নারীবাদী গোষ্ঠী জোরা পিএফএলপি-র প্রতীক ব্যবহার করেছে। পিএফএলপি-কে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে চিহ্নিত করেছে ইইউ।
বিজ্ঞাপন
বুধবার জার্মানির পুলিশ বার্লিনে ফিলিস্তিনপন্থি ও বামপন্থি নারীবাদী গোষ্ঠী জোরার সদস্যদের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালায় বলে জার্মান মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে।
জোরা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা চরম বামপন্থি পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন(পিএফএলপি)-কে সমর্থন করে। পিএফএলপি-কে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে চিহ্নিত করেছে ইইউ ও অ্যামেরিকা।
জোরা পিএফএলপি-র প্রতীক ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ।
তল্লাশি নিয়ে যা জানা গেছে
পুলিশ ট্রেড ইউনিয়ন জিডিপি-র প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বার্লিনের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, প্রায় দুইশ জন অফিসার এই তল্লাশিতে অংশ নেন।
তারা ছয়টি ফ্ল্যাট, একটি অফিস ও একটি ক্যাফেতে তল্লাশি করেন বলে জানিয়েছে সংবাদপত্র বিজেড।
জিএসজি ৯: জার্মানির সন্ত্রাসরোধী বিশেষ বাহিনী
সন্ত্রাসের ঝুঁকি বাড়ার কারণে ১৯৭২ সালে মিউনিখে এক ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হত্যাকাণ্ডের পর জিএসজি-৯ গঠন করা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Hannibal
‘সীমান্ত সুরক্ষা গোষ্ঠী ৯’
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিক চলাকালীন ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ইসরায়েলি পণবন্দিদের মুক্ত করতে ব্যর্থ হয় জার্মান পুলিশ৷ তখন এই বিশেষ কমান্ডো পুলিশ বাহিনী সৃষ্টির পরিকল্পনা নেওয়া হয় – যদিও তা অনেককে নাৎসি আমলের বাছাই এসএস বাহিনীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ও সেই কারণে বেশ কিছু বিতর্কের অবতারণা ঘটে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Hannibal
সুনাম
জিএসজি ৯ স্কোয়াডের প্রথম অভিযানই তাদের সুনাম প্রতিষ্ঠা করে৷ ১৯৭৭ সালে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীরা লুফৎহানসার একটি যাত্রীবাহী বিমান অপহরণ করে মোগাদিশুতে নিয়ে যায়৷ ‘ফায়ার ম্যাজিক’ নামের একটি অভিযানে জিএসজি-৯ গোষ্ঠীর কমান্ডোরা মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে বিমানের যাত্রীদের মুক্ত করেন৷ অভিযানে আহত হন জিএসজি-৯-এর এক সদস্য ও একজন বিমানকর্মী৷ চারজন বিমান অপহরণকারীর মধ্যে তিনজন ঐ অভিযানে প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
‘মোগাদিশুর হিরো’
জিএসজি ৯ স্কোয়াডের প্রথম সদস্যদের একজন উলরিশ ভেগেনার৷ মোগাদিশুর অভিযানের পর তিনি জার্মান সরকারের অর্ডার অফ মেরিট সম্মানে ভূষিত হন৷ ‘মোগাদিশুর হিরো’ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি৷ ভেগেনার ২০১৭ সালের ২৮শে ডিসেম্বর ৮৮ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন৷
ছবি: imago/Sven Simon
জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে
অপহরণ, সন্ত্রাসী আক্রমণ বা বোমা সরানোর কাজে জিএসজি-৯ স্কোয়াডকে নিয়োগ করা হয়৷ তবে বিশেষ বিশেষ উপলক্ষ্যে কোনো স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও তারা মাঠে নামে৷ প্রয়োজনে জলেও নামে! ২০০৭ সালে জি-এইট গোষ্ঠীর শীর্ষবৈঠক অনুষ্টিত হয় উত্তর জার্মানির হাইলিগেনডাম সৈকতাবাসে৷ সেখানে উপকূল পাহারা দেয় জিএসজি-৯৷
