জার্মানিতে যারা ঘুরতে আসেন, তাঁদের শুরুতেই যে সমস্যায় পড়তে হয়, তা হলো ফ্রি ওয়াইফাই৷ এই পথে সবচেয়ে বড় বাধা দূর হয়েছে আদালতের এক সিদ্ধান্তে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফ্রি ওয়াইফাই হটস্পট দিয়ে থাকে, যেখানে এসে যেকেউ চাইলে স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপে ডেটা কানেকশন নিতে পারেন কোন ধরনের অর্থ ছাড়াই৷
তবে ঝামেলা ছিলো অন্যখানে৷ এ সব হটস্পট ব্যবহার করে কেউ কপিরাইট করা কিছু বেআইনিভাবে ডাউনলোড করলে দায়ী হবে কে? এ তর্কের মীমাংসায় অনেকদিন ধরেই আদালতে মামলা চলছিল৷
তবে সম্প্রতি এক রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই অবৈধ কাজের দায় কোনোভাবেই ফ্রি ওয়াইফাই দেয়া প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ঘাড়ে চাপানো যাবে না৷
দেশে দেশে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ-লড়াই
অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করতে জার্মানি একটি ‘সামাজিক মাধ্যম আইন’ করতে চায়৷ জার্মান সংসদে এ নিয়ে আলোচনা চলছে৷ এরই মধ্যে এর সমালোচনাও শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
মুক্তমত, নাকি অবৈধ বিষয়বস্তু?
ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য, প্রপাগান্ডা, অ্যাক্টিভিজম ইত্যাদি অনলাইনে হরহামেশাই চলে৷ এগুলো নিয়ে দেশে দেশে বিতর্ক কম হয়নি৷ নানা দেশে তাই সামাজিক মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপও এসেছে৷ অনেকে এটাকে মুক্ত মতের উপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
সামাজিক মাধ্যম আইন
জার্মানির আইনমন্ত্রী হাইকো মাস সামাজিক মাধ্যমের জন্য একটি আইনের প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন৷ সে আইনে বিদ্বেষমূলক পোস্ট অপসারণ না করলে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির বিপুল জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এতে বিগড়ে বসেছে ফেইসবুক৷ তারা বলছে, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং ভুয়া খবর ঠেকানোর দায় তাদের একার নয়৷ সরকারকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে৷ আইনটি এখন পর্যালোচনার জন্য জার্মান সংসদীয় কমিটিতে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
ভুলে যাওয়ার অধিকার
২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের জারি করা এক আদেশে বলা হয়, গুগল, বিং-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনকে তাদের অনুসন্ধানের ফলাফলে কোনো বিশেষ কিছু বাদ দিতে ইউরোপীয় নাগরিকরা অনুরোধ জানাতে পারবেন৷ গুগল সেই আদেশ বাস্তবায়ন করলেও আগে এ বিষয়ে বেশ অনাগ্রহ দেখিয়েছে৷ তখন তারা বলেছে, এটা ইন্টারনেটকে মুক্ত বিশ্বের আবদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবে৷
ছবি: picture-alliance/ROPI/Eidon/Scavuzzo
ইউক্রেনের নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেন গত মে মাসে রাশিয়ার সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ বিষয়টি দেশটির লাখ লাখ মানুষের উপর প্রভাব ফেলে৷ অনেকেই তাদের ডাটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ এর প্রতিবাদে তরুণরা রাস্তায় নেমে আসে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Str
প্রসঙ্গ: সেফ হারবার
২০১৫ সালে ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিস এক রায়ে ইউএস এবং ইইউ’র মধ্যকার চুক্তি ‘সেফ হারবার’কে অকার্যকর ঘোষণা করে৷ যে চুক্তি বলে কারো ব্যক্তিগত তথ্য পূর্বানুমতি ছাড়াই হস্তান্তর করা যায়৷ অস্ট্রেলীয় আইনের ছাত্র ম্যাক্স স্ক্রিম ফেইসবুকের বিরুদ্ধে একটি মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন৷ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন তথ্য ফাঁস করায় তিনি এই ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Warnand
কঠোর চীন
চীনে সরকার কঠোরভাবে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷ ফেসবুক, টুইটার, ইনসটাগ্রামের মতো হাজার হাজার ওয়েবসাইট দেশটির সরকার নিষিদ্ধ করে রেখেছে৷ সেখানকার সরকার নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করেছে৷ যেমন, ইউবো, উইচ্যাট৷ জনবহুল এই দেশটিতে এখন এগুলোরও কোটি কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/Da Qing
6 ছবি1 | 6
এ নিয়ে একটি আইন অবশ্য ২০০৭ সাল থেকেই ছিল৷ কিন্তু তবুও অনেকেই ভয় পাচ্ছিলেন, জার্মানিতে তাঁদের কোনো সমস্যায় পড়তে না হলেও কপিরাইট ভঙ্গের অভিযোগে ইউরোপিয়ান আইনে তাঁদের কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় কিনা৷
মামলাটা অবশ্য ২০১৩ সালের একটি ঘটনাকে ঘিরে৷ এক ব্যক্তি একটি কপিরাইট করা খেলা ডাউনলোড করে নিজে আবার আপলোড করে দেন৷ কিন্তু এ জন্য তাঁকে জরিমানা করা হলে, তা তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান৷
এই প্রযুক্তিকর্মী টর নামের একটি যোগাযোগ সফটওয়্যার পরিচালনায় একাধিক সার্ভার পরিচালনা করতেন৷ সেই মাধ্যম ব্যবহার করে এক ব্যবহারকারী জার্মান ভিডিও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিপ সিলভারের তৈরি করা ভিডিও গেম ‘ডেড আইল্যান্ড' ডাউনলোড করেন৷
২৬ জুলাইয়ের রায়ে জার্মানির সর্বোচ্চ অপরাধ আদালত ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিস জানিয়েছে ২০১৭ সালের জার্মান টেলিমিডিয়া আইন এ বিষয়ক ইউরোপের যে আইন রয়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷
তবে এই বিষয়ে সবশেষ সিদ্ধান্তের জন্য মামলাটি এবার পাঠানো হবে ব্রাসেলসে৷ সেখানে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস মামলাটি বিষয়ে মতামত জানাবে৷