেন এমন জায়গায় থাকার যেখানে জার্মান শিক্ষার্থীরা থাকেন৷ তখন ভাষা শেখাটা আপনার জন্য সহজ হবে৷
ছবি: Fotolia
আপনি একা নন
শিক্ষার্থী হিসেবে জার্মানিতে বসবাস শুরুর দিকে অনেক কঠিন মনে হতে পারে৷ মনে হতে পারে আপনি একাই বুঝি এত পরিশ্রম করছেন৷ তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আপনার আগেও অনেক আপনার মতোই পরিশ্রম করে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ তাই নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে শিখুন৷ এ জন্য বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের সহায়তা নিতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
থাকবেন, নাকি চলে যাবেন?
শুরুর দিকে জার্মানিতে বসবাস কঠিন মনে হলেও দেশটি ক্রমশ আপনার ভালো লাগতে শুরু করতে পারে৷ অনেকের ক্ষেত্রে এমন হয়েছে৷ ডিগ্রি, চাকুরি আর নিরাপদ জীবন - এসব বিবেচনা করে আপনি হয়ত একসময় জার্মানিতে থেকে যেতে চাইবেন৷ কিংবা থাকবেন নাকি চলে যাবেন সেই দ্বিধায় পড়ে যাবেন৷ সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার, আমরা শুধু আপনাকে আগেভাবে জানিয়ে রাখলাম৷