জার্মানিতে বসবাসকে যে রকম মনে করা হয়, ভয়ংকর আমলাতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা কিন্তু সেটাকে অনেকটা ম্লান করে দেয়৷ ডয়চে ভেলের এলিজাবেথ শুমাখার অভিবাসীদের সে রকম গল্পগুলোর দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন, যোগ করেছেন নিজের অভিজ্ঞতাও৷
বিজ্ঞাপন
সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বাস্তুদের স্বাগত জানানোর ফলে দেশটি সম্পর্কে ব্যতিক্রমধর্মী বার্তা পাচ্ছে বিশ্ববাসী৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ইংরেজিতে গুরুত্বারোপ, দেশটির বিভিন্ন খাতের জন্য বিদেশে কর্মী খোঁজার মতো বিষয়গুলো এই অবস্থানকে শক্তিশালী করছে৷
তবে বাস্তবতার কষাঘাতে আশ্রয়প্রার্থী ভূক্তভোগীর চোখের জলে বাস্তবে তার অনেকটাই ভেসে যাচ্ছে৷ আমলাতন্ত্রের যে সব জায়গায় ‘স্বাগত জানানো' মানসিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সে সব জায়গাই হতাশ করছে তাদের৷
বৈদেশিক দপ্তরগুলো অভিবাসীদের শুনতে হচ্ছে নানা কথা৷ সেখানে কথা উঠছে ব্যক্তির জাত-পাত নিয়েও৷ অনেককে বিদ্বেষপূর্ণ নানা কথাও শুনতে হচ্ছে৷ ‘‘দেয়ালে হেলান দেয়া বন্ধ করো, তোমরা এটাকে নোংরা করে দিচ্ছো'' – চিৎকার করে বলা এমন কথাও শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন একজন আশ্রয়প্রার্থী৷
কোলন এবং ফ্রাইবুর্গে লেখক নিজেও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হয়েছেন, যে অভিজ্ঞতা নিতে হবে – এমনটা তিনি কল্পনাও করেননি৷ যে অভিজ্ঞতায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন জার্মান অভিবাসন আইনের গলদও৷
তিনি জানান, নানা ধরনের কাগজপত্র দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি৷ উভয়পক্ষের সম্মতিতে সময় দিয়েও এমনকি তিনঘণ্টা তাকে ঠায় ফ্লোরে বসে অপেক্ষা হয়েছে৷ ১০ লাখ মানুষের শহরে ওয়েটিং রুমে চেয়ার ছিল মাত্র আটটা৷
‘‘স্পষ্টতই বিপরীত প্রমাণ থাকলেও এমন ধারণা করা যে, আমি সম্ভবত জার্মান শিখতে পারবো না৷ এ কারণে একটা বিশেষ কোর্স ধরিয়ে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে৷''
‘‘কিন্তু আমি একজন অ্যামেরিকান, এসেছি ‘শিক্ষার্থী-ভিসায়'৷ সাধারণদের যে রকম অবমাননাকর এবং অপমানকর যে সব অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়, এটা তার তুলনায় সামান্যই৷''
জীবন বাজি রেখে ইউরোপের পথে
অভিবাসনের আশায় বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই ইউরোপে আসছেন৷ ইটালির ‘পাসো ডেলা মর্তে’ হয়ে ইউরোপের আরো উত্তরের দেশগুলোতে আসতে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকে৷ ফটোসাংবাদিক ফেডেরিকো স্কপা ছিলেন তেমন শরণার্থীদের সঙ্গে....
