আইএস-এর হয়ে লড়াই করতে তাঁরা সিরিয়া চলে গিয়েছিলেন। তেমনই পাঁচ নারী এবং ১৮টি শিশুকে দেশে ফেরালো জার্মান সরকার।
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাঁচ আইএস নারী এবং ১৮টি শিশুকে উদ্ধার করে জার্মানিতে ফিরিয়ে আনল জার্মান সরকার। রোববার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এ কথা জানিয়েছেন। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই কাজটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাস। যে পাঁচ নারীকে দেশে ফেরানো হয়েছে, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধেই চমরপন্থা এবং জঙ্গি কার্যকলাপে অংশগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। সকলের বিরুদ্ধেই চার্জ গঠন করেছে দেশের ফেডারেল পুলিশ।
যুদ্ধে নারী, নারী যোদ্ধা
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইসলামিক স্টেট উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি এলাকাগুলি দখল করে৷ হাজার হাজার ইয়াজিদি মহিলা ও কিশোরীকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাসী হিসেবে রাখা হয় ও ধর্ষণ করা হয়৷ আজ সেই ইয়াজিদি নারীরাই সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
শত্রুর খোঁজ
শত্রু বাইরে কোথাও - কুর্দি নারী যোদ্ধা হাসেবা নৌজাদ ইরাকের মোসুল শহরের কাছে চোখে দুরবিন লাগিয়ে ‘ফ্রন্ট লাইন’ পরখ করে দেখছেন৷ কুর্দ এলাকা ও আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে সীমারেখা হলো এই ফ্রন্ট৷ কুর্দিরা ইরাকি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় ক্রমেই আরো এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু হটছে ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
গুপ্তপ্রতিরোধের ভ্যানগার্ড
শত্রু নজরে পড়েছে, এবার তাদের দিকে গুলি চালানো হবে৷ হাসেবা নৌজাদ দেখাচ্ছেন কোনদিকে; আসেমা দাহির (ডান দিক থেকে তৃতীয়) ও অন্যান্য ইয়াজিদি নারী যোদ্ধারা নিশানা ঠিক করছেন৷ শুধুমাত্র বিমান থেকে আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই৷ তাই ইয়াজিদি আর কুর্দ মহিলাদের নিয়ে রণক্ষেত্রে এই ভ্যানগার্ড তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
সুন্দর দেখানোর জন্য নয়
বন্দুক নিয়ে ঠিকমতো নিশানা করার জন্য মাথার চুল কপালে বা চোখে পড়লে চলবে না৷ তাই চুল টান টান করে বেঁধে নেন হাসেবা নৌজাদ, ‘মিলিটারি লুক’ ফ্যাশনের জন্য নয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
লাকি চার্ম
যুদ্ধের ফাঁকে আসেমা দাহির৷ হাতে যে লাল রঙের টেডি বেয়ারটি রয়েছে, সেটা হয়তো অতীতের সেই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দিনগুলির প্রতীক, যখন আইএস ইয়াজিদিদের স্বদেশকে দখল করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে সেই শান্তি শেষ হয়ে যায়, শুরু হয় আইএস-এর সন্ত্রাস৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
পালানো ছাড়া পথ ছিল না
শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, আইএস কাউকে ক্ষমা করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে লক্ষ লক্ষ ইয়াজিদি বাস্তু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের পিছনে আইএস৷ এক বৃদ্ধ ও দুই তরুণীর এই ছবিটি যেন বিশ্বের সামনে ইয়াজিদিদের যন্ত্রণাকে তুলে ধরে৷
ছবি: Reuters
বিভীষিকা
এই ইয়াজিদি কিশোরী ক্যামেরার সামনে তার মুখ দেখাতে চায় না৷ ২০১৪ সালে এই ১৫ বছর বয়সের মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে একজন আইএস যোদ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ তার দু’মাস পরে মেয়েটি পালাতে সমর্থ হয়৷ আজ সে আবার নিজের পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ধ্বংসস্তূপ
