করোনা সংকটে রেস্টুরেন্ট ও হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে জার্মানির বিয়ার উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো৷ হাজার হাজার লিটার বিয়ার নষ্ট হওয়ার উপক্রম৷ উপায় না দেখে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে বিতরণ করছে বিয়ার৷
বিজ্ঞাপন
ফেলে দেয়ার বদলে ক্রেতাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিয়ার বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিলিঙ্গার ব্রাউহাইস নামের প্রতিষ্ঠান৷ এরই মধ্যে জার্মানির হেসে রাজ্যের এই উৎপাদক দুই হাজার ৬০০ লিটার বিয়ার বিতরণ করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷
প্রতিষ্ঠানের মালিক ফ্রানৎস মাস্ট রয়টার্সকে জানান, ‘‘আমরা জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই৷ আমরা আশা করবো এখন যারা আসছেন, তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এভাবেই আমাদের সঙ্গে থাকবেন৷''
এই বিয়ার বিভিন্ন এলাকার রেস্টুরেন্ট, বার ও হোটেলে সরবরাহ করার কথা ছিল৷ কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে ভিলিঙ্গার ব্রাউহাইস৷ এখন ধীরে ধীরে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যে সবকিছু খুলতে শুরু করেছে৷ ফলে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার আগে নতুন বিয়ার উৎপাদনে যেতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে৷
জার্মানরা যেভাবে বিয়ার পান করেন
জার্মানির পাঁচশ বছরের পুরনো ‘বিয়ার পিউরিটি আইন’ অনুযায়ী, বিয়ারে শুধুমাত্র হপস, বার্লি, খামির এবং পানি ব্যবহার করা যাবে৷ চলুন দেখে নেই ইউরোপের এই দেশটির বিয়ার সংস্কৃতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পছন্দের শেষ নেই
জার্মানি বিয়ারের দেশ৷ মাত্র চারটি উপাদান ব্যবহার করে দেশটির বিয়ার উৎপাদকরা ৫,৫০০’রও বেশি ব্রান্ডের বিয়ার তৈরি করেছেন৷ আর এই সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, কেননা প্রতি সপ্তাহে তালিকায় নতুন নতুন বিয়ার ব্র্যান্ড যোগ হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
আপনি সবসময়ই বিয়ার পান করতে পারেন
মদ্যপানের যখন প্রশ্ন আসে, তখন তা অফিস পার্টি, সিনেমার বিরতি কিংবা বার্লিনের গ্যোর্লিৎসার পার্ক – যেখানেই হোক না কেন, বিয়ার সবসময়ই প্রথম পছন্দ জার্মানদের৷ এখানে প্রকাশ্যে বৈধভাবে বিয়ার পান করা যায়৷ দীর্ঘ একটা সময়ে বিয়ারকে পুরুষের পানীয় বলে মনে করা হলেও, ক্রমশ এটা ১৯ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণ-তরুণীদের প্রিয় পানীয়তে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hein
ঐতিহ্যবাহী উৎসবে অপরিহার্য
জার্মানির ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলার এক অন্যতম অনুষঙ্গ বিয়ার৷ এই পানীয় ছাড়া উৎসব ঠিক জমে না৷ কিছু অঞ্চলের আঞ্চলিক বিয়ার প্রস্তুতকারীরারা তাদের অঞ্চলের উৎসবকে কেন্দ্র করেও বিয়ার প্রস্তুত করেন৷ এই যেমন মিউনিখের অক্টোবরফেস্ট-কে কেন্দ্র করে যে বিয়ার তৈরি হয়, তা শুধুমাত্র এক লিটারের গ্লাসে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager
ফুটবল এবং বিয়ার – এক চমৎকার জুটি
ফুটবলও জার্মানদের কাছে এক ধরনের উৎসব৷ আর সেই উৎসব পূর্ণতা পায় যখন বিয়ার হাতে দর্শকরা তা উপভোগ করেন৷ তাই জার্মানির যে কোনো ফুটবল স্টেডিয়ামে বিয়ার ছাড়া দর্শক খুঁজে পাওয়া ভার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
বিয়ার কেনা যায় সবসময়
জার্মানির বড় শহরগুলোতে রাস্তার পাশের কিছু দোকান সারারাত খোলা থাকে৷ সেসব দোকানে পত্রিকা, তামাক, চকোলেট বা মিষ্টির পাশাপাশি বিয়ারও বিক্রি করা হয়৷ ১৫০ বছর আগে এ সব দোকান, যা কিয়স্ক নামে পরিচিত, খোলা হয়েছিল শুধুমাত্র পানি বিক্রি করতে৷ এখন অবশ্য সেগুলো আরো অনেক কাজে লাগছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
গ্রীষ্ম উপভোগ করতে বিয়ার গার্ডেন
জার্মান বিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে বিয়ার গার্ডেনের সংযোগ বহুদিনের৷ আজকাল এ ধরনের গার্ডেন জার্মানির প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়৷ তবে এর শুরুটা হয়েছিল বাভারিয়ায়, ঊনিশ শতকের শুরুর দিকে৷ বিশেষ করে গরমের দিনগুলোতে বিয়ার পান করতে অনেকেই মিউনিখের বিয়ার গার্ডেনে হাজির হন৷
ছবি: Deutscher Brauer-Bund e.V.
বাভারিয়ায় বিয়ার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ
বাভারিয়া, যেখানে ১৫১৬ সালে বিয়ার পিউরিটি আইনটি চালু হয়েছিল, বিয়ার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশে গেছে৷ বর্তমানে সেখানে ৬২৬টি বিয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা জার্মানির অন্য যে কোনো রাজ্যের চেয়ে বেশি৷
ছবি: Kloster Weltenburg
7 ছবি1 | 7
স্থানীয় ক্রেতারা প্রায় প্রতিদিনই এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরাসহ নানা নির্দেশনা মেনে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন৷
বিয়ার নিতে আসা নাটালি ইউলিউস রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমি আশা করবো আমরা বিয়ার নিয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির উপকার হবে৷ আর আমরাও বিকেলে বাগানে রোদে বসে মজার এই ভিলিঙ্গার বিয়ান পান করতে পারবো৷''
করোনা মহামারি অন্যন্য খাতের মতো জার্মানির বিয়ার উৎপাদনকেও ব্যাপকভাবে ব্যাহত করেছে৷ গ্রীষ্মকালে পুরো জার্মানি জুড়ে নানা ধরনের বিয়ার উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে৷ কিন্তু এবার বাভারিয়ার রাজ্যের বিখ্যাত অক্টোবরফেস্টসহ অন্যসব বিয়ার উসবও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে৷ চীন ও ইটালিতে রপ্তানিও বন্ধ হয়ে গেছে৷
জার্মানির বিয়ার উৎপাদকদের সংগঠন ডয়চে ব্রাউয়ার বুন্ড এই খাতে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে৷