ছবি: Getty Images/A. Hassenstein
মুখ দেখার উপায় নেই
জিএসজি-৯ স্কোয়াডের অধিকাংশ অভিযানই গোপনীয়৷ তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিশেষ বাহিনী ১,৯০০-টিরও বেশি অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে৷ গোষ্ঠীর প্রধান কার্যালয় জার্মানির সাবেক রাজধানী বন শহরের কাছে সাংক্ত্ আউগুস্তিনে৷
ছবি: picture-alliance/U. Baumgarten
প্রশিক্ষণ
জিএসজি ৯ স্কোয়াডের প্রশিক্ষণের খুব বেশি ছবি না থাকলেও, মাঝেমধ্যে স্কোয়াডের সদস্যরা কোনো বিশেষ উপলক্ষ্যে তাঁদের কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করে থাকেন৷ যেমন, দড়িতে করে বহুতল বাড়ির গা বেয়ে মাটিতে নেমে আসা৷ উইসবাডেনে জার্মান অপরাধ দপ্তরের ‘মুক্ত দুয়ার দিবসে’ তার একটি নমুনা দেখাচ্ছেন জিএসজি-৯ সদস্যরা (ফাইল ছবি)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেলিকপ্টার থেকেও...
বন শহরে সাবেক চ্যান্সেলরের দপ্তরের সামনে উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে দড়ি বেয়ে মাটিতে নেমে দেখাচ্ছেন জিএসজি-৯ সদস্যরা (ফাইল ছবি)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মহড়া
জিএসজি-৯ সদস্যদের প্রশিক্ষণের কোনো অন্ত নেই৷ ছবিতে তাঁদের একটি রেলওয়ে স্টেশনে সন্ত্রাসী আক্রমণের পর আহতদের উদ্ধার করার মহড়ায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে৷ অবশেষে জিএসজি-৯ গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বাড়িয়ে বার্লিনে স্কোয়াডে আরো একটি মুখ্য কার্যালয় খোলার পরিকল্পনা চলেছে৷ গোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা গোপন রাখা হলেও তা আপাতত প্রায় ৪০০ বলে মিডিয়ার অনুমান৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Carstensen
8 ছবি1 | 8
জার্মান মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১২ অক্টোবর ইনস্টাগ্রামে জোরা একটি পোস্ট করে। সেখানে বলা হয়, ফিলিস্তিনের মুক্তি ছাড়া নারীদের মুক্তি সম্ভব নয়।
একটি বিবৃতিতে জোরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে না। সেরকম কোনো ইচ্ছে তাদের নেই। তাই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের অংশ হিসাবে পিএফএলপি-র মতো প্রগতিশীল শক্তিকে শক্তিশালী করতে হবে।
পিএফএলপি নারীদের সংগঠিত করা ও তাদের সংগঠনে নিয়ে আসার কাজ অতীতে করেছে।
জোরা সম্পর্কে যা জানা গেছে
নিজেদের ওয়াবসাইটে জোরা তাদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছে, তারা ইয়ং মেয়েদের স্বাধীন ও পুঁজিবাদ-বিরোধী সংস্থা।
গত ১৫ ডিসেম্বর এই গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি সহমর্মিতা ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ক্ষেত্রে জার্মানির দমননীতির নিন্দা করেছিল। তারা বিশেষ করে ফিলিস্তিনপন্থিদের তল্লাশির কথা বলেছিল। তারা জানায়, সামিডুন ফিলিস্তিন প্রিজনার্স নেটওয়ার্ককে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তল্লাশির সংখ্যা বেড়েছে।
নভেম্বরের গোড়ায় জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায় সামিডুন ও হামাসকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হামাসকে আগেই জার্মানি-সহ অনেক দেশই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে চিহ্নিত করেছিল।