উত্তর সিরিয়ার কোবানি শহরটি তুর্কি সীমান্তের অদূরে৷ আইএস যোদ্ধারা মাসের পর মাস শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল৷ কুর্দিরা সব কিছুর পরও প্রতিরোধ চালিয়ে যায় ও শেষমেশ মার্কিন বিমানবাহিনীর সাহায্যে সন্ত্রাসবাদীদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়৷ পড়ে থাকে একটি শহর নয়, যেন শহরের ধ্বংসস্তূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Akgul
সবে মিলে করি কাজ
যারা আইএস-এর আদর্শে বিশ্বাস করে না, আইএস-এর দৃষ্টিতে তারা সবাই শত্রু৷ বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করাই হলো আইএস-এর উদ্দেশ্য৷ সে উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে সফল হয় না৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এক অর্থে তা আইএস-এর প্রতীকী পরাজয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
স্বাধীনতার সড়ক
শুধু অস্ত্র দিয়ে আইএস-কে হারানো যাবে না৷ সিরিয়া আর ইরাকের অনেক এলাকা এখনও আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েরাও তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷ তাদের প্রতিরোধের আর একটি শিক্ষা হলো, মেয়েরা পুরুষের দাস নয় - সন্ত্রাসবাদিদের যা কাজে লাগার কথা!
ছবি: Reuters/A. Jadallah
9 ছবি1 | 9
গত কয়েক বছরে একাধিক জার্মান সিরিয়ায় গিয়েছিলেন আইএস শিবিরে যোগ দিতে। এই পাঁচ নারীও সিরিয়ায় গিয়ে আইএস জঙ্গিদের বিয়ে করেছিলেন বলে জার্মান সরকার জানিয়েছে। পাঁচ নারীর কারো সম্পূর্ণ পরিচয় জানানো হয়নি। কেবল নামের প্রথম অংশটি লেখা হয়েছে রিপোর্টে। সিরিয়ায় আইএস শিবিরে যোগ দিলেও পরবর্তী সময় এই নারীরা সকলেই ছিলেন কুর্দদের তৈরি ক্যাম্পে। উত্তর পূর্ব সিরিয়ায় একাধিক ক্যাম্প তৈরি করেছে কুর্দ যোদ্ধারা। আটক আইএস-দের সেখানে রাখা হয়। দশ হাজারেরও বেশি নারী এবং শিশু আছে ওই ক্যাম্পগুলিতে। যে নারীদের জার্মানি ফিরিয়েছে, তাঁরাও ওই ক্যাম্পেই ছিলেন এতদিন। কুর্দ যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৮টি শিশুও ওই ক্যাম্পেই ছিল। তাদের পরিবারও জার্মান। এখনো সিরিয়ায় অসংখ্য জার্মান শিশু এবং নারী আছে বলে জার্মান পত্রপত্রিকার দাবি।
প্রাথমিক ভাবে জার্মান সরকার আইএস শিবিরে যোগ দেওয়া জার্মান নারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে খুব উৎসাহী ছিল না। চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এ বিষয়ে উৎসাহ দেখাননি। কিন্তু বিভিন্ন অধিকাররক্ষা সংগঠনের চাপে শেষ পর্যন্ত ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য হয় জার্মান সরকার।
মাস জানিয়েছেন, বহু দিন ধরে সিরিয়ার কুর্দ যোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে এবং ফিনল্যান্ডের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে চার্টার বিমানে করে নারী ও শিশুদের ফেরানো সম্ভব হয়েছে। যে শিশুদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের অনেকেই অনাথ। বেশ কয়েকজন অসুস্থ। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামী দিনে আরো নারী ও শিশুকে ফেরানো হবে কি? এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি জার্মান সরকার। বস্তুত, সিরিয়া থেকে ফেরানো হলেও ওই নারীদের সঙ্গে আইএস-এর সরাসরি যোগের কথাও জানায়নি সরকার। তবে পত্রপত্রিকাগুলি দাবি করেছে পাঁচ নারীর সঙ্গেই আইএস যোগ ছিল। পুলিশের রিপোর্টেও সে কথা বলা হয়েছে।