ছবি: DW/F.Scoppa
গহীন জঙ্গল, দুর্গম পথ
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সভয়ে এগিয়ে চলেছে আফগান কিশোরদের একটি দল৷ সব সময় ভয় – পুলিশ যদি দেখে ফেলে! এই ভয় নিয়ে, দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরেই পেরোতে হবে ‘ডেথ পাস টু ফ্রান্স’৷ যাত্রা শেষ হতে এখনো ১২ কিলোমিটার বাকি৷
ছবি: DW/F.Scoppa
পদে পদে বিপদ
ইটালির ভেনটিমিগলিয়া শহর আর ফ্রান্সের মেতোঁর মাঝখান দিয়ে এক সময় হাইওয়ের টানেলের ভেতর দিয়ে, কখনো রেলপথ ধরে, কখনো বা গিরিপথ ধরে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যেতে হয়৷ যে কোনো মু্হূর্তেই ঘটে যেতে পারে সমূহ বিপদ৷
ছবি: DW/F.Scoppa
তীব্র গতি, দৃষ্টি ক্ষীণ
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের্ অনেকেই প্রাণ হাতে নিয়ে এই হাইওয়ে টানেল ধরে ধরে হেঁটে পৌঁছাতে চান ফ্রান্স৷ জীবনের ঝুঁকি তাদের প্রায় প্রতি পদক্ষেপে৷
ছবি: DW/F.Scoppa
প্রকৃতির আশ্রয়ে, প্রকৃতির ভরসায়
কীভাবে যেতে হবে তা না জেনে, সঙ্গে কোনো খাবার না নিয়েও ‘ডেথ পাস’ দিয়ে যাত্রা শুরু করেন অনেকে৷ প্রকৃতির উদারতাই তাদের একমাত্র ভরসা৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুখতে ফরাসি সরকার তৈরি করেছিল এই প্রাচীর৷ শান্তির পতাকাও ওড়ানো হয় তখন৷ ইটালি ও ফ্রান্স সীমান্তের এই এলাকটি অভিবাসন প্রত্যাশীদের খুব পরিচিত রুট৷
ছবি: DW/F.Scoppa
ওই দেখা যায়..
৩০০ মিটার দূরেই ‘ডেথ পাস’-এর শীর্ষ বিন্দু৷ সেদিকেই তাকিয়ে আছে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ন তিন অভিবাসন প্রত্যাশী৷ এখানে অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে৷ পুলিশ ধরলেই ফিরিয়ে দেয় ইটালিতে৷
ছবি: DW/F.Scoppa
7 ছবি1 | 7
হিজাবে উদ্বেগ
ভিরাজেশ নামে একজন ভারতীয় একাডেমিককে মাত্র দুই সপ্তাহের ভিসা দেয়া হয়৷ এ জন্য তিনি এখানকার বৈদেশিক দপ্তরে যোগাযোগ করেন৷ যেখান থেকে তাকে বার্লিন অফিসে যেতে বলা হয়৷ সেখানে এক ভদ্রমহিলা আমার কাগজপত্র দেখে বললেন, ‘‘ওহে চিন্তিত হইয়ো না৷ সমস্যা তো তুমি না৷ যারা হিজাব করছে, সমস্যা তারা৷''
রাজেশের মতে, ইসলাম-ভীতিতেই এটা শেষ হয়ে যায় না৷ তারা তোমার ত্বক দেখবে, দীর্ঘশ্বাস ফেলবে, ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করবে৷ ধরেই নেবে, তুমি জার্মান ভাষা জানো না৷
দক্ষতার জন্য খ্যাতি লাভ করা একটা দেশে এই ক্রান্তিকালে যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে৷
ইসরায়েলের সাংবাদিক ইয়েল বলেন, সোজা ভাষায় একটা কথা বলি, এখানকার শুরুটা ভয়ংকর৷ যখন আপনি প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছেন, তখন এরা তাদের হাতে আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে বসে আছে৷ কে আগে ডাক পাবে, কিসের ভিত্তিতে এই ক্রম নির্ধারিত হবে –তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই৷ বসার মত কোন জায়গাও নেই৷
ইয়েল যখন কোলনে বিদেশ দপ্তরে তার কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন তিনি সেখানে একজন অভিবাসী নারীকে দেখেন, যিনি তার সন্তানকে প্রবোধ দিচ্ছিলেন৷ তিনি জানান, এ সময় এক লোক উঠে আমাদের দিকে আসলো, ক্রম উচ্চস্বরে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলো ‘‘দেয়ালে হেলান দেয়া বন্ধ করো, তোমরা এটাকে নোংরা করে দিচ্ছো৷''
ইয়েল ডয়চে ভেলেকে বলেন, একজন ইহুদি জার্মানিতে কী শুনতে চাইবে-বিষয়টা তেমন নয়৷ তবে সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম৷
জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন বেড়েছে
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ বলছে, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ এর সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসে মোট ৫৯,৬৮০টি আবেদন পড়েছে৷ মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল ৫৮,৩১৫, অর্থাৎ ১,৩৬৫টি কম৷
ছবি: Brian Leli
শীর্ষে সিরিয়া
সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন সিরিয়ার নাগরিকরা৷ ২৫,৭৯১ জন৷ অবশ্য মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল সাড়ে সাত শতাংশ বেশি৷ ২৭,৮৭৮ জন৷
ছবি: Fotolia
প্রথম চার মাসেও শীর্ষে সিরিয়া
২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে এক লক্ষ ১৬ হাজার ৮২৬ জন সিরীয় নাগরিক জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ আর সব দেশ মিলিয়ে আবেদনের সংখ্যা দুই লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৯৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
ইরাকিদের সংখ্যা বেড়েছে
মোট হিসেবে সিরিয়ার পরেই আছে ইরাক৷ তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলের চেয়ে মার্চে বেশি হলেও ইরাকের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো৷ অর্থাৎ মার্চের চেয়ে এপ্রিলেই বেশি ইরাকি আবেদন করেছেন৷ ৯,৫০৫ জন৷ মার্চে ছিল ৮,৯৮২ জন৷
ছবি: DW/R. Shirmohammadi
তৃতীয় স্থানে আফগানিস্থান
সিরিয়া ও ইরাকের পর তালিকায় তিন নম্বরে আছে আফগানিস্তান৷ এপ্রিলে ৮,৪৫৮ জন আফগান রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ মার্চ মাসের চেয়ে সংখ্যাটি ১১.৮ শতাংশ বেশি৷
ছবি: DW/Omid
জাতীয়তা জানা নেই
জাতীয়তা ‘অস্পষ্ট’ এমন আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলে ছিল ১,২৯৯ জন৷ সংখ্যাটি মার্চ মাসে ছিল আরও বেশি৷ ১,৮৬৯ জন৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
পাঁচ নম্বরে ইরান
১,৯৮১ আবেদন নিয়ে তালিকায় ইরানের নাম আছে পাঁচ নম্বরে৷ ছয়-এ আছে আলবেনিয়া (১,১৮৮ জন)৷ পাকিস্তানি আবেদনের সংখ্যা ১,০৩৮; আর ইরিত্রিয়ার ১,১৫২৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
7 ছবি1 | 7
‘এটা আমার সমস্যা না'
চোখের পানি এখানে খুব সস্তা হয়ে গেছে৷ যারা নিজের কথাগুলো বলতে চায়, এটা কেবল তাদের মধ্যেই না৷ বরং বৈদেশিক দপ্তরের সাধারণ দৃশ্য এটা৷ দক্ষিণের শহর ফ্রাইবুর্গে আমি আমি বেইজিং থেকে আসা এক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখেছি৷
ওই ব্যক্তির বস তাঁর কাজের দৈর্ঘ্য ১০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছেন৷ এরফলে তিনি আর জার্মানি থাকতে পারবেন না বলে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বাচ্চারা এখানকার স্কুলে পড়ে৷ আমার স্ত্রীও এখানে একটা খণ্ডকালীন চাকুরি করে৷ তার বন্ধু-বান্ধবরাও এখানেই৷ আমাদের জীবন এখানেই জড়িয়ে আছে৷''
এর জবাবে তাকে বলা হয়, ‘‘এটা আমার সমস্যা না৷ এখানে থাকতে আয়ের যে শর্ত রয়েছে, তোমার সেটা নেই৷''
‘‘এটা আমার সমস্যা না'' – এ রকম কথা আমি ফ্রাইবুর্গে হরহামেশাই শুনেছি৷ লিয়া নামে একজন কানাডিয়ান জানিয়েছেন, ফ্রাংকফুর্টেও তাকে এটা শুনতে হতো৷
পৌঁছানোর সময় তাকে বলা হয়, দু'মাস আগে যেন তিনি ভিসা নবায়নের জন্য আবেদন করেন৷
সে অনুসারে আবেদন করলে তাকে বলা হয়, তোমার ভিসা অগাস্টে শেষ হয়ে গেলে আমি কী করবো৷ আমি তোমাকে জানুয়ারিতে সাক্ষাৎকারের দিন দিতে পারি৷
জার্মানিতে অভিবাসীদের স্বাগত জানানো হচ্ছে বলে প্রচারণার মধ্যে যেখানে সবচেয়ে বেশি স্বাগত জানানো প্রয়োজন, সেখানেই এই মানসিকতার অভাব সবচেয়ে বেশি৷
এলিজাবেথ শুমাখার/এসএন
বন্ধু, কেমন লাগলো প্রতিবেদনটি? জানান নীচের ঘরে৷
ইউরোপে শরণার্থী সংকট কীভাবে শুরু হয়েছিল?
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় সহিংসতা বৃদ্ধি থেকে ইউরোপের অসংলগ্ন শরণার্থী নীতি অবধি ইউরোপে শরণার্থী সংকটে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যতা থেকে পালানো
২০১৪ সালের শেষের দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চতুর্থ বছরে পা দেয়ার প্রাক্কালে এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে তথাকথিত ‘ইসলামিট স্টেট’-এর বিস্তার ঘটার পর সিরীয়দের দেশত্যাগের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়৷ একইসময়ে সহিংসতা এবং দারিদ্র্যতা থেকে বাঁচতে ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, নিগার এবং কসভোর অনেক মানুষ ইউরোপমুখী হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সীমান্তের ওপারে আশ্রয় খোঁজা
সিরীয় শরণার্থীদের অধিকাংশই ২০১১ সাল থেকে সে দেশের সীমান্ত সংলগ্ন তুরস্ক, লেবানন এবং জর্ডানে আশ্রয় নিতে শুরু করেন৷ কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ সেসব দেশের শরণার্থী শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যায় এবং সেখানকার বাসিন্দারা সন্তানদের শিক্ষা দিতে না পারায় এবং কাজ না পাওয়ায় এক পর্যায়ে আরো দূরে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পায়ে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি
২০১৫ সালে ১৫ লাখের মতো শরণার্থী ‘বলকান রুট’ ধরে পায়ে হেঁটে গ্রিস থেকে পশ্চিম ইউরোপে চলে আসেন৷ সেসময় ইউরোপের শেঙেন চুক্তি, যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই চলাচাল সম্ভব, নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ কেননা শরণার্থীরা গ্রিস থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী রাষ্ট্রগুলোর দিকে আগাতে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/M. Cardy
সমুদ্র পাড়ির উন্মত্ত চেষ্টা
সেসময় হাজার হাজার শরণার্থী ‘ওভারক্রাউডেড’ নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে শুরু করেন৷ লিবিয়া থেকে ইটালি অভিমুখী বিপজ্জনক সেই যাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সাগরে ডুবে যায় অন্তত আটশ’ মানুষ৷ আর বছর শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
সীমান্তে চাপ
ইউরোপের বহির্সীমান্তে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কয়েকটি রাষ্ট্র চাপে পড়ে যায়৷ হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, ম্যাসিডোনিয়া এবং অস্ট্রিয়া এক পর্যায়ে সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, সেসময় শরণার্থী আইন কঠোর করা হয় এবং শেঙেনভুক্ত কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/epa/B. Mohai
বন্ধ দরজা খুলে দেয়া
জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর ‘ওপেন-ডোর’ শরণার্থী নীতির কারণে বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে অনেক শরণার্থীই ইউরোপে আসতে উৎসাহ পেয়েছেন৷ এক পর্যায়ে অবশ্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পথ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানিও৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি
২০১৬ সালের শুরুতে ইইউ এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি হয়৷ এই চুক্তির আওতায় গ্রিসে আসা শরণার্থীদের আবারো তুরস্কে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করে৷ নভেম্বর মাসে অবশ্য তুরস্কের ইইউ-তে প্রবেশের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা স্থগিত ঘোষণার পর, সেই চুক্তি আবারো নড়বড়ে হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
পরিস্থিতি বদলের কোনো লক্ষণ নেই
ইউরোপজুড়ে অভিবাসীবিরোধী মানসিকতা বাড়তে থাকলেও সরকারগুলো সম্মিলিতভাবে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার কোনো সঠিক পন্থা এখনো খুঁজে পাননি৷ কোটা করে শরণার্থীদের ইইউ-ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলমান সহিংসতার ইতি ঘটার কোনো লক্ষণও নেই৷ ওদিকে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে৷